ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার নিশ্চিত উপায়
বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ইউটিউব ভিডিও দেখা হয়। ইউটিউব এখন এতটাই জনপ্রিয় যে, ব্যবহারকারীরা ইউটিউবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ মিনিট সময় ব্যয় করে। নতুন এই ডিজিটাল যুগের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বর্তমানে অনলাইনে ইনকাম করার জন্য ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার উপায় সমূহের উত্তর খোঁজার চাহিদা প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই লেখাটিতে, ইউটিউব থেকে আয় করার নিশ্চিত উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আসুন জেনে নিই-
কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়?
গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার জন্য আপনার যা দরকার- একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এবং একটি কম্পিউটার। শুধুমাত্র এই ছোট দুইটি জিনিষ দিয়েই আপনি ইউটিউব থেকে টাকা আয় শুরু করতে পারেন। তাছাড়া শুধুমাত্র ইউটিউব ভিডিও দেখে টাকা আয় করার পদ্ধতিও এখন সারাবিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
YouTube থেকে টাকা আয় বলতে কি বুঝায়?
গুগল থেকে টাকা আয় করার অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি ইউটিউব থেকে টাকা আয় বলতে মূলত বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকে প্রাপ্ত আয়কে বুঝায়। অর্থাৎ আপনার ইউটিউব চ্যানেলটিকে বিজ্ঞাপন দাতারা বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করবে। ফলে আপনি তাদের কাছ থেকে টাকা পাবেন। সহজ কথায়, আপনার চ্যানেলের ইউটিউব ভিডিওর শুরুতে বা মাঝামাঝিতে বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বিজ্ঞাপন দেখাবে। এর বিনিময়ে আপনি ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনার ইউটিউব চ্যানেলের মেম্বারশিপ চালু করা, সুপার চ্যাট, পণ্য বিক্রি, ইউটিউব প্রিমিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা সম্ভব।
কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়?
ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমানে আয় করা সম্ভব হলেও এটি খুব একটা সহজ নয়। বিশ্বজুড়ে প্রতি এক মিনিটে ইউটিউবে প্রায় চারশত ভিডিও আপলোড হয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, প্রতিযোগিতাটি বেশ তীব্র। ফলে ইউটিউবকে কেন্দ্র করে অনলাইন থেকে টাকা আয় করাটা এখন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।
YouTube থেকে টাকা আয় করার জন্য প্রথমত আপনার একটি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। পরবর্তীতে চ্যানেলটিকে ইউটিউবের পার্টনারশীপ প্রোগ্রামে যুক্ত করতে হবে।
কিভাবে একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলা যায়?
ইউটিউব চ্যানেল খোলা অনেক সহজ একটি প্রক্রিয়া। একটি চ্যানেল খোলার জন্য একটি জিমেইল একাউন্ট ও প্রাথমিক কিছু তথ্য পূরন করাই যথেষ্ট। জিমেইল একাউন্ট খুলতে সাধারনত নাম, ফোন নাম্বার, বয়স, লিঙ্গ ও ছবি এসব তথ্যের প্রয়োজন হয়৷ জিমেইল একাউন্টটি দিয়ে ইউটিউবে প্রবেশ করে আপনি প্রোফাইলে গিয়ে Create a Channel এ ক্লিক করে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে পারবেন। ইউটিউব চ্যানেল খোলার এই পদ্ধতিটি গুগলের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যের একটি সেবা।
আরও পড়ুন-
YouTube (ইউটিউব) পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে কিভাবে যুক্ত হবেন?
গুগল পরিচালিত ইউটিউব পার্টনাশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ না করলে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম সম্ভব না। পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে কিছু প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে হবে।
YouTube Partnership Program এ অংশগ্রহণের শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে –
- ইউটিউব চ্যানেলে কমপক্ষে ১০০০ জন সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
- সর্বশেষ এক বছরে ইউটিউব চ্যানেলটিতে কমপক্ষে ৪ হাজার ঘন্টা ভিডিও দেখতে হবে।
- আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে একটি গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত করতে হবে।
উপরোক্ত শর্তগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলেই আপনি ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন (YouTube Channel Monetization)
ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে হবে। ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশনও বলা হয়। ইউটিউব মনিটাইজেশনের মাধ্যমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বসানো এবং বিজ্ঞাপন থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন চালু করার পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-
- ইউটিউবে Sign In করুন।
- আপনার Profile এ ঢুকে Creator Studio তে প্রবেশ করুন।
- এরপর আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি সিলেক্ট করে Status and feature এ ক্লিক করুন।
- Monetization লেখাটি দেখতে পেলে সেটি Enable করে দিন।
- সর্বশেষে Confirm এ ক্লিক করে বের হয়ে আসুন।
ইউটিউব চ্যানেলের জন্য সঠিক বিষয় বা নিসে (Niche) নির্বাচন
ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার জন্য সঠিক বিষয় বা নিসে (Niche) বেছে নেওয়া আপনার জন্য অনেক বেশি জরুরি। ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষেত্র রয়েছে৷ প্রযুক্তি, বিনোদন, শিক্ষা, খেলাধুলো, লাইফ হ্যাকস, পর্যটন, কৌতুক ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের হাজার হাজার ইউটিউব চ্যানেল বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
এই বিষয়গুলোর মধ্যে থেকে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য কোন বিষয়টিকে আপনি বাছাই করবেন সেটি ভেবে নিন। আপনার ব্যক্তিগত শখ, দক্ষতা ও আগ্রহকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। কারন, ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রটিতে আপনি নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ভিডিও তৈরি করতে না পারলে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়াও কোন ধরনের দর্শককে লক্ষ্য করে আপনি ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করছেন সেটি বিবেচনা করে সঠিক বিষয় বেছে নেওয়া জরুরি।
YouTube – ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার প্রধান পদ্ধতিগুলো কি কি?
ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমেই শুধুমাত্র ইউটিউব অর্থ প্রদান করে থাকে৷ আসুন ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার পদ্ধতিগুলো চটজলদি জেনে নেই –
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা
ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার একটি অন্যতম বড় মাধ্যম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। সহজ ভাষায় এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মানে হল, অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাদের পণ্যের প্রচারণা করা। আপনার ইউটিউব চ্যানেলে আপনি বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ প্রদান করে ডেসক্রিপশন বক্সে পণ্যটি ক্রয়ের জন্য লিংক শেয়ার করতে পারেন। এই লিংকে ক্লিক করে সেই পণ্যটি যত বেশি বিক্রয় হবে, আপনি তত বেশি কমিশন পাবেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানী ও Daraz সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এমন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুযোগ চালু রেখেছে। আমাদের দেশের ইউটিউবাররা এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্রচারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা কমিশন হিসেবে আয় করছেন।
গুগল অ্যাডসেন্স প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে টাকা আয় (Make Money Online Through Google AdSense)
ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে ইউটিউব চ্যানেলে অ্যাডসেন্স যুক্ত করা। গুগল অ্যাডসেন্স থেকে টাকা আয় করার জন্য ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে হবে। ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা বা পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্যগুলো এই লেখার প্রথম অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আপনি যে জিমেইল দিয়ে অ্যাডসেন্স এ আবেদন করবেন সেই জিমেইলে অবশ্যই আপনার বয়স ১৮ হতে হবে। তাছাড়া আপনার চ্যানেলের একটি সুদৃশ্য চ্যানেল আইকন থাকতে হবে।
বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ ভিডিও তৈরি করে আয়
আপনার ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ প্রদানের মাধ্যমেও ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা সম্ভব। আপনার চ্যানেলের কোনো ভিডিওতে স্বল্পসময়ের জন্য কোনো পণ্যের রিভিউ প্রদান করতে পারেন৷ এতে পণ্যটি সম্পর্কে আপনার দর্শকেরা জানতে পারবে৷ ফলে পণ্যটির প্রচারণা হয়ে যাবে এবং কোম্পানিটি আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে।
বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেলের জনপ্রিয়তার উপরেই মূলত সাফল্য নির্ভর করে। মানসম্মত রিভিউ তৈরি করার মাধ্যমে দর্শকদের কাছে আপনি যতবেশি বিশ্বাসযোগ্য হবেন, আপনার রিভিউ দেখে পণ্য ক্রয়ের সংখ্যাও তত বাড়বে। তাই মানুষের কাছে আপনার চ্যানেলের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করাতে অত্যধিক মনোযোগী হতে হবে।
স্পন্সরদের পক্ষে ভিডিও তৈরি করে আয় (Earn Money Online Through Sponsor YouTube Video Making)
স্পন্সরড ভিডিও তৈরি করেও ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়। ইউটিউব অ্যাড অথবা অ্যাফিলিয়েট লিংক থেকে যে পরিমাণ আয় করা সম্ভব তার থেকেও অনেক বেশি আয় করা সম্ভব শুধু স্পন্সরড ভিডিও তৈরি করার মাধ্যমে।
আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি যদি প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয় তবে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য ও সেবার বিক্রয় বাড়ানোর জন্য আপনার ইউটিউব চ্যানেলে পণ্য বা সেবাটি নিয়ে একটি স্পন্সরড ভিডিও তৈরি করার জন্য যোগাযোগ করবে। পরবর্তীতে, আপনাকে ঐ পণ্য বা সেবার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা তুলে ধরে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও তৈরি করে পাবলিশ করতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনার ইউটিউব চ্যানেলটির দর্শকেরা ঐ পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হবে। বিনিময়ে কোম্পানি প্রতি মাসে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে।
ইউটিউব থেকে আয় বৃদ্ধি করার কিছু কৌশল (How to increase YouTube AdSense earnings?)
উপরের বর্ণনাতে আশা করি; আমরা ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা আয় করতে পারব সে সম্পর্কে বিস্তারিত একটি ধারণা পেয়ে গেছি। এখন ইউটিউব থেকে আয় করার এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কি কি কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করা যায় সে সম্পর্কে জানব।
এসইও (SEO) টেকনিক ব্যবহার করা
Search Engine Optimization বা SEO হচ্ছে Google সহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে একটি ওয়েবসাইট প্রোমোট করার টেকনিক। SEO টেকনিক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ভিডিওটি ইউটিউবে সার্চকৃত ফলাফলগুলোর মধ্যে শুরুর দিকে জায়গা করে নেবে। ফলে অধিক পরিমাণে দর্শক ভিডিওটি দেখতে পারবে। এতে আপনার ইউটিউব থেকে আয় করার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
এসইও সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিতে পড়ুন- এসইও করে ভিজিটর বাড়ানোর উপায় : সহজ সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন
সফলভাবে SEO করার জন্য কিছু পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- সুনির্দিষ্ট কিছু কিওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করা।
- ভিডিওর ডেসক্রিপশনে সুনির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা।
- ভিডিওর শিরোনাম হিসেবে এমন কিছু কমন শব্দ ব্যবহার করা যা সকল শ্রেণীর মানুষ সার্চ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে।
ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশের জন্য মানসম্মত ভিডিও তৈরি করা
আপনাকে প্রতিনিয়ত নিত্য-নতুন ও মানসম্মত ভিডিও তৈরি করতে হবে। ভিডিওর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাল মানের ভিডিও তৈরি করা না হলে দর্শকেরা আপনার চ্যানেল দেখতে আগ্রহী হবে না। তাই ইউটিউব থেকে ভালো অংকের টাকা আয় করতে হলে ভাল কন্টেন্ট নির্মানে জোর দিতে হবে।
ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশের ক্ষেত্রে ইউটিইবের নীতিমালাগুলো জেনে রাখা আপনার জন্য অনেক বেশি জরুরি। কারন, নীতিবিরুদ্ধ কোনো ভিডিও আপনার চ্যানেলে প্রচার করা হলে ইউটিউব আপনার চ্যানেলটিকে বন্ধ করে দিতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করা
আপনার ইউটিউব চ্যানেলে নতুন ভিডিও আপলোড করার পর সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম যেমন- ফেইসবুক, টুইটার, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদি সাইটগুলোতে ভিডিওটি শেয়ার করা যেতে পারে। এতে অনেক বেশি পরিমাণে দর্শক ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলে আপনার ইউটিউব থেকে আয় করার সুযোগ বেড়ে যাবে।
ইউটিউব থেকে কত টাকা আয় করা সম্ভব?
YouTube থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা আয় করা সম্ভব এটি নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। এটি মূলত নির্ভর করবে আপনার দর্শকশ্রেণি, সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা, দর্শকদের সাথে আপনার চ্যানেলের পারস্পরিক যোগাযোগ কতটা গভীর এমন কিছু ফ্যাক্টরের মাধ্যমে।
বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস, ২০১৮ সালে ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিল। ফোর্বসের তথ্যমতে, ২২.৪ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার সমৃদ্ধ চ্যানেল Ryan’s World এর ইউটিউব থেকে আয় ছিল ২২ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৮৫ কোটি টাকা!
বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কিছু মানুষ ইতোমধ্যে ইউটিউব ব্যবসাকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট নিয়মিত আপলোড করার মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রচুর পরিমানে অনলাইনে টাকা ইনকাম করছে। অর্থাৎ ভালমানের ভিডিও কন্টেন্ট আপলোড করে চ্যানেলকে জনপ্রিয় করা সম্ভব হলে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা সম্ভব -একথা আজ প্রমানিত সত্য।
ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা প্রদান করে?
আপলোডকৃত ভিডিও’র জন্য ইউটিউব থেকে আপনি কত টাকা পাবেন সেটি নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেবে সেটি মূলত বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ভিডিওটির বিষয়, দর্শক শ্রেণির ধরণ, দর্শকদের ভৌগলিক অবস্থান, দর্শকদের বয়স, দর্শকদের লিঙ্গ, ক্লিক থ্রু রেট এর সংখ্যা ইত্যাদি।
ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে ইউটিউব কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি বেঁধে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে সিপিএম (CPM – কস্ট পার মাইলস) এবং সিপিসি (CPC – কস্ট পার ক্লিক) অন্যতম। সিপিএমকে থাউস্যান্ডের হারও বলা হয়ে থাকে। ইউটিউবারদের এই সিপিএম রেট সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উঠানামা করে।
ইউটিউব চ্যানেলের বিষয়গত ভিন্নতা ও দর্শকশ্রেণির ভিন্নতার কারনেও সিপিএম রেট কম বেশি হয়। সাধারণত প্রযুক্তি ভিত্তিক চ্যানেলগুলির সিপিএম রেট সব থেকে বেশি। আবার ভারতীয় দর্শকশ্রেণি, ইউরোপীয় দর্শকশ্রেণি ও বাংলাদেশী দর্শকশ্রেণির মধ্যে ইউরোপীয় দর্শকশ্রেনি বেশি হলে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার পরিমানটাও বেশী হয়।
অন্যদিকে শিক্ষা-ভিত্তিক চ্যানেলগুলির সিপিএম সাধারণত অনেক কম হয়ে থাকে। কারণ শিক্ষা ভিত্তিক দর্শকেরা মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক। ১৮ বছরের নিচের বয়সের দর্শকদের প্রতি বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনদাতাদের আগ্রহ তুলনামূলক কম। শিক্ষা ভিত্তিক ব্লগের সিপিএম (CPM) রেট সাধারণত ২ ডলারে মধ্যেই থাকে। তাছাড়া বিনোদন ভিত্তিক চ্যানেলগুলোর সিপিএম রেট ৩ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
অন্যদিকে, কস্ট পার ক্লিক (সিপিসি)- তে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনের লিংকে ক্লিক করলে তার পরিবর্তে টাকা পাওয়ার পদ্ধতিকে বুঝায়। বিজ্ঞাপনদাতার প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে প্রতি ক্লিকে এর দাম উঠানামা করে।
ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা তোলা যায়?
ইউটিউব থেকে সরাসরি টাকা তোলা যায় না। টেক জায়ান্ট গুগল তাদের গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে টাকা প্রদান করে থাকে। ইউটিউবের পক্ষ থেকে প্রতি মাসের ১০ থেকে ১৪ তারিখের মধ্যে আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে। অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে অর্থের পরিমাণ ১০ ডলার হলে গুগল আপনার ঠিকানায় ডাকযোগে কোডসহ একটি চিঠি পাঠাবে। অ্যাকাউন্টে ঢুকে সেই কোডটি ভেরিফাই করে নিতে হবে। পরবর্তীতে আপনার অ্যাকাউন্টে ১০০ ডলার জমা হলে গুগল আপনার প্রদানকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেবে।
— পরিশেষে —
ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা একইসাথে সহজ ও চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়৷ ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন না। ইউটিউব থেকে আয়ের জন্য আপনাকে অনেক বেশি ধৈর্য্য ধরতে হবে। ধৈর্যশীল হয়ে বেশকিছু মানসম্পন্ন ভিডিও তৈরি করার মাধ্যমে আপনি দর্শকদের নজরে পড়বেন। আপনার চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের পরিমানও বাড়তে থাকবে।
আমাদের দেশের ক্রম বর্ধমান বেকার জনগোষ্ঠীর অর্থ উপার্জনের জন্য ইউটিউব চ্যানেল একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে৷ চাকরির পাশাপাশি বাড়তি রোজগারের জন্যও ইউটিউব বেশ ভাল একটি মাধ্যম। তাই আপনাদের জন্য পরামর্শ, ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য মেধা, শ্রম ও সৃজনশীলতা প্রয়োগ করে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান।
তো, আর দেরি কেন?
যারা ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার নিশ্চিত উপায় খুঁজছিলেন; উপরের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ করে Financial Freedom অর্জন করার পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যান। প্রয়োজনে আমরা তো রয়েছিই আপনার অনলাইনে আয় বিষয়ক যে কোন সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে সঠিক পথ প্রদর্শণের নিমিত্তে।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন –
খুব সুন্দর হয়েছে এবং ভালো লাগলো। আরো এই ধরনের আর্টিকেল চাই।