গুগল থেকে টাকা আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ৩টি পদ্ধতি

ইন্টারনেটের সাথে পরিচিত সবাই আজকাল অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে চায়। আর এই ইনকামের সোর্স যদি হয় গুগল, তবে আগ্রহটা যেন বেড়ে যায় শতগুণে। তাই, সকলের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে অনলাইন থেকে আয়ের এই পর্বে গুগল থেকে টাকা আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ৩টি পদ্ধতি শিরোনামের এই লেখাতে গুগল থেকে কিভাবে অনলাইনে টাকা আয় করা যায়; তার বিস্তারিত গাইডলাইন পাবেন।

গুগল একটি জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত প্লাটফর্ম হওয়ায় এখান থেকে টাকা আয় করা সত্যিই লোভনীয় একটি বিষয়। কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে, গুগল থেকে সত্যিই কি টাকা ইনকাম করা যায়? কিংবা গুগল থেকে টাকা আয় করা কি আদৌ মুখের কথা, প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয় নিশ্চয়ই?

গুগল থেকে টাকা আয় যে সত্যিই সম্ভব, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। বাকি রইল কাঠখড় পোড়ানোর ব্যাপারটা। আমি বলি, আগুনের ভালো তাপ পেতে কাঠখড় একটু পোড়াতে হবেই… এর কোনো বিকল্প নেই।

কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই পোড়ানো কাঠখড় আপনার বৃথা যাবে না…. বরঞ্চ সারা রাত আপনাকে উষ্ণ রাখতে এবং আলো দিয়ে পথ দেখাতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, আমি কি বলছি। গুগল থেকে টাকা আয় করতে হলে আপনাকে অবশ্যই শ্রম দিতে হবে। কিন্তু এই শ্রমের বিনিময়ে আপনি যা পাবেন, তা অন্যকোথাও পাওয়া যাবে না।

তবে শুধু পরিশ্রমই নয়, কাজে লাগাতে হবে নিজের সৃজনশীলতা এবং আলসে মগজটাকেও। আপনি যত বেশি সৃজনশীল হবেন, গুগলের মাধ্যমে টাকা আয় করার নিশ্চয়তা বা সফল হওয়ার সম্ভাবনা সমানুপাতিক হারে তত বেশি বেড়ে যাবে।

গুগল থেকে টাকা আয় করার জনপ্রিয় পদ্ধতি সমূহ মূলত ৩টি। সেগুলো হলো-

এখানে পর্যায়ক্রমে সবগুলো রাস্তা নিয়েই সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হবে।

গুগল এ্যাডসেন্স – গুগল থেকে টাকা আয় করার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম

গুগল এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা গুগল থেকে টাকা আয় করার অন্য পদ্ধতিগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি সহজ। 

গুগল থেকে টাকা আয় - Google AdSense
Google AdSense – গুগল থেকে টাকা আয়

এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞাপন নির্ভর। খবরের কাগজগুলো বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে যেমন মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করে, তেমন আপনিও আপনার ব্লগে এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে গুগলের সরবরাহ করা বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে প্রচুর টাকা উপার্জন করে চলেছে। এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি ১০০ জন প্রফেশনাল ব্লগারের মধ্যে ২০ জন এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে এতো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে যে, তার আর বাড়তি কোনো চাকরী না করলেও চলে।

কিছুদিন আগেও বাংলা ভাষায় নির্মিত ব্লগে এ্যাডসেন্সের সাপোর্ট ছিল না। কিন্তু এখন বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ ওয়েবসাইটেও এ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য অনুমতি পাওয়া যায়। 

আপনার ওয়েবসাইটকে গুগলের এ্যাডসেন্স সার্ভিসের সাথে যুক্ত করলে গুগল আপনার ওয়েবসাইটে কিছু বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে। সেই বিজ্ঞাপনগুলোতে যদি কোনো ভিজিটর ক্লিক করে, তবেই আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়া হবে। 

প্রতি ক্লিকের জন্য আপনাকে কি পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হবে, তা নির্ভর করবে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্টান গুগলের সাথে কত টাকার চুক্তি করেছে, তার উপর।  

প্রতি ক্লিকের জন্য বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান গুগলের সাথে যত টাকার চুক্তি করবে, তার প্রায় ৬৮% গুগল আপনাকে দিয়ে বাকিটা নিজেরা রাখবে। 

তবে শুধুমাত্র ক্লিকই নয়, বিজ্ঞাপনগুলো প্রদর্শনের জন্যেও সামান্য পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে প্রতি ভিজিটরের জন্য আয়ের হিসেবটা খুবই সামান্য। কিন্তু ভিজিটর বেশি থাকলে এই সামান্য অর্থই মোট হিসেবে অসামান্যতে রূপ নেয়। 

বর্তমানে এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী ব্যক্তিটি হলেন Pete Cashmore। স্কটল্যান্ডের এই বাসিন্দা ২০০৫ সালে ব্লগিং শুরু করেন এবং বর্তমানে ২০২০ সালে গুগল এ্যাডসেন্স হতে তার মাসিক আয় এসে দাড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি মার্কিন ডলারে। তার ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তিনির্ভর এবং এর নাম mashable.com।  

গুগল এ্যাডসেন্স থেকে টাকা আয় করার উপায়

গুগল এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে আপনার প্রথমেই প্রয়োজন হবে নিজের একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইটের।  

  • ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানানোর জন্য প্রথমে একটি প্লাটফর্ম নির্বাচন করতে হবে। সিরিয়াসলি গুগল থেকে টাকা আয় করতে চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস আপনার জন্য সেরা প্লাটফর্ম হতে চলেছে। কিন্তু এমনিই শেখার জন্য ব্লগিং করতে চাইলে গুগল পরিচালিত ব্লগারে ওয়েবসাইট তৈরী করতে পারেন।
  • ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট তৈরী করলে আপনাকে ডোমেইন ও হোস্টিং এর বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। কেননা, হোস্টিং ও ডোমেইন ছাড়া ওয়েবসাইট কল্পনা করা যায় না। একটা ব্লগ সাইট তৈরীর জন্য প্রথমেই ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে হবে।
  • ওয়েবসাইটের লুক এবং ফাংশনালিটির জন্য ভালো একটা থিম নির্বাচন করতে হবে।
  • ওয়েবসাইটটি ভালোমতো কাস্টমাইজ করে ইউজার ফ্রেন্ডলি কাঠামোতে নিয়ে আসতে হবে।

এ্যাডসেন্সের এ্যাপ্রুভাল পাওয়ার জন্য ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরী করে সেখানে ভালোমানের বেশ কয়েকটি আর্টিকেল ( সর্বনিম্ন প্রায় ২০ থেকে ৩০ টি ) প্রকাশ করতে হবে।

আর্টিকেলের সংখ্যা নিয়ে একেকজন একেক কথা বলে থাকে। কেউ কেউ দেখা যায় ১২ টা আর্টিকেল লিখেও এ্যাডসেন্স পেয়ে যায়, আবার কেউ ৫০ টা লিখেও পেতে পারে না। তবে ২০-৩০ টা আর্টিকেল হলেই এ্যাপ্রুভাল পাওয়ার আশা থাকে।

  • আর্টিকেলগুলোকে অবশ্যই ইউনিক বা কপিমুক্ত হতে হবে।
  • শুধুমাত্র আর্টিকেলই নয়, গুগল এ্যাডসেন্স ব্যবহারের অনুমতি পেতে হলে “আমাদের সম্পর্কে, গোপনীয়তা ও শর্তাবলী, যোগাযোগ” ইত্যাদী নামে কয়েকটি পেইজ তৈরী করতে হবে।

আর্টিকেলগুলো ঠিকঠাক মতো গুগলে ইনডেক্স হয়ে গেলে আপনি গুগলে এ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।  গুগলের এ্যাডসেন্সের জন্য এ্যাপ্রুভাল পাওয়াটা খুব সহজ যেমন নয়, তেমনই খুব কঠিন ব্যাপারও নয়। গুগলের দাবী, তাদের কাছে প্রতিদিন হাজার হাজার ওয়েবসাইটের এ্যাডমিন এ্যাডসেন্সের এ্যাপ্রুভালের জন্য আবেদন করে। অথচ তারা সেই হাজার হাজারের মাঝে মাত্র ৫% কে এ্যাপ্রুভাল দিয়ে থাকে।

সে যাই হোক, প্রকাশিত কনটেন্ট এবং নিজ শ্রমের প্রতি সৎ থাকলে গুগল এ্যাডসেন্স পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। 

গুগল এ্যাডসেন্সে এ্যাপ্রুভাল পাওয়ার পরেও ওয়েবসাইট বা ব্লগের গুণগত মান বজায় রাখতে হয়। কারণ ওয়েবসাইটে এ্যাডসেন্সের এ্যাপ্রুভাল পেয়ে যাওয়া মানেই কিন্তু ‘নিশ্চিন্ত আয়ের সোর্স’ পেয়ে যাওয়া নয়। আপনি কেবল গুগলকে ব্যবহার করে ইনকাম করার অনুমতি পেয়েছেন, অর্থ উপার্জনের প্রতিশ্রুতি এখনো পান নি। 

এ্যাডসেন্স এ্যাপ্রুভাল পাওয়ার পর আপনার আয় সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে ভিজিটরের উপর৷ প্রতিদিন কতজন ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন দেখছে এবং কতজন বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে তাতে ক্লিক করছে, তার উপরই নির্ভর করবে আপনাকে গুগল কত ডলার দিবে। 

তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, গুগল এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে ‘ভিজিটর’ বা আপনার ব্লগের পাঠকের ভূমিকা কত্ত গুরুত্বপূর্ণ!  

ব্লগে ভালো পরিমাণ ভিজিটর পাওয়ার জন্য বেশিরভাগ ব্লগারই সার্চ ইঞ্জিনগুলো থেকে আসা অর্গানিক ভিজিটরের ওপর নির্ভরশীল থাকেন। ব্লগ থেকে প্রকাশিত প্রতিটি আর্টিকেলে ভালো মানের এসইও নিশ্চিত করা গেলে সার্চ ইঞ্জিনগুলো থেকে সহজেই প্রচুর পরিমাণ ভিজিটর পাওয়া যায়। 

অনেকের মনে হতে পারে, গুগল এ্যাডসেন্স থেকে তো তাহলে ইনকাম করা খুবই কঠিন। কারণ এরজন্য অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয়। প্রথমে ওয়েবসাইট খোলা, তারপর সেখানে কনটেন্ট ঢুকানো, তারপর পাঠকের অপেক্ষা….

আসলেই কিন্তু তাই! তবে এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ইনকাম করাকে “কঠিন” না বলে “সময়সাপেক্ষ” বললে সঠিক বলা হবে। এ্যাডসেন্স থেকে কেউ কেউ ব্লগ ওয়েবসাইট খোলার ৩-৪ মাসের মাঝেই মাসে ৩০০-৪০০ ডলার কামাতে থাকে। আবার কেউ কেউ ২ বছর পর যেয়ে প্রথম টাকার মুখ দেখে।

আপনি ঠিক কবে টাকার মুখ দেখবেন, তা নির্ভর করবে গুগলের সাথে আপনার কন্টেন্টের খাতির কবে জমবে, তার উপর। গুগলে বিভিন্ন কিওয়ার্ডে আপনার আর্টিকেলের অবস্থান যত উপরের দিকে উঠতে থাকবে, যত বেশি ভিজিটর আপনার ব্লগে প্রবেশ করবে, আপনার আয়ের সম্ভাবনাও সমানুপাতিক হারে উর্ধ্বগামী হবে।

তবে বাংলা ভাষায় ব্লগিং করলে সফলতা পেতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। কারণ বাংলাভাষীর সংখ্যা কম না হলেও গুগলে বাংলায় সার্চ করা দেশপ্রেমিকের সংখ্যা ঢের কম! এছাড়াও বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য এখনও টেলিভিশনের উপর নির্ভরশীল। গুগলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারে তারা এখনও সেভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠেনি। ;(

আরও পড়ুন

এ্যাডসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কিংবা নিজের ওয়েবসাইটের জন্য এ্যাডসেন্স এ্যাপ্রুভাল পেতে ভিজিট করুন এ্যাডসেন্স বিষয়ক গুগলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে।

ইউটিউব – গুগল থেকে টাকা আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম

জনপ্রিয়তার দিক থেকে ইউটিউব প্লাটফর্মটি এখন সবার শীর্ষে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই চায় যেকোনো ভাবে ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করতে। কেননা, ইউটিউবই গুগলের একমাত্র প্লাটফর্ম, যেখানে টাকা ইনকামের পাশাপাশি সরাসরি সেলিব্রিটি বনে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। 

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার উপায় - গুগল থেকে টাকা আয় করার পদ্ধতি
Youtube – গুগল থেকে টাকা আয়

যেহেতু সবাই ইউটিউবার হতে চায়, তাই এখানে প্রতিযোগিতা খুব বেশি। প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় সফল হওয়ার সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম। 

ইউটিউব থেকে টাকা আয় অনেকটাই বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করে। একেকটা ইউটিউব চ্যানেল অনেকটা টিভি চ্যানেলের মতো। টিভি চ্যানেলে যেমন অনুষ্ঠানের মাঝে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়, তেমনই ইউটিউব চ্যানেলগুলোতেও ভিডিওর মাঝে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে অর্থ উপার্জন করা যায়।   

ইনকামের তাগিদে নিজের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করার জন্য ইউটিউবারদের প্রথমেই ইউটিউবের পার্টনারশীপ প্রোগ্রামে অংশ নিতে হয়। পার্টনারশীপ প্রোগ্রামে অংশ নিতে হলে ইউটিউবারদের জন্য কিছু শর্ত পালন করা অবশ্যকর্তব্য। সেগুলো হলো:  

  • চ্যানেলে সর্বনিম্ন ১০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
  • গত বারো মাসের ইউনিক ওয়াচ টাইম কমপক্ষে ৪ হাজার ঘন্টা হতে হবে।   

এই দুইটি শর্ত পালন করতে পারলে ইউটিউবের পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশ নেয়া যায়। এটাকে  মনিটাইজেশনও বলা হয়ে থাকে। 

নতুনদের কাছে ইউটিউবে ভালো পজিশন পাওয়া কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু যেকোনো ভাবে কোনো একটা ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলেই ভাগ্য পরিবর্তন হতে সময় লাগে।  

একেকজন জনপ্রিয় ইউটিউবার মাসে হাজার থেকে লাখ টাকা, এমনকি কেউ কেউ কোটি টাকাও ইনকাম করে থাকে। বাংলাদেশে বেশ কিছু ইউটিউবার আছেন, যারা বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ভিডিও কিংবা ভ্লগ করে প্রতিমাসে লাখ টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। 

তবে একটা ওয়েবসাইট এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে মাসে যত টাকা কামাই করতে পারে, একই পরিমাণ ভিজিটরকে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ইউটিউবে তত টাকা কামাই করা যায় না। এর কারণ ওয়েবসাইটের সিপিসির তুলনায় ইউটিউবের সিপিসি অনেক কম। 

ইউটিউবে আপনার কোন ভিডিও থেকে কেমন আয় হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার বাছাই করা ক্যাটাগরির উপর। যেমন, পাঠ্যপুস্তক নির্ভর শিক্ষামূলক ভিডিওগুলোতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে যত টাকা কামাই করা যাবে, একই পরিমাণ দর্শকের কাছে প্রযুক্তিনির্ভর ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তারচেয়ে বেশি টাকা উপার্জন করা যায়। 

এর কারণ, ইউটিউবের সাথে চুক্তিবদ্ধ বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলেমেয়েকে বিজ্ঞাপন দেখানোর পেছনে বেশি টাকা ঢালতে চায় না। আর পাঠ্যপুস্তকনির্ভর চ্যানেলগুলোর দর্শক হয়ে থাকে ১৮ বছরের নিচে থাকা ছেলেমেয়েরা।

প্রযুক্তিনির্ভর ভিডিওর পাশাপাশি রিভিউ, ভ্রমণ, রেসিপি ইত্যাদী ক্যাটেগরি বেশ জনপ্রিয় এবং এগুলোতে আয়ের সম্ভাবনাও বেশি। এছাড়াও রয়েছে হাসির ভিডিও নামক জনপ্রিয় ক্যাটাগরি। এই ধরণের ভিডিওর ইনকাম ও জনপ্রিয়তা বেশি হলেও প্রতিযোগিতা অনেক অনেক বেশি থাকে। 

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার জন্য করনীয় 

একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি বাছাই করুন।

  • ভাবুন আপনি কোন বিষয়ের উপর ভিডিও তৈরী করতে আপনার ক্লান্তিবোধ আসে না। 
  • এমন ক্যাটাগরি বাছাই করুন, যেটার উপর আপনি প্রচুর ভিডিও বানাতে পারবেন। মনে করুন আপনি ভ্রমণ বিষয়ক চ্যানেল বানাতে চান, কিন্তু মাসে একবারও কোথাও ঘুরতে যান না… তাহলে তো হবে না।

ইউটিউবিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদী কিনে ফেলুন। প্রথম অবস্থায় ক্যামেরা কিনতে না চাইলে মোবাইলই ব্যবহার করতে পারেন। তবে মোবাইলের ক্যামেরা অবশ্যই ভালো হতে হবে।  

আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্যাটাগরির উপর ২০-২৫ টা ভিডিও বানিয়ে ফেলুন। তারপর ভিডিওগুলো ভালোভালো ইডিট করুন। ক্যামেরা যেমনই হোক, ইডিট আপনার ভিডিওকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।

  • বর্তমানে এমন অনেক এ্যাপ আছে, যেগুলো দিয়ে এ্যান্ড্রোয়েড মোবাইলেই প্রোফাশনালভাবে ভিডিও ইডিট করা যায়। যেমন: KineMaster, Power Director ইত্যাদী।
  • ভিডিওগুলোতে ভালো থাম্বনেইল যুক্ত করতে হবে। এন্ড্রোয়েড মোবাইলের জন্য থাম্বনেইল তৈরী করতে PixelLab এবং Background Eraser দারুন কাজ করে।

এবারে ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলুন। আপনার ক্যাটাগরির সাথে মিল রেখে ভালো একটা নাম দিবেন। পাশাপাশি ভালো একটা কভার ফটো ও প্রোফাইল ফটো যোগ করুন। 

চ্যানেল খোলার পর আগে যে ২০-২৫ টা ভিডিও বানিয়েছিলেন, সেগুলো ২-৩ দিন পর পর আপলোড করুন।

  • পুরাতন ভিডিও আপলোডের পাশাপাশি নতুন ভিডিও বানানোর কাজ কিন্তু বন্ধ করা যাবে না! 
  • ২-৩ দিন পর আপলোড করতে না পারলে সময় বাড়িয়ে নিন। তবে ৭ দিনের বেশি গ্যাপ রাখবেন না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার ভিডিওগুলোর লিংক ছড়িয়ে দিন। নিজের একটা দল বানান। প্রত্যেককে আপনার ভিডিও শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করুন। 

ইউটিউব পার্টনারশিপ ইভেন্টের শর্তসমূহ পূরণ হয়ে গেলে আপনার চ্যানেলটি মনিটাইজ করে দিন! তারপর নতুন জিবন উপভোগ করুন! 😀

ইউটিউবে সফলতা আসতে সময় ও ভাগ্য দুইটাই লাগে। এতো এতো ইউটিউবারদের ভিড়ে নিজেকে শুধুমাত্র ভিন্নভাবে পরিচয় করাতে পারলেই ইউটিউবে সফল হওয়া যায়। কাউকে অনুসরণ কিংবা সবার মতো করে কাজ করলে সফলতা আকাশের চাঁদের মতো ধরা ছোঁয়ার বাইরে বসে হাসবে।

এ্যাডমোব – গুগল থেকে টাকা আয় করার সবচেয়ে লাভজনক মাধ্যম

আপনার মোবাইলে নিশ্চয়ই “Google Play Store” এ্যাপটি আছে। সেই এ্যাপে ঢুকলে আপনি কি দেখতে পান? হাজার হাজার এ্যাপলিকেশন, গেইম, তাই না? 

গুগল এডমোব থেকে টাকা আয় করার উপায়
Google Admob – গুগল থেকে টাকা আয়

আপনি চাইলেই এসব গেইম বা এ্যাপ ফ্রিতে আপনার মোবাইলে ডাউনলোড করে সুবিধা ভোগ করতে পারেন। একজন ডেভেলপারের মাসের পর মাস কষ্ট করে বানানো এ্যাপ আপনি ব্যবহার করতে পারেন সম্পূর্ণ ফ্রীতে!  

তাহলে এ্যাপটা বানিয়ে ডেভেলপারের লাভ কি হলো, এমন প্রশ্ন আপনার মনে এসেছে কখনো? 

প্রশ্ন আসুক, কিংবা না আসুক, উত্তর হলো গুগলের এ্যাডমোব সার্ভিস ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে।  ইন্টারনেট সংযোগ থাকা অবস্থায় এসব এ্যাপে ঢুকলে আপনি অবশ্যই বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন। এসব বিজ্ঞাপন সরবরাহ করে এ্যাডসেন্সের মতো গুগলের আরেকটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এ্যাডমোব।  

এ্যাডসেন্স মূলত ব্লগ বা ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য তৈরী করা হয়েছে। অন্যদিকে এ্যাডমোব তৈরীর উদ্দেশ্য বিভিন্ন এ্যাপলিকেশনে বিজ্ঞাপনের প্রচার। 

গুগলের এ্যাডমোবের আশীর্বাদে ডেভেলপাররা তাদের কষ্টের সম্মানী পায়। এ্যাডমোবের মাধ্যমে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনে কেউ ক্লিক করলে কিংবা শুধু দেখলেও গুগল ডেভেলপারের এ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে থাকে। 

এ্যাপ ডেভেলপিং বা তৈরী করে লক্ষ লক্ষ ডেভেলপার এ্যাডমোবের বিজ্ঞাপন বসিয়ে প্রতিমাসে গুগল থেকে প্রচুর টাকা ইনকাম করছে। আপনি চাইলে নিজেও এরকম এ্যাপ বানিয়ে প্লে স্টোরে জমা দিতে পারেন এবং এভাবে খুঁজে নিতে পারেন গুগল থেকে টাকা আয়ের নিশ্চিত একটি সোর্স। 

এ্যান্ড্রোয়েড মোবাইলের জন্য প্রোফেশনাল এ্যাপ বানাতে হলে আপনাকে অবশ্যই বেশ কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানতে হবে। এরপর আপনি আপনার সৃজনশীলতার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো কাজের এ্যাপ তৈরী করতে পারবেন। 

এছাড়াও এ্যাপ না বানিয়ে আপনি এ্যান্ড্রোয়েড গেইম তৈরী করতে পারেন। ভালো গেইম তৈরী করলে টাকার জন্য আপনাকে শুধুমাত্র গুগল এ্যাডমোবের বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে থাকতে হবে না। আপনি গেইমের বিভিন্ন ফিচার মেম্বারদের টাকার বিনিময়ে আনলোক করার প্রলোভন দেখাতে পারবেন।  এভাবেই ফ্রি ফায়ার, পাব্জি, ক্লাশ অব ক্ল্যানের মতো হাজার হাজার গেইম ডেভেলপাররা প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ বিক্রি করে প্রতি মাসে কোটি টাকা ইনকাম করে নিচ্ছে।  

প্লে স্টোরে নিজের তৈরী করা এ্যাপ যুক্ত করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়না। মানসম্মত একটি এ্যাপ বানিয়ে ২৫ ডলার জমা দেয়ার মাধ্যমে গুগল প্লে স্টোরে আপনার এ্যাপের জন্য জায়গা তৈরী করে নিতে পারবেন। এরপর এ্যাডমোবের মাধ্যমে এ্যাপে বিজ্ঞাপন বসিয়ে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পাবেন।

তবে এ্যাপ শুধু বানালেই তো হবে না৷ এ্যাপটাকে ভালোভাবে প্রমোট করতে হবে। যত বেশি মানুষ আপনার এ্যাপটি ডাউনলোড করবে, আপনার ইনকাম তত দ্রুত উর্ধ্বগামী হবে। 

এখানে বলে রাখা ভালো, ইন্টারনেটে ‘২ মিনিটে  এ্যাপ বানান’ টাইপ বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অন্য এ্যাপের সাহায্যে নিজের এ্যাপ বানালে লাভের লাভ কিছুই হবে না। শর্টকাটের কথা ভুলে যেয়ে সাধারণ উপায়ে কোডিং শিখে তারপর এ্যাপ বানাতে বসতে হবে। নয়তো উপার্জনের আশা ছেরে দিতে হবে।  কেননা, প্রকৃত ডেভেলপাররাই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করে। আর সেখানে টুলস দিয়ে এ্যাপ বানালে জায়গা কোথায় হবে, বুঝতেই পারছেন!

শেষ কথা

এই তিনটি সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে গুগল মানুষের প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রশস্ত একটি রাস্তা তৈরী করে দিয়েছে। এই রাস্তা শুধুমাত্র সৃজনশীলদের জন্য প্রশস্ত। এসব কাজে প্যাশোনেট না থাকা কেউ যদি শুধুমাত্র ‘গুগল থেকে টাকা ইনকাম করব’ ধান্দায় এসব শুরু করে, তবে এ পথ তার কাছে কন্টাকাবৃত মনে হতে বাধ্য। 

তাই আপনার যদি লিখালিখি ভালো লাগে, শুধুমাত্র তবেই ব্লগিং করুন, এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে পারবেন। আপনার যদি ভিডিও বানাতে ভালো লাগে, তবেই ইউটিউবিং এবং এ্যাপ বানাতে ভালো লাগলে এ্যাডমোব নিয়ে ভাবুন।  

অনাগ্রহের কিছু শুধুমাত্র টাকার লোভে পড়ে শুরু করে দেবেন না। এতে সময়ের অপচয় ছাড়া কোনো লাভ হবে না।

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন-

3 thoughts on “গুগল থেকে টাকা আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ৩টি পদ্ধতি”

Comments are closed.