বর্তমান যুগে ব্যবসার চেহারা পালটে গেছে। যে কেউ ঘরে বসেই হয়ে যেতে পারে ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তা। উপার্জন করতে পারে পর্যাপ্ত অর্থ। অনলাইনে ব্যবসার মাধ্যমে ইনকামের এরকমই অন্যতম একটি জনপ্রিয় উপায় হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। আসুন জেনে নিই- Affiliate Marketing কি? কিভাবে শুরু করবো; বিস্তারিত সবকিছু।
এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি Affiliate Marketing এর মাধ্যমে ইনকাম করা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর বেসিক ধারণা থেকে শুরু করে মার্কেটিং এর বিষয়ে বেশ কিছু গভীর তথ্য জানতে পারবেন পুরো লেখাটি মন দিয়ে পড়লে।
Affiliate Marketing কি?
এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটি বিশেষ ব্যবস্থা যেখানে আপনি অন্য কোনো কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে কমিশন লাভ করতে পারেন। এই কমিশন মূলত পণ্যটির বিক্রয় মুল্যের একটা ছোট অংশ বা পার্সেন্টেজ। কোম্পানি তাদের সুবিধামতো পার্সেন্টেজ নির্ধারণ করে এবং প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করে।
কেন Affiliate Marketing করবো?
একটা নতুন বিজনেস শুরু করা অনেক বেশি ব্যয়বহুল। অফলাইনে দোকান তৈরী থেকে শুরু করে একসঙ্গে অনেক পণ্য ক্রয়, কর্মী, প্রয়োজনীয় আসবাব ইত্যাদী খাতে বহু মূল্যবান অর্থ শুরুতেই খরচা হয়ে যায়। এগুলো করার পরও ব্যবসায় লসের ঝুঁকি তো আছেই।
অন্যদিকে, এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য আপনার প্রয়োজন নেই কোনো সত্যিকারের দোকান, কর্মী কিংবা পণ্য কেনার অগ্রিম টাকার। দরকার হবে শুধু একটা ওয়েবসাইটের। ব্যস, ওয়েবসাইট থাকলেই আপনি শুরু করে দিতে পারবেন আপনার অনলাইন ব্যবসা।
এছাড়াও, একজন সাধারণ সেলসম্যান মূলত ব্যবসা শুরুর আগে একটি নির্দিষ্ট নিশ বাছাই করে নেয় এবং শুধু সেই নিশ কেন্দ্রিক পণ্যই তার দোকানে থাকে। এক ধরণের পণ্যের দোকান চালাতেই সে হিমশিম খায়। অনেকে আবার নির্দিষ্ট একটি কোম্পানীর পণ্য ব্যতীত অন্য কোম্পানীর পণ্য দোকানেই তুলতে পারে না।
অথচ, এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করলে আপনি একই ওয়েবসাইটের ভেতর অনেক ধরণের পণ্য কিংবা বিভিন্ন কোম্পানীর ভিন্ন ভিন্ন পণ্যও বিক্রি করতে পারবেন। নিশ ভিত্তিক একেক ধরণের পণ্যের জন্য একেকটি ওয়েবসাইট খুললেও সেগুলো ম্যানেজ করতে সমস্যা হবে না। নেই ডেলীভারী দেয়ার চিন্তা কিংবা পণ্য জোগার করার ভয়। এগুলো দায়িত্ব কোম্পানীর নিজের।
এসব কারণের জন্যেই এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার আজই ব্যবসা শুরু করা উচিৎ।
Affiliate Marketing কিভাবে কাজ করে ?
যাদের পণ্য আপনি বিক্রি করতে চান, সরাসরি সেই কোম্পানী কিংবা মার্চেন্ট আপনাকে একটি বিশেষ লিংক দিবে। লিংকটাকে বিশেষ বলার কারন, আপনাকে এবং আপনার মতো আরেকজনকে দেয়া লিংক কখনো একই রকম হবে না। এই লিংকটি ব্যবহার করেই আপনাকে তাদের পণ্য প্রচার করতে হবে।
যখন কেউ আপনার প্রচার করা লিংকে ক্লিক করবে, Cookie নামের ছোট্ট একটি ফাইল তাদের ডিভাইসে অটোমেটিক ভাবে সংরক্ষিত হবে। এই এ্যাফিলিয়েট কুকির কাজ হলো কবে ও কোন লিংকে ক্লিক করে সেই ব্যক্তি ঐ পণ্যটি কিনেছিল, সেটার হিসাব রাখা।
এর ফলে, লিংকে ক্লিক করে পণ্যটি কিনে ফেললে আবার অটোমেটিকভাবে সেই কুকি ফাইলের তথ্যগুলো সেই কোম্পানীর ওয়েবসাইটে চলে যায়। ফলে কোম্পানি বুঝতে পারে এই ক্রেতা কার লিংকে ক্লিক করে পণ্যটি কিনেছে। তাকে তারা পূর্ব নির্ধারিত কমিশন প্রদান করে পুরস্কৃত করে।
বলে রাখা ভালো, প্রতিটি এ্যাফিলিয়েট কুকির একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। মেয়াদ একেক ওয়েবসাইটে একেকরকম থাকলেও সাধারনত এটি ২৪ ঘন্টা থেকে ২ মাসের ভেতর হয়ে থাকে।
কোনো ব্যক্তি যদি আপনার লিংকে ঢুকে পণ্যটি দেখে, কিন্তু সাথে সাথে না কিনে ফিরে যায় , কিন্তু মেয়াদের মধ্যে কেনে, তবুও আপনি ঠিকই কমিশন পাবেন।
এ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লার্টফর্ম হলো এ্যামাজন। এ্যামাজনের কুকি ফাইলের মেয়াদ সবচেয়ে কম, মাত্র ২৪ ঘন্টা।
অর্থাৎ আপনি যদি এ্যামাজনের কোনো পণ্যের লিংক প্রচার করেন এবং সেই লিংকে একজন ক্লিক করে ফিরে যায় , কিন্তু পরে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেটি কেনে, তবুও আপনি কমিশন পাবেন। ২৪ ঘন্টার পরে কিনলে আর কোনো কমিশন পাবেন না।
Affiliate Marketing এর মাধ্যমে কত টাকা ইনকাম করা যায়?
এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা ইনকাম আপেক্ষিক বিষয়। ইনকামের পরিমাণের কোনো লিমিট নেই। এটা মূলত আপনার নিশ এবং আপনার কাজের উপর নির্ভর করবে।
বিশ্বের সবচেয়ে সফল এ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা ছয়-সাত ডিজিট পরিমাণ ডলার প্রতি মাসে ইনকাম করছে। একটু গুগল এবং ইউটিউবে সার্চ করলেই সফল এ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের সাক্ষাৎকার দেখতে পারবেন।
এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল হওয়ার জন্য প্রথমেই আপনার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। আপনি কত টাকা ইনকাম করতে চান এবং কিভাবে অগ্রসর হলে এটা সম্ভব হবে, সেই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।
বলাই বাহুল্য, ইনকাম শুরু হতে আপনার যথেষ্ট সময় লাগবে, তবে একবার শুরু হয়ে গেলে উপার্জনের পরিমাণ দ্রুত বাড়বে।
Affiliate Marketing এর প্রকারভেদ
পণ্যের মার্কেটিং এর সঙ্গে মার্কেটারের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।
Unattached অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
এই ধরণের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে মার্কেটারের সঙ্গে পণ্যের সরাসরি কোনো সম্পর্ক থাকে না। মার্কেটার অনেক ক্ষেত্রে জানেও না, তার প্রচার করা পণ্যটির উপকারীতা ও অপকারীতা কি কি কিংবা তাদের ব্যবহারই বা কি।
এসব ক্ষেত্রে মার্কেটাররা তার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তুর সাথে মিলিয়ে কোম্পানীর কাছ থেকে কোনো পণ্যের ছবি বা ব্যানার তাদের ওয়েবসাইটে লাগিয়ে রাখে। কেউ সেই ছবি বা ব্যানারে ক্লিক করে পণ্যটি কিনলে মার্কেটার লাভবান হয়।
বাংলা সংবাদ পোর্টাল ওয়েবসাইট এবং বিশেষ করে ফ্যাশন সম্পর্কিত ইংরেজী ব্লগগুলোতে এধরণের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বেশি দেখা যায়।
Involved অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
এই ধরণের মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে মার্কেটার তার প্রচার করা পণ্যের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এধরণের মার্কেটাররা ঐ পণ্যের খুঁটিনাটি সব জানে এবং শুধুমাত্র ঐ ধরণের পণ্যের ভালো মন্দ নিয়েই সে তার ব্লগে আর্টিকেল প্রকাশ করে।
এই ক্যাটাগরির মার্কেটারদের ব্লগ থেকে ভিজিটর অনেক কিছু শিখতে পারে। মার্কেটার তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে প্রচার করা পণ্যের সাথে অন্যান্য পণ্যের তুলনা করে। এতে ভিজিটরের সাথে তাদের কানেকশন তৈরী হয়। তাই এদের সফলতার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
দামী ইলেকট্রনিক্স যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদী এবং বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য এভাবে মার্কেটিং করা হয়। কারণ, এগুলো ক্রেতারা বেশি চিন্তা ভাবনা করে কেনে।
Related অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
উপরের দুই ধরণের মার্কেটিং এর সংমিশ্রণ দেখা যায় এই টাইপের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে। এই ক্যাটাগরির মার্কেটাররা সাধারণত কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আগে থেকেই বিশ্বস্ত হয়ে থাকে। তারা যেকোনো পণ্যের নাম উল্লেখ করলেই ভিজিটররা সেই পণ্যটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়।
উদাহরণ হিসেবে, অনেক সুন্দর মডেল তাদের ফেসবুক পেজ কিংবা ওয়েবসাইটে অনেক সময় কিছু পণ্যের লিংক শেয়ার করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার ফলোয়াররা সেই পণ্যটির দিকে সুনজর দেয়। যদিও, সেই মডেল ঐ পণ্যটি কখনো ব্যবহার করেননি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর পেমেন্ট সিস্টেম
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা শুরু করলে নানা রকমের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের সঙ্গে আপনার পরিচিত হতে হবে। সব প্রোগ্রামের পেমেন্ট সিস্টেম এক রকম হয় না। এখানে প্রধান তিন ধরণের পেমেন্ট সিস্টেমের ধারণা দেয়া হলো
Pay-per-sale
বেশিরভাগ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোতেই এই ধরণের পেমেন্ট সিস্টেম থাকে। মার্কেটারের প্রচার করা লিংকে ক্লিক করে কেউ পণ্য কিনলে মার্কেটার সেই পণ্যের প্রাইজের উপর পার্সেন্টেজ হিসাবে কমিশন পায়।
উপরের আলোচনায় এই ধরণের পেমেন্ট সম্পর্কে আগেই বলা হয়েছে।
Pay-per-lead
এই ধরণের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে পণ্য ক্রয় করা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়। কেউ লিংকে ক্লিক করে কোম্পানীর ওয়েবসাইটে এ্যাকাউন্ট খুললে, নিউজলেটারর সাবস্ক্রাইব করলে কিংবা পণ্যের ট্রায়াল নিলেও মার্কেটার এই জন্য কোম্পনীর কাছ থেকে টাকা পায়।
এই ধরণের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করার পেছনে কোম্পানীর মূল উদ্দেশ্য থাকে তাদের সার্ভিসের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে যেকোনো ভাবে যুক্ত করা এবং তারপর মুগ্ধ করার মাধ্যমে তাদেরকে পার্মানেন্ট কাস্টমার তৈরী করা।
Pay-per-click
এই মেথডে পণ্য ক্রয় কিংবা সার্ভিসের সাথে যুক্ত করা কোম্পানীর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। নতুন ভিজিটরের সাথে পরিচিত হতে পারলেই তারা খুশি।
মার্কেটারের প্রচার করা লিংকে কেউ ক্লিক করলেও নির্দিষ্ট পরিমাণ কিছু টাকা মার্কেটারের এ্যাকাউন্টে জমা হয়।
স্বাভাবিকভাবেই, এক্ষেত্রে প্রতি ক্লিকে আয়ের পরিমাণ অতি সামান্য হয়। তবে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর বেশি হলে এটা সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হবে ইনকামের জন্য।
Affiliate Marketing শুরু করার উপায়
এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
একটা নিশ বাছাই করুন
প্রকৃতপক্ষে, আজকের দিনে যেকোনো নিশেই কম্পিটিশন খুব বেশি। Statista Estimates এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র আমেরিকাতেই মোট ব্লগারের সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে প্রায় ৩২ মিলিয়নে। সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়।
এই সময়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য উদ্দেশ্যহীন ভাবে সব কিছু একসঙ্গে না ধরে প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট ইন্ড্রাস্ট্রি বা নিশ খুঁজে নিতে হবে। নিশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা, আপনার আগ্রহ এবং চাহিদার কথা বিবেচনায় রাখবেন।
নিশটিকে হতে হবে একদম স্পেসিফিক। আপনার নিশ যত বেশি স্পেসিফিক হবে, কম্পিটিশন তত কমে যাবে।
উদাহরণস্বরুপ, যদি আপনার মাথায় ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে ব্লগ তৈরীর আইডিয়া থাকে, তবে সব ধরণের ইলেক্ট্রনিক্সের দিকে না ছুটে শুধুমাত্র ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলের দিকে ফোকাস করবেন।
সম্ভব হলে নিশ আরো ছোট করে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট একটি বাজেট রেঞ্জ কিংবা নির্দিষ্ট একটি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করলে কম্পিটিশন আরো কমে যায়।
ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরী
এরপর নিশের সাথে মিলিয়ে একটা ডোমেইন কিনে ওয়েবসাইট তৈরী করতে হবে।
এই বিষয়ে নতুন হয়ে থাকলে ওয়েবসাইট তৈরীর প্লাটফর্ম হিসেবে ওয়ার্ডপ্রেসকে বেছে নেয়া উচিৎ। কারণ এটার ব্যবহার খুব সহজ, আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং প্রয়োজনীয় সবকিছুই প্রায় ফ্রি।
এছাড়াও, ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ম্যানেজ করা অনেক সহজ। দৈনন্দিনের যাবতীয় কাজ আপনি নিজেই করতে পারবেন।
হোস্টিং এবং ডোমেইন মিলিয়ে এক বছরের একটা প্যাকেজ যেকোনো দেশী কিংবা বিদেশী প্রতিষ্ঠান হতে কিনে নিতে হবে। এতে খরচা হবে মাত্র দুই হাজার টাকার মতো।
ওয়ার্ডপ্রেসে থিম ও প্লাগিন সাধারণত বিনামূল্যেই পাওয়া যায়, তাই প্রথম অবস্থায় আর কোনো খরচের সম্ভাবনা নেই।
পর্যাপ্ত রিসার্চ
আপনার নিশের ব্যাপারে প্রচুর জানাশোনা থাকতে হবে। এরপর আপনি যেই ধরণের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন, সেগুলোর ভালো মন্দ খুঁজে বের করবেন। এটা করলে তবেই আপনি পণ্যের সঠিক রিভিউ লিখতে পারবেন।
যেমন মনে করুন, আপনি ল্যাপটপ দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে চান। এক্ষেত্রে লেটেস্ট ল্যাপটপ গুলোর কনফিগারেশন, একাধিক ল্যাপটপের মধ্যে তুলনা করার উপায় এবং কোন কনফিগারেশনের জন্য ক্রেতা কেমন রেজাল্ট পাবে, সেসব পরিষ্কারভাবে জানা থাকতে হবে।
ওয়েবসাইট খুলে সেখানে আর্টিকেল ছাপাবার পর বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে নাম লিখানোর সময় আসবে। প্রোগ্রামগুলোতে আবেদন করার পাশাপাশি ওয়েবসাইটে নিয়মিত টিউটোরিয়াল ও রিভিউ পোস্ট লেখা চালিয়ে যেতে হবে।
অভিজ্ঞদের মত অনুযায়ী, সাইটে ৭ টি টিউটোরিয়াল বেজড আর্টিকেলের বিপরীতে মাত্র তিনটি অ্যাফিলিয়েট লিংকযুক্ত রিভিউ পোস্ট প্রকাশ করা উচিৎ।
কারণ, গুগল অ্যাফিলিয়েশন প্রোগ্রামের সাথে পুরোপুরিভাবে জড়িত ওয়েবসাইটগুলোকে পাত্তা দিতে চায় না। তাই গুগলকে বোঝাতে হবে, আপনার সাইটটা একটা সাধারণ টিউটোরিয়াল বেজড ওয়েবসাইট।
আপনার ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত প্রতিটি আর্টিকেলের দিকে তীব্র নজর দিবেন। নিজে ভালো লিখতে না জানলে টাকার বিনিময়ে অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিবেন।
লেখাগুলো গুগলে কেমন র্যাংকিং পাচ্ছে সে দিকে নজর দিবেন। ভালো হয় SEO এর উপর ছোট্ট একটা কোর্স করে নিলে।
সঠিক এ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুঁজে বের করুন
বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের এ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের দেখা মেলে। যেমন কিছু এ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে, যেগুলো খুব অল্প ক্রেতার বিনিময়েই অনেক টাকা অফার করে।
উদাহরণ হিসেবে, ConverKits এর এ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তাদের সার্ভিস মাত্র ৮০ জনের কাছে বিক্রি করতে পারলেই তারা আপনাকে কমিশন হিসেবে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সত্তর হাজার টাকা উপহার দেবে।
কমিশনের পরিমাণ লোভনীয় হলেও দুঃখের বিষয় হলো, এই ধরণের প্রোগ্রামগুলোর সার্ভিসের দাম অনেক বেশি হয়। তাই সাধারণ মানুষের কাছে এসব সার্ভিস বিক্রি করা সহজ কাজ নয়। পাশাপাশি কমিশনের লোভে প্রচুর কম্পিটিশন তো আছেই।
এর বিপরীত ধরণের এ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোতে দেখা যায়, অনেক বেশি মানুষের কাছে পণ্য বিক্রি করার পরও কমিশনের পরিমাণ থাকে খুব সামান্য।
যেমন, PlayStation4 গেমগুলো অনেক মানুষ খেলে, একেকটা গেমের দাম মাত্র ৫০ ডলারের আশেপাশে থাকে এবং একেকটা গেম থেকে এ্যাফিলিয়েট কমিশনের পরিমাণ থাকে খুব সামান্য, ১ থেকে ৯ পার্সেন্টের মধ্যে।
অর্থাৎ, প্রতিটি গেম থেকে একজন মার্কেটারের লাভ হয় সর্বোচ্চ ৩-৪ ডলারের মতো।
এ্যামাজনের নাম আশা করি আপনি শুনেছেন। সেখানেও পণ্যের এ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেয়া হয়।
তারপরও অবশ্য মার্কেটারদের লাভই হয়, কেননা, এ্যামাজন থেকে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি পণ্য ক্রয় করে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভিজিটর মার্কেটারের কোনো লেখা থেকে পণ্যের লিংকে ক্লিক করে কোম্পানীর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ঐ পণ্যটিসহ আরো কিছু পণ্য অর্ডার দিয়ে দেয়।
এসব ক্ষেত্রে এ্যামাজনের মতো কিছু কোম্পানী মার্কেটারকে তার প্রচার করা পণ্যের পাশাপাশি বাকি পণ্যের উপরেও কমিশন দিয়ে দেয়। এতে লাভের পরিমাণ বাড়ে। এই ধরণের প্রতিষ্ঠানের এ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম হাত ছাড়া করা উচিৎ নয়।
নতুন এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে আপনার এ্যামাজনের মতো সাইটগুলোর এ্যাফিলিয়েশন প্রোগ্রামের সঙ্গে জড়িত হওয়া উচিৎ। যেহেতু এ্যামাজনে সব ধরণের পণ্যই পাওয়া যায়, তাই আপনার নিশ অনুযায়ি সঠিক পণ্য খুঁজে পেতে বেগ পেতে হবে না।
এছাড়াও আপনার নিশ যাই হোক না কেন, বিভিন্ন হোস্টিং, ডোমেইন, কিওয়ার্ড রিসার্চ কিংবা স্টক ইমেজ সাইটগুলোর বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে পারেন। ভিজিটর বেশি হলে এগুলো থেকেও যথেষ্ট ইনকাম হতে পারে।
সাইটে বেশি বেশি ভিজিটর আনুন
ওয়েবসাইটে ভালো ভালো কনটেন্ট পাবলিশ এবং অন্তত একটি এ্যাফিয়েশন প্রোগ্রামে রেজিস্ট্রেশন করার পর আপনার ওয়েবসাইটে বেশি বেশ ভিজিটর আনার চেষ্টা করতে হবে। ওয়েবসাইটে ভিজিটর বা ট্রাফিক বৃদ্ধির জন্য নিচের কাজগুলো করতে পারেন।
পেইড ট্রাফিক
কিছু কিছু ওয়েবসাইট আছে, যারা আপনার কাছ থেকে সামান্য কিছু পরিমাণ টাকা নিয়ে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বাড়িয়ে দিবে। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, এটা কি করে সম্ভব বা তারা কিভাবে ভিজিটর পাঠায়।
অনেক সময় দেখবেন, অনলাইন থেকে কোনো কিছু ডাউনলোড করার সময় ডাউনলোড লিংক পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
নানা রকমের বিজ্ঞাপনে আপনার স্ক্রিন ভরে যায়, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্রাউজার অটো রিডিরেক্ট করে নিয়ে যায়।
এই রিডিরেকশনের পেছনে আছে পেইড ট্রাফিকের বন্দোবস্ত। আপনি টাকা দিলে আপনার সাইটেও অটো ডিরেকশনের মাধ্যমে ভিজিটর আসবে।
যাইহোক, এই সিস্টেমে ট্রাফিক বাড়ানো উচিৎ না। এই উপায়ে যেসব ভিজিটর পাওয়া যায়, তারা সাধারনত নিজের ইচ্ছায় সাইটে আসে না, তাই পণ্যও কেনে না। আসার সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে যায়।
তবে, আপনি চাইলে গুগল বা ফেসবুকের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে সাইটে ভিজিটর আনতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটিতে খরচা বেশি হলেও ইফেক্টিভ।
এসইও শিখে অর্গানিক ভিজিটর আনুন
এসইও হলো ওয়েব পেইজ অপটিমাইজ করে সার্চ ইঞ্জিন ( যেমন গুগলের) সার্চ লিস্টের উপরের দিকে জায়গা করে নেয়ার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
নিশ অনুযায়ী টার্গেটেড কিওয়ার্ডে সার্চ ইঞ্জিনে জায়গা করতে পারলে যে-ই ঐ কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করবে, সে-ই আপনার অ্যাফিলিয়েশন লিংকওয়ালা লেখাটি খুঁজে পাবে। এভাবে প্যাসিভ ইনকামের সম্ভাবনা বাড়ানো যায়। বেশিরভাগ এ্যাফিয়েট মার্কেটাররা এভাবেই ভিজিটর বাড়ায়।
অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক বাড়ানোর উপায়
ওয়েবসাইটে সুন্দর সুন্দর কনটেন্ট থাকলেই যে ভিজিটররা আপনার অ্যাফিলিয়েশন লিংকে ক্লিক করবে, এরকম ভাবলে ভুল হবে। লিংকে বেশি ক্লিক পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে ফোকাস করতে হবে।
লিংকের অবস্থান
যদি আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকগুলো পেইজ বা লেখার একদম নিচের দিকে থাকে, তাহলে লিংকে ক্লিকের হার অনেক কমে যাবে। কারণ বেশিরভাগ ভিজিটরই অতো নিচ অবধি পড়বেই না, লিংকে ক্লিক করা তো অনেক দূরের কথা।
অন্যদিকে, লেখার শুরুতেই অ্যাফিলিয়েশন লিংক দিয়ে রাখলে সার্চ ইঞ্জিনগুলো একে ভালো চোখে দেখবে না। আপনি নিজের অজান্তেই সার্চ লিস্ট থেকে র্যাংক হাড়াবেন।
তাই লিংকের প্লেসমেন্টের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। লেখা শুরুর কয়েক প্যারা পরই সুকৌশলে লিংক দিতে হবে, যেন এটাকে স্প্যাম বলে মনে না হয়।
বাড়িয়ে বলার অভ্যাস
কোনো পণ্য বিক্রি করার জন্য সেটার প্রশংসা করে একেবারে আকাশে তুলে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সাধারণ মানুষ ঘাস খায় না। তারা জানে, আপনি পণ্য বিক্রির জন্য তাদেরকে প্রভাবিত করতে চাইবেন।
তাই, ভদ্রতার সাথে বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে পণ্য সম্পর্কে বলুন। যা বলছেন, তার বিষয়ে প্রমাণ যুক্ত করলে সবচেয়ে ভালো হয়। নিরপেক্ষ থেকে পণ্যের বিবরণ বিশ্লেষণ করলে অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিকের হার বেড়ে যাবে।
দ্বিমুখী আচরণ
কোনো একটি সাব ক্যাটাগরিতে একটা প্রোডাক্টকে সেরা ঘোষণা করে, কিছুদিন পরে ঐ একই সাব ক্যাটাগরিতে অন্য কোনো প্রোডাক্টকে সেরা হিসেবে চালিয়ে দিতে যাবেন না। এতে ভিজিটর আপনার প্রতি ভরসা হারাবে।
চেষ্টা করবেন দায়িত্ব নিয়ে নির্দেশনা দেয়ার। কারণ, কেউ আপনার বলা কিছু একটা কিনে ঠকে গেলে সে আপনার কমেন্টে ঝড় তুলে দিবে। উলটোটা ঘটলে অবশ্য একজন রেগুলার ভিজিটর পেয়ে যেতে পারেন।
কমেন্ট সেকশনে নজর দিন
অনেকেই সময়ের অভাবে কমেন্ট সেকশনের দিকে নজর দিতে পারে না। অনেকে আবার কমেন্ট সিস্টেমই বন্ধ করে দেয় প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ভয়ে।
কেউ যখন নতুন দামী কোনো পণ্য কিনতে যায়, তার মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। মনে প্রশ্ন আসা পণ্য কেনার সম্ভাবনার লক্ষন। তাই, কমেন্টে আসা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন। এতে ভিজিটরদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরী হবে।
শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বেসিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলো শুধুমাত্রই ফান্ডামেন্টাল বিষয়। কাজ শুরু করার পর বাকি সব কিছু নিজেই বুঝতে পারবেন। এখন তো সোর্সের অভাব নেই। যেকোনো সমস্যায় গুগলে সার্চ করলেই সমাধান পাওয়া যায়।
শেষ করার আগে আবারও বলবো, আপনি এমন একটা সময়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে যাচ্ছেন, যখন অনেকে এই পেশাটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
তাই, প্রতিযোগিতা বেশি। আপনি রাতারাতি সফল হয়ে যাবেন, এমন চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। অভিজ্ঞদের কনটেন্টে চোখ রাখুন এবং মনোবল বজায় রেখে ধীরে ধীরে অগ্রসর হোন। সফলতা আসবে।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর বিষয়ে ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
প্রাসঙ্গিক লেখা-