মোবাইল দিয়ে ভালো ছবি তোলার উপায়
এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে মোবাইল দিয়ে ভালো ছবি তোলার উপায় সমূহ তুলে ধরার জন্য। যারা ছবি তোলার ব্যাপারে ভীষণভাবে আগ্রহী, কিন্তু ছবি তোলার জন্য মোবাইল ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইস জোগাড় করতে পারছেন না, তারা এই আর্টিকেলটি পড়ে মোবাইল ফটোগ্রাফির মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
অনেকেই কম মেগা পিক্সেলের ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। তাই প্রথমেই বলে রাখতে চাই, মোবাইল দিয়ে ছবি তোলা শেখার জন্য আপনার দামী ক্যামেরা ওয়ালা স্মার্টফোনের কোনো প্রয়োজন নেই।
কারণ, ফটোগ্রাফির একটি জনপ্রিয় উক্তি হলো, যার যত ভাঙ্গাচুরা ক্যামেরা, তার তত বড় ফটোগ্রাফার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই উক্তিটি কিন্তু এমনি এমনি জনপ্রিয় হয়নি। এর পেছনে রয়েছে নিগুঢ় বাস্তবতা।
আপনি হয়তো জেনে খুশি হবেন, শুধুমাত্র আপনি নন, আপনার মতো বাংলাদেশের বেশিরভাগ জনপ্রিয় ফটোগ্রাফারই নুন্যতম সরঞ্জাম দিয়ে ফটোগ্রাফি শুরু করেছিলেন। এই কারণেই তারা পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জিং অবস্থায়ও ছবি তুলতে ভয় পেতেন না। সরঞ্জামের অভাব তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিল।
এই পুরো আর্টিকেলটিতে মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার জন্য আপনাকে ক্যামেরার কি কি অপশন চালু করতে হবে, সেগুলোর কাজ এবং মোবাইল ফটোগ্রাফির সাধারন কিছু নিয়ম জানানো হবে। আশা করছি, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব মনোযোগের সঙ্গে পড়বেন এবং বোঝার চেষ্টা করবেন।
ছবি তোলার জন্য সঠিকভাবে মোবাইল ধরার নিয়ম
বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল দিয়ে ভালো ছবি তুলতে পারে না, কারণ ছবি তোলার সময় তাদের হাত কাঁপে। হাত কাঁপার কারণে ছবি হয়ে যায় ঝাপসা, গুরুত্বহীন।
অনেক সময়, সামান্য হাত কাঁপার কারণে ছবির শার্পনেস ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মোবাইলের ছোট্ট স্ক্রিনে তা বোঝা সম্ভব হয় না। কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ছবিটি ইডিট করতে গেলে তখন হতাশ হতে হয়।
তাই, মোবাইল দিয়ে ভালো মানের ছবি তোলার উপায়গুলো জানার আগে ঠিকভাবে মোবাইল ধরা শিখে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, ছবি তোলার সময় মোবাইল দুই হাত দিয়েই ধরতে হবে এবং দুই পায়ের মধ্যে যথেষ্ট গ্যাপ রাখতে হবে। আপনি স্থির থাকলে আপনার তোলা ছবিটিও হবে স্থির ও ক্লিয়ার।
অন্তত এক হাতের কনুই দিয়ে পেট স্পর্শ করে মোবাইল ধরে রাখবেন। নিঃশ্বাস নেয়ার সময় মধ্যচ্ছদার সংকোচন প্রসারণের কারণে পেট ছোট বড় হয়, তাই ছবি তোলার সময় নিঃশ্বাস আটকে রাখতে হবে।
এতো সাবধানতার পরও, মোবাইলের স্ক্রিনে চাপ দিয়ে ছবি ক্যাপচার করতে গেলে অনেক সময় হাত নড়ে যায় এবং ছবির কোয়ালিটি নষ্ট হয়। তাই স্ক্রিনের ক্যাপচার বাটনের পরিবর্তে ভলিউম আপ/ডাউন বাটন ব্যবহার করতে পারেন। এতে ক্যামেরা নড়ে গিয়ে ছবির কোয়ালিটি নষ্ট হওয়ার ভয় অনেকাংশে কমে যাবে।
আরও পড়ুন-
- হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়ার উপায়
- মোবাইল দিয়ে ছবি ইডিট করার সেরা ১০ টি সফটওয়্যার
- ভালো ল্যাপটপ কেনার উপায় ও বিস্তারিত গাইডলাইন
মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
যারা বড় বড় ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলে, তারা কিন্তু ভালো ছবির জন্য শুধুমাত্র ক্যামেরার উপর নির্ভর করে থাকে না। ক্যামেরার পাশাপাশি তারা প্রয়োজন মতো বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্য নেয়।
এমন নয় যে, শুধুমাত্র ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা যাবে না, অবশ্যই তোলা যাবে, কিন্তু ছবির ভালো কোয়ালিটি নিশ্চিত করার জন্য এই সমস্ত যন্ত্রপাতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
একইভাবে, মোবাইল দিয়ে ভালো মানের ছবি তোলার জন্যেও আপনাকে কিছু যন্ত্রপাতির সাহায্য নিতে হবে। এই সমস্ত যন্ত্রপাতি আপনার ছবির গুণগত মান নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
ট্রাইপড
মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার সময় অনেকেরই হাত কাঁপে, তাই ভালো ছবি পাওয়া যায় না। ছবি তোলার পর মোবাইলের ছোট স্ক্রিনে আমাদের তোলা ছবিটিকে ঠিকঠাক মনে হলেও, পরে কম্পিউটারের বড় স্ক্রিনে বোঝা যায়, ছবির শার্পনেস ঠিক নেই, কোয়ালিটি ভালো হয়নি।
এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে মোবাইলের সঙ্গে একটা ট্রাইপড ব্যবহার করা উচিৎ।
লেন্স
একটা ভালো এক্সটার্নাল লেন্স আমাদের মোবাইলের ক্যামেরার ক্ষমতাকে কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। বাজারে মোবাইলের সঙ্গে লাগিয়ে ব্যবহারের জন্য অপটিক্যাল জুম লেন্স, ডিজিটাল জুম লেন্স, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স, টেলি লেন্স, ম্যাক্রো লেন্স, মাইক্রো লেন্স, ফিস আই লেন্সসহ বিভিন্ন নামে নানা প্রকারের লেন্স পাওয়া যায়।
একটু পরই আমরা লেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পর্যাপ্ত স্টোরেজ
ভালো কোয়ালিটির ছবি সাধারণত বেশি রেজুলেশনের হওয়ায় এদের সাইজও হয় অনেক বেশি। তাই, বেশি ছবি তুলতে গেলে আমাদের মোবাইলের স্বল্প মেমরীকে প্রধান প্রতিবন্ধক মনে হতে পারে।
এজন্য, প্রতিটি মোবাইল ফটোগ্রাফারের উচিৎ বেশি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এক্সটার্নাল মেমরী ব্যবহার করে মোবাইলের স্টোরেজ বাড়িয়ে নেয়া। পাশাপাশি, ক্যামেরার সেটিংসে যেয়ে ইমেজ সোর্স এক্সটার্নাল মেমরী সিলেক্ট করে দেয়া বাঞ্চনীয়।
ব্লুটুথ শাটার ট্রিগার
ব্লুটুথ শাটার ট্রিগারের সাহায্যে মোবাইলের স্ক্রিনে হাত না দিয়েই দূর থেকে সুইচ টিপে ছবি তোলা যায়। বাজারে খুব দামে এই ডিভাইসটি কিনতে পাওয়া যায়। অনলাইনে বিভিন্ন শপিং প্লাটফর্মে ট্রাইপডের সাথে অনেক সময় একটি ব্লুটুথ শাটার ট্রিগারও ফ্রিতে দেয়া হয়।
নিজের ছবি নিজে তুলতে বা সেল্ফ পোট্রেট বানানোর ক্ষেত্রে কিংবা বন্ধুদের সাথে ছবি তোলার সময় কাউকে ক্যামেরা ম্যান বানিয়ে ফ্রেমের বাইরে রাখতে না চাইলে ব্লুটুথ শাটার ট্রিগার ব্যবহার করা করতে পারেন।
রিং ফ্ল্যাশ
টিকটকের এই জামানায় রিং ফ্ল্যাশ এখন ঘরে ঘরে চলে এসেছে। দামও অনেক কমে গেছে এই লাইটিং ডিভাইসটির। বাজারে মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকাতেই ভালো মানের মাল্টিপল কালার সমৃদ্ধ রিং ফ্ল্যাশ পাওয়া যাচ্ছে।
রিং ফ্ল্যাশ দিয়ে ঘরে মধ্যেই ছবি তোলার উপযোগী পরিবেশ তৈরী করে নেয়া যায় এবং অল্প আলোতেও তোলা যায় প্রোফেশনাল মানের ছবি।
কিছু কিছু রিং ফ্ল্যাশে মাল্টিপল কালারের মধ্যে গোল্ডেন ও ব্লু পিরিয়ডের ইফেক্টওয়ালা লাইট থাকে, এগুলো চালু করে ছবি তুললে ছবির কোয়ালিটি বেড়ে যায় কয়েক গুণে।
গ্রিপ অ্যান্ড শ্যুট
গ্রিপ অ্যান্ড শ্যুট ব্যবহার করে ছবি তুললে মোবাইল ধরতে এবং মুভমেন্ট করতে সুবিধা হয়। আর হাত কাঁপলেও সেটার প্রভাব ছবির কোয়ালিটির উপর খুব বেশি পড়ে না। গ্রিপ এ্যান্ড শ্যুট সামান্য প্রাইজেই বাজারে পাওয়া যায়। মোবাইল দিয়ে ভালো মানের ছবি তোলার জন্য এটি কিনে নেয়া উচিৎ।
মোবাইল দিয়ে ভালো ছবি তোলার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সেটিংস
একজন মোবাইল ফটোগ্রাফার হিসেবে মোবাইল দিয়ে ভালো মানের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার অপশনগুলো সম্পর্কে বেসিক ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশে মোবাইলের ডিফল্ট ক্যামেরার কিছু সেটিংস এবং সেগুলোর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ছবিতে Gridlines এর ব্যবহার
মোবাইল দিয়েই সুন্দর ছবি তোলার সবচেয়ে সহজ এবং সেরা একটি উপায় হলো ক্যামেরার গ্রিডলাইন অপশনটি চালু করে দেয়া৷ এই অপশনটি চালু করে দিলে মোবাইলের স্ক্রিনে দুইটি আনুভূমিক এবং দুইটি উলম্ব রেখা প্রদর্শিত হয়, যা ছবি তোলার একটি বিশেষ নিয়ম ‘রুলস অব থার্ড’ মেনে চলতে সাহায্য করে৷
ফটোগ্রাফির রুলস অব থার্ড অনুসারে, একটি ছবিকে যদি সমান নয় ভাগে ভাগ করি, তাহলে আনুভূমিক এবং উলম্ব রেখার চারটি ছেদবিন্দু তৈরী হবে৷ আমরা মোবাইল দিয়ে যেই বস্তুর ছবি তুলছি, সেটার অবস্থান যদি এই ছেদবিন্দু গুলোতে থাকে, তাহলে বলা যাবে যে, ছবিটি রুলস অব থার্ড মেনে চলছে৷
শুধুমাত্র রুলস অব থার্ড মানতেই নয়, বরং ছবির ব্যালেন্স ঠিক রাখতেও গ্রিড ব্যবহার করা হয়৷ বলাবাহুল্য, ছবি তোলার সময় মোবাইলের স্ক্রিনে গ্রিড দেখা গেলেও, আপনার তোলা ছবিতে গ্রিডের কোনো চিহ্নমাত্র থাকবে না৷
এখনকার বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই গ্রিডলাইন নামে এই অপশনটি থাকে৷ ভাগ্য ভালো হলে বাটন মোবাইলেও এটি পেয়ে যেতে পারেন৷
ক্যামেরার Focus ঠিক করুন
এখনকার দিনের মোবাইল গুলোর ক্যামেরা অনেক এ্যাডভান্স৷ এগুলো নিজে নিজেই ছবির সম্ভাব্য সাব্জেক্ট খুঁজে বের করে সেটাতে ফোকাস করতে পারে৷
কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক সময় আমাদের ছবিতে নির্দিষ্ট কোনো সাব্জেক্ট থাকে না৷ কিংবা মোবাইলের ক্যামেরা একাধিক অবজেক্টের ভিড়ে কাংখিত সাব্জেক্ট চিনতে ভুল করে ফেলে৷
এরকম সমস্যার সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো, যেই বস্তুটিকে ফোকাস করে ছবি তুলতে চাইছেন, মোবাইলের স্ক্রিনে সেটার উপর আলতো করে চাপ দেয়া৷ এর ফলে, ঐ স্থানটি অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি শার্প হয়ে যাবে৷
Focus Lock এর ব্যবহার
কিছু কিছু মোবাইলে ফোকাস লক নামের একটি বিশেষ ফিচার থাকে৷ চলন্ত বস্তুর ছবি তোলার জন্য এই ফিচারটির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসু৷
কোনো বস্তুর উপর ফোকাস করার পর, সেই বস্তুটি স্থান পরিবর্তন করলে, সাধারনত ফোকাস নষ্ট হয়ে যায়৷ তখন নতুন করে ফোকাস করতে গেলে ছবির এক্সপোজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাল্টে যায়৷
এই সমস্যা থেকে নিষ্ক্রিতির উপায় হলো, কোনো চলন্ত বস্তুর ছবি তোলার আগে স্ক্রীনে সেই বস্তুটির উপর চাপ দিয়ে কিছুক্ষন ধরে রাখতে হবে৷ যদি আপনার মোবাইলে ফোকাস লক নামের অপশনটি থাকে, তবে স্ক্রিনে ‘ফোকাস লকড হয়েছে’, ইংরেজীতে এরকম একটা ম্যাসেজ দেখতে পাবেন৷
ফোকাস লক হয়ে গেলে স্ক্রিনের ভেতর সাব্জেক্ট যেখানেই যাক না কেন, সেটার উপর থেকে ফোকাস সরবে না৷ তাই চলন্ত সাব্জেক্টের উপর বার বার চাপ দিয়ে ফোকাস ঠিক করে নেয়ার প্রয়োজন পরবে না এবং এক্সপোজারও পরিবর্তিত হয়ে ছবির কোয়ালিটিও নষ্ট হবে না৷
যদি আপনার মোবাইলে ফোকাস লক করার ফিচারটি না থাকে, তবে ওপেন ক্যামেরা নামক একটি এ্যাপ আছে, সেটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন৷ এই এ্যাপটিতে ফোকাস লকের পাশাপাশি আরো অনেক এ্যাডভান্স ফিচার পেয়ে যাবেন, যেগুলো নানা সময়ে আপনাকে অনেক সাহায্য করবে৷
হাই ডাইনামিক রেঞ্জ (HDR) এর ব্যবহার
আমরা অনেক সময় এমন কিছু জায়গায় ছবি তুলি, যেখানে আলোও আছে, অন্ধকারও আছে৷ এই রকম জায়গায় ছবি তোলা সাধারনত বেশ কঠিন হয়ে থাকে৷ কারণ সেখানে বিভিন্ন লেয়ারে আলো থাকে, সব জায়গার আলো সমান ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়৷ এক জায়গায় আলো বাড়ালে অন্য জায়গার আলো কমে যায় কিংবা এক্সপোজার বেড়ে গিয়ে একদম অতিরিক্ত সাদা হয়ে যায়৷
মোবাইলে ছবি তোলার সময় এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য HDR বা হাই ডাইনামিক রেঞ্জ ফিচারটি চালু করা যেতে পারে৷ এটি চালু করলে মোবাইলের ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একাধিক লেয়ারের আলোকে মাত্র একটি লেয়ারে নিয়ে আসে এবং অভিন্ন কোয়ালিটির ছবি পাওয়া যায়৷
তবে এটা ভাববেন না যে, HDR চালু করলে পুরো ছবিতে একই পরিমাণ আলো পড়বে৷ আলো সব জায়গায় আগের মতো ভিন্ন ভিন্নই থাকবে, কিন্তু ছবির যেসব জায়গায় আলো কম পরেছে, সেই সমস্ত জায়গার কোয়ালিটি নষ্ট হবে না৷ যার ফলে ছবির সব জায়গায় সমান ডিটেইল থাকবে এবং দেখতে সুন্দর লাগবে৷
মোবাইলে ব্যবহারের জন্য এক্সার্টানাল লেন্স কিনুন
অনেকে হয়তো ভাববেন, মোবাইল ফটোগ্রাফারদের এতো গভীরের জিনিস কেন জানতে হবে, ইন্টার্নাল কিছু ফিচার সম্পর্কে জানতেই তো মিটে গেল। কিন্তু এই ধারণা আসলে সঠিক নয়। যেহেতু মোবাইল ফটোগ্রাফারদের গন্ডি ছোট, তাই তাদের উচিৎ ছোট গন্ডির ভেতর যেটুকু আছে, সবটুকুর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
এই অংশে আমরা মোবাইলের সাথে ব্যবহারের জন্য বিশেষ কিছু লেন্স সম্পর্কে জানতে পারবো। এই সমস্ত লেন্স বিভিন্ন অনলাইন শপিং প্লাটফর্ম থেকে খুব সহজেই অর্ডার দিয়ে কিনে নেয়া যায়।
অপটিক্যাল জুম
বাজারে মোবাইল ফটোগ্রাফারদের জন্য দুই ধরণের জুম লেন্স পাওয়া যায়। একটি হলো অপটিক্যাল জুম লেন্স এবং অন্যটি ডিজিটাল জুম লেন্স।
এই দুইটি জুম লেন্সের ভেতর অপটিক্যাল জুম লেন্স সাধারণ ফিল্ম ক্যামেরার আদলে তৈরী করা হয়, তাই এগুলোর মান অনেক বেশি স্টান্ডার্ড। অন্যদিকে, ডিজিটাল জুম লেন্স মেগাপিক্সেল নির্ভর না, যার ফলে এটি ব্যবহার করলে ছবি জুম তো হয় ঠিকই, কিন্তু ছবি রেজুলেশন ও কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়।
ম্যাক্রো লেন্স
সাব্জেক্টের ছবি তোলার জন্য আমরা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব হতে সাব্জেক্টের উপর ফোকাস করি। যার ফলে সাব্জেক্টের ছবি মোবাইলে ফূটে ওঠে। যদি আমরা সাব্জেক্টের দিকে আগাতে থাকি, অর্থাৎ দূরত্ব কমাতে শুরু করি, তবে একটা সময় পর ছবি অস্পষ্ট হয়ে যায়।
তাই আকারে বেশ ছোট, এরকম সাব্জেক্টের নিখুঁত ছবি তুলতে যেয়ে আমরা প্রায়শই ব্যর্থ হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য এখনকার মোবাইলের ক্যামেরায় ম্যাক্রো নামের একটি ডিফল্টভাবে অপশন দেয়া থাকে।
কারো মোবাইলে এই অপশনটি না থাকলে ম্যাক্রো লেন্স কিনে নিতে পারে। এর সাহায্যে অসাধারণ সব ছবি তোলা সম্ভব।
ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স
বেশিরভাগ সাধারণ মোবাইলেই ওয়াইড অ্যাঙ্গেল মুড খুব রেয়ার, পাওয়া ভাগ্যের বিষয় প্রায়।
সাব্জেক্ট এবং আমাদের মোবাইলের দূরত্ব কম হলে সাব্জেক্টের পুরো ছবি আমাদের ক্যামেরায় আসে না। ফলে ছবিতে একটা অপূর্ণতা থেকে যায়।
এই সমস্যার সমাধান পেতে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স অর্ডার করে নিতে পারেন। এটা দিয়ে বেশ ভালোভাবেই ওয়াইড এ্যাঙ্গেলের ছবি মোবাইলে ধারণ করা সম্ভব হবে।
ফিশ আই লেন্স
ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সের তুলনায় ফিশ আই লেন্স ছবিকে কম দূরত্বে আরো বেশি ফুটিয়ে তুলতে পারে। এটাও সাধারণ মোবাইলে পাওয়া যায় না বললেই চলে।
এই লেন্সের সমস্যা হলো, এটি ব্যবহার করে ছবি তুললে ছবির ফ্রেমের চারপাশে কালো দাগ থেকে যায়, যেটা দেখতে একদমই ভালো লাগে না।
হোয়াইট ব্যালেন্সের সঠিক ব্যবহার
হোয়াইট ব্যালেন্স অর্থ সাদা রঙের ভারসাম্য রক্ষা করা। সঠিক রঙের ছবি পাওয়ার জন্য ছবিতে হোয়াইট ব্যালেন্স ঠিক রাখার গুরুত্ব অনেক। কারণ, আমাদের ক্যামেরাগুলো কোনো রঙই ঠিকমতো চেনে না। আমরাই তাদেরকে রঙ চিনিয়ে দেই৷ আর রঙ চেনানোর জন্য ব্যবহার করি হোয়াইট ব্যালেন্স!
আমাদের ক্যামেরাগুলোকে যখন আমরা সাদা রঙ চিনিয়ে দেই, তখন সেটা সেই সাদা রঙের ভিত্তিতে বাকি রঙগুলোকে চিনে নিতে পারে।
আমাদের সবার মোবাইলেই সাধারণত হোয়াইট ব্যালেন্সের ফিচার থাকে। এই ফিচারের ভেতর রয়েছে বেশ কয়েকটি অপশন, যেমন ক্লাউডি, ফ্লুরোসেন্ট, সান বা সূর্য, মেঘ ইত্যাদী।
আমরা যখন ছবি তুলি, তখন মোবাইলের ক্যামেরা বুঝতে পারে না যে, আমরা কোন পরিবেশে ছবি তুলছি। যার ফলে, ক্যামেরা ইচ্ছামতো একটা হোয়াইট ব্যালেন্স ঠিক করে দেয়।
আলোর উৎস এবং আলোর পরিমাণের উপর নির্ভর করে আমরা চাইলে হোয়াইট ব্যালেন্সের অপশন বাছাই করে নিতে পারি। এতে ছবির মান কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
যেমন, যখন আমরা সূর্যের আলোতে ছবি তুলছি, তখন যদি হোয়াইট ব্যালেন্সের সান (সূর্য) অপশনটি ব্যবহার করি, তাহলে সূর্যের উপস্থিতিতে পরিমিত পরিমাণে সকল বস্তুর রঙ পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং আমরা ছবিতে সঠিক রঙটি দেখতে পারবো।
যদি আমাদের চারপাশের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো অপশন হোয়াইট ব্যালেন্সে না থাকে, তাহলে অটো ব্যালেন্স চ্যুজ করাই বেটার হবে।
শাটার স্পীড
সব ধরণের মোবাইলেই শাটার স্পীড ফিচারটি থাকে। অথচ অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ মোবাইল ফটোগ্রাফারই এর সঠিক ব্যবহার জানে না। মোবাইল দিয়ে ভালো ছবি তোলার জন্য এর ব্যবহার জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
Shutter শব্দটি এসেছে Shut থেকে, যার অর্থ বন্ধ করা। মোবাইলের লেন্স দিয়ে কি পরিমাণ আলো প্রবেশ করার পর আলোর প্রবাহ বন্ধ করা হবে, সেটা শাটার স্পীড দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সহজ কথায়, ক্যামেরার লেন্স দিয়ে কি পরিমাণ আলো প্রবেশ করবে, সেটা যেই অপশনের মাধ্যমে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাকেই শাটার স্পীড বলা হয়।
মোবাইল দিয়ে ফটোগ্রাফির সময় যদি ছবিতে বেশি আলোর প্রয়োজন হয়, তবে শাটার স্পীড বাড়িয়ে দিতে হবে। আবার যদি আলোর প্রয়োজন কম হয়, তবে শাটার স্পীড কমিয়ে দিয়ে ছবি তুলতে হবে।
মনে রাখবেন, শাটার স্পীড যত বাড়ানো হবে, গতিশীল সাব্জেক্ট তত বেশি স্পষ্ট হবে এবং শাটার স্পীড কমানোর সাথে সাথে সাব্জেক্ট ঝাপসা হতে শুরু করবে।
উদাহরণ নিজের চোখে দেখার জন্য শাটার স্পীড যথাক্রমে একবার বাড়িয়ে এবং পরের বার কমিয়ে আপনার মাথার উপরের ফ্যানটির ছবি তুলুন!
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ভালো আউটপুটের জন্য সর্বোচ্চ শাটার স্পীডকেই ফটোগ্রাফাররা প্রিফার করে থাকে।
বলে রাখা ভালো, শাটার স্পীড ৫০ এর অর্থ হলো, এক সেকেন্ডের ৫০ ভাগের এক ভাগ সময়, আবার শাটার স্পীড ৩০০ মানে হলো, এক সেকেন্ডের ৩০০ ভাগের এক ভাগ সময় নিয়ে ছবি তোলা হচ্ছে।
ব্রাস্ট মুড
মনে করুন, আপনি কোনো গতিশীল বস্তুর ছবি তুলছেন। এরকম ছবি তোলার সময় সবচেয়ে বেশি যেই সমস্যাটা দেখা যায়, সেটা হলো, দ্রুত স্থান পরিবর্তনের জন্য মোবাইলের ক্যাপচার বাটনে ক্লিক করার আগেই সাবেজেক্ট অবজেক্টে পরিণত হয়ে যায়।
এই সমস্যার সমাধান করার ক্যামেরার ব্রাস্ট মুড চালু করা প্রয়োজন। এই অপশনটি চালু করে গতিশীল বস্তুর ছবি তোলার জন্য শাটার বাটনে ক্লিক করলে, একসাথে অনেক ছবি উঠে যাবে। বলা বাহুল্য, যতক্ষণ শাটার বাটনে চাপ দিয়ে ধরে রাখবেন, ততক্ষণ অটোমেটিক ভাবে ছবি উঠতেই থাকবে। সর্বোচ্চ ১০০ টি ছবি এভাবে এক সাথে তোলা যায়।
এতোগুলো ছবির ভেতর কিছু ছবি অবশ্যই আপনার মনমতো হবে। পছন্দের ছবিগুলো রেখে বাকি ছবিগুলো পরে ডিলেট করে দিতে পারবেন।
আইএসও (ISO)
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার সময় আলো মোবাইলের লেন্স দিয়ে ঢুকে সেন্সরে প্রবেশ করে। সেন্সরের এই ধারণ ক্ষমতাকেই বলা হয় আইএসও (ISO)। সহজ কথায়, আইএসও (ISO) হলো আলোর সংবেদনশীলতার একটি পরিমাপ।
আইএসও (ISO) সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আপাতত কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু এটুকু জানলেই হবে যে, মোবাইল ক্যামেরার ISO বাড়িয়ে দিলে আলোর সংবেদনশীলরা বেড়ে যায়, যার ফলে অল্প আলোতেও ভালো ছবি তোলা সম্ভব। ISO কমিয়ে দিলে বিপরীত ঘটনা ঘটবে।
ডেপথ অব ফিল্ড (Depth of Field)
Depth শব্দের অর্থ ‘গভীরতা’ হলেও এখানে Depth শব্দটি দিয়ে ‘পরিষ্কার’ বোঝানো হয়েছে। একটা ছবিতে কতটুকু জায়গা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, সেটা বোঝাতেই Depth of Field ব্যবহার করা হয়।
কোনো একটা ছবির পুরোটাই পরিষ্কার দেখা গেলে, আমরা বলতে পারবো যে, ছবিটি পরিষ্কার বা ডেপথ অব ফিল্ড বেশি। আর যদি ছবির পুরোটা পরিষ্কার দেখা না যায়, তাহলে বলতে হবে, সেই ছবির ডেপথ অব ফিল্ড কম।
বিভিন্নভাবে ডেপথ অব ফিল্ড নিয়ন্ত্রন করা যায়। তবে, অ্যাপাচার কমিয়ে বাড়িয়ে ডেপথ অব ফিল্ড নিয়ন্ত্রণ করা ফটোগ্রাফারদের কাছে তুলনামূলকভাবে বেশি জনপ্রিয়।
মনে করুন, ১০ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, যদি আপনি সেই দশজনকেই পরিষ্কার ভাবে ফ্রেমবন্দি করতে চান, তবে এ্যাপারচার বাড়িয়ে ছবির ডেপথ অব ফিল্ড সর্বোচ্চ করে দিতে হবে। এর ফলে, ছবির সবাইকে সমানভাবে পরিষ্কার দেখতে লাগবে।
কিন্তু যদি আপনি এই ১০ জনের ভেতর থেকে শুধুমাত্র একজনকে পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে বাকিদের মুখ ঝাপসা বা ব্লার করে দিতে চান, তাহলে অ্যাপাচার কমানোর মাধ্যমে ছবির ডেপথ অব ফিল্ড সর্বনিম্ন করে ফেলতে হবে। এর ফলে, শুধুমাত্র একজনকে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে, বাকিদের দেখতে ঝাপসা লাগবে।
নয়েজ (Noise)
অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন, মোবাইল দিয়ে অল্প আলোতে ছবি তুললে ছবির কোন এক পাশে ছোট ছোট দানার মতো ঝিরঝিরে ভাব ফুটে ওঠে, যেটাকে ফটোগ্রাফির ভাষায় বলা হয় নয়েজ।
অল্প আলোতে মোবাইল দিয়ে ছবি তুললে কম বেশি সব ছবিতেই নয়েজ চলে আসে। মোবাইলের ছোট স্ক্রিনে সব সময় হয়তো নয়েজ চোখে পড়ে না, কিন্তু ল্যাপটপ বা পিসির বড় স্ক্রিনে এগুলো স্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়।
মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার সময় আমাদেরকে নয়েজের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কেননা, একটা দুর্দান্ত ছবির কোয়ালিটি নষ্ট করে ব্যবহারের অযোগ্য করে দেয়ার জন্য শুধুমাত্র নয়েজই যথেষ্ট!
অল্প আলোতে তোলা ছবির আলো বাড়ানোর জন্য আইওএস বাড়ালে সাধারণত নয়েজের পরিমাণও সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। তাই আইওএস প্রয়োজনের অতিরিক্ত না বাড়ানোই ভালো।
লাইট পেইন্টিং (Light Painting)
এখনকার সবচেয়ে লেটেস্ট মোবাইলগুলোতে লাইট পেইন্টিং এর অপশন দেখা যায়। এই অপশনটির সাহায্যে বুঝতে পারা যায়, লেন্স দিয়ে কতটুকু আলো প্রবেশের কারণে ছবিতে কি ধরণের পরিবর্তন হচ্ছে।
এমনকি, এই অপশনের সাহায্যে আপনি নিজের চাহিদা মতো আলো লেন্সে প্রবেশ করাতে পারবেন। এই ধরণের ক্যামেরায় সেন্সরের ক্যাপাসিটি বেশি থাকায় তুলনামূলক বেশি পরিমাণ আলো সেন্সর গ্রহণ করতে পারে।
এই ফিচারের সাহায্যে প্রয়োজন মতো আলো গ্রহণ করে আপনি ছবির কোয়ালিটি নিজের ইচ্ছা মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যার ফলে, আপনার তোলা প্রতিটা ছবি হবে দারুন রকমের কালারফুল।
অবশ্য, কিছু ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ আলো প্রবেশ করালে ছবির এক্সপোজারের মাত্রা খারাপভাবে বেড়ে যায় এবং দেখতে বাজে লাগে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এটা তেমন কোনো বড় সমস্যা না। কারণ আলোর নিয়ন্ত্রণ তো আপনার হাতেই থাকছে।
ডিএসএলআর ক্যামেরাতেও লাইট পেইন্টিং এর মতো অত্যাধুনিক কোনো ফিচার দেয়া থাকে না, যেটা আপনি এখন স্মার্টফোনেই পেয়ে যাচ্ছেন। তাই সহজেই অনুমান করা যায়, নিকট ভবিষ্যতে ডিএসএলআর ক্যামেরার মার্কেট খেয়ে দিতে পারে আধুনিক স্মার্টফোনগুলো।
মোবাইল দিয়ে ভালো মানের তোলার তোলার টেকনিক
ভালো ফটোগ্রাফির জন্য ফটোগ্রাফাররা বেশ কিছু নিয়ম বা ফান্ডামেন্টাল মেনে চলার চেষ্টা করে। একজন মোবাইল ফটোগ্রাফার হিসেবে আপনাকেও সেগুলোর বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে। এখানে ফটোগ্রাফির সমস্ত বেসিক টেকনিক নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই এমন কিছু জনপ্রিয় কিছু টেকনিক, যেগুলোর কথা না বললেই নয়, সেগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
গোল্ডেন আওয়ার এবং ব্লু আওয়ার
যারা বিকালে বাইরে ঘুরতে যান কিংবা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বারান্দা বা ছাদে যেয়ে চারপাশটা দেখেন, তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, সূর্য এই সময়ে হলুদ রঙের আলো দেয়, যা একটি সোনালী আভার রঙের সঙ্গে মিশে উষ্ণ ও নরম আলো বিকিরিত করে। এই সময়টাকেই ফটোগ্রাফির ভাষায় গোল্ডেন আওয়ায় বলা হয়।
আরো সহজ করে বললে, সুর্যোদয়ের পরের এবং সূর্যাস্তের আগের এক ঘন্টা সময়কে গোল্ডেন আওয়ায় বলা হয়। এই সময়টা ছবি তোলার জন্য আদর্শ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
অন্যদিকে, সূর্যোদয়ের আগের ১৫ থেকে ২০ মিনিট এবং সূর্যাস্তের পরের ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময়কে বলা হয় ব্লু আওয়ার। এই সময়েও অতি সুন্দর প্রোফেশনাল মানের ছবি তোলা সম্ভব।
গোল্ডেন এবং ব্লু আওয়ার ফটোগ্রাফারদের জন্য ছবি তোলার চরম আকাঙখিত সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। ফটোগ্রাফাররা দিনের দিনের পর দিন অপেক্ষা করে, কবে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্যের মৃদু আভা স্পষ্টতর হবে।
গোল্ডেন এবং ব্লু আওয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং আপনার আশেপাশের এলাকায় কখন ও কোথায় গোল্ডেন ও ব্লু আওয়ার কতক্ষণ থাকবে, তা জানতে প্লে স্টোর থেকে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ নামক সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে নিন।
Filter ব্যবহার করে ছবি তুলবেন না
আমাদের অনেকের একটি বাজে অভ্যাস হলো, আমরা ছবি তোলার সময় ডিফল্ট ক্যামেরার বদলে ইডিটিং বিভিন্ন থার্ড পার্টি ক্যামেরা ব্যবহার করি, কারণ সেগুলোতে বিভিন্ন ফিল্টার ব্যবহার করে ছবি তোলা যায়৷
এই ফিল্টার ব্যবহার করে ছবি তুলতে যেয়ে নিজেদের অজান্তেই আমরা ছবির কোয়ালিটির বারোটা বাজিয়ে ফেলি৷ এছাড়াও, ভবিষ্যতে যখন মূল ছবিটার প্রয়োজন পড়ে, তখন সেটি পাওয়া আর সম্ভব হয় না, ফলে রীতিমতো হতাশ হতে হয়৷
মনে রাখবেন, একটা ফিল্টার ছাড়া তোলা ছবিতে আপনি পরবর্তীতে বিভিন্ন ইডিটিং এ্যাপের সাহায্যে হাজার রকম ফিল্টার দিয়ে মনের মতো করে নিতে পারবেন৷ কিন্তু ফিল্টার ব্যবহার করা ছবিগুলোকে আর কখনো ইডিট করতে পারবেন না৷ ওগুলো থেকে যাবে অপরিবর্তনীয় হিসেবে৷
পজেটিভ ও নেগেটিভ স্পেস
নেগেটিভ ও পজেটিভ স্পেস মুলত ফটোগ্রাফির ‘রুল অব স্পেস’ সেগমেন্টের অংশ। যদিও বেশিরভাগ মানুষই এই নিয়ম সম্পর্কে জানে না, তারপরও মনের অজান্তেই এটা প্রয়োগ করে ফেলে।
পজেটিভ স্পেস বলতে বোঝায়, ছবি তোলার সময় সাব্জেক্ট যেই দিকে তাকিয়ে আছে বা নির্দেশ করছে, সেইদিকে বেশ খানিকটা ফাঁকা রেখে ছবি তোলা। এভাবে ছবি তুললে দেখতে ভালো লাগে।
অন্যদিকে, নেগেটিভ স্পেস মানে হলো, সাবেজক্ট যেদিকে তাকিয়ে আছে বা নির্দেশ করছে, ঠিক তার বিপরীত দিকে বেশ খানিকটা ফাঁক রেখে ছবি তোলা।
মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার ক্ষেত্রে পজেটিভ এবং নেগেটিভ স্পেসের দিকে খেয়াল রাখলে ছবিটা দেখতে সুন্দর হয়। এধরণের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় কভার পিকচার হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করে থাকে।
ভিউ পয়েন্ট
সহজ করে বললে, ছবি তোলার সময় ক্যামেরাটিকে যেই স্থানে রেখে সাব্জেক্টের ছবি তোলা হয়, সেই স্থানটিকে বলা হয় ভিউ পয়েন্ট।
সাধারণত, একেকটা সাব্জেক্টের ছবি তোলার জন্য অসংখ্য ভিউ পয়েন্ট থাকে। একেকজন সাব্জেক্টের একেক ভিউ পয়েন্ট থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করে। কোন ভিউ পয়েন্ট থেকে একটি সাব্জেক্টকে দেখতে বেশি ভালো লাগবে, সেটা বোঝার ক্ষমতা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।
একজন ভালো ফটোগ্রাফারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো সে জানে, একটা সাব্জেক্টের কোন ভিউ পয়েন্ট থেকে কোন অ্যাঙ্গেলে ছবি তুললে ছবিটা দেখতে মানানসই হবে। ছবি তুলতে তুলতে আপনারও একসময় সঠিক ভিউ পয়েন্ট খুঁজে পেতে বেগ পেতে হবে না।
লো লাইট (Low Light)
আগেকার সময়ে লো লাইট বা অল্প আলোতে মোবাইল দিয়ে ভালো ছবি তোলা যেত না। কিন্তু এখন যুগ পাল্টেছে। এখনকার স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে লো লাইটেও ভালো ছবি তোলা সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে ছবি তুলতে হয়।
লো লাইটে ছবি তোলার ক্ষেত্রে সঠিক এক্সপোজার মেইনটেইন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাদের মোবাইলে এক্সপোজার নিয়ন্ত্রণ করার ফিচার নেই, তারা প্লে স্টোর থেকে Open Camera নামক এপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এই এ্যাপে এক্সপোজার লকসহ সকল ধরনের এ্যাডভান্স ফিচার আছে।
মোবাইল দিয়ে লো লাইটে ছবি তোলার সময় সব অপশনই নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখা উচিৎ। অটো মুড চালু করলে ছবির মান খারাপ হয়ে যেতে পারে।
শাটার সর্বোচ্চ করে দিন। এতে লেন্স দিয়ে আলো সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রবেশ করতে পারবে। যদি কারো মোবাইলে স্ট্যাবিলাইজেশন অপশন থাকে, তাহলে সেটা চালু করে দিবে। এতে ছবির ডিটেইল নষ্ট হবে না, ছবিটি শার্প লাগবে। স্ট্যাবিলাইজেশন সিস্টেম না থাকলে ট্রাইপড ব্যবহার করতে পারেন।
হোয়াইট ব্যালেন্স সম্পর্কে তো আগেই বলেছি। লো লাইটে ছবি তোলার ক্ষেত্রে হোয়াইট ব্যালেন্স অটো মুডে না রেখে কাস্টম অপশনগুলোর একটি ব্যবহাএ করুন। আপনি যদি বাল্ব বা মোমবাতির আলোর উপস্থিতিতে ছবি তুলে থাকেন, তবে হোয়াইট ব্যালেন্স থেকে সেগুলোর জন্য নির্ধারিত অপশনটি বাছাই করুন। মোবাইলের ডিফল্ট ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে যাবেন না। এই জিনিস ছবির কোয়ালিটি নষ্ট করাতে ওস্তাদ।
সর্বোচ্চ রেজুলেশনে ছবি তুলুন। লো লাইটে মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার সময় জুম না করাই ভালো। জুম করলে ছবির রেজুলেশন নষ্ট হয়ে যায়।
মোবাইল দিয়ে Portrait ছবি তোলার উপায়
মোবাইল দিয়েই খুব ভালো মানের পোর্ট্রেইট ছবি তোলা সম্ভব। অনেকের মোবাইলে পোর্ট্রেইট ছবি তোলার জন্য আলাদা মুড থাকে। হয়তো আপনার মোবাইলেও আছে। সেটা দিয়ে হয়তো অনেক ছবি তুলেছেনও আগে, কিন্তু সেগুলো মন মতো হয়েছে কি? না হয়ে থাকলে, বাকি লেখাটুকু স্কিপ না করে পড়তে থাকুন।
পোর্ট্রেট ছবি তোলার প্রথম শর্ত হলো আলো
মোবাইল দিয়ে ভালো মানের পোর্ট্রেট ছবি তোলার জন্য প্রথমেই ভালো পরিমাণ আলো রিফ্লেক্ট করতে পারে এমন আলোর উৎসের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে রিং ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। আশা করি রিং ফ্ল্যাশের নাম শুনে আপনি চমকে যাননি। কারণ এই ডিভাইস সম্পর্কে ইতোমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে।
মাথায় রাখতে হবে, আলোর উৎসটি যেন সাব্জেক্টের পেছনে না থাকে। উৎসটিকে রাখতে হবে সাব্জেক্টের সামনে এবং বিপরীত দিকে মুখ করিয়ে। পুরোপুরি ফ্ল্যাট লাইটিং না করে যদি একটু আলো ছায়ার ভাব আনা যায়, তাহলে সেটাই করতে হবে।
কারণ, ফ্ল্যাট আলোতে তোলা ছবি নজরকাড়া হয় না, দেখতে বোরিং লাগে। যেমন, আমাদের জব, স্কুল, কলেজের জন্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবিগুলো। এগুলো যতই ভালো হোক না কেন, দেখতে একঘেয়ে লাগবেই। একজন ভালো ফটোগ্রাফার এমনভাবে পোর্ট্রেট ছবি তোলে, যেন ছবিটা দেখতে বোরিং না লাগে।
যাইহোক, আলোর উৎস সাব্জেক্টের তুলনায় বেশি নিচে রাখা যাবে না। এতে সাব্জেক্টকে দেখতে ভুতুড়ে লাগতে পারে। ঘরের ভেতর এবং বাইরে যেখানেই ছবি তোলা হোক না কেন, আলোর উৎসের পাশাপাশি রিফ্লেক্টর ব্যবহার করা যেতে পারে। রিফ্লেক্টর ছবির সাব্জেক্টকে আরো স্পষ্ট করে তোলে।
সাব্জেক্ট এবং অবজেক্ট সম্পর্কে সচেতন হোন
মোবাইল দিয়ে ভালো মানের পোট্রেট ছবি তোলার জন্য সাব্জেক্টকে অবজেক্ট গুলোর থেকে পৃথক করার প্রয়োজন পড়ে। এটা করার জন্য ফটোগ্রাফাররা সাব্জেক্টকে নানা রকম কালারের পোশাক পড়ায়, যাতে সেটা অবজেক্টের মধ্যে ঠিক মতো ফুটে উঠতে পারে এবং দর্শকের চোখ যেন প্রথমেই সাব্জেক্টের উপরই পড়ে। আপনিও এই কাজটি করে দেখতে পারেন।
মনে রাখবেন, পোর্ট্রেট ছবিতে বেশি সংখ্যক ইলিমেন্ট রাখা উচিৎ না। যত কম ইলিমেন্ট রাখা যাবে, ততই ভালো। পাশাপাশি, অ্যাপাচারও সর্বনিম্ন করে দিতে হবে।
সাব্জেক্ট এবং সাব্জেক্টের পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে খানিকটা ফাঁকা রাখা আবশ্যক। এতে ছায়া নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না এবং ভালো ডিপথ অব ফিল্ড পাওয়া যাবে। আর, পোর্ট্রেট ছবি অনেকে খানিকটা জুম করে তোলে। একাজ করা যাবে না। বরং, ক্যামেরাটিকে সাব্জেক্টের কাছে নিয়ে যেয়ে ছবি তুলতে হবে।
পে-প-সি…
সাব্জেক্ট অর্থাৎ যার পোর্ট্রেট তৈরী করা হচ্ছে, সে যদি গম্ভীর হয়ে থাকে কিংবা জোর করে হাসে, তাহলে ছবি ভালো আসবে না। সাব্জেক্টকে বলুন একটু টেনে ‘পে-প-সি……’ উচ্চারণ করতে। আর এই ফাঁকে আপনি ছবি তুলে ফেলুন। ছবিতে দেখবেন, সে হাসছে এবং এটা কোনো কৃত্রিম হাসি না!
Mirror Me
পোর্ট্রেট ছবি তোলার সময় ঘটা একটা কমন সমস্যা হলো, সাব্জেক্ট তথা মডেল পোজ দিতে পারে না! ক্যামেরার সামনে অনেকের দাড়ানোর স্টাইল দেখে মনে হয় হাটুঁতে শক্তি নেই, এখনই পড়ে যাবে, কিংবা সোজা হয়ে যেন দাড়াতেই শেখেনি!
এই সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে সুন্দর সমাধান হলো, আপনি নিজেই ইন্টারনেট ঘেটে বিভিন্ন ধরণের পোজ ও স্ট্যান্ডিং সম্পর্কে ধারণা নিন এবং তারপর আপনার মডেলকে যেয়ে বলুন, ‘Mirror Me’… তারপর আপনার পছন্দ মতো পোজ দিতে থাকুন এবং ছবি তুলুন।
আমাদের শেষ কথা
পরিশেষে, একজন ভালো মোবাইল ফটোগ্রাফার হওয়ার ওপেন সিক্রেট আপনাকে কানে কানে জানিয়ে দিতে চাই। উপরের কিছুই যদি আপনি না বুঝে থাকেন এবং জাস্ট একটা কথা জেনে ভালো ফটোগ্রাফার হয়ে যেতে চান, তাহলে কান পেতে শুনুন।
সিক্রেটটি হলো, বেশি বেশি ছবি তুলুন। এটা শুনে হতাশ হলে আপনার অন্য পথ দেখা উচিৎ। কেননা, ফটোগ্রাফারদের সবচেয়ে কমন বৈশিষ্ট্য হলো, তারা ফটোগ্রাফিকে ভালোবাসে। ছবি ভালো হোক কিংবা মন্দ, যেকোনো সময়কে ফ্রেমবন্দি করে তারা নির্মল আনন্দ পায়।
আপনি যত বেশি ছবি তুলবেন, আপনার অভিজ্ঞতার ঝুড়ি তত বাড়তে থাকবে। আস্তে আস্তে মোবাইলের ক্যামেরার বিভিন্ন ফিচার আপনার নখদর্পনে চলে আসবে।
বিশ্বাস করুন, আপনার মোবাইলে যেই ফিচারগুলো আছে, সেগুলোর একশ শতাংশ না হোক, যদি মাত্র সত্তর শতাংশেরও সঠিক ব্যবহার আপনি নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে বুঝবেন, আপনি অনেক ডিএসএলআরধারী ফটোগ্রাফাদের থেকেও অনেকাংশে এগিয়ে গেছেন।
আশা করি পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলার পর মোবাইল দিয়ে ভালো ছবি তোলার প্রাথমিক উপায়গুলো পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। যেকোনো মতামত জানাতে কমেন্ট করুন, পরবর্তী আর্টিকেল না আসা পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-