শীতের জনপ্রিয় ছয়টি পিঠা তৈরীর রেসিপি
বাংলাদেশ পিঠা পুলির দেশ। নবান্নের পর নতুন চাল ঘরে আসে এবং তখন থেকে অর্থাৎ শীতকালের শুরু থেকেই বাঙ্গালীদের ঘরে ঘরে পিঠা তৈরীর ধুম পড়ে যায়।
নানা রকমের পিঠার চল আছে আমাদের এই ছোট্ট দেশে। আবার একই পিঠা একেক অঞ্চলের মানুষ একেক নামে ডাকে।
এই লেখায় বাংলাদেশ এবং ভারতীয় অঞ্চলে প্রচলিত শীতকালের মুখরোচক পিঠার (যেমন ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, তেলের পিঠা এবং বিবিখানা পিঠা) রন্ধনশৈলী বা রেসিপি সম্পর্কে জানানো হবে।
সবগুলো পিঠারই মৌলিক উপাদান চালের গুড়ো, ময়দা, চিনি, গুড় বা এই ধরণের সহজলভ্য উপাদান, যেগুলো সব বাঙ্গালীর ঘরেই থাকে। তাই, পিঠা বানাতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না।
ভাঁপা পিঠা
বাংলাদেশ এবং ভারতীয় অঞ্চলে শীত মৌসুমের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত পিঠার নাম হলো ভাঁপা পিঠা। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর, সব জায়গার মানুষ ভাঁপা পিঠা দিয়ে নাশতা সারে। বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং ফুটপাতের দোকানে এই পিঠা আজকাল বিক্রি হতে দেখা যায়।
ভাঁপা পিঠা তৈরীর উপকরণঃ
- চালের গুড়ো
- লবন
- চালনী
- সুতির পাতলা কাপড়
- মাটির বা কাঁচের ছোট্ট বাটি
- ভাঁপা পিঠা বানানোর সাঁজ
- গুড়ের গুড়ো
- নারিকেল।
ভাঁপা পিঠা তৈরীর জন্য প্রথমেই একটি বাটিতে প্রয়োজন মতো চালের গুড়ো নিবেন। চালের গুড়োর পরিমান নির্ভর করবে, আপনি কতগুলো পীঠা বানাতে চাচ্ছেন, তার উপর।
গুড়োর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ লবন দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন, যেন লবনের পরিমান বেশি না হয়ে যায়। ভাঁপা পিঠায় লবনের পরিমান বেশি হয়ে গেলে খেতে ভালো লাগবে না।
চালের গুড়োর সঙ্গে এবারে পানি মিশ্রিত করতে হবে। অল্প অল্প করে পানি যোগ করবেন। অনেকে গুড়োর সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি যুক্ত করতে পারে না। তাই রান্নার পর ভাঁপা পিঠা বেশি ঝুরঝুরে হয়ে যায় এবং হাতে নিতে গেলেই ভেঙ্গে পড়ে।
কোনো কারণে পানি বেশি হয়ে গেলে চালের গুড়ো না নেড়ে এমনিই রেখে দিবেন। মিনিট বিশেক পর দেখবেন, চালের গুড়ো অনেকখানি পানি শুষে নিয়েছে। হাতে বেশি সময় না থাকলে আরেকটু চালের গুড়ো বাটিতে ঢেলেও নিতে পারেন।
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সঠিক পরিমানে পানি দেয়া হয়েছে কিনা তা বুঝবো কি করে। এর উত্তর হলো, যখন ভেজা চালের গুড়োর মিশ্রণ হাতের মুঠিতে নিয়ে দলা বানানোর পর, সেই দলা ভাঙতে সামান্য একটু বেশি চাপ লাগবে এবং তারপর ঝুরঝুরে হয়ে পড়ার পরিবর্তে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়বে, তখন বুঝতে হবে, পানির পরিমাণ একদম যুঁতসই হয়েছে।
এরপর চালের গুড়োর মিশ্রণটিকে চালনী দিয়ে দিয়ে চেলে নিতে হবে, যেন কোনো বড় কণা অবশিষ্ট না থাকে, দানাগুলো মিহি হয়।
এরপর, চুলায় একটি হাড়িতে পানি গরম করে নিতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে পানি ফুটতে শুরু না করা পর্যন্ত।
ভাঁপা পিঠা তৈরীর জন্য কয়েকটি সুতির পাতলা কাপড়ের প্রয়োজন। কাপড়ের বদলে রঙ উঠবে না এরকম পাতলা ওড়না বা এই টাইপের কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন।
কাপড়গুলো পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিতে হবে। মনে রাখবেন, খুব বেশি শুকনা করে চিপবেন না। কাপড় যেন ভেজা ভেজাই থাকে। বলে রাখা ভালো, যদি একই কাপড় দিয়ে অনেকগুলো পিঠা তৈরী করেন, তবে প্রতিবার পিঠা সাঁজানোর পূর্বে কাপড়টি এভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে।
এরপর, ভাঁপা পিঠা বানানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরী মাটির বা কাঁচের ছোট্ট বাটি অথবা ভাঁপা পিঠা বানানোর সাঁজের প্রয়োজন হবে। এগুলো জিনিস বাজারে খুব সহজেই আপনি পেয়ে যাবেন।
যাইহোক, এবার পিঠা সাঁজানোর পালা। প্রথমেই একটি শুকনো ভাঁপা পিঠা বানানোর সাঁজ অথবা বাটি হাতে নিন। তারপর, বাটিতে অর্ধেকের একটু কম পরিমাণ গুড়ের গুড়ো নিয়ে মাঝের দিকে সুন্দর করে ছড়িয়ে দিন। তারপর গুড়ের উপর হালকা নারিকেলের গুড়োর আস্তরণ দিয়ে দিন। এর উপর দিয়ে আরো খানিকটা চালের গুড়ো দিয়ে হাতের চালুর সাহায্যে সমান করে নিন।
মনে রাখবেন, ভাঁপা পিঠা তৈরীর সময় বাটিতে চালের গুড়ো, নারিকেল, গুড় কিছুই জোড় করে ঠেসে ঠেসে ভরা যাবে না। সব কিছু আলতো করে দিতে হবে।
এবারে, ভিজিয়ে রাখা কাপড় দিয়ে বাটিটা মুড়িয়ে নিতে হবে। এরপর, একটা বড় বাটির উপর চালনি নিবেন। তার উপর কাপড়সহ বাটিটি নিয়ে বাটির উপর কয়েকবার টোকা দিবেন এবং বাটিটি সরিয়ে নিবেন। এতে ভাঁপা পিঠার শেইপ চলে আসবে। পিঠাটিকে ভালো করে মুড়িয়ে চালনীটিকে ফুটন্ত গরম পানির পাতিলের উপর বসিয়ে দিতে হবে।
ফুটন্ত পানির পাতিলের উপর ভাঁপা পিঠাসহকারে ছাকনীটি রাখার পর একটা ঢাকনা দিয়ে পাতিলটি ঢেকে দিতে হবে। ৩-৫ মিনিট পরই পিঠাটি তৈরী হয়ে যাবে এবং আপনি নামিয়ে আনতে পারবেন।
চিতই পিঠা
চিতই পিঠা বাংলাদেশ এবং ভারতীয় অঞ্চলগুলোতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি অঞ্চলভেদে চিতে পিঠে, চিকুই পিঠে, সরা পিঠে, আসকে পিঠে, ঢাকা পিঠে, চিতুই পিঠেসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ স্যার তপন রায়চৌধুরী চিতই পিঠার সাথে ইংল্যান্ডের বিফস্টেকের তুলনা করেছেন।
চিতই পিঠা তৈরীর উপকরণঃ
- চালের আঁটা
- রান্না করা ভাত
- ব্লেন্ডার
- চিতই পিঠা বানানোর সাঁজ অথবা ছোট মাটির কড়াই
চিতই পিঠা বানানোর জন্য প্রথমেই একটি বাটিতে পরিমান মতো চালের আঁটা নিয়ে সঙ্গে লবন যুক্ত করে নিতে হবে। লবনের পরিমাণের ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
এরপর, একটা বিশেষ কাজ করতে হবে, যেটা করলে আপনার বানানো চিতই পিঠা হয়ে উঠবে অসাধারণ। কাজটা হলো, হাফ বাটি পরিমাণ রান্না করা ভাতের সঙ্গে এক বাটি পানি নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে হবে।
শুনতে অবাক লাগলেও, এটা করলে নিঃসন্দেহে দারুন ফলাফল পাবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, ব্লেন্ড করার পর ভাত যেন একদম পানি পানি পানি হয়ে যায়, কোনো দানা থাকা চলবে না।
এবারে, চালের গুড়ো বা আঁটার সঙ্গে ভাত বাটা মিশ্রিত করার পালা। প্রতি এক ‘কাপ’ চালের গুড়োর জন্য সর্বোচ্চ দেড় ‘টেবিল চামচ’ ভাত বাটা নিতে পারবেন। এর বেশি কোনোভাবেই নেয়া যাবে না।
বেশি পরিমাণে ভাত বাটা নিয়ে ফেললে, আমাদের বানানো চিতই পিঠাটি অনেক বেশি নরম হয়ে যাবে, তখন আর খেতে ভালো লাগবে না।
তারপর, একদম হালকা কুসুম কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশ্রণটি মিশ্রিত করে নিতে হবে। এই ধাপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই মিশ্রণটিতে খুব বেশি পরিমানে পানি নিয়ে নিলে রান্নার কিছুক্ষণ পরই চিতই পিঠা অত্যন্ত শক্ত হয়ে যাবে। পিঠায় আর ছিদ্র ছিদ্র ভাবটা আসবে না।
তারপর মিশ্রনটিকে ১০ মিনিটের জন্য ঢেকে রেখে দিবেন। ১০ মিনিট পর আবারো কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করবেন।
এবার একটি ছোট মাটির কড়াই অথবা চিতই পিঠা বানানোর সাঁজের প্রয়োজন হবে। কড়াই জোগার হয়ে গেলে, প্রথমেই কড়াইয়ের ভেতর ভেজা কাপড় চালিয়ে শুকনো তলাটা ভেজা ভেজা করে নিতে হবে।
এরপর, একটা কাপে করে মিশ্রণটি নিয়ে কড়াইয়ের মাঝে ছেড়ে দিবেন এবং ঢাকনার সাহায্যে কড়াই ঢেকে দিবেন।
বলে রাখা ভালো, চুলের হিট অবশ্যই বেশি হতে হবে। কম তাপে বানানো চিতই পিঠা খুবই শক্ত হয়।
পিঠা প্রস্তুত হতে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট লাগবে। পাঁচ মিনিট পরই আমাদের চিতই পিঠা খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যাবে।
পাটিশাপটা
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় একটি পিঠা হলো পাটিশাপটা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ছোট গল্প পুঁইমাচা সহ বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে পাটিশাপটার উল্লেখ চোখে পড়ার মতো।
পাটিশাপটা পিঠা তৈরীর উপকরণঃ
- চালের গুড়ো
- ময়দা
- সুজি
- চিনি
- দুধ
একটি বাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে চালের গুড়ো নিতে হবে। তার সঙ্গে চালের গুড়োর অর্ধেক পরিমাণ ময়দা, এক চতুর্থাংশ পরিমাণে সুজি এবং প্রয়োজন মতো চিনি যুক্ত করবেন।
এখানে বলে রাখা ভালো, এই চিনি দানা দানা অবস্থায় চালের গুড়োর সঙ্গে যুক্ত করলে রান্না হয়ে যাওয়ার পর পাটিশাপটা পিঠাটি কড়াই বা তাওয়া থেকে উঠাতে সমস্যা হবে, ছিড়ে ছিড়ে যাবে।
এজন্য, চিনি অবশ্যই মিক্সিং জার বা ব্লেন্ডারে একদম পাউডার করে নিতে হবে।
এরপর, সামান্য পরিমাণে লবণ দিয়ে সবকিছু শুকনো অবস্থাতেই একসঙ্গে ভালোমতো মিশিয়ে নিতে হবে।
এই মিশ্রণের সঙ্গে পরিমান মতো দুধ দিয়ে লঘু মিশ্রণ তৈরী করে ফেলতে হবে। দুধের পরিবর্তে চাইলে জলও ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু, সেক্ষত্রে স্বাদের সামান্য ঘাটতি হবে।
এই সমস্ত পিঠা বানানোর ক্ষেত্রে ভালো মিশ্রণ তৈরীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মিশ্রনটাকে পারফেক্ট বানানোর জন্য চামচের পরিবর্তে একটা মিক্সার ব্যবহার করতে পারেন। এতে মিশ্রণে কোনো উপাদান দলা পাকিয়ে থাকবে না এবং আমাদের বানানো চিতই পিঠাটি চমৎকার খেতে হবে।
তারপর, এই মিশ্রনটিকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ঘন্টাখানেকের জন্য সেভাবেই রেখে দিবেন। এতে পাটিশাপটা পিঠাগুলো ভাজার সময় ভেঙে যাওয়ার রিস্ক থাকবে না।
এবারে, আমরা পাটিশাপটার ভেতরের ক্ষীর তৈরী করবো। এজন্য প্রথমেই একটি কড়াইতে প্রয়োজন মতো দুধ নিবেন। দুধটা হালকা গরম হয়ে যাওয়ার পর এর মধ্যে আসল দুধের অর্ধেক পরিমাণ গুড়ো দুধ ঢেলে দিতে হবে।
তবে কেউ চাইলে, গুড়ো দুধ না দিয়েই আসল দুধটাকেই ঘন করে ক্ষীর তৈরী করে নিতে পারেন। তবে এতে সময় বেশি লাগবে।
দশ থেকে বারো মিনিট বেশি তাপমাত্রায় তাপ দিলেই দুধটি ঘন হয়ে যাবে। তখন এর মধ্যে দিয়ে দিতে হবে স্বাদমতো চিনি এবং এভাবে ক্রমাগত জ্বাল দেয়া চালিয়ে যেতে হবে এবং পুরোটা সময় চামচ জাতীয় কিছু দিয়ে দুধটুকু নাড়তে হবে। জ্বাল দিতে দিতে ক্ষীরটাকে একদম শুকনো বানিয়ে ফেলতে হবে।
এবার পাটিশাপটা তৈরীর পালা। পাটিশাপটা পিঠা তৈরীর জন্য, একটা ফ্লাইং প্যান থাকলে সুবিধা হয়। ফ্লাইং প্যানের উপর চালের গুড়ো ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরী ঐ মিশ্রনটির সামান্য অংশ ঢেলে ছড়িয়ে দিতে হবে।
এরপর ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড অপেক্ষা করলেই দেখেবেন, মিশ্রণটির উপরের দিকটা শুকিয়ে গেছে। এই সময় আমাদের তৈরী করে রাখা ক্ষীরটা মিশ্রণের একপাশের উপর দিয়ে মিশ্রনটি পাকিয়ে দিতে হবে।
প্রতিবার একেকটা পাটিশাপটা বানানোর পরে কড়াইয়ের তলাটা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিবেন। এতে পরের পিঠাটি তুলতে অসুবিধা হবে না।
পুলি পিঠা
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠাসমূহের মধ্যে পুলি পিঠা অন্যতম। কিছু কিছু অঞ্চলে একে কুলিপিঠাও বলা হয়।
পিঠা তৈরীর উপকরণঃ
- ঘি
- নারিকেলের গুড়ো
- সাদা এলাচের গুড়ো
- খেজুরের গুড়
- সয়াবিন তেল।
পুঠি পিঠা বানানোর জন্য প্রথমেই আমাদেরকে নারিকেলের পুর বা ক্ষীর বানিয়ে নিতে হবে।
পুর বা ক্ষীর বানানোর জন্য একটি ফ্লাইং প্যানে দুই টেবিল চামচ ঘি নিতে হবে।
ঘি টা চুলার তাপে গলে আসলে এর মধ্যে আড়াই কাপ ঝরঝরে নারিকেল গুড়ো, সাদা এলাচের গুড়ো এক চা চামচ, গুড়ো করা খেজুরের গুড় এক কাপ দিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে নিবেন। আপনি চাইলে অবশ্য গুড়ের বদলে চিনিও ব্যবহার করতে পারেন।
চুলার তাপ মিডিয়াম তাপমাত্রায় রেখে মিশ্রণটির গুড় গলে না যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকতে হবে।
গুড় সম্পূর্নভাবে গলে আসলে নারিকেলের পুর বা ক্ষীর তৈরী হয়ে যাবে। গুড় গলতে সাধারনত খুব একটা সময় লাগে না। ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যেই দেখবেন গুড় গলে গেছে।
এই পুরটা ঠান্ডা করে তারপর আমরা এটাকে পিঠা তৈরীর জন্য ব্যবহার করবো। কেউ চাইলে আগেই পুর তৈরী করে রাখতে পারেন। ফ্রিজে খুব সহজেই পুর সংরক্ষণ করা যায়।
এরপর, একটি বাটিতে দুই কাপ ময়দা নিন। এতে হাফ চা চামচ লবন এবং এক চা চামচ চিনি যুক্ত করুন। কাপের এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ সয়াবিন তেল ভালোভাবে গরম করে এর সঙ্গে মেশান। মেশানোর কাজটা অবশ্যই হাত দিয়ে নয়, বরং মিক্সার দিয়ে করতে হবে।
মিনিট খানেক তেল দিতে মিক্সার করার পর এর সঙ্গে হাফ কাপ পানি যুক্ত করে আবারো মিশ্রিত করতে হবে। তারপর দশ মিনিটের জন্য মিশ্রণটিকে রেখে দিয়ে দুই হাত দিয়ে ঘুরিয়ে গোল লেচি বা বল তৈরী করে নিতে হবে।
এরপর, সেগুলো বেলনা দিয়ে বেলে ছোট ছোট রুটির অংশ তৈরী করতে হবে।
বাজারে পুলি পিঠা তৈরীর অনেক সাঁজ পাওয়া যায়। সেগুলোর উপর রুটির অংশটি বসিয়ে ভেতরে প্রথমে তৈরী করা পুর দিয়ে রুটির চারপাশ ঢেকে দিতে হবে। এরপর, মুখ আটকে দিলেই কাজ শেষ।
এরপর গরম তেলের ভেতর পিঠাগুলো ছেড়ে দিয়ে সময় নিয়ে রান্না করতে হবে। অনেকে ফুটন্ত তেলের উপর পিঠা ছেড়ে দেয়। এটা আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অল্প গরম তেলে পিঠা দিয়ে আস্তে আস্তে তেলের তাপমাত্রা বাড়াতে হবে। এতে পিঠা মসৃণ হয়।
মালপোয়া বা তেলের পিঠা
এই পিঠাটি বাংলাদেশে তেলের পিঠা এবং পশ্চিমবঙ্গে মালপোয়া পিঠা নামে পরিচিত। পিঠাটি সন্ধ্যার নাশতা হিসেবে সমাদৃত।
পিঠা তৈরীর উপকরণঃ
- চালের গুড়ো
- ময়দা
- চিনি।
একটি বাটিতে হাফ কাপ পরিমান চালের গুড়ো এবং এক কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে মিক্সারের সাহায্যে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, চালের গুড়ো যেন দলা পাকিয়ে না থাকে।
ভালোভাবে মেশানো হয়ে গেলে, মিশ্রণটিকে একটি ফ্লাইং প্যানে নিয়ে চুলার মিডিয়াম তাপে ফ্লাইং প্যানটি বসিয়ে মিশ্রনটিকে জ্বাল দিতে হবে। জ্বাল দেয়ার সময় মিক্সার দিয়ে ক্রমাগত মিশ্রণটিকে নাড়তে থাকতে হবে।
কোনোভাবেই নাড়া থামানো যাবে না। কারণ নাড়া বন্ধ করলেই কড়াইয়ের ভেতরই চালের গুড়োর মিশ্রণটি দলা বাঁধিয়ে ফেলবে।
ক্রমাগত নাড়তে থাকলে খুব দ্রুতই মিশ্রণটি ঘন হয়ে যাবে। ঘন হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে মিশ্রণটিকে ঠান্ডা করার জন্য রেখে দিতে হবে।
এই ফাঁকে, অন্য আরেকটি কাপে আড়াই কাপ ফ্রেশ চালের গুড়ো, এক কাপ পরিমাণ ময়দা, দেড় কাপ পরিমাণ চিনি এবং পরিমাণ মতো লবণ নিতে হবে। এগুলো একসাথে মিশ্রিত করতে হবে।
এরপর, এর সঙ্গে আমরা একটু আগে যেই মিশ্রণটি জ্বাল দিয়েছিলাম, সেটি হাত দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এর ফলে, আমাদের তৈরী করা তেলের পিঠাটি অনেক নরম এবং তুলতুলে হবে।
তারপর, এতে এক কাপ পানি মিশ্রিত করতে হবে। পরে আরো পানি লাগলে ধীরে ধীরে আরো পানি দিবেন। একসঙ্গে অনেক পানি দিয়ে দিলে মিশ্রণটি বেশি হালকা হয়ে যেতে পারে।
মেশানো হয়ে গেলে মিশ্রণটিকে মিনিট দশেকের জন্য না নেরে রেখে দিতে হবে।
মিনিট দশেক পর, আরেকবার মিশ্রণটি নেড়ে দিতে হবে। তারপর একটি কড়াইয়ে পরিমান মতো সয়াবিন তেল নিয়ে গরম করতে দিতে হবে।
সয়াবিন তেল গরম হয়ে গেলে এর ভেতর আমাদেরকে একটু আগে বানানো মিশ্রণটি সামান্য পরিমাণে ঢেলে দিতে হবে। তারপর অপেক্ষা করতে হবে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ সেকেন্ড।
এর মধ্যে, কড়াইয়ে চামচ দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। পিঠা আপনা আপনি একসময় ফুলে উঠবে।
এই সময়ে, কোনো অবস্থাতেই চুলার আঁচ বাড়ানো বা কমানো যাবে না।
কিছুক্ষণ পর পিঠাটি সামান্য ফুলে উঠলে চামচ দিয়ে এটাকে উলটে দিতে হবে। কিছু তেল পিঠার উপরের দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে পিঠাটি আরো নরম এবং তুলতুলে হবে।
তারপর সোনালী রঙ এলে পিঠাটি উঠিয়ে নিবেন। এভাবে একই প্রসেস বার বার রিপিট করে সুন্দর সুন্দর নরম ফোলা ফোলা তেলের পিঠা তৈরী করা যায়। এভাবে বানানো পিঠার ফোলা ভাব ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
বিবিখানা পিঠা
কেকের মতো দেখতে মুখরোচক এই পিঠাটি শীতকালের বিশেষ একটি আকর্ষণ। ছোট বড় সকলেই বিবিখানা পিঠা খেতে পছন্দ করে।
পিঠা তৈরীর উপকরণঃ
- চালের গুড়ো
- ময়দা
- বেকিং পাউডার
- ডিম
- ঘি
- নারিকেল কোরা
- দুধ
বিবিখানা পিঠা তৈরীর জন্য প্রথমেই একটি বাটিতে দেড় কাপ চালের গুড়ো নিতে হবে। তার সঙ্গে মেশাতে হবে হাফ কাপের সামান্য কম পরিমাণ ময়দা, এক চা চামচ বেকিং পাউডার এবং সামান্য পরিমাণে লবন। এ সবকিছু একটি চালনা দিয়ে চেলে নিতে হবে।
আলাদা বাটিতে দুইটা ডিম নিতে হবে। তার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে একটি কাপের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ ঘি, হাফ কাপ খেজুরের গুড় এবং তিন টেবিল চামচ পরিমাণ চিনি।
চিনি এবং গুড় দুটোই একসঙ্গে দেয়ার কারণ হলো, এতে স্বাদ এবং কালার দুটোরই একটা ব্যালেন্স থাকে।
শুধু গুড় দিয়ে বিবিখানা পিঠা তৈরী করলে রঙ বেশি গাঢ় ও কালচে হয়ে যায় এবং স্বাদও ভালো পাওয়া যায় না।
মিক্সার দিয়ে এগুলোকে ভালোমতো মিশিয়ে নিতে হবে।
ভালোভাবে মেশানোর পর এর সঙ্গে অর্ধেক কাপ নালিকেল কোড়া এবং এক কাপ দুধ যুক্ত করতে হবে। এরপর, আবারো সবকিছু একসঙ্গে মিক্স করতে হবে।
তারপর, এগুলোর সঙ্গে সেই চেলে রাখা ময়দা এবং চালের গুড়ো অল্প অল্প করে মিশিয়ে দিতে হবে।
এবারে, বিবিখানা পিঠা তৈরীর জন্য আমরা একটা কাচের হিট প্রুফ বাটি নিয়ে নিবো এবং এর ভেতরের গায়ে ঘি ব্রাশ করে দিবো। আপনারা চাইলে স্টিলের বাটিও নিতে পারেন।
এই বাটির মধ্যে একটু আগে তৈরী করা মিশ্রণটি ঢেলে দিয়ে তার উপর নারিকেল কোড়া ছড়িয়ে দিতে হবে।
তারপর বাটিটা একটু নাড়াতে হবে। এতে ভেতরের বাতাস বেড়িয়ে যাবে এবং পীঠার ভেতরে কোনো গর্ত তৈরী হবে না।
এখন রান্না শুরু করার পালা। একটি কড়াইয়ের উপর প্রথমে একটা কাপড় বিছিয়ে দিতে হবে। তার উপর একটি গরম পাত্র রাখার স্টান্ড বসাতে হবে। সবার উপরে বসিয়ে দিবেন মিশ্রণসহ সেই বাটিটা। বাটিটা অবশ্যই ঢেকে দিতে হবে।
এরপর, কড়াইয়ে ভেতর এমনভাবে পানি ঢালতে হবে, যেন সেটা বাটির তিন ভাগের এক ভাগ কভার করে নেয়। রান্নার সময় যতবার এই পানি শুকিয়ে যাবে, ততবারই নতুন করে পানি দিয়ে দিবেন।
তারপর, বাতিটিকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলা জ্বালিয়ে দিন।
রান্না হতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। তারপরই তৈরী হয়ে যাবে সুস্বাদু বিবিখানা পিঠা।