চুলের সমস্যা এখন একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। চুল সম্পর্কিত সকল সমস্যার পরিণতি একটাই। সেটা হলো, চুলের ঘনত্ব কমে আস্তে আস্তে পাতলা হতে শুরু করা। আর চুল পাতলা হওয়ার সমস্যার সমাধান পেতে মানুষ তার জীবনের একটি সময়ে এসে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। গুগলে সার্চ করে, ইউটিউবে চুল বিষয়ক ভিডিও খোঁজে কিংবা ডাক্তারের কাছে মাথার পাতলা চুল ঘন করার উপায় ও ঔষধ সম্পর্কে জানতে চায়।
আপনি হয়তো শুনে অবাক হবেন, প্রতি মাসে বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার মানুষ গুগলে “মাথার পাতলা চুল ঘন করার উপায় কি” লিখে সার্চ করে। আসুন উত্তরটা জেনে নিই আজই।
তাই, আজকের আলোচনা হবে সম্পূর্ণভাবে চুল সম্পর্কিত। আমরা জানব, মাথার পাতলা চুল ঘন করার উপায় সমূহ কি কি। যাদের মাথার দুই পাশের চুল পাতলা হয়ে যচ্ছে, তাদের জন্যেও এই লিখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
ক্যাস্টর অয়েল – মাথার পাতলা চুল ঘন করার উপায়
মাথার পাতলা চুল ঘন করার উপায় হিসেবে ক্যাস্টর অয়েল দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই ক্যাস্টর অয়েল ম্যাজিকের মতো কাজ করে। খুব দ্রুত চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা আগের তুলনায় অনেক বেশি দৃষ্টিগোচর হয়। নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকলে একসময় মাথার চুল ঘন হয়ে যায়।
ক্যাস্টর অয়েলের এতো উপকরীতার মূল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এর উপাদানে। ক্যাস্টর অয়েলে ওমেগা – ৯ ফ্যাটি আসিড এবং এসেন্সিয়াল ভিটামিনসের পাশাপাশি রিসিনলেইক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যেগুলো চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপাদান।
অন্যদিকে মাথার পাতলা চুল ঘন করার উপায় হিসেবে ভিটামিন ই এর কার্যকারিতাও বলার মতোই। এর বাহ্যিক ব্যবহার চুলের আগা থেকে গোড়া অবধি আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।
ক্যাস্টর অয়েল এবং ভিটামিন ই একসাথে ব্যবহার করলে চুল গজানোর হার অনেক বেশি (কারো কারো ক্ষেত্রে কয়েকগুণ পর্যন্ত) বেড়ে যায়। যাদের মাথার সামনের চুল বেশ হালকা, তাদের জন্য এই উপায়টি অনেক বেশি উপকারী হতে চলেছে।
——উপকরণ——
১। ক্যাস্টর অয়েল
২। ভিটামিন ই ক্যাপসুল
কাস্টর অয়েল এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুলের পরিমাণের অনুপাত ১ : ১ চামচ হলে ভালো।
——পদ্ধতি——
ধাপ ১: সন্ধ্যার পর ভিটামিন ই ক্যাপসুলটি ফুটো করুন। ভেতরের তরল পদার্থ বের করে চামচে রাখুন।
ধাপ ২: কাস্টর অয়েলের সঙ্গে ভিটামিন ই এর তরল পদার্থটুকু মেশান।
ধাপ ৩: কাস্টর অয়েল এবং ভিটামিন ই এর মিশ্রনটি আঙ্গুলে লাগিয়ে মাথার ত্বকে (যেখানে নতুন চুল গজাতে চান সেখানে) ঘষুন।
ধাপ ৪: সারারাত রেখে দিন।
ধাপ ৫: পরের দিন গোসলের সময় পরিষ্কার করে ফেলুন।
এভাবে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন করে কাস্টর অয়েল এবং ভিটামিন ই এর মিশ্রণ চুলে ব্যবহার করুন। অতি উৎসাহে কেউ কেউ প্রতিদিনই কাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে চায়। এই ভুল কখনোই করবেন না। কাস্টর অয়েল অত্যন্ত ঘন তেল। নারিকেল তেলের মতো এটি প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়।
এ্যালোভেরা – মাথার সামনের পাতলা চুল ঘন করার উপায়
মাথার পাতলা চুল ঘন করার উপায় উল্লেখ করার সময় এ্যালোভেরার কথা ভোলা মুশকিল। এ্যালোভেরার বিশেষ উপাদানগুলো একে সকলের কাছে প্রিয় বানিয়ে রেখেছে। আমাদের ব্যবহার করা বহু কসমেটিকসের মূল উপাদান হিসেবে রাখা হয় এ্যালোভেরাকে।
পাতলা চুল ঘন করার জন্য এ্যালোভেরা ব্যবহার করতে চাইলে বাজার থেকে ফ্রেশ এ্যালোভেরার পাতা কিনে আনুন। ১০-২০৳ এর মধ্যেই একটি পাতা পেয়ে যাবেন।
প্রক্রিয়াজাত করা অনেক কোম্পানির এ্যালোভেরা জেল বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলোর দাম সাধারণত অনেক বেশি হয় এবং গুণগত মানের বিষয়েও অভিজ্ঞদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাই ওগুলো ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন। ফ্রেশ পাতা কিনুন, প্রয়োজনে বাসাতেই টবে কিছু এ্যালোভেরা গাছ লাগান।
এ্যালোভেরার পাতা সংগ্রহের পর নিম্নলিখিত ধাপসমূহ অনুসরণ করুন…
——পদ্ধতি——
ধাপ ১: অ্যালোভেরা পাতাটির মাঝ বরাবর ছুড়ি দিয়ে কেটে ফেলুন।
ধাপ ২: চামচের সাহায্যে পাতার ভেতরের জেলটুকু বের করে নিন।
ধাপ ৩: জেলটুকু একটি পাত্রে নিয়ে পেস্ট করে ফেলুন।
ধাপ ৪: প্রাপ্ত পেস্ট মাথার ত্বকে ঘষে ঘষে লাগান। যদি আপনার উদ্দেশ্য, মাথার সামনের দুই পাশে চুল গজানো হয়, তবে সেখানকার ত্বকে মোলায়েমভাবে পেস্টটি ঘষে লাগিয়ে রাখুন।
ধাপ ৫: আধা ঘন্টা পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এ্যালোভেরা ব্যবহারের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবেই দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমবার লাগানোর পরই আপনি অনুভব করবেন, চুল অনেক সিল্কি ও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
অবশ্যই পড়ুন –
সপ্তাহে ২-৩ দিন এ্যালোভেরা ব্যবহার করলে চুল পড়ার হার অনেক কমে যাবে এবং নতুন চুল গজিয়ে চুল ঘন হতে শুরু করবে।
পেঁয়াজ – মাথার সামনের পাতলা চুল ঘন করার উপায়
সালফার আমাদের চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ও পাতলা চুল ঘন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে। পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকে।
আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, পেঁয়াজ কাঁটার সময় আমাদের চোখ জ্বলে, চোখ দিয়ে পানি আসে। এর মূল কারণ হলো এই সালফার। তাই চুলে নিয়মিত পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে আস্তে মাথার চুল ঘন হতে শুরু করে।
তবে, পেঁয়াজের সাথে কাস্টর অয়েল ব্যবহার করলে পেঁয়াজের গুণ ও শক্তি আরো বেড়ে যায় এবং আমাদের মাথার চুল ঘন হওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
——উপকরণ——
১। পেঁয়াজ
২। ক্যাস্টর অয়েল
পেঁয়াজ ও কাস্টর অয়েলের পরিমাণের অনুপাত ১ : ১ চামচ হওয়া উচিৎ।
——পদ্ধতি——
ধাপ ১: সন্ধ্যার পর একটি বা দুইটি পেঁয়াজ নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেণ্ড করুন বা রস বের করে নিন।
ধাপ ২: পেঁয়াজের রসের সাথে কাস্টর অয়েল মিশিয়ে নিন।
ধাপ ৩: পুরো মাথায় এবং বিশেষ করে মাথার সামনের চুল যাদের হালকা, তারা মাথার সামনে আলতো করে সময় নিয়ে ঘষুন।
ধাপ ৪: মিশ্রণটি চুলে ঘষার সময় তাড়াহুড়া বা দ্রুত ঘষবেন না। এতে চুল গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ধাপ ৫: কিছুক্ষণ ঘষে রেখে দিন। পরেরদিন সকালে মাথা পরিষ্কার করে ফেলুন।
এভাবে সপ্তাহে ২ দিন করে এই মিশ্রণটি লাগাতে থাকুন। খুব দ্রুত ফলাফল পেয়ে যাবেন। ১ মাসের ভেতর আপনার চুলে দারুন পরিবর্তন চলে আসবে। প্রায় দের মাসের মধ্যে মাথায় ছোট ছোট কিছু নতুন চুলের আবির্ভাব লক্ষ্য করবেন।
যারা কাস্টর অয়েলের সাথে পরিচিত নন বা কোনো সীমাবদ্ধতার কারণে কাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারছেন না, তারা শুধু পেঁয়াজের মিশ্রণ বানিয়েই এই পদ্ধতিতে চুলে লাগাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিদিন ব্যবহার করা বেশি কার্যকরী।
প্রতিদিন রাতেই লাগাতে হবে তা না। দিনের বেলায় গোসলের অন্তত ২-৩ ঘন্টা লাগালেও ভালো ফল পেতে পারেন।
রসুন – মাথার সামনের পাতলা চুল ঘন করার উপায়
মাথার পাতলা চুল ঘন করার ক্ষেত্রে পেঁয়াজের উপকারীতার কথা সবাই মোটামুটি জানে। কিন্তু রসুনের ভূমিকা সম্পর্কে সবাই এখনো তেমন সচেতন হয়ে ওঠেনি।
রসুনের উপকারীতা সম্পর্কে মানুষ অনেক আগে থেকেই উদাসীন ছিল। একটা সময় বিজ্ঞদের মুখে প্রায়ই শোনা যেত, রসুন খেলে রক্তের ঘনত্ত্ব কমে যায়, রক্তশূণ্যতা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে বিজ্ঞান এগুলোকে অহেতুক কথা হিসেবে বিবেচনা করে।
রসুন খেলে উপকার তো হয়ই, পেঁয়াজের মতো বাহ্যিক ব্যবহারে অনেক উন্নতি সাধনও হয়। তবে শুধু রসুন ত্বকে ব্যবহার করার চেয়ে নারিকেল তেলের সাথে মিশ্রিত করে ব্যবহার করা বেশি ইফেক্টিভ।
রসুন ও নারিকেল তেলের মিশ্রণ সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে উল্লেখ করা হলো।
——উপকরণ——
১। রসুন
২। নারকেল তেল
রসুন নিতে হবে ৪-৫ কোয়া এবং নারিকেলের তেল ১ টেবিল চামচ।
——পদ্ধতি——
ধাপ ১: সন্ধ্যার পর রসুন ব্লেন্ডারে ব্লেণ্ড করে নিন।
ধাপ ২: ব্লেন্ড করা রসুন চিপে রস বের করে ফেলুন।
ধাপ ৩: রসুনের রসের সঙ্গে নারকেলের তেল মিশিয়ে নিন।
ধাপ ৪: আলতো আঁচে গরম করুন।
ধাপ ৫: নারিকেলের তেল ও রসুনের মিশ্রণ মাথার ত্বকে ভালোভাবে ঘষুন।
ধাপ ৬: সারারাত এভাবেই রেখে দিন। সকালে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এটি অত্যন্ত ইফেক্টিভ একটি মিশ্রণ। সপ্তাহে নিয়মিত ২ দিন করে রসুন ও নারিকেলের তেল ব্যবহার করলে দ্রুতই আপনার মাথার চুল ঘন হয়ে গজাবে।
আরো পড়ুন –
যাদের মাথার সামনের দুই পাশে চুল কম, তারা আলতো করে ১০-১৫ মিনিট আঙ্গুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাথার ত্বকে ঘষে ব্যবহার করবেন। তবেই ভালো ফলের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারবেন।
ডিম – মাথার সামনের পাতলা চুল ঘন করার উপায়
গন্ধের ভয়কে জয় করে খুব কম মানুষই মাথায় নিয়মিত ডিম ব্যবহার করতে পারে। ডিমে থাকা উন্নত মানের প্রোটিন এবং সালফার আমাদের চুলকে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক — উভয় দিক থেকেই আরো শক্তিশালী এবং উজ্জ্বল করে তোলে। পাশাপাশি চুলকে বানায় আরো ঘন এবং আরো সিল্কি।
ডিমের সাথে অলিভ অয়েল মিশ্রিত করলে এর পুষ্টিগুণ ও উপকারীতা আরো বেড়ে যায়। আমরা এখন ডিম এবং অলিভ অয়েলের মিশ্রণ ব্যবহার করে মাথার চুল ঘন করার উপায় সম্পর্কে জানব।
——উপকরণ——
১। রসুন
২। অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল
একটি ডিম এবং পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে।
——পদ্ধতি——
ধাপ ১: পরিষ্কার পাত্রে একটি ডিম ভেঙে নিন।
ধাপ ২: ডিমের সাথে পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল যুক্ত করুন।
ধাপ ৩: ডিম ও অলিভ অয়েল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ঘষুন।
ধাপ ৪: তারপর একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট চুল ঢেকে রাখুন।
ধাপ ৫: শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারের মাধ্যমে চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
ডিম ও অলিভ অয়েলের এই মিশ্রণটি সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন ব্যবহার করুন। যদি গন্ধ একদমই সহ্য না হয়, তবে ডিমের ভেতরকার লাল অংশটুকু বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশ ব্যবহার করে মিশ্রণ তৈরী করুন তাতেও ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আলুর হেয়ার প্যাক – মাথার সামনের পাতলা চুল ঘন করার উপায়
পটাশিয়াম, লৌহ, জিংক, ভিটামিন-কে, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ আলু খাদ্য হিসেবে যেমন উপকারী, ত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তেমনই ফলপ্রসু।
আলুর সাথে ডিম ও মধু মিশ্রিত করে মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে পাতলা চুল ঘন ও সিল্কি হয়। পাশাপাশি মাথার ত্বকের নানা ক্ষতিকারক উপাদানও ধ্বংস হয়।
——উপকরণ——
১। আলু
২। মধু
৩। ডিম
একটি ডিমের কুসুম, ১ চামচ মধু এবং আলুর কয়েকটি স্লাইস ব্যবহার করতে হবে।
——পদ্ধতি——
ধাপ ১: প্রথমে আলু ব্লেন্ডারে ব্লেণ্ড করে নিন।
ধাপ ২: ব্লেন্ডকৃত আলুর রস বার করুন। রসের সাথে মধু ও ডিমের কুসুম যোগ করুন।
ধাপ ৩: মিশ্রণে সামান্য পরিমাণ জল যুক্ত করুন এবং ভালোভাবে মেশান।
ধাপ ৪: এবার মিশ্রণটি মাথার ত্বকসহ পুরো চুলে যত্নসহকারে লাগিয়ে নিন।
ধাপ ৫: এই অবস্থায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
এভাবে প্রতি সপ্তাহে একবার করে এটি টানা কয়েকমাস করতে হবে। তাহলেই খুব দ্রুত ফলাফল আপনার সামনে দৃশ্যমান হতে শুরু করবে। চুল পড়ার সমস্যা থাকলে সেটা দূর হবে এবং ঘন কালো চুল পাবেন।
আমলকী – মাথার সামনের পাতলা চুল ঘন করার উপায়
রূপচর্চায় বিশেষ করে চুলের যত্নে আমলকি’র ব্যবহার অনেক পুরোনো। আমলকি ভেষজ গুণসম্পন্ন ঐষধী উপাদান। এর ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়।
উইকিপিডিয়ার মতে, আমলকিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে যথাক্রমে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি এবং কমলার ও আপেলের চেয়ে যথাক্রমে ২০ ও ১২০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ থাকে। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। দিনে দুটো আমলকি খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়।
এতো গূণাবলীসমৃদ্ধ আমলকী লেবুর সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে প্রয়োগ করলে চুলের সব ক্ষতিকারক উপাদান দূর হয়ে যায় এবং পাশাপাশি খুশকির সমস্যা সমস্যা কমানো ও চুলের গোড়া শক্তিশালী করার মাধ্যমে মাথার পাতলা চুল ঘন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
——উপকরণ——
১। আমলকির গুড়ো
২। লেবুর রস
আমলকীর গুঁড়ো ও লেবুর রস উভয়টাই ১ চামচ করে যুক্ত করতে হবে।
——পদ্ধতি——
ধাপ ১: ১ টেবিল চামচ আমলকীর গুঁড়ার সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
ধাপ ২: মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগিয়ে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।
ধাপ ৩: শ্যাম্পুর মাধ্যমে ভালোভাবে মাথা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এই মিশ্রণটি সপ্তাহে নিয়মিত ১ বার করে ব্যবহার করলে মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকবে। মনে রাখবেন, এটি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করাই যথেষ্ট। শুধু আমলকী ৩-৪ বার ব্যবহার করলেও করতে পারেন৷ কিন্তু আমলকীত সাথে লেবু মেশানো এই মিশ্রনটি সপ্তাহে ১ বারের বেশি ব্যবহার করবেন না।
মেহেদীর পাতা – মাথার সামনের পাতলা চুল ঘন করার উপায়
মেহেদী পাতাও আমলকীর মতো চুলের যত্মে ব্যবহার্য প্রাচীন একটি উপাদান। মেহেদি পাতা মাথার ত্বক পরিষ্কারকরণ ও চুল সিল্কিকরণে বিশেষভাবে কার্যকরী। এজন্য একে চুলের আদর্শ খাবার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
মেহেদির পাতা দ্বারা প্রস্তুতকৃত মিশ্রণ নিয়মিত চুলে ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং পাতলা চুল ঘন হতে শুরু করে।
——উপকরণ——
১। নারিকেলের তেল
২। মেহেদির পাতা
——পদ্ধতি——
ধাপ ১: কয়েকমুঠো মেহেদির তাজা পাতা পানি সহযোগে বেঁটে নিন।
ধাপ ২: বাটা হয়ে গেলে সেটার সঙ্গে সামান্য নারিকেল তেল যুক্ত করুন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
ধাপ ৩: মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপের মাধ্যমে আধা ঘন্টা চুল আবৃত করে রাখুন।
ধাপ ৪: এরপর শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার করে নিন।
মাথার পাতলা চুল ঘন করতে মেহেদি লাতার এই মিশ্রণটি ২ সপ্তাহ অন্তর অন্তর ব্যবহার করুন। এতেই অসাধারণ ফল পাবেন।
শেষকথা (Mathar Patla Chul Ghono korar upay)
অপুষ্টি কিংবা অযত্নের কারণে চুল পাতলা হতে শুরু করলে এসব মিশ্রণের যেকোনো একটি বা একাধিকটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার পাতলা চুল ঘন হতে বাধ্য।
তবে সবার ক্ষেত্রে এগুলো সমানভাবে কাজ করে না। আমাদের চুল ঘন হবে নাকি পাতলা হবে অথবা কত বছর বয়স পর্যন্ত ঘন থাকবে – সেসব নির্ভর করে আমাদের হেয়ার ফলিকের উপর, যা জ্বিনগতভাবে পূর্বনির্ধারিত।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন-
আমি বিমোহিত 🙂