৫টি ব্রণ হওয়ার কারণ এবং ব্রণমুক্ত ত্বক পাওয়ার টিপস
ব্রণের উপদ্রপ যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণ হওয়ার আশংকা থাকে সবচেয়ে বেশি। ব্রণের চিকিৎসায় অনেক খরচ হওয়ার পাশাপাশি মুখ নিয়ে হিন্যমনতায় ভুগতে হয় ভুক্তভোগীকে। প্রতিটি সমস্যার পেছনেই কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে। ব্রণের ক্ষেত্রেও তাই। ব্রণমুক্ত ত্বক পেতে ব্রণ হওয়ার কারণগুলো ভালোভাবে জানা খুবই জরুরী।
হয়রানির শিকার না হয়ে ব্রণ হওয়ার কারণগুলো জানলেই সুস্থ সুন্দর ত্বকের অধিকারী হওয়া সম্ভব। ব্রণ হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। যার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো হরমোনজনিত।
বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে ছেলে-মেয়েদের ব্রণ হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই এই বয়সে ব্রণ দেখা দিলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। অন্যের কথা শুনে নিজে থেকে এটা ওটা ব্যবহার না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ব্রণ হওয়ার অনেকগুলো কারণের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেগুলোর মধ্যে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলোঃ-
১. ত্বকের অযত্ন ও সঠিক প্রোডাক্ট ব্যবহার না করা : ব্রণ হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম
বাইরে থেকে এসে সাথে সাথে হাত মুখ না ধোয়ার বদঅভ্যাস আমাদের অধিকাংশ মানুষেরই আছে। আপনি যখন আউটসাইড থেকে রুমে আসেন তখন কিন্তু আপনি একা আসেন না। আপনার সাথে আসে ধুলোবালি, ময়লা, রোগজীবাণু! তাই বাইরে থেকে এসে তৎক্ষনাৎ মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন।
এছাড়াও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে সবার সাথে পাল্লা দিয়ে ভারী সাজগোজ করে পরে ঠিকই মেকআপ উঠাতে চৌদ্দটা বেজে যায় আমার, আপনার, আমাদের সবার। তাই, যারা মেকআপ করতে অনেক পছন্দ করেন এবং যাদের সামর্থ্য আছে তারা অবশ্যই মেকআপ রিমুভার ইউজ করবেন।
আর না থাকলে ডিপ ক্লিনজার দিয়ে ঘষামাজা না করে ধীরে ধীরে মেকআপ তুলবেন। যত দামি মে আপ প্রোডাক্টই হোক না কেনো, সবগুলোতেই কমবেশি ভারী ধাতু ব্যবহার করা হয়; যেগুলো আমাদের ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
তাই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে সখের বসে মেকআপ লাগিয়ে রাখবেন না। যত দ্রুত সম্ভব মুখ পরিষ্কার করে মুখে টোনার ও ময়শ্চরাইজার লাগিয়ে নিবেন।
ত্বকের ধরণ বুঝে প্রসাধনী ব্যবহার করবেন। অর্থাৎ আপনার ত্বক যদি ত্বৈলাক্ত হয় তাহলে আপনাকে অয়েল ফ্রি ফেসওয়াশ, ময়শ্চরাইজার ইত্যাদির ব্যবহার করতে হবে।
ত্বক শুষ্ক হলে বাটার বা মিল্কযুক্ত ফেসওয়াশ ও ময়শ্চরাইজার ও জেল বেসড প্রোডাক্ট সিলেক্ট করতে হবে। ত্বকের ধরন না বুঝে বেমানান প্রোডাক্ট ব্যবহারের কারণেও ব্রণ দেখা দিতে পারে।
২. অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়া : মুখে ব্রণ হওয়ার একটি প্রধান কারণ
ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত কম বেশি আমরা সবাই ফাস্ট ফুডের ভক্ত। দেখতে লোভনীয় ও ঝটপট খাওয়া যায় তাই ফাস্ট ফুড খাওয়ার কুফল সম্পর্কে না জেনেই বর্তমান প্রজন্ম ক্রমশ ফাস্ট ফুডের দিকে ঝুঁকছে।
সুস্থ শরীর ও ত্বকের জন্য দরকার সুষম খাবার। ফাস্ট ফুড কোনো সুষম খাবারের মধ্যে পরে না। ফাস্ট ফুড দীর্ঘদিন স্টোর করা হয়। যা বাসি হয়ে যায়। এসব বাসি খাবার খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি মুখের সতেজতা কমে যায়।
এসব খাবারে চর্বি থাকার কারনে মুখ শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। যার ফলে ব্রণ হওয়াটা স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন যাবৎ রাখার কারণে ফাস্ট ফুডে ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য জীবাণু বাসা বাঁধে।
এসব জীবাণুযুক্ত খাবার যখন আমরা খাই তখন শরীরে দূষিত পদার্থ যোগ হয়। যা দূর হতে দীর্ঘ সময় নেয় এবং এরই মধ্যে প্রদাহ, এলার্জি, ব্রণ ইত্যাদি হয়ে যায়।
তাই যারা ফাস্ট ফুড খেতে অভ্যস্ত বা ফাস্ট ফুড খেতে পছন্দ করেন তাদের এখনই সচেতন হওয়া উচিত। সুস্থ দেহ ও সুন্দর ত্বক পেতে ফাস্ট ফুড পরিহার করাই বাঞ্ছনীয়।
৩. পরিমিত ঘুম না হওয়া
সুস্থ শরীরের জন্য ৭/৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন এটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু মেনে চলি কয়জন? সোশ্যাল মিডিয়ার জগৎ শুরু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে নানাবিধ সমস্যা।
ভার্চুয়াল জগতের চাকচিক্য দেখতে দেখতে সময়ের খেয়াল থাকে না আমাদের। ফলে কোনোদিন ১২ /১ টা, কোনোদিন ২/৩ টা বাজে ঘুমোতে যাওয়া ফ্যাশন হয়ে গেছে আধুনিক জেনারেশনের।
একেক দিন একেক সময় ঘুমোতে যাওয়ার ফলে স্লিপ সাইকেল নষ্ট হয়ে যায় এবং ঠিকমতো ঘুম হয় না। আবার ঘুম হলেও ১০ ঘন্টা, ১২ ঘন্টা ঘুমের কোনো লিমিট থাকে না! যার প্রভাব আরো ভয়াবহ।
৭-৮ ঘন্টা নিয়মিত ঘুম না হলে শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায়। যার প্রভাব পরে ত্বকেও। ঘুম ঠিকঠাক না হলে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। তখন ত্বক নির্জীব হয়ে যায়, বলিরেখা পরে ও ব্রণের প্রকোপ দেখা দেয়।
৪. ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করা
নিজেকে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করতে কে না চায়? আর সেই বাসনা থেকে শুরু হয় রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের সন্ধান। ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করলে প্রথম প্রথম ত্বক ফর্সা হয় ও মানুষ আমাদের কমপ্লিমেন্ট দিতে থাকে।
আর অপরদিকে নিরব ঘাতকের মতো এগুলোর মধ্যে থাকা ক্লোবিটাজোল, হাইড্রোকুইনোন, বিটামেথাজোন, রেটিমাইড এসিড, মমিটাজোন ও ভারী ধাতু যেমনঃ পারদ, স্টেরয়েড ইত্যাদি ত্বকের ক্ষতি করতে থাকে!
রঙ ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করা আর জেনে-শুনে নিজের পায়ে কুঠারাঘাত করা দুইটার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই! প্রথম কয়েক মাস ক্রিম ব্যবহার করে আপনি হয়তো অনেক সন্তুষ্ট হন। নিয়মিত ব্যবহারের ধারা অব্যাহত রাখেন। কয়েকমাস পরে এসব ক্রিমের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
খেয়াল করে দেখবেন আপনার ত্বক পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা হয়ে গেছে। এবং, যখন আপনি রোদে যান তখন কিছুটা জ্বালাপোড়া অনুভব হয়।
ত্বকে অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয় এবং মুখে ব্রণ হওয়া শুরু করে। তখন আপনার জ্ঞান ফেরে আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া শুরু করেন।
ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম শুধু যে ত্বকের ক্ষতি করে তা না; এগুলো ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। এবং, ত্বকে নানা ধরনের সংক্রামন দেখা দেয়।
এছাড়াও বিভিন্ন স্নায়ুজনিত সমস্যা দেখা দেয়। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মানসিক অস্থিরতা বাড়ে। ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে ব্যবহৃত হয় অ্যাকটিভ কার্বন যা ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
অনেক সময় এগুলো ব্যবহারের ফলে স্কিন ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগও দেখা দেয়। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন। ক্ষণিকের সৌন্দর্যের জন্য যেনো সারাজীবন আফসোস করতে না হয়।
৫. কম পানি পান করা
বিশেষজ্ঞদের মতে একজন পুরুষের দৈনিক ১০-১২ গ্লাস ও নারীদের ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। কম পানি পান করলে বড় বড় অসুখ থেকে শুরু করে, অবসাদ, মুড সুইং স্মৃতিবিলোপ ইত্যাদি হয়ে থাকে। এবং, এসব টেনশন, অবসাদগ্রস্ততা ইত্যাদি থেকেও ব্রণ হওয়ার লক্ষন দেখা গেছে।
কম পানি পান করলে ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। ফলে ত্বকের সতেজতা হারিয়ে যায়। এছাড়াও প্রতিদিনের ছুটোছুটিতে শরীরে থেকে পানি ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
সে ঘাটতি পূরণের জন্য পর্যাপ্ত পানি খাওয়া জরুরী। ড্রিহাইড্রেশন বেড়ে গেলে ত্বক শুকিয়ে নির্জীব হয়ে যায়, এবং শুষ্কতার কারণে ব্রণ দেখা দেয়।
উপরোক্ত কোনো ৪ টা পয়েন্টের একটাও যদি আপনার সাথে না মেলে তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি পর্যাপ্ত পানি পান করছেন না। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করুন। এতে করে শরীর যেমন সুস্থ থাকবে পাশাপাশি ত্বক ও ভালো থাকবে।
ব্রণ হওয়ার কারণ সমূহ সচেতনভাবে এড়িয়ে ব্রণমুক্ত ত্বক পাওয়ার টিপস
১. ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় ও অধিক তেল ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
২. দৈনিক কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করুন।
৩. বাইরে থেকে এসে দ্রুত ডিপ ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
৪. মুখে ব্রণ দেখা দিলে কখোনই সেখানে হাত লাগাবেন না। হাতে থাকা জীবাণু মুখে লেগে ব্রণের সংক্রামক আরো বেশি দেখা দেয়। এছাড়াও ব্রণ কখনো ফাটাবেন না। ব্রণ ফাটালে ছিদ্র হয়ে যায় এবং সেখানে ব্যাকটেরিয়া গিয়ে ব্রণ আরো বাড়িয়ে দেয়।
৫. ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান ও মোসুমি শাকসবজি বেশি করে খান।
৬. পুদিনা পাতার রস দিয়ে আইস কিউব বানিয়ে ব্রণের স্থানে হালকা করে ঘষতে পারেন। এতে করে ব্রণ কমবে।
৭. নিমপাতার মিশ্রণের সাথে চন্দন গুড়ো মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে পারেন। নিমে জীবাণুনাশক গুনাবলি থাকায় নিয়মিত এ মিশ্রণটি ব্যবহার করলে ব্রণ কমে।
প্রাসঙ্গিক লেখা-