টুইটার কি? টুইটারের কাজ কি? টুইটার কিভাবে ব্যবহার করে?
বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলো টুইটার। ২০০৬ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। ২০২০ সালে টুইটারের মোট সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে প্রায় ৩০.৫ বিলিয়নে। ফেসবুকমুখী বাংলাদেশীরা অনেকে জানেই না, টুইটার কি এবং কিভাবে ব্যবহার করে।
টুইটার সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ বেশ উদাসীন। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় টুইটার কি, টুইটার চালানোর নিয়ম, টুইটার এর কাজ কি এবং টুইটার এ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম।
টুইটার কি? (What is twitter in Bangla)
টুইটার একটি ছোট আকারের বিশেষ ব্লগিং সিস্টেম, যাকে মাইক্রোব্লগিং বলা হয়। মাইক্রোব্লগিং এর বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে অল্প কথায় খুব দ্রুত অনেক মানুষের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়।
টুইটারে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য একটি বিশেষ ফিচার আছে, যেটাকে টুইট বলে সম্বোধন করা হয়। যেহেতু এটি একটি মাইক্রোব্লগ, তাই মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বর্ণের সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে।
সীমাবদ্ধতাটি হলো, এখানে আপনার প্রকাশ করা মনের ভাব বা টুইট সর্বোচ্চ ১৪০ বর্ণের হতে পারবে, এর বেশি নয় এবং টুইটের সাথে পছন্দের ছবি অথবা কোনো লিংকও যুক্ত করতে পারবেন।
অন্য কারো টুইট পছন্দ হয়ে গেলে সেটি নিজের ফলোয়ারদের সাথে টুইটারে শেয়ার করা যায়। তবে, অন্যের টুইট শেয়ার করাকে টুইটারের ভাষায় শেয়ার না বলে রিটুইট নামে সম্বোধন করা হয়ে থাকে।
ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে যেটাকে পোস্ট বা স্ট্যাটাস বলে ডাকে, টুইটার ব্যবহারকারীরা সেটাকেই টুইট বলে সম্বোধন করে। আবার, ফেসবুকের শেয়ার এবং টুইটারের রিটুইট অভিন্ন বিষয়কে ইঙ্গিত করে।
টুইটারে একে অপরকে Follow করার সিস্টেম আছে। আপনি যদি কাউকে Follow করে রাখেন, তবে তার টুইটগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার টাইমলাইন বা হোমপেজে প্রদর্শিত হবে।
টুইটারে এ্যাকাউন্ট খোলার পর অন্যরা আপনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে Follow করতে পারবে। আপনাকে Follow করা ব্যক্তির সংখ্যা বা Follower যত বেশি হবে, টুইটারে আপনাকে তত বেশি জনপ্রিয় বা সেলিব্রেটি মনে করা হবে।
টুইটারের জগতে DM খুবই পরিচিত একটি শব্দ। DM দ্বারা Direct Massage বোঝানো হয়। DM ই মূলত টুইটারের চ্যাটিং বা ম্যাসেজ আদান প্রদানের একমাত্র সিস্টেম।
আরও পড়ুন –
- ওয়ার্ডপ্রেস কি? কিভাবে শিখব এবং WordPress শিখে আয় করার উপায়
- ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার উপায়
- ওয়ার্ডপ্রেস নাকি ব্লগার? কোনটা আপনার জন্য সেরা?
এক নজরে টুইটার …….
টুইটারের পূর্ণরূপ বা সম্পূর্ণ নাম কি?
টুইটারের পূর্ণরূপ বা সম্পূর্ণ নাম হলো, Typing what I am thinking that everyone reading।
টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা (Founder) কে?
টুইটার প্রতিষ্ঠাতারা হলেন Jack Dorsey, Noah Glass, Biz stone এবং Evan Williams।
টুইটারের সিইও কে?
টুইটারের সিইও (CEO) হলেন Jack Patrick Dorsey।
টুইটারের সদরদপ্তর কোথায় অবস্থিত?
টুইটারের সদর দপ্তর সান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত।
টুইটারের কাজ কি?
অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতোই টুইটারের কাজ হলো পৃথিবীর সকল মানুষ ও সংগঠনের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে এনে একজনের সাথে অন্যজনকে সংযুক্ত করে দেয়া।
আপনি টুইটারে গেলে দেখবেন, সাধারণ মানুষেরা টুইটারে চলমান বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করছে। অনেকেই আবার ম্যাসেঞ্জার বা ওয়াটসঅ্যাপকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে Twitter DM এর মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং এ মেতে আছে। এভাবে মানুষের মাঝে যোগাযোগের পথ খুলে দেয়াই মূলত টুইটারের মূল কাজ।
কেন টুইটার ব্যবহার করবেন?
টুইটারের বৈশিষ্ট্য ছোট ছোট আকারের পোস্ট বা টুইট। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে বড় বড় রচনা না পড়ে ছোট ছোট বাক্যে অন্যের কথা জানতে ও জানাতে চান, তারা উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে টুইটারকে বেছে নিতে পারেন।
তাছাড়া, টুইটার ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো অতো জটিল নয়। টুইটার অত্যন্ত মার্জিত ও ছিমছাম একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
বাস্তব জিবনের বড় বড় সেলিব্রেটিরা টুইটারে বেশ সক্রিয়। বিশ্বখ্যাত অনেক অভিনেতা ও তারকা রয়েছেন, যাদের ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট না থাকলেও টুইটারে ঠিকই এ্যাকাউন্ট আছে এবং নিয়মিত টুইটের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে।
এছাড়াও, আপনি টুইটার ব্যবহার করবেন, কারণ–
- এখানে অতি অল্প সময়েই বন্ধু ও বিখ্যাতজনদের অবস্থা জানা যায়। ফলে, বেশি সময় নষ্ট হয় না।
- টুইট ও রিটুইটের মাধ্যমে খুব সহজেই নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইটের লিংক ছড়িয়ে দেয়া যায়।
- সহজেই বিভিন্ন বিষয়ের উপর অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সহচর্য লাভ করা যায়।
- পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থাকা মানুষদের সাথে সহজেই বন্ধুত্ব স্থাপন করার মাধ্যমে মনোজগতের পরিধী বাড়ানো যায়।
- জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায়।
এগুলো বাদেও টুইটার ব্যবহার করার আরো অনেক সুবিধা রয়েছে। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি টুইটারকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
টুইটারে এ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
টুইটারে এ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি খুবই সহজ এবং ঝামেলামুক্ত। তারপরও, নতুনদের কথা বিবেচনা করে এখানে ধাপে ধাপে টুইটারে এ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম উল্লেখ করা হলো।
টুইটারে এ্যাকাউন্ট তৈরীর জন্য Twitter.com ওয়েবসাইটে যান অথবা টুইটারের অফিশিয়াল এ্যাপ ডাউনলোড করুন।
ধাপ ১ : Sign Up এ ক্লিক করুন।
ধাপ ২ : Full Name এর জায়গায় আপনি যে নামটি দিবেন, সেটাই আপনার প্রোফাইলের উপরে প্রদর্শিত হবে। ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের নাম ঘন ঘন পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু টুইটার এদিক থেকে ব্যতিক্রম। এ্যাকাইন্ট খুলে ফেলার পর আপনি যতবার খুশি, ততবার নিজের নাম পরিবর্তন করতে পারবেন।
ধাপ ৩ : আপনার সঠিক মোবাইল নাম্বারটি যুক্ত করবেন। নাম্বার যুক্ত করার পর আপনার মোবাইলে ভেরিফিকেশন কোড আসবে। মোবাইল নাম্বার যুক্ত করা থাকলে পাসওয়ার্ড ভুলে গেলেও নিজ আইডি ফিরে পেতে কোনোরকম বেগ পেতে হবে না। মোবাইল নাম্বারের পরিবর্তে ইমেইল আইডি দিয়েও টুইটারর এ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
ধাপ ৪ : একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিন। পাসওয়ার্ডে ছোট ও বড় হাতের ইংরেজি বর্ণের পাশাপাশি বিভিন্ন সাইন (যেমনঃ?,!,#,@ ইত্যাদী) ব্যবহার করুন।
ধাপ ৫ : এরপর আপনার কোন কোন বিষয়ের প্রতি বেশি আগ্রহ আছে, টুইটার সেটা জানতে চাইবে। আপনি যেসব ক্যাটাগরি বাছাই করবেন, সেসব ক্যাটাগরির সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম আপনার সামনে প্রদর্শিত করা হবে Follow করার জন্য।
ধাপ ৬ : ঠিকঠাক মতো এ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলে এরপর আপনি টুইটারের হোমপেজে চলে আসবেন।
এভাবে খুব সহজেই টুইটারে এ্যাকাউন্ট খুলে ফেলে যায়।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-
টুইটার চালানোর নিয়ম
টুইটারে প্রবেশ করার পর নিচের দিকে আপনি ছবির মতো চারটি আইকন দেখতে পারবেন। এই আইকনগুলোই টুইটারের মূল ফিচার। এখানে ছবিতে সহযে বোঝানোর জন্য আইকনগুলোর নিচে নাম দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু টুইটারে এসব আইকনের নিচে কোনো নাম থাকে না। তাই নতুনরা বেশিরভাগ সময়ই এসব আইকনের মানে বুঝতে ব্যর্থ হয়। টুইটার কিভাবে ব্যবহার করে তা শেখার জন্য এগুলো আইকন সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
এখানে Homepage নামে চিহ্নিত আইকনটিতে ক্লিক করলে মূল পেজ বা টাইমলাইন প্রদর্শিত হবে। আপনি যাদেরকে Follow করে রেখেছিলেন, তাদের করা বিভিন্ন টুইট ও রিটুইট এখানে আপনি দেখতে পারবেন।
Search Bar চিহ্নিত আইকনে ক্লিক করে আপনি আপনার বন্ধু বা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি বা সংগঠনের টুইটার এ্যাকাউন্ট খুঁজে পেতে পারেন।
Notification চিহ্নিত আইকনে যেয়ে কে কবে কখন আপনার করা টুইটে রিয়্যাক্ট করল বা রিপলাই দিলো, সেসব জানতে পারবেন।
এবং Masseges অপশনে গিয়ে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে ম্যাসেজ পাঠাতে পারবেন বা চ্যাটিং সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
টুইটারে টুইট করার নিয়ম
টুইটারে ঢুকলে স্ক্রিনের নিচের দিকে ডান পাশে এরকম একটি আইকন দেখতে পারবেন। এই আইকনটিতে ক্লিক করে টুইটারে টুইট করতে হয়।
টুইটারে প্রোফাইল ইডিটিং
টুইটারে প্রবেশ করার পর স্ক্রিনের একদম উপরের দিকে ডান পাশে আপনার প্রোফাইল পিকচার প্রদর্শিত হবে। সেখানে ক্লিক করলে Edit Profile, Settings ইত্যাদী গুরুত্বপূর্ণ অপশন হাতের নাগালে পেয়ে যাবেন৷ সেগুলো ব্যবহার করে আপনার নিজের টুইটার এক্যাউন্টটি দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারবেন।
টুইটারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক
টুইটারের কিছু নিজস্ব দিক বা স্বকীয়তা রয়েছে, যেগুলো আপনার জানা খুব প্রয়োজন।
হ্যাশট্যাগ – Hashtag (#)
হ্যাশট্যাগ বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি ফিচার। হ্যাশ চিহ্নের সাথে কোনো কিওয়ার্ড বা ট্যাগ স্পেসহীনভাবে যুক্ত করলে সেটাকে হ্যাশট্যাগ বলা হয়।
টুইটারের কোনো টুইটে হ্যাশের পর কোনো ট্যাগ জুড়ে দিয়ে টুইট করলে আপনার টুইটটি ঐ হ্যাশট্যাগ দিয়ে কেউ টুইটারে সার্চ করলে মানুষেরা খুব সহজেই দেখতে পারবে।
সহজ কথায়, যদি স্বাধীনতা দিবসে আপনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিষয়ক বিজয়বার্তার সাথে #HappyBirthDayBangladesh লিখে দেন, তবে, যারা টুইটারে #HappyBirthDayBangladesh লিখে সার্চ করবে, তারা সবাই আপনার এই টুইটটি সহজেই খুঁযে পাবে। শুধু তাই না, এ পর্যন্ত কতজন মানুষ এই হ্যাশট্যাগটা ব্যবহার করেছে ও তাদের সবার টুইটই টুইটার সার্চকারীকে প্রদর্শন করবে।
টুইটার ইউজারনেম (@)
টুইটারে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর ইউজারনেম @ চিহ্নের ডান পাশে প্রদর্শিত হয়। ইউজারনেম প্রতিটি প্লার্টফর্মের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টুইটারের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রমটা ঘটে না। টুইটারে সেটিংসে গিয়ে ব্যবহারকারী যেকোনো সময় তার ইউজারনেম পরিবর্তন করতে পারে।
শেষ কথা
আশা করি, এই আর্টিকেলটি পড়ে টুইটার কি, টুইটার চালানোর নিয়ম, টুইটার এর কাজ কি এবং টুইটার এ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আপনি প্রাথমিক ধারণা লাভ করেছেন। এখন সময় টুইটারকে উপভোগ করার।
কিন্তু, যেহেতু আমরা সাধারণ গন্ডির বাইরে যেয়ে অসাধারণ কিছু করার স্বপ্ন দেখি, তাই টুইটারকে সাধারণভাবে ব্যবহার করা আমাদের ঠিক পোষাবে না। তাই নাহ?
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে অপেক্ষা করুন। টুইটার থেকে ইনকাম করার উপায় নিয়ে আমরা খুব শীগ্রই পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন নিয়ে হাজির হবো। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন। সুস্থ্য থাকুন।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন –
আপনার আর্টিকেল গুলো সত্যিই অসাধারণ। তথ্যের মধ্যে যেমন কোন ফাঁক নেই তেমনি বিশ্লেষণের ভাষাও যথেষ্ট সাবলীল। টুইটারে ফলোয়ার বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানতে আমি বেশ আগ্রহী, এ বিষয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশের অনুরোধ রোইলো
আচ্ছা, ইনশাআল্লাহ দ্রুতই সে সম্পর্কে লিখব😀
টুইটার সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হলো 😃।
ধন্যবাদ ভাইয়া
It is helpful