চুল পড়া বন্ধ করার উপায় (পর্ব- ০২)
চুল পড়া বিষয়ক পর্বভিত্তিক আলোচনার গত পর্বে চুল পড়ার বায়োলজিক্যাল ও বাহ্যিক কারণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছিল। আজ আপনাদের জানাবো, চুল পড়া কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। সেইসাথে চুল পড়া কমাতে কি ধরনের খাবার, কেমন চিকিৎসা এবং কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন সবই আপনাকে জানানো হবে।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় বিষয়ে পড়ার আগে অবশ্যই চুল পড়ার বায়োলজিক্যাল ও বাহ্যিক সকল কারণগুলো জেনে নিন – আপনার অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ কি?
চুল পড়া কমানোর ঘরোয়া উপায়
এখন তবে অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নেয়া যাক। প্রাকৃতিক এই পদ্ধতিগুলো কাজে লাগিয়ে আপনি চুল পড়া দ্রুতই মুক্তি পেয়ে যাবেন। সেইসাথে বোনাস হিসেবে পাবেন ঘন – উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত চুলের আনন্দ।
চুল পড়া বন্ধে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জেল
উপকরণ | ১ টি মাঝারি ধরণের অ্যালোভেরা পাতা |
পদ্ধতি | পাতা থেকে জেল বের করে নিন। মাথার তালুতে লাগিয়ে চক্রাকারে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে, পানি নিংড়ে সে তোয়ালে দিয়ে চুল জড়িয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে একদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
মেথি ও অ্যালোভেরা হেয়ার প্যাক
উপকরণ | ২ টেবিল চামচ মেথি গুঁড়া ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল |
পদ্ধতি | মেথি গুঁড়া ও অ্যালোভেরা জেল একসাথে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ( স্কার্ল্ফে ) ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে একদিন করে একমাস ব্যবহার করুন। |
মধু, নারকেল তেল ও অ্যালোভেরা হেয়ারপ্যাক
উপকরণ | ১ চা চামচ মধু ২ চামচ নারকেল তেল ২ চামচ অ্যালোভেরা জেল |
পদ্ধতি | উপাদানগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে জেলের মতো মিশ্রণ তৈরি করুন। গোসলের ৩০ মিনিট আগে সম্পূর্ণ মাথায় লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পড়ে নিন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে একদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
অ্যালোভেরা ও লেবুর রস
উপকরণ | ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস |
পদ্ধতি | অ্যালোভেরা জেল ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার তালুতে লাগান। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে দুদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
পেঁয়াজ অ্যালোভেরা হেয়ারপ্যাক
উপকরণ | ১ কাপ পেঁয়াজের রস ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল |
পদ্ধতি | পেঁয়াজের রস ও অ্যালোভেরা জেল একসাথে মিশিয়ে স্কার্ল্ফে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ১ ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে একদিন করে একমাস ব্যবহার করুন। |
জবাফুল ও অ্যালোভেরা হেয়ারপ্যাক
উপকরণ | ২ চামচ জবাফুল পেস্ট ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল |
পদ্ধতি | উপকরণগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে মসৃণ মিশ্রণ বানিয়ে স্কার্ল্ফে লাগান। ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে একবার করে ব্যবহার করতে পারেন। |
অ্যালোভেরা ও সরিষার তেল
উপকরণ | ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ১ চা চামচ সরিষার তেল |
পদ্ধতি | সরিষার তেল ও অ্যালোভেরা মিশিয়ে সম্পূর্ণ চুলে লাগান। ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে দুদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
অ্যালোভেরা, দই ও ডিমের হেয়ারপ্যাক
উপকরণ | ১ টি ডিমের সাদা অংশ ১ টেবিল চামচ দই ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল |
পদ্ধতি | উপকরণগুলো একসাথে মিশিয়ে খুব ভালো করে ফেনিয়ে নিন। চুল পানি দিয়ে সামান্য ভিজিয়ে হেয়ারপ্যাকটি লাগান। ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে দুদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
চুল পড়া বন্ধ করার তেল
নারিকেল তেল, পেঁয়াজের রস ও অ্যালোভেরা
উপকরণ | ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ১ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস আধা কাপ নারিকেল তেল |
পদ্ধতি | উপকরণগুলো একসাথে মিশিয়ে ১৫ মিনিট মৃদু আঁচে গরম করুন। ১৫ মিনিট পর চুলা থেকে নামিয়ে তেল ঠান্ডা করে নিন। চুল সামান্য ভিজিয়ে ঠান্ডা তেল মাথার তালুতে চক্রাকারে ম্যাসাজ করুন। সারারাত রেখে সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে ৩ দিন করে তেলটি ব্যবহার করতে পারেন। |
অলিভ অয়েল, ডিমের হেয়ারপ্যাক
উপকরণ | ১ টি ডিমের সাদা অংশ ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল |
পদ্ধতি | প্রথমে ডিমের সাদা অংশ খুব ভালো করে ফেনিয়ে নিন। তাতে অলিভ অয়েল যোগ করুন। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। এবার শাওয়ার ক্যাপ পড়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে একদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
অলিভ অয়েল ও আদার হেয়ারপ্যাক
উপকরণ | ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল আধা চা চামচ নারিকেল তেল আধা চা চামচ আদা বাটা |
পদ্ধতি | উপাদানগুলো একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগান। ৩৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে দুদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
অলিভ অয়েল ও পেঁয়াজের রস
উপকরণ | ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস |
পদ্ধতি | উপাদান দুটি সামান্য গরম করে নিন। ঠান্ডা করে মাথার ত্বকে লাগান। ১-২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে তিনদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
অলিভ অয়েল, দারুচিনি গুঁড়া ও মধু
উপকরণ | ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ১ টেবিল চামচ দারুচিনি গুঁড়া ১ টেবিল চামচ মধু |
পদ্ধতি | উপাদান গুলো একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মাথার ত্বকে লাগিয়ে ম্যাসাজ করে নিন। শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নিন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে একদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
চুল পড়া রোধে ক্যাস্টর অয়েল
উপকরণ | ১/২ কাপ ক্যাস্টর অয়েল |
পদ্ধতি | সম্পূর্ণ চুলের আগা থেকে গোড়া ক্যাস্টর অয়েল লাগিয়ে নিন। ১-২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে তিনদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
ক্যাস্টর অয়েল ও পেঁয়াজের রস
উপকরণ | ২ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস |
পদ্ধতি | উপাদান গুলো মিশিয়ে নিন। পেঁয়াজের গন্ধ দূর করতে এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করতে পারেন। মিশ্রণটি সম্পূর্ণ চুলে লাগান। ২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে দুদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
ক্যাস্টর অয়েল, সরিষার তেল ও অলিভ অয়েল
উপকরণ | ১ চামচ ক্যাস্টর অয়েল ১ চামচ সরিষার তেল ১ চামচ অলিভ অয়েল |
পদ্ধতি | তেল তিনটি একসাথে মিশিয়ে সম্পূর্ণ চুলে লাগান। ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | একদিন পর পর ব্যবহার করতে পারেন। |
ভিটামিন ই ক্যাপসুল, ক্যাস্টর অয়েল ও অলিভ অয়েল
উপকরণ | ২ চামচ ক্যাস্টর অয়েল ২ চামচ অলিভ অয়েল ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল |
পদ্ধতি | ক্যাস্টর অয়েল ও অলিভ অয়েল সামন্য গরম করে নিন। তেল ঠান্ডা হয়ে এলে তাতে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল যোগ করুন। আঙুল দিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | একদিন পর পর ব্যবহার করতে পারেন। |
ভিটামিন ই তেল, অলিভ অয়েল ও অ্যালোভেরা
উপকরণ | ২ টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল আধা কাপ অ্যালোভেরা জেল ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল |
পদ্ধতি | উপকরণ তিনটি একসাথে মিশিয়ে মৃদু আঁচে গরম করুন। ঠাণ্ডা হলে তুলার বল দিয়ে মাথার তালু ও চুলে লাগান। এবার খোঁপা করে শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে তিনদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
আমলকী গুঁড়া, ডিম, নারিকেল তেল এবং লেবুর রস
উপকরণ | ১ চামচ আমলকী গুঁড়া ১ টি ডিমের সাদা অংশ ১ চামচ নারিকেল তেল ১ চা চামচ লেবুর রস |
পদ্ধতি | উপকরণগুলো একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। ১-২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে দুদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। |
আমলকি ও মেহেদী
উপকরণ | ৩ টেবিল চামচ মেহেদী গুঁড়া ১ টেবিল চামচ আমলকি গুঁড়া ৪ টেবিল চামচ হালকা গরম পানি |
পদ্ধতি | উপাদান গুলো একসাথে মিশিয়ে স্মুদ মিশ্রণ তৈরি করে একটি কাঁচ/ প্লাস্টিকের পাত্রে রাখুন। মিশ্রণটি সারারাত রেখে দিন। পরের দিন প্যাকটি স্কার্ল্ফসহ পুরো চুলে খুব ভালো করে লাগিয়ে নিন এবং ১-২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | মাসে একবার ব্যবহার করলেই হবে। |
টকদই ও সরিষার তেল
উপকরণ | ২ চামচ টকদই ১ চামচ সরিষার তেল |
পদ্ধতি | উপাদান গুলো একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। এবার গরম পানিতে ভেজানো একটি তোয়ালে নিংড়ে মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর ভেষজ বা মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। |
ব্যবহার | সপ্তাহে এক/দুদিন ব্যবহার করতে পারেন। |
চুল পড়া সমস্যা সমাধানে আপনার সুবিধামত যেকোনো প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন হেয়ার প্যাক ব্যবহারের পর অবশ্যই মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হবে। এ ধরনের শ্যাম্পু ক্ষতিকর ক্যামিকেল মুক্ত। তাই চুল পড়া বন্ধ করতে হেয়ার প্যাক ট্রিটমেন্টের জন্য মাইল্ড শ্যাম্পুই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।
চুল পড়া বন্ধ করতে পুষ্টিকর খাবার
খাদ্যের কতগুলো উপাদান আছে যেগুলো চুলের জন্য আশীর্বাদের মতো। আবার অনেক সময় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিও প্রভাব ফেলতে পারে আপনার চুলে। তাই চুল পড়া কমাতে ও চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে কিছু খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত। এবং সেইসাথে প্রয়োজন নিয়মিত সুুুুষম খাবার গ্ৰহণ, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন এবং পর্যাপ্ত (দিনে ৬-৭ গ্লাস) পানি পান।
পালং শাক
পালং শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া মাথার ত্বক সুস্থ্য রাখে। অন্যান্য শাকও চুল পড়া বন্ধ করতে ভীষণ উপকারী।
বাঁধাকপি ও ব্রকলি
বাঁধাকপি ও ব্রকলিতে আছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ উপাদানগুলো আপনার চুল পড়া কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
মটরশুঁটি ও ডাল
মটরশুঁটি ও ডালে আছে প্রচুর ক্যারাটিন যা চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। এই প্রোটিন চুলকে গোঁড়া থেকে মজবুত করে তোলে। এছাড়া চুল হয়ে ওঠে দীর্ঘ, ঝলমলে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
মাছ
মাছে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অ্যাসিড চুলের গোঁড়া মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের ভেঙে যাওয়া বন্ধ করে চুলকে করে তোলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঝলমলে।
বাদাম
বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের জন্য খুবই উপকারী। এক্ষেত্রে চীনাবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট বা অ্যালমন্ড যেকোনটিই আপনাকে চুল পড়া সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। বাদাম ছাড়াও ফ্লাক্স সীড, আখরোট ও তিলেও প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়।
গাজর
গাজরে আছে প্রচুর বেটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন ‘এ’ যা চুলের ফলিকলকে মজবুত করে। ফলে চুল পড়া কমে আসে। এছাড়া এটি মাথার ত্বকে ‘সিবাম’ নামক একপ্রকার ক্যামিক্যাল উৎপাদন করে যা চুলের জন্য খুবই উপকারী।
অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোতে আছে প্রচুর ভিটামিন ই। এটি চুল পড়া বন্ধ করার পাশাপাশি চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তুলবে অনায়াসেই।
ডিম
ডিমে আছে সমৃদ্ধ জৈব প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, আয়রন, জিংক, বায়োটিন এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড। এ উপাদানগুলো চুলের গোড়া শক্ত করার পাশাপাশি চুলকে করে তোলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
ওটস
ওটস এ আছে জিংক, কপার, প্রোটিন, ভিটামিন-বি, ওমেগা -সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন এবং পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো পুষ্টি উপাদান। যা চুলকে করে তুলবে ঘন, লম্বা ও ভেতর থেকে শক্তিশালী। তাই নিয়মিত ওটস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার
আয়রনের অভাবেও অনেক সময় চুল পড়া সমস্যা দেখা দেয়। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে আছে প্রচুর প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম। এই উপাদানগুলো চুলকে গোঁড়া থেকে মজবুত করে। পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
লেবু ও কমলা
ভিটামিন সি ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপাদান। লেবু ও কমলা ভিটামিন ‘সি’ তে সমৃদ্ধ।নিয়মিত লেবু বা কমলার রসের শরবত পান করে সহজেই চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন।
চুল পড়া বন্ধ করতে কোন শ্যাম্পু ভালো ?
কিছু এন্টি হেয়ার ফল শ্যাম্পু আপনার অতিরিক্ত চুল পড়া অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে। এখানে চুল পড়া বন্ধ করতে কার্যকর, এমন আটটি শ্যাম্পু সম্পর্কে বলা হয়েছে।
লরিয়াল প্যারিস অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু
শ্যাম্পুটির বিশেষ উপাদানগুলো চুলকে গোঁড়া থেকে মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করে। এটি চুলের রুক্ষতা দূর করে। পাশাপাশি চুলের আগা ফাটা রোধ করে চুলকে করে তোলে প্রাণবন্ত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। শ্যাম্পুটির দাম ৪৫০ টাকা।২) ৩) ৪) ৫) 6)
ক্লিনিক প্লাস স্ট্রং এন্ড লং হেলথ শ্যাম্পু
চুলকে পুষ্টি জুগিয়ে মজবুত করতে ক্লিনিক প্লাস খুবই কার্যকর একটি শ্যাম্পু। এটি সব ধরণের চুলের জন্যই উপকারী। নিয়মিত ব্যবহারে কয়েক সপ্তাহেই আপনার চুল পড়া কমে আসবে। ক্লিনিক প্লাস স্ট্রং এন্ড লং হেলথ শ্যাম্পুর মূল্য ৪১০৳।
হিমালয়া এন্টি হেয়ারফল শ্যাম্পু
চুল পড়ার একটি অন্যতম কারণ হলো খুশকি। হিমালয়া এন্টি হেয়ারফল শ্যাম্পু খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুলের আর্দ্রতা ফেরাতেও দারুন কাজ করে। সেইসাথে স্কার্ল্ফের ইনফেকশন রোধ করে। এছাড়া চুলের আগা ফাটা বন্ধ করতেও শ্যাম্পুটি কার্যকর। হিমালয়া শ্যাম্পুটির মূল্য ৩৯২ টাকা।
ইন্দুলেখা
ইন্দুলেখা কোন সাধারণ শ্যাম্পু নয়। চুল পড়া বন্ধ করতে এটি এক ধরণের মেডিসিন। শ্যাম্পুটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার চুল পড়া সমস্যা দ্রুত দূর হবে। চুলের ময়লা পরিষ্কার, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিসহ এটি চুলকে প্রাণবন্ত করে তোলে । বাংলাদেশে ইন্দুলেখা শ্যাম্পুর মূল্য ৪৪০৳।
ডাব হেয়ারফল রেসকিউ
এটি চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া কমিয়ে আনে। এছাড়া চুলের আগা ফাটা রোধ দূর করে। চুলের রুক্ষতা দূর করে চুলকে করে তোলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। ডাব হেয়ারফল রেসকিউ শ্যাম্পুর দাম 600 ৳।
বায়োটেক ফ্রেশ গ্ৰোথ প্রোটিন শ্যাম্পু
এই হারবাল শ্যাম্পুটি চুলে পুষ্টি জুগিয়ে চুল পড়া বন্ধ করে। এছাড়া মাথার তালুতে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রেখে চুল করে তোলে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
ট্রিসেমি হেয়ার ফল ডিফেন্স শ্যাম্পু
এটি চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে চুল পড়া কমিয়ে আনে। পাশাপাশি চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুলে জট পাকিয়ে যাওয়া রোধ করে। এছাড়া শ্যাম্পুটির ঘ্রাণ চুলের প্রাণবন্ত ভাব বাড়িয়ে দেয়। শ্যাম্পুটির মূল্য ৪৮৬৳।
প্যান্টিন অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু
এই শ্যাম্পুটি চুলকে আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত মজবুত করে তোলে। সেইসাথে মাথার ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এটি চুলের গ্ৰোথ ঠিক রাখে। এবং চুলকে প্রাণবন্ত করে তোলে কয়েক সপ্তাহেই। শ্যাম্পুটির দাম ২৮০-৪০২ ৳।
লক্ষণীয় বিষয়
- নিয়মিত শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার রাখুন। কিন্তু তা যেন খুব ঘন ঘন না হয়।
- শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার না করে, একদিন পর পর করা উচিত।
- যেসকল শ্যাম্পুতে সিলিকন, সালফেট বা প্যারাবেন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ আছে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
- শ্যাম্পু বাছাই করা উচিত করা উচিত স্কার্ল্ফ ও চুলের ধরণ বুঝে।
- তৈলাক্ত চুলের জন্য প্লেন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। দেখতে স্বচ্ছ হলে বুঝে নিন সেটা প্লেন শ্যাম্পু।
- শুষ্ক চুলের জন্য ব্যবহার করা উচিত ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ ময়েশ্চরাইজার শ্যাম্পু বা সাধারণ মাইল্ড শ্যাম্পু।
- কালারড চুলের জন্য নির্ধারিত শ্যাম্পু (যেমন: লরিয়াল কালার প্রোটেক্ট শ্যাম্পু) ব্যবহার করতে হবে।
- শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখুন; তা যেন কিছুতেই মাথার তালুতে না লাগে।
- রুক্ষ চুলের জন্য লিভ-ইন বা ময়েশ্চার- প্রোটিন সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এছাড়া আপনি ভিটামিন-ই বা অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন।
- তৈলাক্ত চুলে এমন কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে; যেখানে ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ কম।
- স্বাভাবিক চুলের জন্য যেকোন সাধারণ কন্ডিশনারই আদর্শ।
- কালারড চুলের জন্য নির্ধারিত কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত।
চুল পড়া সমস্যার প্রতিকার
অতিরিক্ত চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি।
- অতিরিক্ত চাপ নেবেন না।
- মেডিসিন প্রেসক্রিপশনের আগে জেনে নিন তা আপনার চুল পড়ার কারণ হবে কি না। সম্ভব হলে মেডিসিন পরিবর্তন করে দিতে বলুন।
- দিনে ২ বার চুল আঁচড়ানোর অভ্যাস করুন।
- কখনোই ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।
- চুল কখনোই খুব বেশি টাইট করে বাঁধবেন না।
- মাথার ত্বক শুষ্ক হলে সপ্তাহে ২-৩ বার তেল ব্যবহার করতে হবে। তৈলাক্ত ত্বক হলে সপ্তাহে এক দিন, আবার স্বাভাবিক চুলের ক্ষেত্রে আপনি ইচ্ছা মত রুটিন করে নিতে পারেন।
- রিবন্ডিং করা চুলে কালার, হাইলাইটিং, মেহেদী বা হেনা ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
- চুলে অতিরিক্ত হিট দেয়া হলে চুল ড্যামেজ হয়ে যায়। সরাসরি চুলে স্ট্রেইটনার ব্যবহার করবেন না। আগে স্ট্রেইটনারে হিট প্রকেক্টিভ কিছু লাগিয়ে নিন।
- হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের সময় এর কুলিং সুইচ অন করে নিতে হবে।
- হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের সময় এর কুলিং সুইচ অন করে নিন।
- চুল পড়া বন্ধ করতে ঘুমের অনিয়ম করা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকুন। প্রতিদিন ২৪ ঘন্টায় অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমিয়ে নিতে হবে।
- সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে বাঁচতে সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসবেন না। বাইরে বেড়োনোর সময় অবশ্যই স্কার্ফ , হ্যাট বা ছাতা ব্যবহার করুন।
আপনার চুল পড়া সমস্যা যদি কোনোভাবেই বন্ধ না হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে একদম দেরি করবেন না!
বর্তমানে ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই চুল পড়া মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই হেয়ারফলকে অবহেলা না করে আগে থেকেই এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারে উদ্যোগী হয়ে উঠুন আর উপভোগ করুন ঘন , স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুলের নজরকাড়া সৌন্দর্য।
গত দুই পর্বের আলোচনায় চুল পড়ার কারণ ও চুল পড়া বন্ধ করার উপায় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আমাদের এই শ্রম আপনাদের অনেক উপকার এনে দিবে।
এখানে আপনাদের প্রায়ই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি ^_^
চুল পড়ার ডাক্তারি চিকিৎসা কী?
চুল পড়া বন্ধ করতে সাধারণত দুটি মেডিসিনের কথা শোনা যায়।
১. মিনোক্সিডিল (যা পুরুষ ও মহিলা উভয়েইয়েই ব্যবহার করতে পারেন)
২. ফিনাস্টেরাইড (যা শুধু পুরুষের জন্য)
কিন্তু এগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এবং একেক জনের ক্ষেত্রে তা একেক রকম। তাই চুল পড়ার ডাক্তারি চিকিৎসা জানতে কোন রেজিস্টার্ড ডাক্তারের কাছেই যাওয়া উচিত। এবং চুল পড়া রোধে হোমিও ঔষধ এর জন্য; একজন ভালো হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
চুল পড়া কমায় যে খাবারগুলো
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করতে উপকারী যে খাবারগুলো-
১। সবুজ শাক
২। বাদাম
৩। বাঁধাকপি ও ব্রকলি
৪। মটরশুঁটি ও ডাল
৫। মাছ
৬। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
৭। ওটস
৮। ডিম
৯। গাজর
১০। অ্যাভোকাডো
১১। লেবু ও কমলা
চুল পড়া রোধে কোন শ্যাম্পু ভালো?
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করতে সেরা শ্যাম্পু-
১. লরিয়াল প্যারিস অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু
২. হিমালয়া এন্টি হেয়ারফল শ্যাম্পু
৩. ক্লিনিক প্লাস স্ট্রং এন্ড লং হেলথ শ্যাম্পু
৪. ডাব হেয়ারফল রেসকিউ
৫. ইন্দুলেখা
৬. বায়োটেক ফ্রেশ গ্ৰোথ প্রোটিন শ্যাম্পু
৭. ট্রিসেমি হেয়ার ফল ডিফেন্স শ্যাম্পু
৮. প্যান্টিন অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু
পড়া চুল কি আবার গজায়?
হ্যাঁ, গজায়।
আমাদের মাথায় যেখান থেকে চুল গজায়, তাকে বলে হেয়ার ফলিকল। আমরা প্রায় ১ লাখ হেয়ার ফলিকল নিয়ে জন্মাই। এই ফলিকলের সংখ্যা নির্দিষ্ট । এটা কমবেও না, বাড়বেও না। কিন্তু চুল নির্দিষ্ট নয়।
একটি চুল ফলিকল দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে কিছুদিন পর ঝড়ে গেলে; হেয়ার ফলিকলের গোঁড়ার স্টেম সেল আবারো একটি নতুন চুলের জন্ম দেয়।
গর্ভাবস্থায় চুল পড়া
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্যের কারণে চুল নিষ্ক্রিয় দশায় চলে যায়। মূলত এজন্যই গর্ভাবস্থায় চুল পড়া সমস্যা দেখা দেয়। তবে এ সমস্যা ক্ষণস্থায়ী। সন্তান জন্মদানের পর দেহে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়। এবং চুল পড়াও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন-
বিস্তারিত লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ
Onnek upokar hoiche…. Tnxxx
Jotil hoye geche