ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাথার খুশকি দূর করার উপায়
এই পুরো আর্টিকেলে মাথার খুশকি দূর করার উপায় সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে উল্লেখিত প্রতিটি পদ্ধতিই যেকোনো মানুষের জন্যই সহজসাধ্য এবং সহজে প্রয়োগ করা সম্ভব। আশা করি, মাথার খুশকি সমস্যায় জর্জরিত মানুষেরা আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চিতভাবেই উপকৃত হবেন।
টেলিভিশনে প্রচারিত “অ্যান্টি ড্যানড্রফ” শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনগুলো যে শুধুই মার্কেটিং এর উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়ে থাকে, তা বুঝতে দেরী করে ফেলে অনেকেই। ফলে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করার পরও চুলে বাসা বাঁধে ছত্রাকের দল। বাড়তে থাকে মাথার উপর মৃতকোষের সংখ্যা।
একবার এই ছত্রাক ওরফে খুশকির খপ্পরে পড়ে গেলে শ্যাম্পু বাদ দিয়ে মানুষ সাধারণত ঘরোয়া উপায়েই এর থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। এজন্য খোঁজ করতে থাকে বিভিন্ন উপকরণ ও ফর্মুলার। কিন্তু ইন্টারনেটে ঠাঁসা এতো এতো ফর্মুলার ভেতর কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায় অনেকেই।
মাথার খুশকি দূর করার উপায়
আপনাদের সেই দ্বিধা দ্বন্দ থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছে এই আর্টিকেলটি। এখানে উল্লেখিত প্রতিটি ফর্মুলা যাচাইকৃত এবং প্রাপ্তবয়স্ক সকলের জন্য উপযুক্ত।
১। মাথার খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে নিম পাতার ব্যবহার
ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের খুশকি দূর করার যতগুলো উপায় রয়েছে, নিম পাতার ব্যবহার সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেননা, নিম পাতায় বিদ্যমান উচ্চমাত্রার ফ্যাটি অ্যাসিড মাথার ত্বককে আর্দ্র রাখে। ফলে খুশকি বাড়তে পারে না।
এছাড়াও, বিশেষজ্ঞদের বয়ান অনুযায়ী, নিমের পাতা আমাদের মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটায় এবং এতে চুলে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে।
চুলের খুশকি দূর করার জন্য, প্রথমেই ১০-১৫টি নিমের পাতা গাছ থেকে তুলে এনে ফুটন্ত পানিতে ভালোমতো সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর পাতাগুলো বেটে পেস্ট তৈরী করে সরাসরি মাথার ত্বকে লাগাতে হবে। এরপর ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।
ঘরে যদি অলিভ অয়েল থাকে, তবে নীম পাতার মিশ্রণের সঙ্গে ৩-৪ চা চামচ অলিভ অয়েলও মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে মিশ্রণের কার্যকারীতা বেড়ে যাবে আরও কয়েকগুণ।
সপ্তাহে নিয়ম করে একদিন পর পর এই মিশ্রণটি মাথায় লাগালে ২ সপ্তাহের মধ্যেই খুশকি অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে এবং পাশাপাশি মাথার ত্বকের অন্যান্য সমস্যারও সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।
২। মাথার খুশকি দূর করার জন্য লেবু ও শসার ব্যবহার
লেবু চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপকরণ। লেবুতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদানগুলি চুলের খুশকি দূর করতে দারুণ কার্যকরী। লেবু খুশকি দূরীকরণের পাশাপাশি মাথার ত্বকের অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও সক্রিয়া ভূমিকা রাখে।
এতো উপকারিতার পরও লেবুকে সরাসরি মাথার ত্বকে ব্যবহার করা একদমই অনুচিৎ। লেবুর সঙ্গে সব সময় অন্যান্য উপকারী উপাদান যুক্ত করে মাথায় ব্যবহার করতে হয়।
অন্যদিকে, শসা ত্বকের পাশাপাশি চুলের যত্নেও যথেষ্ট উপাদেয়। শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফাইবার, যা আমাদের চুলের পরিচর্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং খুশকি দূর করতে সহায়তা করে।
মাথার খুশকি দূর করে চুলকে সজীব রাখতে লেবু ও শসার তৈরী এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন।
প্রথমেই একটি শসা ব্লেন্ডারের সাহায্যে ব্রেন্ড করে নিন। তারপর ব্লেন্ডকৃত মিশ্রণটি হতে ছাঁকনীর সাহায্যে শসার রসটুকু বের করে নিন। শসার এই রসের সঙ্গে ২-৩ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিলেই কাঙ্খিত মিশ্রণটি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
সপ্তাহে নিয়ম করে অন্তত দুইবার এভাবে মিশ্রণ তৈরী করে মাথায় লাগাবেন। আশা করা যায়, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চুলের খুশকির সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
৩। ডিম ও টক দই দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
চুলে খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে ডিম এবং টক দইয়ের মিশ্রণ বেশ প্রচলিত। ডিমে বিদ্যমান বায়োটিন, প্রোটিন, ভিটামিনসহ অন্যান্য উপাদান চুল থেকে খুশকি দূর করতে দারুনভাবে সহায়ক।
অন্যাদিকে, দইয়ে রয়েছে ভিটামিন ই, জিংক, প্রোটিন এবং ল্যাকটিক অ্যাসিডের মতো উপাদান, যেগুলো চুলকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে ও মাথার ত্বকের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকরী।
চুলের খুশকি দূর করার জন্য একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে কয়েক চামচ টক দই এবং এক চা চামচ লেবুর রস ঠিকমতো মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর, চুলের গোড়ায় ও মাথায় ত্বকে মিশ্রণটি ঘষে ঘষে লাগিয়ে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করার কথা ভোলা যাবে না।
এই মিশ্রণটির ব্যবহার অনেকের কাছেই দারুন অস্বস্তির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। কেননা, কাঁচা ডিমের গন্ধ প্রথম প্রথম এতো কাছ থেকে সহ্য করা কিছুটা কঠিন। এই মিশ্রণটি প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে মাথার ত্বকে ব্যবহার করা উচিৎ।
৪। মেথি ব্যবহার করে খুশকি দূর করার উপায়
মাথার খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে মেথির ব্যবহার খুবই প্রাচীন। মেথিতে উপস্থিত প্রোটিন, ভিটামিন সি, আয়ন এবং পটাশিয়াম মাথার ত্বকের মৃত কোষ তথা খুশকি নির্মুলে দারুন কার্যকরী।
এছাড়াও, নিম পাতার মতো মেথিরও ত্বকে রক্ত চলাচলকে ত্বরান্বিত করার ক্ষমতা রয়েছে। চুলে নিয়মিত মেথি ব্যবহার করেল চুল হবে খুশকিমুক্ত, ঘন ও মসৃণ।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন, চুলে মেথি ও মেথির মিশ্রণ প্রয়োগের পর পারতপক্ষে শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না। শ্যাম্পু ব্যবহার করলে মেথির সমস্ত গুণাগুণ থেকে আপনার বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক।
চুলের খুশকি দূর করার জন্য, আগেরদিন রাতে মেথির বীজগুলো ভিজিয়ে রেখে পরেরদিন মেথিগুলো বেটে পেস্ট তৈরী করে নিতে হবে। তারপর পরিমাণমতো গরম পানির সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মেথির পেস্ট মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে।
মিশ্রণটি উষ্ণতা সহনযোগ্য পর্যায়ে নেমে এলে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করতে করতে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
যেহেতু, এই মিশ্রণটি চুলে কোনো বাজে গন্ধ আনে না, তাই শ্যাম্পু ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি চাইলে একদিন পর পর কিংবা প্রতিদিনই এটি মাথার চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
৫। মেথি ও টক দই দিয়ে খুশকি নির্মুল
টক দই ও মেথির মিশ্রণ মাথার ত্বকের সমস্ত মৃতকোষ বা খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে চমৎকার কাজ করে। মেথি আমাদের স্ক্যাল্ফকে সুস্থ রাখে এবং প্রোবটিক্স এর মতো ফাঙ্গাসরোধী উপাদান সমৃদ্ধ টক দই খুশকি নির্মূল করে।
মেথি ও টক দইয়ের এই মিশ্রণটি তৈরী জন্য, মেথির বীজ আগেরদিন রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেটি গুঁড়া করে নিতে হবে। মেথির গুঁড়ার সঙ্গে পরিমাণমতো পূর্ণ ননীযুক্ত ৪-৫ চা চামচ দই ও জলপাই তেল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করতে হবে।
তৈরীকৃত মিশ্রণটি চুল ও মাথার ত্বকে লাগিয়ে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হবে। মিশ্রণটি প্রথমবার ব্যবহারের পরই পরিবর্তন খুঁজে পাবেন।
৬। ভিনেগার দিয়ে মাথার খুশকি দূর করার উপায়
ভিনেগারে রয়েছে ফাঙ্গাস প্রতিরোধী উপাদান – যা আমাদের মাথার ত্বকের সকল প্রকার মৃতকোষকে পরিষ্কার করে দেয়। এছাড়াও, এটি ত্বকের আর্দ্রতা বাড়িয়ে আমাদের মাথার ত্বককে খুশকির জন্য প্রতিকূল পরিবেশ বানিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে, খুশকি আর জন্মাতে পারে না।
চুলের খুশকি দূর করার জন্য, পাঁচ চামচ ভিনেগার পরিমাণমতো পানির সঙ্গে ভালোমতো মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে হবে। ৮-১০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
আপনি চাইলে সামান্য পানি ও চার চামচ ভিনেগারের সঙ্গে দুই চামচ নারিকেলের তেলও যুক্ত করতে পারেন। এক্ষেত্রেও ৮-১০ মিনিটই অপেক্ষা করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুইদিন এই প্রক্রিয়ায় মাথার ত্বক পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
ভিনেগারের মিশ্রণ চুলে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন, যেন কোনোভাবেই এটি চোখের সংস্পর্শে না আসে। ভিনেগারের অম্লীয়ভাব চোখের জন্য একদমই অনিরাপদ।
৭। এ্যালোভেরা ব্যবহার করে মাথার খুশকি দূর করার উপায়
এ্যালোভেরা আমাদের চুলের জন্য আশীর্বাদস্বরুপ। এতে উপস্থিত এ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান আমাদের মাথার ত্বককে খুশকিসহ অন্যান্য যেকোনো ছত্রাকজনিত রোগ হতে নিরাপদ রাখে এবং চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চুল থেকে খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে এ্যালোভেরা বিভিন্ন ভাবে মাথার ত্বকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন: সরাসরি সতেজ অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার, অ্যালোভেরার সঙ্গে নিমের তেল, অ্যালোভেরা ও টি ট্রি অয়েল, অ্যালোভেরা ও কর্পূর কিংবা অ্যালোভেরা ও লেবুর রসের সম্মিলিত প্রয়োগ। এগুলোর ব্যবহার পদ্ধতিও অত্যন্ত সরল।
ঘরে টি ট্রি অয়েল থাকলে রাতের বেলা তিন টেবিল চামচ অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে চার-পাঁচ ফোঁটা এই তেল মিশিয়ে চুলের আগা গোড়া ও মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। সকালে উঠে চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন।
টি ট্রি অয়েল না থাকলেও, লেবু তো সবার বাসাতেই থাকে। তিন টেবিল চামচ সতেজ অ্যালোভেরার পেস্টের সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে যত্ন সহকারে চুলে ও মাথার তালুতে লাগিয়ে নিন। লেবু আপনার মাথার ত্বকের পিএইচ মান নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং পাশাপাশি খুশকিও প্রতিরোধ করবে।
আপনি চাইলে আধা চা চামচ কর্পূরের সঙ্গেও চার টেবিল চামচ অ্যালোভেরার পেস্ট মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। এতে মাথা ঠান্ডা থাকবে এবং খুশকির চুলকানির তীব্রতা অনেকাংশে কমে যাবে।
নিমের তেলের সঙ্গেও এ্যালোভেরা মিশিয়ে চুলে প্রয়োগ করা যায়। তিন টেবিল চামচ অ্যালোভেরা পেস্টের সঙ্গে ১০-১২ ফোঁটা নিমের তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। আধা ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
নিমের তেলের পরিবর্তে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। খুশকি দূর করার জন্য অলিভ অয়েল এবং এ্যালোভেরার মিশ্রণও বেশ সমাদৃত বলা চলে।
এছাড়াও, আপনি চাইলে এ্যালোভেরার পেস্ট সরাসরিও মাথার ত্বক ও চুলে ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমবার প্রয়োগেই আপনি চুলের স্বাস্থ্যের দারুন উন্নতি খেয়াল করবেন। কিছুদিনের নিয়মিত ব্যবহারে চুল হবে খুশকি শুণ্য।
৮। চুলের খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে আমলকির ব্যবহার
চুলের যত্নে আমলকির ভূমিকা সম্পর্কে অবগত নয়, এমন মানুষের সংখ্যা নগণ্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ সুন্দর আকর্ষণীয় চুল পেতে আমলকি ব্যবহার করে আসছে। চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি মাথার খুশকি দূর করার উপায় হিসেবেও আমলকি অতুলনীয়। এমনকি বিশেষজ্ঞরাও আমলকিকে চুলের ঔষধ বলে সম্বোধন করে থাকেন।
আমলকির মিশ্রণ তৈরীর জন্য, প্রথমেই দুইটি কাঁচা আমলকির ভেতরের বীজ ফেলে দিয়ে বাকি অংশটুকু বেঁটে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর সেই পেস্টের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা নারিকেলের তেল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করুন। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার করে নিন।
এই মিশ্রণটি প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ব্যবহার করলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে।
এটা ছাড়াও, মাথার খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে প্রচলিত আমলকির আরো কিছু মিশ্রণ আছে, যেগুলো তৈরী করা একটু কঠিন হলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায় বলে অনেকেই নিয়মিত ব্যবহার করেন।
যেমন: আমলকীর রস, নারিকেলের তেল, শিকাকাই এবং অ্যালোভেরা জেলের তৈরী মিশ্রণ। এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে ২৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করতে হয়। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল হয় সিল্কি, খুশকিমুক্র এবং পাশাপাশি আরো বেশি ঝলমলে।
এছাড়াও, আমলকীর রস, ডিমের তরল সাদা অংশ, নারিকেলের তেল এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ভালোমতো মিশিয়ে ২৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। এতে করে চুলের গোড়া আরো মজবুত হয় এবং নিয়মিত ব্যবহারে চুলে খুশকি থাকলে তা নির্মুল হবে।
৯। মুলতানি মাটি দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
মুলতানি মাটি একইসঙ্গে প্রাকৃতিক ক্লিনজার, টোনার এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করায় ত্বকের যত্নে অনেকেই এটি ব্যবহার করছে। এটি ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্যেও অত্যন্ত ফলপ্রসূ। চুলের খুশকি প্রতিরোধ করে মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজার রাখার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা কোনো অংশেই কম নয়।
মাথার খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে এটি ব্যবহার করতে চাইলে, অর্ধেক কাপ মূলতানি মাটির সঙ্গে প্রয়োজন মতো পানি নিয়ে মিশ্রণ তৈরী করুন। সেই মিশ্রণের সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে মাথা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।
মুলতানি মাটির আরো একটি মিশ্রণ রয়েছে, যেটাকে আরো বেশি কার্যকরী দাবী করা হয়েছে। এই মিশ্রণটির জন্য আপনার প্রয়োজন হবে গোলাপজল, টকদই এবং মুলতানি মাটির।
প্রথমে একটি বাটিতে এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি নিয়ে তার সঙ্গে অর্ধেক কাপ গোলাপজল মিশ্রিত করতে হবে। তারপর মিশ্রণের সঙ্গে এক টেবিল চামচ টকদই মেশাতে হবে। মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে গোড়া এবং মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে, চুলের খুশকি ও রুক্ষতা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
১০। মাথার খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার
তুলসি পাতাকেও আমাদের মাথার খুশকি দূর করার উপায় হিসবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তুলসী পাতায় বিদ্যমান বিভিন্ন এ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আমার মাথার ত্বককে ছত্রাকের জন্য অবাসযোগ্য করে তোলে।
মিশ্রণটি তৈরী করার জন্য, তুলসি পাতা, আমলা পাউডার এবং সামান্য জলের প্রয়োজন হয়। ১৫ টি তুলসী পাতা এবং ২ চা চামচ আমলা পাউডার সামান্য পানির সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করতে হবে।
তারপর সেটি চুলের আগা গোড়া এবং মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। নিয়মিত এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে মাথার ত্বকে ছত্রাকের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।
— শেষকথা —
একবার কারো মাথায় খুশকি হয়ে গেলে, এর থেকে প্রতিকার পাওয়াটা সত্যিকার অর্থেই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর এখানে উল্লেখিত মাথার খুশকি দূর করার উপায় সমূহ শুধুমাত্র নিয়মিত ব্যবহারকারীদের জন্যই ভালো ফল বয়ে আনে। তাই অবশ্যই আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
বলা হয়ে থাকে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই, খুশকি নির্মুল করার জন্য খুশকি হওয়ার অপেক্ষায় না থেকে আগেই চুলের যত্ন নেয়া শুরু করা উচিৎ। আমাদের ব্লগে চুলের যত্নের উপায় নিয়ে বেশ কয়েকটি আর্টিকেল রয়েছে। সেগুলো পড়ুন এবং সচেতন হোন।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-