ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার উপায় (WP BackUp & Restore)
নতুন ব্লগাররা ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার বিষয়টি সাধারণত এড়িয়ে চলতে চায়। এর মূল কারণ ওয়েবসাইটের নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীনতা এবং ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার উপায় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব। এখানে কিভাবে খুব সহজে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার উপায় জানা প্রয়োজনীয় কেন?
মনে করুন, একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, আপনার ওয়েবসাইটের কোনো পোস্ট, পেজ বা ইমেজ কিচ্ছু জায়গা মতো নেই। সব ডিলিট হয়ে গেছে। এটা হতে পারে হোস্টিং কোম্পানির কোনো ভুলের কারণে কিংবা হ্যাকারের জন্য।
কিংবা মনে করুন, আপনি ওয়েবসাইটের অভ্যন্তরীণ কোড নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। নিজের অজান্তেই কোনো একটা ফাংশন ঘেটে দিলেন, এলোমেলো হয়ে গেল সব। ফলাফলে আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন নষ্ট হয়ে রূপান্তরিত হলো কিম্ভুতকিমাকার একটা কিছুতে।
এমতাবস্থায় কেমন লাগবে আপনার?
এতো ধৈর্য নিয়ে তৈরী করা একেকটা আর্টিকেল হুট করে এমন অদৃশ্য হয়ে গেলে নিজেকেও অদৃশ্য করে ফেলতে ইচ্ছে হবে নিশ্চয়ই… তাই না?
এমন পরিস্থিতিতে মন অবশ্যই বলবে, ঈশ! যদি ওয়েবসাইটটা আবার আগের মতো করে ফেলতে পারতাম!
আগের মতো করা কি সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব! তবে এটা সম্ভব তখনই হবে, যখন আপনার ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখা থাকবে।
আরও পড়ুন –
- WordPress কি? এর বৈশিষ্ট্য, কিভাবে শিখবেন এবং আয়ের উপায়
- (WordPress Vs Blogger) কোনটা আপনার জন্য সেরা?
ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার পদ্ধতি (Website Backup Tutorial Bangla)
ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার উপায় মূলত তিনটি। সেগুলো হলো, হোস্টিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অটো ব্যাকআপ, নিজে নিজে সিপ্যানেলে গিয়ে ব্যাকআপ এবং প্লাগইনের মাধ্যমে অটো ব্যাকআপ।
যদি আপনার হোস্টিং কোম্পানি আপনার ওয়েবসাইটটির নিয়মিত ব্যাকআপ নিয়ে রাখে, তাহলে ব্যাপারটি খুব সহজ হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে হোস্টিং কেনার আগে হোস্টিং কোম্পানি আপনার পছন্দের প্যাকেজে নিয়মিত ব্যাকআপ সুবিধা দেবে কিনা তা জেনে নিতে হবে।
শেয়ার্ড হোস্টিং প্যাকেজ ব্যবহার করলে হোস্টিং কোম্পানিগুলো সাধারণত এধরণের সুবিধা দেয় না। এজন্য বিকল্প উপায় হলো, আলাদাভাবে নিজে নিজেই ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ রাখা। এক্ষেত্রে দুইটি পদ্ধতির মাধ্যমে ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ রাখা যায়। একটি ডিরেক্ট সিপ্যানেলের মাধ্যমে এবং অন্যটি প্লাগইনের।
সিপ্যানেলের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যাকআপ করা সম্পুর্ন ম্যানুয়াল একটা পদ্ধতি। অর্থাৎ, আপনার নিজেকেই সিপ্যানেলে যেতে হবে, তারপর কনটেন্টসহ সাইটের ব্যাকআপ নিতে হবে, নিতে হবে ডাটাবেসের ব্যাকআপও।
কিন্তু সবকিছুতে আরাম খোঁজা মানুষের জন্য নিয়ম করে এতো কিছু করার সময় কোথায়? তাই আমাদের প্রয়োজন এমন একটি পদ্ধতির, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট দিন পর পর অটোমেটিক্যালি আমাদের ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ নেয়া হয়ে যাবে এবং এ নিয়ে কোনো বাড়তি চিন্তাই করতে হবে না।
এ কি আদৌ সম্ভব?
হ্যাঁ! খুব সম্ভব! এই কাজটি করতে হবে একটি প্লাগইনের মাধ্যমে। কিভাবে করবেন, তার পদ্ধতি বুঝিয়ে দিতেই এই আর্টিকেলটি লিখতে বসেছি। এটি লেখার পেছনে একটি বড় কারণ হলো, এমন ঘটনা আমার সাথে একসময় হরহামেশাই ঘটত।
নতুন অবস্থায় না বুঝে ঘাটাঘাটি করতে করতে কখন যে বিপদ সীমানা অতিক্রম করে নিজের ওয়েবসাইটের দফা রফা করে দিয়েছি, বুঝতেও পারিনি।
তারপর আফসোস করতে হয়েছে, ব্যাকআপ রাখলাম না কেন! আশা করি, আপনাদের আর এমন আফসোস করতে হবে না।
প্লাগইনের মাধ্যমে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার উপায়
প্লাগইনের মাধ্যমে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ রাখা অত্যন্ত সহজ। যারা মোবাইলের মাধ্যমে ওয়ার্ডপ্রেস নির্মিত ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের জন্য এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, মোবাইল দিয়ে সিপ্যানেল থেকে ব্যাকআপ নেয়া বড় ধরণের একটা প্যারা এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার জন্য ওয়ার্ডপ্রেসে বেশ কয়েকটি প্লাগইন রয়েছে৷ সেগুলোর মাঝে WpVivid সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসু এবং সহজ লেগেছে আমার কাছে।
WpVivid কে বেশি কার্যকরী মনে হওয়ার কারণ এটার ফ্রি ভার্সনের মধ্যেই এমন সব ফিচার আছে, যা অন্য প্লাগইনগুলোতে পেতে হলে প্রিমিয়াম ভার্সন কিনতে হয়।
WpVivid এর মাধ্যমে ব্যাকআপ নিলে ব্যাকআপকৃত ফাইল অটোমেটিকভাবে গুগল ড্রাইভে সেইভ করিয়ে নেয়া যায়। এছাড়া এতে আছে অটো শিডিউল ব্যাকআপ সুবিধা। এটা চালু করে রাখলে প্লাগইনটি আপনার সুবিধা অনুযায়ী মাসে একবার, সপ্তাহে ১ বার কিংবা দিনে একবার করে ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ নিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গুগল ড্রাইভ এক্যাউন্টে স্থানান্তর করে দেবে।
সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ রাখার জন্য WpVivid এর ব্যবহার পদ্ধতি
নতুনদের সুবিধার জন্য এখানে ধাপে ধাপে পুরো পদ্ধতিটি উল্লেখ করা হলো।
ধাপ ০১: আপনার ওয়েবসাইটের ডাশবোর্ডে লগইন করুন।
ধাপ ০২: মেনু থেকে Plugin এবং তারপর Add New এ যান। ( Menu > Plugins > Add New)
ধাপ ০৩: সার্চ বক্সে WpVivid BackUp লিখে সার্চ দিন।
ধাপ ০৪: সবার উপরে আসা প্লাগইনটি Install এবং তারপর Active করে নিন।
ধাপ ০৫: Menu থেকে WpVivid এর BackUp & Restore এ যান।
ধাপ ০৬: এখান থেকে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ নিতে পারবেন। ডাটাবেস এবং ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ নেয়ার জন্য নিচের দিকে Database + Files (WordPress Files) সিলেক্ট করতে হবে। তারপর Save Backups to local সিলেক্ট করে BackUp Now এ ক্লিক করতে হবে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এভাবে ব্যাকআপ নিলে ( বা Save Backups to local সিলেক্ট করলে) ব্যাকআপকৃত ফাইল হোস্টিং স্টোরেজে গিয়ে জমা হয়, যা হোস্টিং স্টোরেজ বাড়িয়ে দেয়। আমরা প্রথম অবস্থায় যেহেতু ১-২ জিবির হোস্টিং নিয়ে থাকি, তাই এভাবে স্টোরেজ বাড়তে থাকলে আমাদের পরবর্তীতে সমস্যার সৃষ্টি হবে।
এজন্য ব্যাকআপকৃত ফাইল গুগল ড্রাইভে রাখার বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। ব্যাকআপকৃত ফাইল গুগল ড্রাইভে অটো ট্রান্সফার করার জন্য নিন্মলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
ধাপ ০৭: উপরের দিকে Remote Storage ট্যাবে ক্লিক করতে হবে। এখানে Google Drive, Microsoft OneDrive, Amazon S3, Digital Ocean Spaces, FTP এবং SFTP এর নাম থাকবে। অর্থাৎ কেউ চাইলে এতোগুলোর প্লাটফর্মের কোনো একটিতে কিংবা একাধিক প্লার্টফর্মে ব্যাকআপকৃত ফাইল অটো ট্রান্সফার করতে পারে।
ধাপ ০৮: Google Drive এ ফাইল ট্রান্সফার করতে Google Drive সিলেক্ট করে নিন। সাধারণত এটি ডিফল্টভাবেই সিলেক্ট করা থাকে।
ধাপ ০৯: Enter a unique aliases ফর্মে যেকোনো একটা কিছু লিখুন। বাকি কোনো ঘরে হাত না দিয়ে Authonicate With Google Drive এ চাপ দিন। এরপর আপনাকে হয়তো গুগল এ্যাকাউন্টে সাইন ইন করতে হতে পারে। তাহলেই কাজ শেষ।
ধাপ ১০: আবার মেনুবার হতে WpViVid > BackUp & Restore এ যান। তারপর আগের মতো Database + Files (WordPress Files) এ ক্লিক করে Send Backup to Remote Storage সিলেক্ট করুন এবং Backup এ চাপ দিন।
ব্যাকআপ প্রসেস হতে কিছু সময় লাগতে পারে। কাজ সমাপ্ত হলে অটোমেটিক ভাবে গুগল ড্রাইভে ব্যাকআপকৃত ফাইলটি খুঁজে পাবেন।
অটোমেটিকভাবে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার উপায়
আপনি যদি বার বার এভাবে ম্যানুয়ালি ওয়েবসাইট ব্যাকআপ করতে না চান, তাহলে শিডিউল সিস্টেমের মাধ্যমে ওয়েবসাইট অটো ব্যাকআপ রাখা যায়।
এজন্য WpVivid হতে Backup & Restore এ যান। তারপর Schedule ট্যাবে ক্লিক করুন। Enable backup schedule সিলেক্ট করে ঠিক কত সময় পর পর আপনি অটো ব্যাকআপ প্রসেস করতে চান, তা নির্ধারণ করে দিন।
নিচের দিকে Send backups to remote storage এ ক্লিক করে Save Changes এ চাপ দিন।
এভাবে খুব সহজেই ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ রাখা যায়।
ব্যাকআপকৃত ফাইল ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে রিস্টোর করার নিয়ম
ব্যাকআপ নেয়ার পর যদি কখনো মনে হয়, এখন ব্যাকআপ ফাইল রিস্টোর করা প্রয়োজন, তবে গুগল ড্রাইভে যেয়ে নির্দিষ্ট দিনের ব্যাক আপ ফাইল ডাউনলোড করে নিতে হবে। তারপর তা Extract করলে একটি জিপ ফাইল পাওয়া যাবে। জিপ ফাইলটি WpVivid এর Backup & Restore ট্যাবে যেয়ে Restore সেকশনে আপলোড করে দিতে হবে। ব্যস! তাহলেই হয়ে গেল।
এছাড়া Backup & Restore ট্যাবের নিচের দিকে কিছুদিন আগের ব্যাকআপ করা সব Backup Files প্রদর্শিত হয়। ফাইলগুলোর নিচের দিকে Restore অপশন থাকে। Restore এ ক্লিক করলেই ফাইল অটো রিস্টোর হয়ে যায়।
এখানে একটা বিষয় বলে রাখা ভালো, কোনো নির্দিষ্ট দিনের ব্যাকআপ ফাইল রিস্টোর করলে ঐ দিনের পরে ওয়েবসাইটে যেসকল কাজ করেছিলেন, তার কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
অর্থাৎ মনে করুন আজ অক্টোবরের ২ তারিখ। আমি গত তিনদিন আগে একটি ব্যাকআপ জেনারেট করেছিলাম। আজ যদি সেই তিনদিন আগে তৈরী করা ব্যাকআপ ফাইল ওয়েবসাইটে রিস্টোর করি, তবে মাঝের এই তিন দিনে ওয়েবসাইটে যেসব কাজ করেছি, তার সবই অদৃশ্য হয়ে যাবে বা হাড়িয়ে যাবে। হাড়িয়ে যাবে গত ৩ দিনে পোস্ট করা সব আর্টকেল, ফটো, প্লাগইন সেটিংস সব…
শেষ কথা (ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার উপায়)
আশা করি, ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যাকআপ রাখার উপায় সম্পর্কে এখন পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। আপনি চাইলে Wpvivid প্লাগইন ব্যবহার না করে অন্যকোনো প্লাগইন ব্যবহার করতে পারেন কিংবা সরাসরি সিপ্যানেলের মাধ্যমেও ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ নিতে পারেন।
তবে প্লাগইনের মাধ্যমে ব্যাকআপ নেয়াই অধিকতর সহজ। WpVivid বাদেও স্টোরে WpDraftPlus, VaultPress, BackupBuddy, Boldgrid Backup, BlogVault, BackWpUp এবং ডুপ্লিকেটরসহ আরো অনেক ব্যাকআপ প্লাগিন রয়েছে। সেগুলিও ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
সবশেষে বলব, ওয়েবসাইটের নিয়মিত ব্যাকআপ রাখার চেষ্টা করুন। কেননা, প্রথম অবস্থায় এটা ঝামেলাদায়ক মনে হলেও, পরে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে আপসোসের সীমা থাকবে না…
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-
Apni ki lekhok….. Kothata bollam Karon lekhar dhoronta sei rokomi😅😅😅
ধন্যবাদ রিতু কমেন্ট করার জন্য। হ্যাঁ লেখক তো বটেই, কেননা ব্লগার মাত্রই লেখক হয়😇… তবে আমি ভালো লেখক নই, ব্যাকবেঞ্চার😅