লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাবের হোমিও চিকিৎসা

নারীদের যোনি এবং জরায়ুর শ্লৈষ্মিক আবরণী, অভ্যন্তর ও জরায়ু মুখ থেকে একপ্রকার অনিয়মিত শ্লেষ্মা, রস, পূঁজ প্রভৃতি যে ক্লেদ স্রাব নির্গত হয়, এই স্রাবকে লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাব বলে। এটা একটা স্ত্রী যৌন উপসর্গ। এই লেখাতে লিউকোরিয়া (Leucorrhoea) বা সাদাস্রাবের হোমিও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পাশাপাশি এই রোগ প্রতিরোধে অবশ্য পালনীয় কিছু বিষয়ের উপর দৃষ্টি রেখে কিভাবে সাফল্যের সাথে চিকিৎসা করা যায় তার বিবরণ দেয়া হয়েছে।

সাদাস্রাব বা শ্বেতপ্রদর কেন বলা হয়?

শ্বেতপ্রদর বা সাদাস্রাব প্রথম নিঃসরণের সময় সাদা থাকে, তাই একে শ্বেতপ্রদর বা সাদাস্রাব; ইংরেজিতে Leucorrhoea (লিউকোরিয়া) বলে।

কিন্তু পরে এটা হরিদ্রাভ, সবুজাভ বা মিশ্রিত রংয়ের হয়। অতিরিক্ত শ্বেত কণিকা থাকে বলে একে সাদা দেখায়। এটা অনুত্তেজক হতে পারে, আবার বিদাহী উত্তেজক হতে পারে।

শ্বেতপ্রদর বা সাদাস্রাব (Leucorrhoea) এর কারণ সমূহ

১। স্ক্রফুলা বা গণ্ডমালা ধাতু এবং শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুকে এর পূর্ববর্তী কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

২। গণোরিয়া বা প্রমেহ রোগ, গণোরিয়া জীবাণু দ্বারা সার্ভিক্স, ভ্যাজাইনা আক্রান্ত হয়।

৩। ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিস নামের জীবাণু দ্বারা ভ্যাজাইনা আক্রান্ত হওয়া, জননযন্ত্রে নানা জীবাণু দূষণের জন্য এটা হতে পারে।

৪। গর্ভস্রাব বা প্রসবের পর জরায়ু দূষিত হওয়া।

৫। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাব এর প্রধান কারন।

৬। দেহে বা জরায়ুর কোন অসুস্থতা যথা রক্তহীনতা, যক্ষা, ক্রণিক নেফ্রাইটিস, ক্রণিক প্যাসিভ কনজেশসন প্রভৃতি।

৭। ঋতুকালে তলপেটে ঠাণ্ডা লাগানো বা অন্য কোন কারণে জননেন্দ্রিয়ের প্রদাহ।

৮। জরায়ু মুখে বা প্রসব পথে ক্যান্সার। গর্মির ঘা, টিউমার বা অন্য কোনো রোগ হওয়া।

৯। অজীর্ণ, আমাশয়, পুরাতন ম্যালেরিয়া জ্বর, কালাজ্বর, যক্ষা প্রভৃতি পীড়ায় স্বাস্থ্যভঙ্গ হওয়া।

১০। যোনি দ্বারে ক্ষুদ্র কৃমির উপদ্রব।

১১। হস্তমৈথুন, অতিরিক্ত রতিক্রিয়া, পুনঃ পুনঃ গর্ভধারণ বা পুনঃ পুনঃ গর্ভস্রাব।

শ্বেতপ্রদর বা সাদাস্রাব এর লক্ষণাবলী কি কি?

১। জরায়ু থেকে অনিয়মিত ভাবে সাদা স্রাব বা ডিমের শ্বেতাংশের মতো স্রাব বের হতে থাকে।

২। মাঝে মাঝে তার সঙ্গে লালচে স্রাব বা দুই এক ফোঁটা রক্ত বের হয়।

৩। ইনফেকশন থাকলে যোনির চুলকানি হয়।

৪। প্রস্রাব ঘন ঘন হয় এবং প্রস্রাবে জ্বালা থাকে। মূত্রনালীর প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

৫। স্রাব সাধারণতঃ ঋতুর পূর্বে বা পরে প্রকাশ পায়।

৬। কোমরে বেদনা হয়। তলপেট ভারী হয়, রোগিনী ক্রমে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে।

৭। ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্ল, হৃদস্পন্দন প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়।

৮। মাথাধরা ও মাথাব্যথা থাকে।

৯। যোনি থেকে নির্গত শ্বেতপ্রদর ঝাঁঝালো বা হাজাকর হয়। যেখানে লাগে সে স্থানটি হেজে যায়।

১০। স্রাব অস্বচ্ছ, কটু, যন্ত্রণাদায়ক হয়। যোনি মধ্যে উষ্ণতা এবং সংকোচন বোধ হয়।

সাদাস্রাবের হোমিও চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ

এ্যালুমিনা

এর সাদাস্রাব হাজাকর, পরিমাণে প্রচুর। স্বচ্ছ দড়ির মতো। সেই সাথে জ্বালা করে। দিনের বেলা মাসিক ঋতুস্রাবের পর বৃদ্ধি হয়। এই সমস্ত লক্ষণ উপশমে এ্যালুমিনা কার্যকরী।

বোরাক্স

এর প্রদর স্রাব বা সাদাস্রাব অনেকটা ডিমের সাদা অংশের মতো। সেই সাথে রোগীর মনে হয় যেন গরম জলের ধারা বয়ে চলছে। এতে যোনি পথে চুলকানি ও একজিমা থাকে।

সিপিয়া

এটা হরিদ্রাবর্ণ, সবুজাভ ও সেই সাথে অত্যন্ত চুলকানি যুক্ত প্রদর স্রাবে কার্যকর। পুঁজের মতো স্রাব। ক্ষীণকায়, বায়ু প্রধান ও শ্যামাঙ্গিণী স্ত্রীদের পক্ষে এটা বিশেষ উপযোগী।

ক্রিয়োজোটাম

প্রায়ই যোনিকপাট ভিজে যায় এবং চুলকানি থাকে। যৌনাঙ্গের ভিতরে ও বাইরে জ্বালা ও ক্ষতের মত অনুভূতি হয়। প্রদর স্রাব হলুদ, হাজাকর, সবুজ শস্যের মত গন্ধযুক্ত ইত্যাদি উপসর্গ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী।

পালসেটিলা

সাদা বর্ণের ঘন স্রাব। ঋতুর পরে এই স্রাবের বৃদ্ধি হয়। এতে কখনো বেদনা থাকে আবার কখনও থাকে না। স্রাব প্রাথমিক পর্যায়ে অনুত্তেজক বা স্নিগ্ধ। পুরাতন অবস্থায় প্রদর স্রাব হাজাকর, জ্বালাকর, জমাটবদ্ধ। পালসেটিলা এ ধরনের লক্ষণ সমূহকে উপশমে কার্যকর।

লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাবের ধাতুগত হোমিও চিকিৎসা

ক্যালকেরিয়া কার্ব

দুধের মতো সাদা প্রদর স্রাব। জরায়ুতে জ্বালা, চুলকানি ও বেদনা। বালিকাদের ও গণ্ডমালা ধাতু-গ্রস্থ স্ত্রী লোকদের প্রদর বা সাদাস্রাবে এটা বিশেষ উপযোগী।

অ্যাসিড নাইট্রিক

বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হয়ে বা উপদংশ পীড়ার পর বা অতিরিক্ত মাত্রায় পারদ জাতীয় ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় এ রোগ হলে এই ওষুধ উপকারী। প্রথমে ধোঁয়াটে অথচ গাঢ় স্রাব হয়ে পাঁচ-ছয় দিন পরে পাতলা জলের মতো বা মাংসধোঁয়া জলের মতো দুর্গন্ধ স্রাব লক্ষণে এটা প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন-

জরায়ুর অতিরিক্ত রজঃস্রাবের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

Leave a Comment