দ্রুত বীর্যপাত চিকিৎসায় থানকুনির সম্ভাবনা

যদি যথাযোগ্যভাবে পরীক্ষা হয় তবে থানকুনি দ্রুত বির্যপাত ও অবাঞ্চিত শুক্রক্ষরণসহ বিবিধ যৌন দুর্বলতা চিকিৎসায় একটি গুরূত্বপূর্ণ স্থান দখল করার মত যথেষ্ঠ ঔষধি গুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ বলে প্রতিয়মান হবে।

থানকুনি’র পরিচিতিঃ

বৈজ্ঞানিক নামঃ Centella asiatica (Linn.) Urban.

অন্যান্য প্রচলিত নামঃ ঢোল মানিক, টাকা মানিক, পয়সা, গোটু কোলা প্রভৃতি। এছাড়া Asiatic pennywort অথবা Indian pennywort নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক পরিবাবের নাম ম্যাকিনলেয়াসি যাকে অনেকে এপিকেসি পরিবাবের উপপরিবার মনে করেন।

প্রাপ্তিস্থানঃ বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বত্র।

থানকুনি পাতা বা ঢোল মানিকের পাতা’র সাথে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। বাংলাদেশের সর্বত্র সহজেই থানকুনি গাছের দেখা পাওয়া যায়। এই থানকুনি গাছের পাতা ও শিকরের বহুবিধ ব্যবহার সুপ্রাচীন কাল থেকেই কবিরাজ, হেকিম তথা বিভিন্ন শ্রেণীর ও পেশার চিকিৎসক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রচলিত।

বিভিন্ন সুপ্রতিষ্ঠিত ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই থানকুনি পাতার চূর্ণকে কুরছ পেনিট্যাব ফর্মুলারি নামে ২৫০ মি.গ্রা. ক্যাপসুল আকারে বাজারে বিক্রি করছে।

ইউনানী চিকিৎসা মতে থানকুনির ঔষধি ব্যবহার

হামদর্দ

হামদর্দ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম ও অন্যতম একটি ইউনানী ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। হামদর্দ ২৫০ মি.গ্রা. পরিমাণ থানকুনি পাতার চূর্ণ ক্যাপসুল সেনচুরিন নামে ক্যাপসুল আকারে বিক্রি করছে। ক্যাপসুল সেনচুরিন এর প্রয়োগ নির্দেশিকায় দেখা যায় এর কার্যকারিতা সম্বন্ধে লেখা হয়েছে- ইহা স্মৃতি শক্তি এবং নিউরনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, চর্মরোগ, কুষ্ঠ ও আমাশয়ে কার্যকরী।

নিউ লাইফ

নিউ লাইফ বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। নিউ লাইফ ট্যাবলেট এনট্যাব নামে একই ফর্মুলা অর্থাৎ ২৫০ মি.গ্রা. পরিমাণ থানকুনি পাতার চূর্ণ বাজারে বিক্রি করছে। নিউ লাইফ উৎপাদিত ট্যাবলেট এনট্যাব এর প্রয়োগ নির্দেশনা সম্বন্ধে লেখা হয়েছে ইহা পুরাতন আমাশয়, রক্ত আমাশয় ও দাস্তে উপকারী।

অর্থাৎ একই ঔষধের ভিন্ন ভিন্ন ঔষধজ গুণাবলীকে ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যের প্রসার ও প্রচারে ব্যবহার করছে। আমার তাতে বিন্দু মাত্র আপত্তি নেই। বরং আমি আমার রোগী চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই অমিত সম্ভাবনাময়ী দেশজ ঔষধি গাছের অন্যান্য ঔষধজ গুণাগুণের প্রমাণ পেয়ে তা নিজের ভাষায় সহজভাবে সবার কাছে প্রকাশ করছি।

আশা করছি অন্যান্য বিশিষ্ট চিকিৎসক, চিকিৎসা বিজ্ঞানীসহ সর্ব সাধারণ সযত্নে এই অমূল্য ঔষধখানি পরীক্ষা করে এর বিভিন্ন ঔষধজ ক্ষমতা বিশ্ব দরবারে যথাস্থানে উপস্থাপন করবেন।

থানকুনি’র ভেষজ গুণ

যতটুকু জানতে পেরেছি- থানকুনি পাতার চূর্ণ মস্তিস্কে নিউরনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর সুফল স্বরূপ আমরা যে সকল কার্যকারিতা অতিদ্রুত অনুধাবন করতে পারি, তা হচ্ছে-

শরীরের সর্বত্র প্রবাহিত স্নায়ুর শক্তি বৃদ্ধি পায়। স্নায়ুর দুর্বলতা জনিত কারণে সৃষ্ট এক প্রকার স্নায়বিক বা নিউরালজিক ব্যাথা থেকে রোগী মুক্তি লাভ করে।

সাধারণের ভাষ্যমতে যাকে হাতে, পায়ে, হাতের কব্জি ও পায়ের গোড়ালিতে, আঙ্গুলের ডগায়, সয়াটিকা নার্ভে এক প্রকার শিরশিরানি বা ঝিনঝিনানি ব্যাথা অনুভব করা বলে -এই সমস্ত ব্যাথা, যন্ত্রণা থেকে থানকুনি পাতার চূর্ণ খুব দ্রুত উপশম দিতে পারে।

স্নায়বিক দুর্বলতা জনিত কারনে সৃষ্ট যৌন দূর্বলতা, শুক্রমেহ, ধাতু দূর্বলতা প্রভৃতি থেকে ধীরে ধীরে এবং সুনিশ্চিতভাবে মুক্তি লাভ করে। স্নায়বিক দুর্বলতার কারনে দ্রুত বির্যপাত বা Premature Ejaculation এবং অবাঞ্চিত শুক্রক্ষরণ বা Spermatorrhoea সমস্যা সৃষ্টি হলে থানকুনি পাতার চূর্ণ ২৫০ মি.গ্রা. পরিমান একটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল প্রতি রাতে এক কাপ গরম দুধের সাথে খেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উক্ত ব্যাক্তির দ্রুত বির্যপাত সমস্যা দূর হয়, ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। এমনকি বীর্যের ঘনত্বও বৃদ্ধি হয় অর্থাৎ বীর্য গাঢ় হয়।

শরীরের, হাতের, হাতের কব্জির বল অর্থাৎ শক্তি বৃদ্ধি হয়।

যে সমস্ত মা-বোনেরা কাপড় কাঁচার সময় অথবা অন্যান্য কাজ করার সময় হাতের পেশীর ও কব্জির পেশীর দুর্বলতা বা ব্যাথার কারনে কষ্ট পাচ্ছেন তথা দৈনন্দিন কাজ-কর্ম সম্পাদনে বিবিধ অসুবিধার সম্মুক্ষীণ হচ্ছেন তারা নিয়মিত প্রতি রাতে ২৫০ মি.গ্রা. পরিমান থানকুনি পাতার চূর্ণ এক কাপ গরম দুধের সাথে খেলে হাতের পেশীর ও কব্জির এই ধরণের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

থানকুনি’র হোমিওপ্যাথিক ব্যবহার

থানকুনিকে হোমিওপ্যাথিতে বহু পূর্বেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা কিনা হাইড্রোকোটাইল এশিয়াটিকা (Hydrocotyle Asiatica) নামে পরিচিত। ইহার পরীক্ষালব্ধ কিছু লক্ষণ সমষ্টি নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। তবে ব্যাপকভাবে ও উচ্চ শক্তিতে এর পরীক্ষা করা এখনও সম্ভব হয়নি।

কুষ্ঠ, ধবল (Leucoderma) বা Vitiligo, সোরিয়াসিস বা Psoriasis চিকিৎসা’য় থানকুনি’র ব্যবহার

হাইড্রোকোটাইল এশিয়াটিকা বা থানকুনির বিশেষ লক্ষণঃ

চর্ম অত্যন্ত কঠিন ও পূরু হয় এবং খোলস উঠে যায়।

শরীরের স্থানে স্থানে গোল চাকা উদ্ভেদ হয় এবং উদ্ভেদের কিনার আঁশের মত শক্ত হয়।

গ্রহণমাত্রাঃ হাইড্রোকোটাইল মূল মাদার টিংচার (Hydrocotyle Asiatica Q) ২ থেকে ৩ ফোঁটা করে দিনে ১ বার। এটা নিয়মিত খেলে ত্বকের পিগমেন্টেশন প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করে ত্বকের স্বাভাবিক রং ও চামড়ার উপরস্থ ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যু পুনঃগঠনে সাহায্য করে। এ প্রক্রিয়ায় থানকুনি ধবল বা শ্বেতী (Leucoderma) বা Vitiligo চিকিৎসায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

প্রাসঙ্গিক লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন-

ধবল বা শ্বেতী রোগের হোমিও চিকিৎসা

যৌন দূর্বলতা ও চর্মরোগ চিকিৎসায় থানকুনি’র সম্ভাবনা

দ্রুত বির্যপাত ও অবাঞ্চিত শুক্রক্ষরণসহ বিবিধ যৌন দুর্বলতা চিকিৎসায় থানকুনি তথা হাইড্রোকোটাইল এশিয়াটিকা’র ব্যবহার নিয়ে আরো বিস্তৃত গবেষণা করা প্রয়োজন।

যদি তা সম্বব হয় তবে আশা করি এটা একটা যথেষ্ট কার্যকরী ভারতীয় উপমহাদেশীয় ঔষধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি চর্মরোগ চিকিৎসায়ও এর আরও সুনির্দিষ্ট লক্ষণ ও কার্যকারীতা জানা যাবে।

আরও পড়ুন-

যৌন দূর্বলতা চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান ৫টি হোমিও ওষুধের লক্ষণ নির্দেশিকা

লেখকঃ মোঃ সাজু আহমেদ

Leave a Comment