ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয় রোগ হচ্ছে দাঁতের মধ্যে গর্ত হয়ে যাওয়া বা দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া। এ রোগ হলে দাঁতে তীব্র ব্যথা হয়। গ্রামে-গঞ্জে সাধারণভাবে একে দাঁতের পোকা খাওয়া বলে। আসলে দাঁতে পোকা হওয়া বলে কোন রোগ নেই। আজকের আলোচনায় দাঁতের ক্ষয় রোগ ও দাঁত ব্যথার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

দাঁতের ক্ষয় রোগ কেন হয়?
দাঁতে ক্ষয় হয় মূলত তিনটি কারণে। যথাঃ
১। শর্করা বা চিনি জাতীয় খাদ্য বেশী পরিমানে খেলে।
২। নিয়মিত সঠিকভাবে দাঁত পরিষ্কার না করলে।
৩। দাঁতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে অর্থাৎ ফ্লোরাইড ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে।
চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য মুখের ভেতরে দীর্ঘ সময় থাকলে তা মুখের ভেতরে যে ব্যাকটেরিয়া বাস করে তার সাথে মিশে অম্ল বা এসিড নিঃসরণ করে। এই এসিড ধীরে ধীরে দাঁতের বাইরে সবচেয়ে শক্ত আবরণ এনামেলকে ক্ষয় করে। এই ক্ষয়কেই বলে দন্ত বা দাঁতের ক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ।
এছাড়া খাবার খাওয়ার পর দাঁত নিয়মিত পরিষ্কার না করলে খাদ্য কণা দাঁতের ফাঁকে জমা হয়ে এক প্রকার স্তর তৈরী করে। এই স্তরের ভেতর মুখের জীবাণুগুলো তাদের আবাস তৈরী করে। যা পরবর্তীকালে এসিড বা অম্ল তৈরী করে দাঁত ক্ষয় করতে সাহায্য করে।
দাঁতের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে গেলেও সহজে দাঁতের ক্ষয় হয়।
দাঁতের ক্ষয় রোগ -এর লক্ষণ ও উপসর্গ
- দাঁতে গর্ত হয়ে যায়।
- দাঁতের মুকুটের কোনো কোনো অংশ কালো হয়ে যায়।
- দাঁতে তীব্র ব্যথা হয়।
- ঠান্ডা পানি বা গরম কিছু খেলে দাঁতে ব্যথা ও শিরশির করে।
- দাঁতের গোড়া থেকে পুঁজ পড়ে।
- মুখে দুর্গন্ধ হয়।
চিকিৎসাঃ দন্ত চিকিৎসকরা সাধারণত ফিলিং করেন। বেশী গর্ত হলে রুট ক্যানল করে থাকেন।
দাঁত ব্যথার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
সর্ব প্রকার দন্তশুল বা দাঁতব্যথার প্রথম অবস্থায় প্ল্যান্টাগো মাদার লাগানো ও ঐ সঙ্গে প্ল্যান্টাগো ৩০ বা ২০০ উপকারী।
খাবার পর ঠান্ডা বাতাস লাগা হেতু বেদনার বৃদ্ধি ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া প্রভৃতিতে অ্যাকোনাইট ৩X – ৩০।
দাঁত আলগা ও দীর্ঘ হওয়া। কান পর্যন্ত অসহ্য ব্যথা বিস্তৃত হলে আর্সেনিক ৬।
অনেকগুলো দাঁত আক্রান্ত হবার জন্য গাল ফুললে ও মাঝে মাঝে চিড়িক মারা ব্যথা হলে বেলেডোনা ৬।
দাঁত অল্প ঝুলে পড়লে এবং তার সঙ্গে যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে ব্রায়োনিয়া ৩, ৬।
বরফ বা শীতল জল দিয়ে মুখ ধুলে আরাম বোধ হলে কফিয়া ৩X।
স্যাঁতসেতে জায়গায় থাকার জন্য এবং বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লেগে দাঁতে ব্যথা হলে ডালকামারা ৬।
দাঁতে গর্ত হওয়া ও দাঁত নষ্ট হবার দশা হলে ও প্রায়ই রাতের দিকে ব্যথা বৃদ্ধি পেলে ক্রিয়োজোট ৬, ৩০।
ঠান্ডা বাতাস বা পানির সংস্পর্শে ব্যথা বৃদ্ধি হলে, দাঁত খুব ঝুলে পড়লে, মুখে অতিরিক্ত পানি জমে থুঁতু উঠতে থাকলে মার্কুরিয়াস ৬, ৩০ ভালো কাজ করে।
গরম জিনিস খেলে ব্যথা বৃদ্ধি পেলে, ব্যথার সময় গা শীত শীত করলে পালসেটিলা ৩০ প্রযোজ্য।
দাঁত কালো, বিকৃত, ক্ষীণ, মাড়ি ক্ষতযুক্ত, ফোলা, প্রদাহযুক্ত হলে স্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া ৬, ৩০।
গর্ভকালীন সময়ে দন্তশুল বা ব্যথা হলে সিপিয়া ৩০ বা ম্যাগকার্ব ৩০।
দাঁত আলগা হওয়া ও নড়তে থাকা লক্ষণে সালফার ৩০, ২০০। এই সঙ্গে মেয়েদের ঋতুর সমস্যা থাকলে এটি একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ।
দন্তক্ষয় বা দাঁতের ক্ষয় রোগের সেরা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূহ
দাঁতের গোঁড়ায় বা দন্তমূলে ক্ষত হতে থাকলে থুজা অক্সিডেন্টালিস একটি ভালো ঔষধ। যারা প্রায়ই শ্বাসকষ্ট, কাশি-কফ, বাত-ব্যথায় কষ্ট পান এবং যাদের শরীরের বিভিন্ন প্রকার তিল, আঁচিল দেখা যায় তাদের দাঁতের ক্ষয় রোগের চিকিৎসায় থুজা একটি প্রধান ঔষধ। ৩০ বা ২০০ শক্তি ব্যবহার করা ভালো।
অপরদিকে যাদের শরীরে একজিমা, সোরিয়াসিস, প্রভৃতি চর্মরোগের আক্রান্ত হবার ইতিহাস আছে তাদের দাঁতের গোঁড়ায় ক্ষত হতে থাকলে মেজেরিয়াম ৩০, ২০০ প্রভৃতি উপযোগী হবে।
দাঁত কালো, মাড়িতে ক্ষত, ফোলা, প্রদাহ হলে স্ট্যাফিসেগ্রিয়া ৩০, ২০০। মানসিকভাবে অবদমিত কষ্ট ভারাক্রান্ত ব্যাক্তিদের চিকিৎসায় স্ট্যাফিসেগ্রিয়া ভাল কাজ করে।
দাঁতের চূঁড়ায় অথবা পার্শ্বে ক্ষত হতে থাকলে বা ভাঙ্গতে থাকলে মার্কুরিয়াস ৩০, ২০০ কার্যকর। সচরাচর মার্কারি বা পারদ বিষে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের চিকিৎসায় মার্কুরিয়াস প্রয়োজন হয়।
দাঁতে উপর থেকে নিচ বরাবর গর্ত হয়ে দাঁত নষ্ট হতে থাকলে এবং তাতে কালো প্লার্ক এর আস্তরণ দেখা গেলে ক্রিয়োজোট ৩০, ২০০ উপকারী।
দুই দাঁতের মাঝ বরাবর, বিশেষ করে সামনের দুই দাঁতের মাঝামাঝি দাঁতের মধ্যখানে ক্ষত হতে থাকলে টিউবারকুলিনাম প্রযোজ্য। যে সমস্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যক্ষা বা ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হবার প্রবণতা দেখা যায় তাদের চিকিৎসায় টিউবারকুুলিনাম শ্রেষ্ঠ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
বায়োকেমিক মতে দাঁত ব্যথা ও দাঁতের ক্ষয় রোগের হোমিও চিকিৎসা
দাতের ব্যথা থাক বা না থাক, দাঁতের গোড়া শিথিল হলে এবং খাবার খাওয়ার সময় খাদ্যদ্রব্য দাঁতে স্পর্শ হলে অসহ্য শুলব্যথা হলে ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকা ৬X বা ১২X প্রায় অব্যর্থ। দাঁতের এনামেল বেশীর ভাগ এই উপাদান দ্বারাই নির্মিত। তাই এর অভাবে দাঁতের আবরক ঐ মসৃণ পদার্থটি নষ্ট হয়ে দাঁত খসখসে হয় ও নষ্ট হতে থাকে।
দাঁতের এনামেল অর্থাৎ আবরক মিনা পদার্থ পাতলা ও ভঙ্গপ্রবণ। দাঁতে ক্ষত হলে বা দাঁত শীঘ্র নষ্ট হতে থাকলে ক্যালকেরিয়া ফসফরিকা ও ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকা পর্যায়ক্রমে ব্যবহার যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়া দাঁতের গোঁড়া বা দন্তমূল আক্রান্ত হয়ে দাঁতে চুনের মত সাদা আবরণ বা দাগ পড়লে এবং দাঁতের ক্ষয় রোগ দেখা গেলে সাইলেসিয়া ১২X বা ৩০X কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন-