ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায়
সুন্দর হতে কে না চায়? মুখে কালো দাগ নিয়ে আপনার চিন্তার শেষ নেই। অপরদিকে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যাচ্ছে। সবাই আপনার এই অনুজ্জ্বল, রূক্ষ ত্বকের জন্য আড়চোখে তাকায়। জেনে নিন- ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায়।
ব্যস্ততার কারণে ত্বকের যত্ন নেওয়ার সময় হয়ে উঠেছে না। এছাড়া, রয়েছে কাজের প্রচণ্ড চাপ। বাইরের প্রচণ্ড শীত অথবা গরমের দিনের উষ্ণতার প্রভাবে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে আপনার ত্বকের লাবণ্য। কি করা যায়; ভাবতে ভাবতেই কপালে পড়ছে চিন্তার বলিরেখা!
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায় জানতে ইচ্ছুক?
প্রাকৃতিকভাবে ঘরোয়া উপায় অথবা নিয়ম ব্যবহার করে বেশ কিছু দ্রুত ত্বক ফর্সা করার বা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায় প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে।
সেই আদি যুগ থেকেই গায়ের রং নিয়ে মানুষের নানান চিন্তা। অনেকেরই কাম্য একটি ফর্সা সুন্দর ত্বকের। রং ফর্সাকারী ক্রিমের কদর তাই কমে না কখনোই। কিন্তু আসলে সত্যিই কি এসব ক্রিমে গায়ের রং ফর্সা হয়?
মুখের রং হয়তো একটুখানি উজ্জ্বল হয়। কিন্তু পুরো শরীরের ত্বক? তাছাড়া শহুরে পার্লারগুলোতে আছে রঙ ফর্সা করার নানান আয়োজন। যেমন স্কিন ব্লিচ, ফেয়ার পলিশসহ আরও কত কি।
কিন্তু জেনে রাখুন, এই সবই আপনার ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সুতরাং ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করার জন্য ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে বা বজায় রাখতে ঘরোয়া উপকরণই এখন সৌন্দর্য্য চর্চ্চায় প্রাধান্য পাচ্ছে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায় হিসেবে নানা ধরনের ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহার করা যায়।
যুগে যুগে মানুষ নিজের সৌন্দর্য নিয়ে ভেবেছে। নিজেকে যাতে অন্যের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, সেজন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না সৌন্দর্য পিপাসু পুরুষ বা মহিলারা।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা ব্যস্ত জীবনে সবসময় নিজের যত্ন ঠিকমতো নেওয়া খুবই মুশকিল। তাছাড়া দিনদিন পরিবেশও দূষণযুক্ত হয়ে পড়ছে।
এতে করে নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখা আসলেই ভীষণ মুশকিল হয়ে পড়েছে। অথচ নিজেকে সবসময় সুন্দর ও আকর্ষণীয় রাখাটা যেন জীবনেরই একটা অংশ। আধুনিকযুগে এ কথার সত্যতা অনস্বীকার্য।
তবে আপনি চাইলে বাড়িতেই অল্প সময়েই সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে পারেন।
আসুন জেনে নেই-
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর কিছু ফেসপ্যাক
টমাটো ও লেবুর রসের ফেসপ্যাক
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় লাইকোপেন নামক একটি উপাদান। যা সব ধরনের ত্বকের দাগ মিলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মৃত কোষেদের সরিয়ে দেয়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল এবং ফর্সা হয়ে উঠতে সময় লাগে না।
১ – ২টা টমাটো ব্লেন্ডারে ফেলে তার সঙ্গে ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রনটা ভাল করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা।
অ্যালোভেরা ও বাদামের ফেসপ্যাক
অল্প করে অ্যালোভেরা জেল নিয়ে তাতে পরিমাণ বাদাম গুঁড়ো মিশিয়ে একটা মিশ্রন বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেই মিশ্রনটি ভাল করে মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫ – ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা জেল ত্বককে ফর্সা করার পাশপাশি নানা রকম স্কিন ডিজিজের প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করে। অন্যদিকে, বাদাম গুঁড়ো মুখে জমে থাকা ময়লা এবং ব্ল্যাক হেডস দূর করতে দারুন কাজে আসে।
মধু ও দইয়ের ফেসপ্যাক
পরিমাণ মতো দইয়ে অল্প করে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেই পেস্টটা কম করে ১৫ মিনিট মুখে ম্যাসাজ করুন। সময় হয়ে গেলে মুখটা ধুয়ে নিন।
মধু ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে তোলে। আর লেবুর রস এবং দুইয়ের মিশ্রনে উপস্থিত ভিটামিন-সি ত্বককে উজ্জ্বল এবং ফর্সা করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডিমের ফেসপ্যাক
ত্বককে ফর্সা করে তুলতে ডিমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। চাই তো ত্বকের পরিচর্যায় ডিমকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না। এক্ষেত্রে একটা ডিমের কুসুম নিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে নিয়ে সেটি সারা মুখে ভাল করে লাগিয়ে নিতে হবে।
এরপর কম করে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা।
আমের খোসা এবং দুধের ফেসপ্যাক
গরমকালে রাতের বেলা গরম গরম দুধে আম মিশিয়ে খেতে কী সুস্বাদু লাগে। কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে দুধের সঙ্গে আমের খোসার মিশিয়ে ত্বকে লাগালে দারুন উপকার পাওয়া যায়।
এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো দুধে অল্প করে আমের খোসা মিশিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রনটা মুখে, গলায় এবং ঘারে লাগিয়ে কিছু সময় রেখে দিয়ে ধুয়ে নিন।
লেবুর রস ও চিনির ফেসপ্যাক
একটা লেবু থেকে রস সংগ্রহ করে তাতে ১ চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রনটি ততক্ষণ পর্যন্ত মুখে ঘষতে থাকুন, যতক্ষণ না চিনিটা ত্বকের সঙ্গে একেবারে মিশে যায়। যখন দেখবেন এমনটা হচ্ছে, তখন মুখটা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন। ফর্সা ত্বক পেতে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি দারুন কাজে আসে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায় হিসেবে গোলাপজলের ব্যবহার
গোলাপজলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ভিতর থেকে ত্বককে পরিষ্কার করে। ফলে স্কিন সুন্দর এবং তুলতুলে হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সমপরিমাণে গোলাপজল এবং কাঁচা দুধ মিশিয়ে নিন।
তারপর সেই মিশ্রন রাতে শুতে যাওয়ার আগে মুখে লাগিয়ে ফেলুন। সারা রাত রেখে সকালে মুখটা ধুয়ে নিন। এমনটা মাত্র দু দিুন করলেই দেখবেন ত্বক উজ্জ্বল এবং ফর্সা হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন-
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দুধ ও কলার ফেসপ্যাক এর ব্যবহার
অল্প সময়ে ত্বক উজ্জ্বল করতে কলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তার উপর যদি দুধকে কাজে লাগানো হয়, তাহলে তো কথাই নেই। এক্ষেত্রে একটা কলাকে চোটকে নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো দুধ মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন পেস্টটা যেন একেবারে মিহি হয়ে যায়। তবেই কিন্তু ভাল কাজ দেবে।
ডাবের পানি ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায়
ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে তুলতেও ডাবের পানির কোনও বিকল্প নেই। দিনে দুবার যদি ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া যায়, তাহলে ত্বক ফর্সা হতে একেবারে সময়ই লাগে না। শুধু তাই নয়, মুখের দাগ মেটাতেও এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি দারুন কাজে আসে।
ত্বকের যত্নে খাবার সোডা ও পানির ব্যবহারে
পরিমাণ মতো খাবার সোডা নিয়ে তাতে অল্প করে পানি মিশিয়ে একটা থকথকে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর সেটা মুখে এবং গলায় ১৫ মিনিট ধরে লাগানোর পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
তেঁতুল ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায়
তেঁতুলের পাল্প ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে ২দিন এর ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন।
লেবু ও মধুর ফেসপ্যাক
মধু ও লেবু একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করে নিন। মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে মিশ্রণটি লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। মিনিট ১৫ পর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন এর ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন।
রূপচর্চায় বাড়াতে মুসুরের ডালের ব্যবহার
মসুর ডাল বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজা মুসুর ডাল বেটে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
দুধ ও কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক
রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। প্রতিদিন এক গ্লাস উষ্ণ গরম দুধে আধা চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে পান করুন। এভাবে পান করতে না পারলে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন।
নিয়মিত হলুদ মেশানো দুধ পান করলে আপনার রং হয়ে উঠবে ভেতর থেকে ফর্সা। দুধে কাঁচা হলুদ বাটা না মিশিয়ে করতে পারেন আরেকটি কাজ। দেড় ইঞ্চি সাইজের এক টুকরো হলুদ নিন। তারপর টুকরো করে কেটে এক গ্লাস দুধে দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
দুধ গাঢ় হলুদ রঙ ধারণ করলে পান করুন। এভাবে প্রতিদিন একবার করে পান করতে থাকুন।
কাঁচা হলুদ ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায়
শুধু দুধের সঙ্গে নয়, বাহ্যিক রূপচর্চাতেও হলুদ আপনার রঙ ফর্সা করতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে কালচে ছোপ দূর করতে এই পদ্ধতি খুব কার্যকর।
তাছাড়াও কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন নিম্নোক্ত পদ্বতিতে।
দুধ ৩ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, এবং কাঁচা হলুদ বাটা ১ চা চামচ। দুধ, লেবুর রস ও হলুদ বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মিশ্রন বা পেস্ট তৈরি করুন। সারা মুখে এই পেস্ট ভালভাবে লাগিয়ে প্যাকটি শুকানো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। গরম জলেতে মুখ ধোবেন না এবং অন্তত ১২ ঘণ্টা রোদে যাবেন না।
নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের রং হয়ে উঠবে ফর্সা, কোমল, দাগমুক্ত ও সুন্দর। তাহলে আর দেরি কেন? বাড়িতে বসে প্রাকৃতিক উপায়ে নিজে থেকে হয়ে উঠুন ফর্সা, সুন্দর।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন –