চুলপড়া (Hairfall), টাক পড়া (Alopecia) বা টাক মাথায় চুল গজানোর সেরা হোমিও ওষুধ

শরীরের কোন স্থানের চুলগুলি যদি উঠে যায় তবে তাকে টাক পড়া বা Alopecia বলে। নানা কারণে এইরুপ চুল উঠা সম্ভব। প্রথমত বিশেষ প্রকার পরাঙ্গপূষ্ট কীটানু চুলের গোড়াগুলিকে আক্রমণ করে ঐগুলিকে ক্ষীণ করে দেয়। তখন গোছা গোছা চুল উঠে যেতে থাকে।

তারপর উপদংশ, মানসিক সংঘাত, ভয়, শিরত্বকের শীর্ণতা, কোন দুর্বলতর রোগভোগ, বার্ধক্য জনিত দুর্বলতা, প্রভৃতি কারণে মাথার চুল উঠে যায়। আবার বংশগত কারণেও অনেক সময় এই সমস্যা দেখা দেয়।

আপনি জেনে আনন্দিত হবেন- সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকরভাবে চুল পড়া, টাক পড়া বা টাক মাথায় চুল গজানোর সেরা হোমিও ওষুধ দিয়ে কার্যকরভাবে হোমিও চিকিৎসা সম্ভব। এতে চুলপড়া বন্ধ হয়। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে টাক মাথায় নতুন চুল গজানোর মতো আশ্চর্যজনক কার্যকারিতা পাওয়া যায়।

চুলপড়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

স্বনামধন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও গবেষক ডাঃ বার্ণেট টাক পড়া বা Alopecia নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। উনার মতে অধিকাংশ টাক পড়া সমস্যার মূল কারণ মস্তকের শীরত্বকের চর্মরোগ। সেটা নিজের ও হতে পারে। আবার অন্য করো চর্মরোগ থাকলে সে যে বিছানায় বা হেলান চেয়ারে বসবে সেখানে বসলে বা বিস্রাম নিলে উক্ত ব্যক্তির মাথায়ও ঠিক আক্রান্ত ব্যক্তির মত টাক বা চুলপড়া সমস্যা হতে পারে।

চুলপড়া বা Alopecia রোগের কয়েকটি প্রকারভেদ আছে। তার মধ্যে সর্বাধিক যে রোগটি দেখা যায় তা হচ্ছে-

এলোপেসিয়া এরিয়াটা (Alopecia Areata)

টাক মাথায় চুল গজানোর সেরা হোমিও ওষুধ
Alopecia Areata

সাধারণতঃ এই পীড়া প্রথমে একটি বিশেষ স্থানে আরম্ভ হয় এবং প্রায় ১/২ ইঞ্চি পরিমান স্থানের চুল পড়ে না যাওয়া পর্যন্ত কিছুই বুঝা যায় না। ক্রমে ঐ চুল উঠা স্থানটি বড় হয়ে একটি রুপার টাকার আকার ধারণ করে। এই প্রকারে সময়ে সময়ে ১০ থেকে ১২টি পর্যন্ত স্থান চুলশুন্য হয়ে যেতে পারে। আবার কখনও কখনও ঐগুলি মিলিয়ে গিয়ে একটা বড় টাকের সৃষ্টি করতে পারে। এই পীড়ার গতি কখনও ধীরে কখনও দ্রুত হয়।

চুল পড়া বা টাকের বা টাক মাথায় চুল গজানোর ৫টি সেরা হোমিও ওষুধ

ফসফরাস

মস্তকে সম্পূর্ণ চূলশূন্য গোলাকার স্থান তৈরি হয়। কপালের উপর এবং দুই শঙ্খস্থান হতে গোছে গোছে চুল উঠে যায়। চুলের গোড়া সাদা হয়ে যায়। চুলশুন্য স্থানগুলি পরিস্কার, সাদা ও মসৃণ দেখায়। ডাঃ এম. ই. ডগলাস এর মতে ফসফরাস চুলপড়া বা টাক তথা Alopecia এর প্রধান ঔষধ।

নেট্রম মিউর

চুল টানলে অথবা আঁচড়াইলে সহজেই উঠে আসে। সম্মুখ মস্তকের চুলই অধিক উঠে। মস্তকের ত্বকে ব্যথা থাকে। মুখমন্ডল দেখতে চর্বি মাখানোর মত মনে হয়। রোগী শীর্ণদেহ বিশিষ্ট হয়। রোগীর মধ্যে অত্যন্ত কাঁচা লবণ খাওয়ার ইচ্ছা দেখা যায়।

লাইকোপোডিয়াম

অল্প বয়সে বা অকালে চুলপাকা। পাকস্থলীর বিভিন্ন পীড়া যেমন অত্যাধিক পেট ফাঁপা, গ্যাসট্রাইটিস, কোষ্ঠবদ্ধতা, প্রভৃতি পীড়া ভোগকালীন এবং সন্তান প্রসবের পর চুল উঠা। মস্তকে জ্বালা ও চুলকানি, বিশেষতঃ দিনের পরিশ্রমের পর শরীর গরম হয়ে উঠলে।

ফ্লুরিক এসিড

উপদংশ পীড়া ভোগের পর চুল উঠা। মস্তকের অনেকখানি স্থান চুলশুন্য। রোগী সর্বদাই চুল আচড়াঁয়। নতুন চুল ভঙ্গুর ও কর্কশ। ক্ষেত্রবিশেষে সম্পূর্ণ মস্তকে টাক পড়তে দেখা যায়।

আর্সেনিক এল্বাম

চুলে স্পর্শকাতরতা। কপালের নিকটবর্তী স্থানে স্থানে টাক পড়ে। মাথা শুষ্ক শল্ক দ্বাড়া আবৃত। কখনও কখনও শল্কগুলি কপাল ও কান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। শল্কগুলি দেখতে কদাকার।

টাকের বা চুলপড়ার (Hairfall) অন্যান্য প্রয়োজনীয় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ

ক্যালকেরিয়া কার্ব

কপালের উভয় পার্শ্বের চুল উঠে টাক পড়ে। আঁচড়াবার সময় চুল উঠে আসতে থাকে। চুলের কর্কশতা দেখা যায়। মস্তকের ত্বকে হলুদ বর্ণ ও সাদা শল্ক।

কার্বোভেজ

কঠিন পীড়া ভোগ, পারদের অপব্যবহার অথবা প্রসবের পর চুল উঠা। মস্তকে চাপ দিলে ব্যথা করে। মস্তকের পশ্চাদ দিকের চুলই বেশী উঠে।

সেলেনিয়াম

আঁচড়াইবার সময় চুল উঠে। ভ্রুঁ, গোঁফ-দাড়ি এবং জননেন্দ্রিয়ের চুল উঠে যায়। চুলউঠা স্থানটি একটি মুদ্রার মত গোলাকার দেখায়। মস্তকত্বকে শিহরণ। ঐখানটা কঠিন ও সঙ্কুচিত বলে মনে হয়।

সাইলিশিয়া

অল্প বয়সে টাকপড়া। স্ত্রীলোকের মাসিকের পূর্বে মস্তক ও জননেন্দ্রিয়ে চুলকানি।

থুজা

সাদা আইসযুক্ত খুসকি। চুল শুষ্ক এবং চুলপড়া।

টাক মাথায় চুল গজানোর শ্রেষ্ঠ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ

চর্মরোগ বসে গিয়ে টাক বা চুল পড়ার হোমিও চিকিৎসা

ব্যাসিলিনাম

ডাঃ বার্ণেটের মতে ব্যাসিলিনাম চুলপড়া বা টাকের শ্রেষ্ঠ ঔষধ। যদি রোগীর মাথার শীরত্বকে অতীতে কোন চর্মরোগের ইতিহাস থাকে তবে নিশ্চিতভাবেই কার্যকরী। এছাড়া বংশগত কারণে টাকপড়া চিকিৎসায়ও ব্যাসিলিনাম একটি প্রথম সারির ঔষধ।

উক্ত ঔষধের লক্ষণ হচ্ছে মাথার চর্মে সাদা ভুসির মত ময়লা দেখা যায়। মাথায় চুলকানি থাকে। এছাড়া মাথায় দাঁদ হলে পরবর্তীতে সেই দাঁদ এলোপ্যাথিক চিকিৎসা বা অপচিকিৎসার মাধ্যমে বসিয়ে দেয়া হলে পরবর্তীতে যদি উক্ত রোগীর মাথায় টাক জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয় তবে এক্ষেত্রে ব্যাসিলিনাম উক্ত টাক মাথায় চুল গজানোর শ্রেষ্ঠ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।

এছাড়া, আক্রান্ত ব্যক্তির বংশে যদি কারো মধ্যে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হবার ইতিহাস জানা যায় তবে ব্যাসিলিনাম আরও সুনিশ্চিত ভাবে ও সাফল্যের সাথে টাক বা Alopecia চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে।

আমাদের পোষ্টটি আপনার ভালো লেগে থাকলে অনুগ্রহ করে সাবস্ক্রাইব ফর্মে আপনার ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করবেন। এতে করে নতুন কোন পোস্ট দেয়া হলে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে তার নোটিফিকেশন আপনার ইমেইল এড্রেসে পেয়ে যাবেন। এছাড়া আমাদের ফেসবুক গ্রুপে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে যুক্ত থাকতে পারেন।

টাক বা Alopecia, Alopecia Areata ও চুল পড়ার হোমিও চিকিৎসা অথবা টাক মাথায় চুল গজানোর সেরা হোমিও ওষুধ সম্পর্কিত যে কোন কিছু জানার থাকলে নিচের কমেন্ট ফর্মে আপনার কমেন্টটি লিখে আমাদের কাছে প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারবেন। এছাড়া আমাদের ইমেইল ঠিকানায় সরাসরি ইমেইল করেও সাহায্য চাইতে পারেন।

আরও পড়ুন-

ধবল বা শ্বেতী রোগের হোমিও চিকিৎসা

Leave a Comment