বাজারে যতো প্রকার ফেয়ারনেস ক্রিম পাওয়া যায় সবগুলোতেই কম বেশি কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যা ত্বকের নানা প্রকার ক্ষতি করে। কেমন হয়, যদি রং ফর্সাকারী ক্রিম ছাড়াই ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখা যায়? ফেয়ারনেস ক্রিম ছাড়াই যেভাবে প্রাত্যহিক যত্নের মাধ্যমে আপনি সুন্দর ও প্রাণবন্ত ত্বক পেতে পারেন অর্থাৎ ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার উপায় সমূহ আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলটিতে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রোডাক্টগুলো সমন্ধে –
১. রং ফর্সাকারী ক্রিম ছাড়াই টোনার ব্যবহার করে ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার উপায়
ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে টোনারের জুরি নেই। টোনার ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখে ও ত্বকে বাড়তি পুষ্টি যোগায়। এটি লোমকূপকে সংকুচিত করে এবং ব্রণের প্রবণতা কমায়।
এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি বাড়তি তেল নিঃসরণ রোধ করে। এটি বলিরেখা কমাতেও ভালো কাজ করে। তাই রূপচর্চায় ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার উপায় হিসেবে টোনার ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ন।
টোনারের এতো সুফলের আশ্রয় নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে অ্যালকোহলযুক্ত টোনার বিক্রি শুরু করেছে। অ্যালকোহলযুক্ত টোনার ত্বকের তেল অধিক পরিমাণে শোষন করে ত্বককে শুষ্ক করে ফেলে। যা ব্যবহারের ফলে ব্রণের উপদ্রপ দেখা দেয়।
তাই টোনার কেনার ক্ষেত্রে শতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। টোনার কেনার সময় যে টোনারগুলো গ্লিসারিন ও ওয়াটার বেসড সেগুলো কিনবেন।
ত্বকের ধরণ বুঝে টোনার ব্যবহার করার টিপস
১. শুষ্ক ত্বকের জন্য আদ্রতা ঠিক রাখে এমন টোনার বেছে নিতে হবে। যেমনঃ- গ্লিসারিন, হায়ালুরনিক অ্যাসিড ও ভিটামিন-ই যুক্ত টোনার।
২. তৈলাক্ত ত্বকের জন্য স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ও গ্লাইকোলিক যুক্ত টোনার বেছে নিতে হবে। এই উপাদানগুলো অতিরিক্ত তেল শোষণ করে ত্বককে স্বাভাবিক রাখে।
৩. মিশ্র অর্থাৎ তৈলাক্ত ও শুষ্ক ত্বকের জন্য স্যালিলাইলিক, হায়ালুরনিক অথবা ল্যাকটিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ টোনার বেছে নিতে হবে।
৪. যাদের মুখে ব্রণ আছে বা ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য গ্লাইকোকোলিক অ্যাসিড বা আলফা হাইড্রোক্সি টোনার বেছে নিতে পারেন।
মুখ ধোয়ার পরপরই টোনার লাগাতে হয়। টোনার লাগানোর সময় তুলোর প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুন-
- ১৩টি কার্যকর পদ্ধতি প্রয়োগ করে চুল সোজা করার উপায়
- ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার উপায়
- মাথার পাতলা চুল ঘন করার উপায়
২. ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করে ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার উপায়
ভিটামিন সি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। ত্বক সুন্দর, প্রাণবন্ত ও ঝলমলে রাখতে দৈন্দিন ত্বকের পরিচর্যায় ভিটামিন সি সিরাম আবশ্যকীয়।
বয়সের ছাপ দূর করে মুখে তারুণ্যভাব আনতে এবং ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার প্রয়োজনে ভিটামিন সি সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেব ব্যবহার করা যায়। এটি ব্যবহারে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ে এবং বেগুনি রশ্মির ফলে ত্বকে যে ক্ষতি হয় তা সেরে যায়।
রোদে যাওয়ার ফলে ত্বকে যে সানস্পট, সূক্ষ্মরেখা, ও রুক্ষভাব দেখা দেয় তা ভিটিমিন সি সিরাম ব্যবহার করে দূর করা যায়। এক্ষেত্রে সানস্ক্রিনের সাথে ভিটামিন সি মিশিয়ে ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি ত্বকে আনে মসৃনভাব ও ত্বককে করে মোলায়েম। এটি ত্বককে শুষ্ক ও তেলেতেলে হওয়া থেকে বাঁচায়। রাতে নিয়মিত ভিটামিন সি সিরাম মাখলে ট্রায়োসিনেস উৎপাদন কমে যায়।
ট্রায়োসিনেস এক প্রকার উৎসেচক যা মেলানিন উৎপাদন করে থাকে। যার ফলে ত্বকে কালচেভাব আসে। সুন্দর ঝলমলে ত্বকের অধিকারী হতে চাইলে দৈনন্দিন ত্বক পরিচর্যায় অবশ্যই ভিটামিন সি সিরাম রাখুন।
এটি হাইপারপিগমেন্টেশন কমায়, ত্বক উজ্জ্বল করে, দাগ কমায়, রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। টোনার লাগানোর পরপরই ভিটামিন সি সিরাম লাগাতে হয়। ভালো ফল পেতে দিনে ২ বার ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করুন।
৩. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার রাখার উপায়
ময়েশ্চারাইজার স্কিন কেয়ার রুটিনের একটি অত্যাবশকীয় উপাদান। ফেসওয়াশ ইউজ করার পর ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করা গুরুত্বপূর্ণ। ময়েশ্চারাইজার ত্বকর ভারসাম্য ঠিক রাখে ও ত্বকে পুষ্টি যোগায়। ময়েশ্চারাইজার শুষ্ক ত্বককে আদ্র করে।
ত্বককে ভেতর থেকে সুরক্ষা করে। ত্বককে রাখে সতেজ ও প্রাণবন্ত। এছাড়াও যাদের মুখে ছোপ, কালো দাগ, ব্রণ, বলিরেখা, ব্লাকহেডস ইত্যাদি আছে তাদের জন্য ময়েশ্চারাইজার ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
ত্বকের ধরণ বুঝে সঠিক ময়েশ্চারাইজার নির্বাচনের টিপস
১. শুষ্ক ত্বকের জন্য ভারী ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। উপকরণ হিসেবে যেনো থাকে ডিমেথিকোন, হাইলুরোনিক এসিড। এগুলো ত্বককে হাইড্রেট রাখে। এছাড়াও গ্লিসারিন, গ্লাইকল, ল্যানোলিন, ইত্যাদিও বেছে নিতে পারেন।
২. তৈলাক্ত ত্বকের জন্য লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। গ্লাইকলিক, হাইলুরনিক ডাইমেথিকন এই ইনগ্রিডিয়েন্ট যুক্ত ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।
সাধারণত গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয়। তবে মুখ ধোয়ার পর প্রতিবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার সময় ত্বকে চাপ প্রয়োগ করবেন না, আলতো করে লাগাবেন।
৪. ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য ফেইসপ্যাক এর ব্যবহার
সপ্তায় ২/১ দিন মুখে ফেসপ্যাক লাগালে ত্বক পরিষ্কার হয়, বয়েসের ছাপ দূর হয়, ত্বক মসৃণ ও মোলায়েম থাকে এবং সব রকমের প্রোডাক্ট ভালোভাবে কাজ করে।
মুলতানি মাটি এবং নিম ও হলুদ পাউডার সব কসমেটিক দোকানেই পাওয়া যায়। ত্বক ভালো রাখতে এগুলো সপ্তায় ২-১ দিন ফেইসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
ফেইসপ্যাক ব্যবহারের আগে যে বিষয়গুলোর উপর খেয়াল রাখবেন
১. গোসলের আগে ফেইসপ্যাক না লাগিয়ে গোসলের পর লাগাবেন। এতে করে ত্বকের ময়লা দূর হবে এবং ফেইসপ্যাক ভালো কাজ করবে৷
২. ফেইসপ্যাক ব্যবহারের আগে গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুখ মুছে নিন। এতে করে ত্বকের পোরস খুলে যাবে ও ফেইসপ্যাক গভীরে যেয়ে ভালোভাবে কাজ করবে।
৩. ফেইসপ্যাক লাগানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
৪. ফেইসপ্যাক লাগিয়ে কোনো কথা বলবেন না। ফেইসপ্যাক ত্বকের তারুণ্য বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে আপনি যদি ফেইসপ্যাক লাগিয়ে কথা বলেন তাহলে বলিরেখা দূর হওয়ার পরিবর্তে বলিরেখা উৎপন্ন হবে। তাই ফেইসপ্যাক লাগিয়ে কথা বলবেন না।
৫. সানস্ক্রিন ব্যবহারের পদ্ধতি
প্রাত্যহিক কাজে আমাদের সবারই কমবেশি বাইরে যেতে হয়। বাইরে গেলে সূর্যের সাথে সাক্ষাৎ হওয়াটাও কিন্তু মিস হয় না। সূর্য রশ্মিতে থাকে ক্ষতিকারক আল্ট্রা ভায়োলেট রে’ যা আমাদের ত্বককে সানবার্ন ও ট্যান করে ফেলে। তাই এগুলো থেকে বাঁচতে অবশ্যই অবশ্যই সান স্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
অনেকে ত্বকের পরিচর্যায় অর্থাৎ ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য নানান ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকে। অথচ সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেপরোয়া ভাব দেখায় যার কারণে সে প্রোডাক্টগুলো কাজ করেনা এবং তাদের অভিযোগ থাকে প্রোডাক্ট ভালো না! অথচ ভুলটা কিন্তু আপনাদের মাঝেই।
শীত, গ্রীষ্মে, বর্ষা সব সিজনেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়। ঘরের বাইরে যাওয়ার আধঘন্টা আগে শরীরের যে অংশগুলো খোলা থাকে সেসব জায়গায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
বাড়িতে রান্নার কাজে আগুনের পাশে যেতে হয় তাই তখনও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরী। সূর্য রশ্মি শরীরের যে অংশে পরে, সে অংশ কালো হতে শুরু করে। যাকে ট্যানিং বলা হয়।
সানস্ক্রিন আপনার ত্বককে ট্যানিং হওয়া থেকে বাঁচাবে। এছাড়াও অনেক সময় ত্বক পুরে যায়, যাকে আমরা সানবার্ন বলে থাকি। সানস্ক্রিন সানবার্নও প্রতিরোধ করে।
সূর্যের ইউভি রশ্মির কারনে ত্বকে মেলানোমা ক্যান্সার হতে পারে ( বিশেষ করে মহিলাদের) এর থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিনে থাকা কোলেজিন, ইলাস্টিন, ক্যারোটিন, ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এটি ত্বককে সুস্থ ও মোলায়েম রাখে।
ব্রণের দাগ দূর করতেও সানস্ক্রিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাইরে বেরোনের সময় মুখে কিছু না দিলে মুখ শুষ্ক হয়ে নির্জীব হয়ে যেতে পারে। তাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ত্বকের যত্নস্বরুপ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
এতে করে ত্বকের বাইরের আস্তরণ সুরক্ষিত থাকবে ও ত্বককে উজ্জ্বল করবে। ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে টাইটেনিয়াম অক্সাইড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই এমন সানস্ক্রিন কিনুন যাতে টাইটেনিয়াম অক্সাইড উপস্থিত।
— শেষ কথা —
উপরোক্ত সবগুলো প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে রং ফর্সাকারী ক্রিমের প্রয়োজন হবে না। এই প্রোডাক্ট গুলো ত্বকের কোনো রকমের ক্ষতি সাধন করে না বরং ত্বককে সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখে। তাই সুন্দর ত্বকের অধিকারী হতে চাইলে হেরফের না করে এগুলো দ্রুত ব্যবহার করা শুরু করে দিন।
রং ফর্সাকারী ক্রিম আপনাকে ইনস্ট্যান্ট রেজাল্ট দিলেও সেগুলো কয়েক মাসের মধ্যেই আপনার ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দিবে। আর ত্বক সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার উপায় হিসেব এই প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে ও ভালো থাকবে সবসময়।
প্রাসঙ্গিক লেখাসমূহ-