প্রেমের কবিতা : ১১টি চমৎকার ভালোবাসার কবিতা

প্রেমের কবিতা (Romantic Premer Kobita): কবিতা আমাদের অনেকেরই দুর্বলতর একটি জায়গা। কবিতা পড়তে এবং শুনতে আমরা সবাই কমবেশি পছন্দ করি। বিশেষ করে প্রেমের কবিতা বা ভালোবাসার কবিতা যেকোনো বয়স ও লিঙ্গের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।

তাই, কবিতাপ্রেমীদের জন্য আজ এই এক আর্টিকেলে যেকোনো সময়ের সেরা ১১টি ভালোবাসার কবিতা এর সংগ্রহ প্রকাশ করা হলো। এসব ভালোবাসার কবিতা পড়ার জন্য তো বটেই, পাশাপাশি, আপনার প্রিয় মানুষকে অভিভূত করতেও ব্যবহার করতে পারবেন। কেননা, এখানে উল্লেখিত প্রতিটি প্রেমের কবিতা এর ছন্দেই মিশে রয়েছে বিশুদ্ধ প্রেমের আবেগ, অনুভূতি – যা আপনার প্রিয় বা প্রেয়সীকে নিয়ে আসবে আপনার আরো কাছে।

সেরা ১১ টি রোমান্টিক প্রেমের কবিতা (Romantic Premer Kobita Bangla)

কবিতা মানুষের মনকে আন্দোলিত করে, বাঁচার প্রেরণা জোগায় এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ দেখায়। আর সেই কবিতাটি যদি হয় প্রেমের, তবে তো কথাই নেই!

আপনার পছন্দ অনুযায়ী এখানে সংগৃহীত যেকোনো প্রেমের কবিতা আপনার প্রিয় মানুষটিকে ম্যাসেজ বা অন্য কোনো মাধ্যমে পাঠাতে পারেন।

ম্যাসেযে পাঠানোর জন্য কাঙ্ক্ষিত প্রেমের কবিতা টির বাক্যবিন্যাসের উপর চাপ দিয়ে ধরে রেখে শুধু কপি (Copy) করবেন৷

ব্যস। তারপর চ্যাটে যেয়ে পেস্ট (Paste) করে দেবেন। প্রতিটি কবিতার সঙ্গে সেটার মূল লেখকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। চাইলে সেই নামটিও উল্লেখ করে দিতে পারেন।

প্রেমের কবিতা #১

তোমার সাথে প্রতিটি কথাই কবিতা,
প্রতিটি মুহুর্তেই উৎসব-
তুমি যখন চলে যাও সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর
সব আলো নিভে যায়,
বইমেলা জনশূন্য হয়ে পড়ে,
কবিতা লেখা ভুলে যাই।
তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো মনোরম!
একেটি তুচ্ছ বাক্যালাপ অন্তহীন নদীর কল্লোল, তোমার একটুখানি হাসির অর্থ এককোটি বছর জ্যোৎস্নারাত,
তুমি যখন চলে যাও পৃথিবীতে আবার হিমযুগ
নেমে আসে!
তোমার সাথে প্রতিটি কথাই কবিতা,
প্রতিটি গোপন কটাক্ষই অনিঃশেষ বসন্তকাল
তোমার প্রতিটি সম্বোধন
ঝর্নার একেকটি কলধ্বনি,
তোমার প্রতিটি আহ্বান একেকটি
অনন্ত ভোরবেলা।
তাই তুমি যখন চলে যাও মুহূর্তে সব নদীপথ
বন্ধ হয়ে যায়
পদ্মার রুপালি ইলিশ তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে,
পুষ্পোদ্যান খাঁখাঁ মরুভূমি হয়ে ওঠে।
যতোক্ষণ তুমি থাকো আমার নিকটে থাকে সপ্তর্ষিমণ্ডল
মাথার ওপরে থাকে তারাভরা রাতের আকাশ,
তুমি যতোক্ষণ থাকো আমার এই হাতে
দেখি ইন্দ্রজাল
আঙুলে বেড়ায় নেচে চঞ্চল হরিণ;
তুমি এলে খুব কাছে আসে সুদূর নীলিমা
তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত সঙ্গীতের
অপূর্ব মূর্ছনা
যেন কারো অবিরল গাঢ় অশ্রুপাত;
তোমার সাথে প্রতিটি বাক্য একেকটি কবিতা প্রতিটি শব্দ শুভ্র শিশির।

~ মহাদেব সাহা

প্রেমের কবিতা #২

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি; শত রূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার –
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী‍;
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলন কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগলপ্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে, মিলনমধুর লাজে –
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
আজি সেই চির-দিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে,
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।

নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল প্রেমের স্মৃতি-
সকল কালের সকল কবির গীতি।

~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রেমের কবিতা #৩

ভালোবাসা আমি তোমাকে নিয়েই
সবচেয়ে বেশি বিব্রত আজ
তেমাকে নিয়েই এমন আহত
এতো অপরাধী, এতো অসহায়!
তোমাকে নিয়েই পালিয়ে বেড়াই
তোমাকে নিয়েই ব্যাকুল ফেরারী।
ভালোবাসা তুমি ফুল হলে তার
ফুলদানি পেতে অভাব ছিলো না,
মেঘ হলে তুমি সুদূর নীলিমা
তোমাকে দিতাম উড়ে বেড়াবার;
জল হলে তুমি সমুদ্র ছিলো
তোমারই জন্য অসীম পাত্র-
প্রসাধনী হলে তোমাকে রাখার
ছিলো উজ্জ্বল অশেষ শো-কেস,
এমনকি তুমি শিশির হলেও
বক্ষে রাখার তৃণ ছিলো, আর
সবুজ পাতাও তোমার জন্য
হয়তোবা হতো স্মৃতির রুমাল।
ভালোবাসা তুমি পাখি হতে যদি
তোমাকে রাখার ভাবনা কি ছিলো
এই নীলকাশ তোমারই জন্য
অনায়াসে হতো অনুপম খাঁচা!
কিন্তু তুমি তো ফুল নও কোনো
মেঘ নও কোনো দূর আকাশের,
ভালোবাসা তুমি টিপ নও কোনো
তোমাকে কারো বা কপালে পরাবো;
ঘর সাজাবার মেহগনি হলে
ভালোবাসা তুমি কথা তো ছিলো না
তুমি তো জানোই ভালোবাসা তুমি
চেয়েছো মাত্র উষ্ণ হৃদয়!
খোঁপায় তোমাকে পরালেই যদি
ভালোবাসা তুমি ফুটতে বকুল,
কারো চোখে যদি রাখলেই তুমি
হতে ভালোবাসা স্নিগ্ধ গোধূলি-
তাহলে আমার তোমাকে নিয়ে কি
বলো ভালোবাসা এমন দৈন্য,
আমি তো জানিই তোমার জন্য
পাইনি যা সে তো একটি হৃদয়
সামান্যতম সিক্ত কোমল,
স্পর্শকাতর অনুভূতিশীল!

~ মহাদেব সাহা

প্রেমের কবিতা #৪

ভালোবাসা তুমি এমনি সুদূর
স্বপ্নের চে’ও দূরে,
সুনীল সাগরে তোমাকে পাবে না
আকাশে ক্লান্ত উড়ে!
ভালোবাসা তুমি এমনি উধাও
এমনি কি অগোচর
তোমার ঠিকানা মানচিত্রের
উড়ন্ত ডাকঘর
সেও কি জানে না? এমনি নিখোঁজ
এমনি নিরুদ্দেশ।
পাবে না তোমাকে মেধা ও মনন
কিংবা অভিনিবেশ?
তুমি কি তাহলে অদৃশ্য এতো
এতোই লোকোত্তর,
সব প্রশ্নের সম্মুখে তুমি
স্থবির এবং জড়?
ভালোবাসা তবে এমনি সুদূর
এমনি অলীক তুমি
এমনি স্বপ্ন? ছোঁওনি কি কভু
বাস্তবতার ভূমি?
তাই বা কীভাবে ভালোবাসা আমি
দেখেছি পরস্পর
ধুলো ও মাটিতে বেঁধেছো তোমার
নশ্বরতার ঘর!
ভালোবাসা, বলো, দেখিনি তোমাকে
সলজ্জ চঞ্চল,
মুগ্ধ মেঘের মতোই কখনো
কারো তৃষ্ণার জল।

~ মহাদেব সাহা

প্রেমের কবিতা #৫

পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু’জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায়
তারার চোখের জল গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক’রে দুচোখ ভ’রে থাকবো চেয়ে…
মনে থাকবে?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন
মনে থাকবে?
আমি হবো উড়নচন্ডী
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য
সবার আগে ঘুচিয়ে দেব।
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?
পরের জন্মে কবি হবো,
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে-
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো…
মনে থাকবে?
আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো,
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার-
অনন্তনীল সকাল হবো;
এসব কিছু হই বা না হই
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?
পরের জন্মে তুমিও হবে
নীল পাহাড়ের পাগলা-ঝোরা
গায়ের পোষাক ছুড়ে ফেলে
তৃপ্ত আমার অবগাহন।
সারা শরীর ভ’রে
তোমার হীরকচূর্ণ ভালোবাসা।
তোমার জলধারা
আমার অহংকারকে ছিনিয়ে নিল।
আমার অনেক কথা ছিল
এ জন্মে তা যায়না বলা
বুকে অনেক শব্দ ছিল-
সাজিয়ে গুছিয়ে তবুও ঠিক
কাব্য করে বলা গেল না!
এ জন্ম তো কেটেই গেল অসম্ভবের অসঙ্গতে
পরের জন্মে মানুষ হবো
তোমার ভালোবাসা পেলে
মানুষ হবোই- মিলিয়ে নিও!
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
মনে থাকবে?

~ আরণ্যক বসু

ভালোবাসার কবিতা #৬

তোমার দুঃখের সাতমহল বাড়ির
পুরনো বাসিন্দা বলেই
আমি হৈচৈ শামিয়ানার নিচে যাই না।
ভালোবাসার জন্য ব্যাকুলতা আছে বলেই তো
রঙিন কুয়াশা কুড়াতে যাই না কোথাও-
ঝরা বকুলের জন্য ব্যাকুল হয়েছি বহুবার কিন্তু বিদেশী
খেলনার দিকে ছুটিনি।
নক্ষত্রপুঞ্জকে ডলার ভেবেছি বলেই আমি বসে আছি এমন!
তোমার পথ চেয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো বিমান
ধরার তাড়া নেই আমার,
তবু তোমার চোখ যদি একবার অশ্রুসজল হয়!
কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই আমার,
কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই!
আমি আরো বহুদিন তোমার দুঃখের সাতমহল
পাহাড়া দিতে পারবো,
তুমি যতো অপেক্ষা করতে বলো
আমি তার চেয়েও বেশি প্রস্তুত
আমি শুধু দেখতে চাই তোমার চোখ থেকে
একফোঁটা অশ্রু গড়াতে গড়াতে
কীভাবে সোনার খনি গড়ে ওঠে-
আর কোনো তাড়া নেই আমার,
কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই!

~ মহাদেব সাহা

ভালোবাসার কবিতা #৭

চৈত্রের এই শেষ রজনীতে
তোমাকে পাঠাই বিব্রত খাম,
লিখেছি কি তাতে ঠিক মনে নেই
তবু এই চিঠি, এই উপহার!
তোমার খামে কি আদৌ লিখেছি
স্বপ্নের মতো স্মরণীয় নাম?
তাও মনে নেই; আমি শুধু জানি
তবু এই চিঠি তোমারই জন্যে।
যদি কোনোদিনও মলিন চিঠিটি
পৌঁছবে না গিয়ে সেই ঠিকানায়
বছর এমনি আসবে ও যাবে,
ভাসবে না তবু যুগল কলস!
আমি বসে আছি, তুমিও কি পারে
তাহলেই থামে কালের যাত্রা
এই চিঠিখানি অনন্তকাল
তাহলেই পারে সাহসে উড়তে।
তাহলেই শুধু ক্ষীণ ভরসায়
সময়কে বলি, একটু দাঁড়াও!

~ মহাদেব সাহা

ভালোবাসার কবিতা #৮

আমার ভেতর কেমন
পাতা থর থর হাওয়া কাঁপছে,
কাউকে বলবো না আমি
কিছুকে বলবো না,
আমার এখন ইচ্ছে জাগছে!
নিজের দিকে চাইলে
আমি ধরতে পারি এই রহস্য,
কোথাও ওলটপালট হচ্ছে
কোথাও কোমল মাটি কাঁপছে,
বুকে কঠিন হাওয়া লাগছে, হাওয়া লাগছে
কী রহস্যে জড়িয়ে এমন মেঘ করেছে
বৃষ্টি হবে, আমার ধানী জমি জুড়ে
রহস্য মেঘ বৃষ্টি হবে
আমার এখন ইচ্ছে জাগছে!

~ মহাদেব সাহা

ভালোবাসার কবিতা #৯

তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না
তোমার উতল আলুথালু প্রেম
একদিন ছিলো আমারই আকাশে
উদাসীন মেঘ, মাতাল নৌকা-
সারারাত বেয়ে জ্যোৎস্নার খেয়া
ভোরবেলা হাতে ব্যর্থ কুয়াশা।
তুমি তো জানো না
এসব কাহিনী ঝরে গেছে
কতো যামিনীর চাঁদ,
তবু যে প্রেমিক আজো খুঁজে পাও
কোথাও স্বপ্ন, কোথাও গন্ধ
কোথাও স্মৃতির স্নিগ্ধ বকুল কুড়াও
এখনো তেমনি বিভোর।
তুমি তো জানো না,
তুমি তো জানো না
বকুলগুলি যে কার ব্যর্থতা!
তরুণ প্রেমিক আমি ঠিকই জানি
তুমি তাকালেই খুলবে পাপড়ি
মেঘ জমা হবে আবেগে তোমার;
কিংবা নদীর দূর মোহনায়
ভাসবে আবার তোমাদেরই নামে অনাদি কলস!
তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না
তোমার উতল আলুথালু প্রেম
একদিন ছিলো আমার এ-বুকে বিয়াত্রিচের
ব্যথিত তৃষ্ণা, তাই ঘুরে মরি
অন্ধ নরকে ভীষণ একাকী
আহত দান্তে তুমি তো জানো না।
তুমি তো জানো না,
অর্ফিয়ুসের কর্তিত মাথা
তবু করি এই পুরাতন গান
যে-গান এখনো তোমার শোণিতে
লেখে চিরায়ত করুণ কাব্য।
তোমার মতোই তরুণ প্রেমিক
আমি কি ধরিনি বেদনার হাত
ছুঁইনি কি তার অধীর ওষ্ঠ
তোমার মতোই আমি একদিন?
সুন্দর বলে ভুল করে আমি
সেই বেদনাকে নিয়েছি বক্ষে
তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না
তোমাদের আগে এখানে ঝরেছি!
তরুন প্রেমিক তুমি তো জানো না
তোমার উতল আলুথালু প্রেম
একদিন ছিলো আমারই চোখের
অতৃপ্ত নেশা, চিরজাগরণ
তোমার মতোই মেঘে মেঘে
আমি খুঁজেছি হরিণ, অশোকগুচ্ছ
কিংবা খুঁজেছি দূর নভে
কোনো গাঢ় ম্যানসন,
পাইনি তবুও।
বাড়িয়েছি হাত তোমার মতোই কেবল শূন্যে
ভেবেছি হয়তো সেখানেই আছে
হাড়ের গায়ে কোমল ঝর্ণা
কুলুকুলু নদী আর তার পাশে
ফুটে আছে বুঝি আমার কাম্য,
তোমার মতোই তরুন প্রেমিক
আমিও একদা খুঁজেছি অলীক!
তরুণ প্রেমিক তুমি যে ভাসাও
স্বপ্ন বোঝাই এই সাম্পান,
তুমি তো জানো না ভিড়বে কিনা সে
তোমার সবুজ নির্জন দ্বীপে।
তবু যে প্রেমিক আজো করো তুমি
আকাশকুসুম তেমনি চয়ন,
তেমনি আজো যে নগ্ন দুহাতে
তুলে নাও তুমি রঙিন গোধূলি,
তোমার মতোই আমিও একদা
রাতের শিশিরে ভরেছি পকেট!
তরুন প্রেমকি তুমি তো জানো না
তোমার উতল আলুথালু প্রেম
আমার বুকের কোথায় লালিত,
কতোদিন তাকে দিয়েছি আহার
তরুণ প্রেমিক তোমাদের হাসি,
তোমার কুজন
তুমি তো জানো না
আমারই বুকের ঝরাপাতাদের গান!

~ মহাদেব সাহা

প্রেমের কবিতা #১০

তোমার নামে সন্ধ্যে নামা শহর জানে,
রোজ কতটা আঁধার জমাই অভিমানে!
রোজ কতটা কান্না জমাই বুকের কোণে,
তোমার নামে রাত্রি গভীর শহর জানে।

~ সাদাত হোসেন

প্রেমের কবিতা #১১

পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?

বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু’জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায়
তারার চোখের জল গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক’রে দুচোখ ভ’রে থাকবো চেয়ে…
মনে থাকবে?

এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন
মনে থাকবে?

আমি হবো উড়নচন্ডী
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য
সবার আগে ঘুচিয়ে দেব।
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?

পরের জন্মে কবি হবো,
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে-
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো…
মনে থাকবে?

আর যা কিছু হই বা না হই
পরের জন্মে তিতাস হবো
দোল মঞ্চের আবীর হবো,
শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরৎকালের আকাশ দেখার-
অনন্তনীল সকাল হবো;
এসব কিছু হই বা না হই
তোমার প্রথম পুরুষ হবো
মনে থাকবে?

পরের জন্মে তুমিও হবে
নীল পাহাড়ের পাগলা-ঝোরা
গায়ের পোষাক ছুড়ে ফেলে
তৃপ্ত আমার অবগাহন।
সারা শরীর ভ’রে
তোমার হীরকচূর্ণ ভালোবাসা।
তোমার জলধারা
আমার অহংকারকে ছিনিয়ে নিল।

আমার অনেক কথা ছিল
এ জন্মে তা যায়না বলা
বুকে অনেক শব্দ ছিল-
সাজিয়ে গুছিয়ে তবুও ঠিক
কাব্য করে বলা গেল না!

এ জন্ম তো কেটেই গেল অসম্ভবের অসঙ্গতে
পরের জন্মে মানুষ হবো
তোমার ভালোবাসা পেলে
মানুষ হবোই- মিলিয়ে নিও!

পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে…
মনে থাকবে?

~ আরণ্যক বসু

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন-