বন্ধ্যাত্ব (Infertility) কি? বন্ধ্যাত্বের কারণ ও এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারে বন্ধ্যাত্ব (Infertility) সমস্যার জন্য দায়ী বিষয়গুলো অত্যন্ত সাফল্যের সাথে যথার্থ চিকিৎসা করা সম্ভব হয় বলে অন্যান্য সকল চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় অনেকটা দ্রুত ও নিরাপদভাবে এর প্রতিকার করা সম্ভব হয়।

এখানে উল্লেখ থাকে যে, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কল্পে বন্ধাত্ব সমস্যাগ্রস্থ একজন ব্যক্তির জননযন্ত্রের লক্ষণাদির পাশাপাশি অন্যান্য কিছু তথ্যাদি বিবেচনায় নিয়ে তাকে চিকিৎসা করলে সেক্ষেত্র অধিকতর সফলতার সাথে চিকিৎসা সম্ভব।

অর্থাৎ এক্ষেত্রে রোগীর শারিরীক ও মানসিক অর্থাৎ সর্বাঙ্গীন লক্ষণসমূহ বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা করায় সাফল্য লাভের সম্ভাবনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।

স্ত্রীলোকদের সন্তান উৎপাদন শক্তির অভাবকে বন্ধ্যাত্ব বলে।

বন্ধ্যাত্বের কারণ-

বন্ধাত্ব্যের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
বন্ধাত্ব্যের কিছু কারণ সমূহ

১। ডিম্বকোষের ডিম্ব উৎপাদনের বয়স না হলে।
২। শারিরীক দূর্বলতা, অসুস্থতা বা আঘাতজনিত কারণে অঙ্গহানি হবার কারণে ঋতুবন্ধ্যা হলে।
৩। বেশী বয়সে মোনোপোজ (৪৫-৬০ বছরের মধ্যে সাধারণত স্বাভাবিকভাবে ঋতু বন্ধ হয়)।
৪। পুরুষের শুক্রকীটে ক্রোমোজোম ঠিকমতো না থাকলে।
৫। কোনও কারণবশত ডিম্বকোষে সন্তান সৃষ্টির মত ডিম্ব না সৃষ্টি হলে।
৬। বিভিন্ন রোগের জন্য সন্তান সৃষ্টির ক্ষমতা লোপ পেলে।

এছাড়া নারী ও পুরুষের কতগুলো স্বতন্ত্র ব্যাধি থাকার কারণে বা জনন যন্ত্রের ত্রুটি থাকার জন্য বন্ধ্যাত্ব ভাবের সৃষ্টি হতে পারে।

পুরুষের ক্ষেত্রে-

১। ডায়বেটিস রোগ থাকলে।
২। এন্ডোক্রিন গ্রন্থির জন্য, যেমন- থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ কম হলে, পিটুইটারির কাজ কম হলে, পুরুষ অত্যধিক মোটা হলে।
৩। টেস্টিস ঠিকমতো গঠিত না হলে।
৪। দীর্ঘকাল যাবৎ কঠিন প্রকৃতির রোগে ভুগলে, যেমন- কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, বসন্ত, মাম্পস ইত্যাদি।
৫। দিনরাত অত্যধিক গরমে কাজ করলে।
৬। যৌনাঙ্গের কোনও রোগ থাকলে, যেমন- গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি।
৭। জন্মগতভাবে বীর্যে শুক্রকীট না থাকা।
৮। একশিরা, হাইড্রোসিল, ফাইলেরিয়া রোগ থাকলে।
৯। সঙ্গমের পদ্ধতিগত ভুলের জন্য বীর্য ঠিকমতো যোনিতে প্রবেশ না করা।

নারীর ক্ষেত্রে-

১। অতিরিক্ত রক্তহীনতা।
২। দৈনিক অপুষ্টি।
৩। হরমোন জনিত গোলযোগ।
৪। দুঃখ-কষ্ট বা শোক-ঘৃণা, পুরুষ-স্বামীর প্রতি বিরক্ত, সন্তান নেয়ার ক্ষেত্র ভীতি কাজ করা।
৫। জননযন্ত্রের জন্মগত অপরিণতি এবং যোনি ক্রিয়াশীল না থাকা।
৬। ডিম্বনালিতে obstruction বা ডিম্বনালীপথ সংকীর্ণ হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
৭। জরায়ু, ডিম্বকোষ, ডিম্বনালী, যোনিতে টিউমার, আব, পলিপ, ক্যানসার প্রভৃতি।
৮। গনোরিয়া ও সিফিলিস দোষ।

বন্ধ্যাত্বের (Infertility) হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য সেরা হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহের লক্ষণ নির্দেশিকা

নিচে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় অধিক ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহের বিবেচনাযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণসমূহ উল্লেখ করা হলো।

হেলোনিয়াস

জরায়ুর বিভিন্ন রোগে অতিরিক্ত রজোস্রাব হেতু রক্তহীনতা। মূত্রে প্রচুর পরিমানে অন্ডলালা।

জরায়ু যন্ত্রের অল্প বা অধিক স্রাব, উভয় প্রকার স্রাবের সঙ্গে রক্তহীনতা ও দুর্বলতার লক্ষণ।
রক্তহীনতা, সর্বাঙ্গীণ দুর্বলতা, অলসতা, বিষণ্ণতা।
ত্রিকাস্থি (স্যাকরাম) প্রদেশে আকর্ষণবৎ দুর্বলতা, জরায়ুর স্থানচ্যুতি, কটিদেশে উত্তাপ, জ্বালাসহ পিঠে বেদনা, জরায়ুর বেদনা, স্পর্শকাতরতা।

এই লক্ষণগুলো বয়োন্ধিকালে, গর্ভকালে, প্রসবান্তে অধিক দেখা যায়। রমণীদের সর্বাঙ্গীণ দুর্বলতা।

আয়োডিয়াম

গণ্ডমালার ঔষধ। এর পরিচায়ক লক্ষণগুলো নিম্নরূপ-

১। গণ্ডমালা ধাতু দোষ।
২। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে অতিশয় দুর্বলতা ও শ্বাসকষ্ট অনুভব।
৩। অতিক্ষুধা, খায় অধিক কিন্তু শরীরের মাংসক্ষয়।
৪। আহারান্তে বা আহার করার সময় উপশম বোধ।
৫। স্তনের শীর্ণতাপ্রাপ্তি ও স্পর্শদ্বেষ।
৬। জরায়ু হতে প্রচুর রক্তস্রাব ও জরায়ুর ক্যানসার।
৭। পুরাতন প্রদর স্রাব, স্রাবের প্রাচুর্য, হাজাকর, কাপড়ে লাগলে কাপড় ছিদ্র হয়ে যায়।
৮। গ্রন্থির স্ফীতি, বিশেষ করে মধ্যান্ত্র গ্রন্থি ও মলগ্রন্থির স্ফীতি।
৯। ঝিল্লীবিশিষ্ট ক্রুপকাশি, শ্বাসকষ্টে হাঁসফাঁস করে।
১০। উষ্ণ ঘরে রোগ লক্ষণ বৃদ্ধি।

প্লাটিনাম

মন, স্নায়ুমণ্ডল ও জনন ইন্দ্রয়ের উপর কাজ করে।

প্লানিনামের রোগীদের মধ্যে তিনটি অদ্ভুত লক্ষণ দেখা যায়।

১। উদ্ধত, গর্বিত, প্রগলভ প্রকৃতি, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করে।
২। মানসিক ভ্রান্তি। সজোরে একঘণ্টা বিচরণের পর ঘরে প্রবেশ করলে নিকটবর্তী প্রত্যেক বস্তুই স্বাভাবিকের চাইতে ক্ষুদ্র মনে করে। সকল ব্যক্তিই যেন শারীরিক ও মানসিকগুণে তার থেক নিকৃষ্ট এমনটা সে মনে করে।
৩। পরিবর্তনশীল প্রকৃতি। পর্যায়ক্রমে প্রফুল্লতা ও বিষণ্নতা। শারীরিক লক্ষণের উপস্থিতিতে মানসিক লক্ষণের নিবৃত্তি ঘটে।

ঔষধটি স্নায়বিক লক্ষণে পূর্ণ।

জরায়ু হতে রক্তস্রাব হয়। প্রচুর ঋতুস্রাব হয়। অতিরিক্ত অনুভূতি প্রবণতা দেখা যায়। ডিম্বাশয়ের প্রদাহ হয়। এছাড়া হিস্টিরিয়ার লক্ষণও দেখা যায়।

বোরাক্স

স্নায়ুমণ্ডলে এর সুষ্পষ্ট ক্রিয়া প্রকাশ পায়। শব্দে অত্যন্ত অনুভূতি জন্মে। সামান্য শব্দেও চমকে উঠা লক্ষণটি বোরাক্সের প্রধান লক্ষণ।

নিম্নাভিমুখ গতিতে পতনের আশংকা। খাটে, দোলায়, গাড়ি-ঘোড়ায়, পাহাড়ে, সিঁড়িতে উঠতে ভয়। মুখের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে এটা ভাল কাজ করে। চোখের পাতায় আঠা আঠা স্রাব লেগে রোমগুলো সংযোজিত হয় অথবা পাতার রোম ভিতরের দিকে ফিরে থাকে। কান হতে পূঁজ স্রাব নির্গত হয়।

সাদা, অণ্ডলালা, উষ্ণ জলের মত প্রবাহ অনুভূত হয়। প্রচুর শ্বেতপ্রদর লক্ষণেও এটা উপকারী। শিশুদের মুখ বিবরের উপক্ষতে সাফল্যের সাথে ব্যবহার করা যায়।

নাসারন্ধ্রে শুষ্ক মামড়ির উৎপত্তি এবং সেগুলো তুলে ফেললে পুনরায় জন্মে। মুখের উপক্ষতে, মুত্রমার্গের প্রদাহিত অবস্থায়, এছাড়া শ্বাস প্রশ্বাসের যন্ত্রগুলোর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর আক্রমনেও এই ঔষধ ভাল কাজ করে।

কোনিয়াম

পৃষ্ঠাংশে এর অধিক ক্রয়া দেখা যায়। এর পক্ষাঘাতের লক্ষণ নিম্নদিক থেকে ঊর্ধ্বদিকে প্রসারিত হয়। লোকোমোটর এটাকসিয়ার লক্ষণে এই ঔষধ স্বার্থকভাবে ব্যবহৃত হয়।

শিরঃঘূর্ণন এর অন্যতম লক্ষণ। পার্শ্বের দিকে মাথা ঘোরালে বৃদ্ধি। শয্যায় পাশ ফিরালেও বৃদ্ধি।

রমণীদের শিরঃঘূর্ণনসহ জরায়ু, ডিম্বাশয়ের রোগেও এটি উপকারি।

বার বার প্রস্রাবের বেগ হয় ও অনিচ্ছায় প্রস্রাব নির্গমন হয়।

অর্বুদ রোগে (টিউমার) অর্বুদ কঠিন, পাথরের মতো শক্ত। স্তনের কঠিনতা। ডান স্তনে কোনিয়াম, বাম স্তনের টিউমারে সাইলেসিয়া অধিক কাজ করে।

ঋতুকালে স্তনদ্বয় বড়, ব্যথিত ও স্পর্শদ্বেষযুক্ত হয়। পুরুষ জনন ইন্দ্রিয়েও এটা ভাল কাজ করে।

নিদ্রিত হওয়া মাত্র অথবা চোখ বুজলেই দিনে বা রাত্রে ঘর্ম নিঃসরণ। স্তন, জরায়ুর কঠিন টিউমারেও এটা ভাল কাজ করে।

বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঔষধসমূহ

সিপিয়া ৩০, ক্যালকেরিয়া কার্ব ৩০, স্যাবাইনা ৬, ভাইবার্নাম অপুলাস, ফেরাম আয়োড ৩X, প্রভৃতি।

বায়োকেমিক মতে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ঔষধ

সাইলেসিয়া ৬X, নেট্রাম ফস ৬X, ক্যালকেরিয়া ফস ৬X।

আরও পড়ুন-

জরায়ু টিউমারের হোমিও চিকিৎসা

Leave a Comment