কথায় বলে- পেট ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা। কথাটি সম্পূর্ণ সত্য। পেটের পীড়ায় ভুক্তভোগী মানুষ মাত্রই বিষয়টি বিনা বাক্য ব্যয়ে স্বীকার করেন। পেটের পীড়া বলতে আমি পেটের সাধারণ সমস্যা সমূহ যেমন কোষ্ঠবদ্ধতা, উদরাময় বা পাতলা পায়খানা, নতুন বা পুরাতন আমাশয়, আইবিএস বা ইরিটেবল বাউয়েল সিন্ড্রোম প্রভৃতির কথা বলছি। আজ আমরা এইসব রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
পেটের পীড়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান তিনটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
ব্রায়োনিয়া, নাক্স ভমিকা ও পালসেটিলা
এই তিনটি ঔষধেই পাকস্থলীতে পাথর চাপানোর মত ভার বোধ আছে। তবে পালসেটিলা অপেক্ষা ব্রায়োনিয়া ও নাক্স ভমিকায় তা বেশী অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে বেশী পিপাসা থাকলে ব্রায়োনিয়া, তার চেয়ে অল্প পিপাসা থাকলে নাক্স ভমিকা এবং অতি অল্প পিপাসা বা পিপাসা না থাকলে পালসেটিলা ব্যবস্থা করা যায়।
মুখের মন্দ স্বাদ এই তিনটি ঔষধেই আছে, তবে ব্রায়োনিয়া ও পালসেটিলায় স্বাদ তেঁতো, নাক্স ভমিকার স্বাদ অম্ল বা টক।
বিবমিষা, বমন বা বমি তিনটি ঔষধেরই লক্ষণ। তবে নড়লে চড়লে বা উঠলে বমির বৃদ্ধি হলে ব্রায়োনিয়া, সকালে ও আহারের পর বৃদ্ধিতে নাক্স ভমিকা এবং সন্ধ্যাকালে ও খাওয়ার পর বৃদ্ধিতে পালসেটিলা প্রযোজ্য।
ব্রায়োনিয়ায় পাকস্থলীর হজমের সমস্যা সাধারণতঃ প্রায়ই হয় খাওয়ার দোষে এবং শীতের পর গরম ঋতুর শুরুতে।
নাক্স ভমিকার গণ্ডগোলের কারণ অপরিমিত আহার বা দীর্ঘকাল গুরুভোজন, পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করায়, ঔষধ, কফি, তামাক ও মদ্যপানের কারণে।
পালসেটিলার পাকস্থলীর হজমের বিশৃঙ্খলা হয় অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণ, লুচি, কচুরী প্রভৃতি চর্বিজাতীয় খাদ্য এবং অত্যধিক আইসক্রিম বা বরফের কুঁচি প্রভৃতি খাওয়ার ফলে। তবে পালসেটিলার পেটে অল্প একটু আইসক্রিম সহ্য হয়, কিন্তু বেশী খেলেই তা অপকার করে।
ডায়রিয়া বা উদরাময় এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
উদরাময় এই তিনটি ঔষধের লক্ষণসমূহের মধ্যেই দেখা যায়। তবে ব্রায়োনিয়া ও নাক্স ভমিকার প্রধান লক্ষণ কোষ্ঠবদ্ধতা।
কোষ্ঠবদ্ধতা পালসেটিলাতে কখনও কখনও দেখা যায়। ভোরবেলা ও নড়লে-চড়লে ব্রায়োনিয়ার উদরাময় বৃদ্ধি পায় এবং গ্রীষ্মের উত্তাপে, অতিরিক্ত গরম হাওয়ার ফলে সাধারণত ব্রায়োনিয়ার রোগীর উদরাময় হবার প্রবণতা দেখা যায়।
নাক্স ভমিকার উদরাময়ও প্রাতকালে বৃদ্ধি পায় এবং অধিকাংশ স্থলেই অতিরিক্ত আহারবশতঃ উৎপন্ন হয়ে থাকে। প্রায়ই তা রক্ত আমাশয়ের প্রকৃতি ধারণ করে। পালসেটিলার উদরাময় রাতে দেখা দেয়। প্রায়ই নাক্সের মত হয় তবে পালসেটিলাতে পেটডাকা থাকে অর্থাৎ পেটটা ডাক দিয়ে পায়খানার বেগ হয়।
এই তিনটি ঔষধই আবার জিভের উপর সাদা ময়লা থাকে। কখনও কখনও অতিশয় গাঢ় ময়লাও জমে থাকে। তবে এই সব ক্ষেত্রে কারণ খুঁজলে দেখা যাবে প্রত্যেক ক্ষত্রেই পাকস্থলীতে ও অন্ত্রের গোলযোগই প্রধান কারণরূপে থাকে। তবুও রোগীর ধাতু প্রকৃতি ও হ্রাস-বৃদ্ধির লক্ষণ দেখে সঠিক ঔষধটি নির্বাচন করতে হবে। তবে এইসব ক্ষেত্রে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করাও বেশী কঠিন কাজ নয়।
ধাতু প্রকৃতির দিক থেকে –
ব্রায়োনিয়া ও নাক্স ভমিকা সদৃশ লক্ষণযুক্ত ঔষধ। কিন্তু নাক্স ভমিকা অপেক্ষা ব্রায়োনিয়ায় অধিকতর বাতের লক্ষণ দেখা যায়। উভয় রোগীই সহজেই উত্তেজিত ও ক্রুব্ধ হয় এবং উভয় ঔষধই ক্ষীণকায় ও মলিন বদনের রোগীর ক্ষত্রে অধিক উপযোগী।
সাধারণতঃ নড়লেচড়লে উভয় ঔষধেরই রোগের বৃদ্ধি হয়। কিন্তু ব্রায়োনিয়াতে এটি খুব বেশী থাকে। পালসেটিলায় কখনও কখনও রাসটক্সের মত নড়লেচড়লে উপশম হয়।
তবে পালসেটিলায় স্থান পরিবর্তনশীল বাত-ব্যথার প্রবণতা দেখা যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা -৩টি প্রধান ওষুধের লক্ষণ সমষ্টি
নাক্স ভমিকা ও ব্রায়োনিয়া উভয়েই কোষ্ঠকাঠিন্য বা কোষ্ঠবদ্ধতার প্রধান ঔষধরূপে স্বীকৃত ও সমাদৃত।
নাক্স ভমিকার কোষ্ঠবদ্ধতা অন্ত্রের অনিয়মিত ক্রমসংকোচন বা অনিয়মিত পেরিসট্যালসিস মুভমেন্টের জন্য হয়ে থাকে। তাই নাক্স ভমিকায় বার বার নিস্ফল মলত্যাগের প্রবৃত্তি প্রকাশ পায়।
ব্রায়োনিয়ার কোষ্ঠবদ্ধতা কিন্তু অন্ত্রের রস ক্ষরণের অভাবে ঘটে। এতে অন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষের শুষ্কতাবশতঃ কোষ্ঠবদ্ধতা হয়ে থাকে। তাই ব্রায়োনিয়ায় একেবারেই মলত্যাগের প্রবৃত্তি থাকে না। মল পোড়ামাটির মত, শুকনো ও শক্ত হয়।
এলুমিনা কোষ্ঠবদ্ধতা চিকিৎসায় ব্রায়োনিয়ার সমগোত্রিয় ঔষধ। ব্রায়োনিয়ার মত এলুমিনায়ও মলত্যাগের প্রবৃত্তি থাকে না। তবে এলুমিনাতে সরলান্ত্রের নিস্ক্রিয়তা দেখা যায়। ফলশ্রুতিতে এমনকি নরম মলও বের করতে অতিশয় চেষ্টার প্রয়োজন হয়।
দুগ্ধপোষ্য শিশুদের মায়ের বুকের দুধের পরিবর্তে কৃত্তিম দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে লালন-পালন করা হলে ঐ শিশুদের এলুমিনার লক্ষণযুক্ত কোষ্ঠবদ্ধতা প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়। এ ধরণের শিশুদের এলুমিনার মাধ্যমে সাফল্যজনকভাবে চিকিৎসা করা যায়।
আইবিএস এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
আইবিএস বা ইরিটেবল বাউয়েল সিন্ড্রোম একটি হজম শক্তির দুর্বলতা জনিত রোগ। একারণেই আইবিএস স্থায়ীভাবে নিরাময় করতে হলে রোগীর ধাতু প্রকৃতি, জীবনধারণ পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস, প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর সামগ্রিক লক্ষণ সমষ্টি বিচার বিশ্লেষণ করে ওষুধ নির্বাচন করে সঠিক নিয়মে খেতে হবে।
আমরা এখানে আইবিএস সমস্যায় প্রায়ই ব্যবহার হয় এমন কিছু ঔষধের নাম দিচ্ছি।
রোগীদের প্রতি নির্দেশনা থাকবে- যেকোন ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এর পরামর্শ নেবেন।
আইবিএস এর সেরা হোমিও ওষুধ
অ্যালো স্যাক, পডোফাইলাম, নাক্স ভম, লাইকোপডিয়াম, কার্বোভেজ, ক্রোটন টিগ, নেট্রাম সালফ, সালফার, কুর্চি, চ্যাপাড়ো, প্রভৃতি।
এছাড়া আইবিএস এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন। এতে আইবিএস এর লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার তথা আইবিএস এর হোমিও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ ও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক দিয়ে আমাদের সঙ্গেই থাকবেন। কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্স ব্যবহার করে আমাদের সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন। আশা করি দ্রুত উত্তর পাবেন।
আরও পড়ুন-