হারানো মোবাইল ফোন খুঁজে বের করার সহজ পদ্ধতি

হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়ার উপায়

আধুনিক যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। তারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে স্মার্টফোন। ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা এর সুবিধা ভোগ করে থাকি। এতে থাকে আমাদের নানা প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আমাদের আজকের আলোচনায় হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

কিন্তু অনেক সময় খামখেয়ালির বসে অফিসের ডেস্কে, ফাইলের ভাজে, বাসায়, রেস্টুরেন্টে অথবা চায়ের দোকানে কতো শতবার যে আমাদের প্রিয় স্মার্টফোনটা রেখে আসি তার কোনো হিসেব নেই।

হয়তো অনেকেই নোটিফিকেশনের টুংটাং শব্দ বন্ধ করার জন্য ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রেখে দেই। সমস্যাটা হয় তখনই। তখন অন্য মোবাইল দিয়ে কল দেওয়ার অপশনও থাকে না। দিয়েও বা কি লাভ? ফোন তো সাইলেন্ট করা!

তাছাড়াও ছিনতাইকারীর ভয় ও পকেটমারের চাটুকারিতা তো আছেই। এরা মোবাইল নেওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোও নিয়ে যায়। হয় ব্ল্যাকমেইল করে, নতুবা নষ্ট করে দেয় প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো।

যেহেতু স্মার্টফোনে আমাদের সব ইনফরমেশন থাকে তাই স্মার্টফোন ব্যবহারে সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বনই শ্রেয়। তবুও আপনার স্মার্টফোনটি যদি হারিয়ে যায় তাহলে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে খুব সহজেই সেটি খুঁজে পাবেন।

আসুন পদ্ধতিগুলো জেনে নেওয়া যাক-

গুগলের সাহায্যে হারানো মোবাইল ফোন খুঁজে বের করার উপায়

গুগল সব স্মার্টফোন ব্যবহারীকেই তার ডিভাইসটি খুঁজে বের করার পরিসেবা দিয়ে থাকে যদি সেটিতে জিমেইল চালু থাকে। জিমেইল কি? যদিও প্রত্যেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারীই জিমেইল সম্পর্কে অবগত।

আরও পড়ুন-

তবুও যারা জানেন না তাদের জ্ঞাতার্থে সহজ ভাষায় বলতে গেলে প্লে স্টোর ও ইউটিউব ইউজ করার সময় যেটা ছাড়া সাইন আপ করা যায় না বা যেটা দিয়ে সাইন আপ করতে হয় সেটাই জিমেইল।

হারানো মোবাইল ফোন খুঁজে বের করতে এই জিমেইল একাউন্টটি লাগবে। ফোন খুঁজে বের করতে আপনার স্মার্টফোনটিতে ডাটা কানেকশনও লাগবে।

অধিকাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীই ওয়াইফাই কানেকশন থাকা সত্ত্বেও ফোনে ২/১ জিবি ডাটা রাখেন যাতে লোড শেডিং হলে বা আউট অফ জোনে থাকলেও যাতে তথ্য প্রযুক্তির সেবা নিতে পারেন।

তো, এক্ষেত্রে ফোন যদি চুরি হয়ে যায় এবং চোর যদি ফোনটা বন্ধ করেও রেখে দেন তখনও জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করে নানাধরণের পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

তবে নির্ভুল ও সঠিক লোকেশন তখনই জানতে পারবেন, যদি আপনার ফোনটির লোকেশন অন থাকে। অবশ্যই মোটামুটি আমাদের সবারই স্মার্টফোনের লোকেশন অন থাকে ওয়েদার (আবহাওয়া) রিলেটেড তথ্য জানার জন্য।

স্মার্টফোন খুঁজে পেতে কি কি লাগবে একনজরে –

০১। জিমেইল একাউন্ট।
০২। ডাটা কানেকশন।
০৩। ফোনটির লোকেশন অন থাকা [এক্ষেত্রে সঠিক লোকেশন (অবস্থান) জানা যাবে ]

হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়ার উপায় : ধাপ – ১

যেকোনো স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটার / ট্যাব/পিসি/ল্যাপটপ ইত্যাদির google chrome অথবা google এর সার্চ বারে টাইপ করুন (www.google.com/android/find)। তারপর সর্বপ্রথম যে ওয়েবসাইটটি আসে সেটিতে ক্লিক করুন। দেখবেন স্ক্রিনে Google find my device ফিচারটি এসেছে।

এবার আপনার হারানো স্মার্টফোনটিতে থাকা জিমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সেখানে সাইন ইন করুন। এবার ফাইন্ড মাই ডিভাইস অপশনটিতে ক্লিক করুন। এরপর এটি আপনার ফোন খুঁজতে শুরু করবে।

আপনার হারানো ফোনের লোকেশন অন থাকলে এটি স্পষ্টভাবে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে সেই লোকেশনটি আপনাকে দেখাবে।

এভাবেই লোকেশন দেখে আপনার ফোনটির অবস্থান সম্পর্কে জেনে সেখানে গিয়ে খুব সহজেই আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোনটি খুঁজে বের করতে পারবেন।

গুগলের সাহায্যে হারানো মোবাইল খুঁজে বের করার পদ্ধতি – ধাপ ২

যদি আপনার স্মার্টফোনটি ফাইলের নিচে পরে থাকে বা আপনার আশেপাশে লোকেশন দেখায় কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না, অথচ ফোনটি সাইলেন্ট মুডে সেক্ষেত্রে কি করবেন?

গুগল ফাইন্ড মাই ডিভাইস স্ক্রিনের ফোনের ক্ষেত্রে নিচে, কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ক্ষেত্রে স্ক্রিনের বাম পাশে দেখতে পাবেন Play sound নামক একটি অপশন আছে । সেখানে ক্লিক করলে আপনার হারানো ফোনটি সাইলেন্ট অবস্থায় থাকলেও উচ্চশব্দে বাজতে শুরু করবে।

এভাবে খুব সহজেই আপনার হারানো ফোনটি খুঁজে বের করতে পারবেন।

গুগলের সাহায্যে হারানো স্মার্টফোন খুঁজে বের করার পদ্ধতি – ধাপ ৩

আপনার ফোনটি যদি কেউ পেয়ে থাকে সেক্ষেত্রে লোকেশনও দূরে দেখাবে। হয়তো আপনি সেখানে পৌছানোর আগেই তারা সব ইনফরমেশন নিয়ে নিবে। বা, ফোনটি লক থাকায় তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।

সেক্ষেত্রে ফাইন্ড মাই স্ক্রিনের Secure Device অপশনে গিয়ে, recovery message এ আপনার প্রয়োজনীয় বার্তা লিখতে পারেন সেই ব্যাক্তিটির উদ্দেশ্যে। Phone number অপশনে একটি ফোন নাম্বার দিতে পারেন; যাতে সে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

এতে আপনার ফোনের লক স্ক্রিনে সেই ম্যাসেজ ও ফোন নাম্বারটি দেখাবে। কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি আপনার ফোনটি পেয়ে থাকেন তাহলে এভাবে অবশ্যই সেটি ফিরে পাবেন।

হারানো স্মার্টফোন খুঁজে বের করার উপায় – ধাপ ৪

আপনার স্মার্টফোন যদি ছিনতাই বা চুরি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি খোঁজার আগেই তারা আপনার স্মার্টফোনের সকল গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিয়ে নিতে পারে। যা দিয়ে পরবর্তীতে আপনাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। যেমনঃ- ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা দাবি করতে পারে।

এমন অবস্থায় আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো যেনো অন্য কেউ জানতে না পারে সে জন্য Erase Data অপশন ব্যবহার করার পদক্ষেপ নিতে পারেন। এটি ব্যবহার করে আপনার সকল তথ্য মুছে ফেলতে পারবেন।

আপনার ফোনটি যদি অফ করা অবস্থায় থাকে তবুও আপনি erase data অপশন ব্যবহার করতে পারবেন। যখন মোবাইলটি অন হবে তখন সবকিছু মুছে যাবে। এভাবে খুব সহজেই আপনার স্মার্টফোনের সকল তথ্য মুছে ফেলতে পারবেন।

যেহেতু এটি ব্যবহারে সব তথ্য মুছে যাবে তাই এটি ব্যবহার করলে ফাইন্ড মাই ফিচার ব্যবহার করে আর স্মার্টফোন খুঁজে বের করার কোনো উপায় থাকবে না।

পুলিশের সাহায্যে হারানো হারানো মোবাইল খুঁজে পাওয়ার উপায়

চুরি বা ছিনতাই হওয়া ফোন দিয়ে ওইসব চোর বা ছিনতাইকারীরা নানারকম অপরাধমূলক কাজ ঘটায়, যার দায়ভার সম্পূর্ণ আপনার ওপর এসে পরতে পারে। অনেকসময় ফোনের মালিককে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ চালায় এবং থানার চক্কর কাটতে হয়।

এমন হয়রানি ও হেনস্থা থেকে বাঁচতে এবং হারানো ফোনটি খুঁজে পেতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করেও যদি আপনার স্মার্টফোনটি খুঁজে বের করতে না পারেন, তাহলে থানায় জিডি করুন।

আপনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে বিনামূল্যে মোবাইল ফোন খোঁজার সেবাটি পাবেন। তাই ফোন হারানোর পর দেরী না করে দ্রুত নিকটস্থ থানায় জিডি করুন।

মোবাইল ফোন ক্রয়ের সময় যে কাগজপত্র থাকে সেগুলোর মধ্যে দেখবেন আইএমইআই (International Mobile Equipment Identity) নাম্বার আছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রতিটি মোবাইল ফোনেরই ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যাসূচক ইউনিক আইডেন্টিটি।

ফোন ক্রয়ের সময় যে কাগজপত্র দিয়ে থাকে যেমন- ফোনের আইএমইআই, ক্রয়ের রশিদ, সক্রিয় সিমের নাম্বার, সিমের রেজিস্ট্রেশন কাগজ অথবা ফটোকপি ইত্যাদি জিডি করার সময় থানায় জমা দিতে হবে।

আইএমইআই নাম্বার দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনার ফোনটি ট্র‍্যাক করে উদ্ধারের চেষ্টা চালাবে। আপনি জিডি করার সাথে সাথেই ডিউটিরত অফিসার আপনাকে একটি জিডি নাম্বার দিবে এবং দ্রুত মোবাইল উদ্ধারের কাজ শুরু করে দিবে।

জিডি করার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। সারাবছর যেকোনো সময় আপনি জিডি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে দায়িত্ব প্রাপ্ত ওসি / এসআই / এএসআই ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে আপনার ফোনটি খুঁজে দিবে। খুঁজে না পেলে সেটিও থানা থেকে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

তাদের কাছ থেকে সেবা না পেলে আপনি সার্কেল এএসপি তে যেতে পারেন। প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য ভিজিট করুন http:/www.police.gov.bd ঠিকানায়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য কল করুন ১০০ (পুলিশ কন্ট্রল রুম) অথবা ৯৯৯ (ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক)।

— শেষ কথা —

মোবাইল বা স্মার্টফোন হারিয়ে যেতেই পারে। তাই বলে খুঁজে পাবার আশা পুরোপুরি ত্যাগ করে মন খারপ করে ঘরে বসে হা-পিত্যেশ করার প্রয়োজন নেই। উপরে বর্ণনা করা পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে একটু চেষ্টা করলে খুব সহজেই আপনার হারানো মোবাইল ফোনটি ফিরে পেতে পারেন। এবং, একই সাথে অনাকাঙ্খিত ভোগান্তি থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।