হোমিওপ্যাথি কিভাবে কাজ করে?

কেবলমাত্র ‘যেন তেন প্রকারে’ কিছু অর্থ উপার্জন করা চিকিৎসকের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নয়। সেবার মহত্তর ধর্মও চিকিৎসকের কাজের মধ্য দিয়ে পালন করা উচিত। পীড়িত মানুষের যন্ত্রণা লাঘবের মধ্যে বিমল আনন্দ আছে। এই আনন্দ শুধুমাত্র তারাই অনুভব করতে পারবেন যারা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করে এই চিকিৎসা বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে তা ধৈর্য, সাধনা ও অধ্যাবসায় করে জানার চেষ্টা করেন।

আসুন, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা রোগী ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করে বা কিভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা উচিত তা একটু বোঝার চেষ্টা করি।

হোমিওপ্যাথি ঔষধসমূহ কিভাবে কাজ করে?

এখানে উল্লেখ্য যে, যদি মনে করেন হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূহ রোগীকে সুস্থ করে তোলে, তবে আমি বলব- আপনি ভুল ভাবছেন।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি মানুষের ভেতরগত জীবনীশক্তি কে উজ্জীবিত করে তোলে।

ফলশ্রুতিতে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে করে বিভিন্ন অসুস্থতা, আণুবীক্ষণিক জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর এন্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়ে উঠে।

বলা বাহুল্য, এলোপ্যাথি বলেন আর হোমিওপ্যাথি বলেন, মানুষ তখনই সুস্থ হয়ে উঠে যখন তার জীবনীশক্তি তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য যথেষ্ঠ সুস্থ ও সবল থাকে।

যেকোনো ধরনের ঔষধ তা সে সাধারণ হোক বা জীবাণু ধ্বংসকারী এন্টি বায়োটিক, জীবনীশক্তি কে সাহায্য করে মাত্র। সাধারণ মানুষ এই সত্যটা জানেনা বলে এন্টি বায়োটিক কে এতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।

যদিও ইদানিং এই ধারণার পরিবর্তন হচ্ছে।

কিভাবে লক্ষণ সমূহ চাপা পড়ে জটিল রোগ তৈরি করে?

কিভাবে লক্ষণগুলো চাপা পড়ে নানা জটিল অবস্থা আনয়ন করে, তা প্রথম থেকে জানা থাকলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হয়।

সর্বাপেক্ষা ক্ষতিকর ব্যবস্থা হচ্ছে – চর্মরোগ বাহ্য মলম প্রয়োগে চিকিৎসা। দাদ, চুলকানি, পাঁচড়া ইত্যাদিকে চর্মরোগ বলে অভিহিত করা হয় এবং বাহ্য মলম ও ইন্‌জেক্‌শনাদির দ্বারা এদেরকে লুপ্ত করে রোগশক্তিকে অন্তর্মুখীন করে দিয়ে অগনিত জটিল ব্যাধির সৃস্টি করা হয়।

চর্মরোগটিকে কোন প্রকারে চক্ষুর অন্তরালে হলেই মানুষ মনে করে যে, এটি আরোগ্য হয়ে গেল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সোরার বিকশিত মুর্তিকে চাপা দিলে যে কি ভয়ানক অনিষ্ট সাধন হয় এবং কি প্রকার সাংঘাতিক ব্যাধির সৃষ্টি হয়, তা অবগত হলে কেউ ঐ প্রকার কু-চিকিৎসার দিকে ধাবিত হত না।

দীর্ঘ বৎসরের প্রচলিত চিকিৎসা-পন্থীরা যাকে চর্মরোগ বলে প্রচার করে থাকেন, তা আদৌ চর্মের কোন রোগ নয়, সমর্গ শরীরেরই ব্যাধি।

আমরা কিভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি?

চর্মরোগ বাহ্য উপায়ে আরোগ্য করবার পর হাঁপানি, রক্তামশায়, ক্ষয়, উন্মাদ, ইত্যাদি নানাপ্রকার কঠিন ব্যাধির সৃষ্টি হলে চিকিৎসকরা বলে থাকেন – “এটি একটি স্বতন্ত্র ব্যাধি এবং একে স্বতন্ত্রভাবে চিকিৎসা করতে হবে।”

এইভাবে চাপা দেওয়া চিকিৎসার ফলে যে সমস্ত ব্যাধির সৃষ্টি হয়, চিকিৎসার নামে তাদেরকে আবার চাপা দেওয়া হয়। মুষ্টিমেয় ২/৪ জন ভিন্ন সাধারণে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে না এবং চেষ্ঠাও করে না।

তথাকথিত আরোগ্য যে প্রকৃত আরোগ্য নয়, তার প্রমান পাওয়া যায়, যখন সমলক্ষণ সূত্রে ঔষধ প্রয়োগের ফলে ঔষধের ক্রিয়ায় পশ্চাৎ গতিতে চাপা দেওয়া লক্ষণসমূহ প্রকাশিত হয়ে যায়।

প্রকৃত সুস্থতা কেমন হওয়া উচিত?

প্রকৃত আরোগ্যের গতি – মন হতে শরীরে, কেন্দ্র হতে পরিধিতে, ঊর্ধ্বাঙ্গ হতে নিম্নাঙ্গে, ভিতর হতে বাহিরে, চাপা দেওয়া লক্ষণের পুনরাবির্ভাবে ইত্যাদি।

লুপ্ত লক্ষণের পুনরাবির্ভাব হলেই হবে না – সর্বশেষ লক্ষণ হতে ক্রমে ক্রমে পশ্চাৎগতিতে পুনরাবির্ভাব হতে হবে। এলোমেলোভাবে লুপ্ত লক্ষণগুলির আবির্ভাব হলে ঔষধ নির্বাচন ঠিক হয়নি জানতে হবে।

যেমন, কোন রোগীর ইতিহাস বিশেষভাবে লিপিবদ্ধ করে জানা গেল, রোগী ২/৩ বৎসর যাবৎ বিকালের দিকে মৃদু জ্বরে কষ্ট পাচ্ছে, জ্বরে সামান্য শীত, গাত্রদাহ, কাশি, অক্ষুধা, অরূচি, উদরাময় ইত্যাদিতে ভুগছে।

এই অসুখের ২/৩ বৎসর পূর্বে তার ম্যালেরিয়া জ্বর হত এবং এন্টিবায়োটিক, ইনজেকশন ও টনিকাদি খাইয়ে তা আরোগ্য হয়; আরো ২/৩ বৎসর আগে তার নিম্নাঙ্গে এক প্রকার চর্মরোগ হয়, ডাক্তারেরা একে একজিমা বলে অভিহিত করেন এবং এন্টিবায়োটিক ও বাহ্য মলমাদি প্রয়োগ করে আরোগ্য করেন।

একজিমা হওয়ার আগে মধ্যে মধ্যে চুলকানি হলেও একজিমা আরোগ্যের পর আর কোন চর্মরোগ হয়নি।

এইসব ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার পর ধাতুগত লক্ষণ সংগৃহ করে জানা গেল, রোগীটি গ্রীষ্মকাতর, কিন্তু খাবার ও পানি খুব গরম গরম খেতে চায়, মেজাজ খিটখিটে এবং ব্যর্থ হবে মনে করে ভয়ে কোন কাজে অগ্রসর হতে চায় না, ভোরবেলা মন বিষন্ন থাকে, সঙ্গি চায় না আবার নির্জনতাতেও ভয়, খাবার খাওয়ার পর পেটে বায়ু জমে, ইত্যাদি।

লাইকোপডিয়াম ঔষধটি লক্ষ শক্তিতে দেওয়ার পর থেকে রোগী অপেক্ষাকৃত সুস্থ বোধ করতে করতে ২/৩ মাসের মধ্যে দেখা যায় তার যাবতীয় লক্ষণই অন্তর্হিত হয়েছে এবং সেখানে ২/৩ বৎসর পূর্বের ম্যালেরিয়া জ্বর ফিরে এসেছে, আপনি নিশ্চয়ই দ্বিধান্বিত হবেন।

যদি আপনি ঔষধের কাজে বিঘ্ন না ঘটান, তা হলে দেখবেন যে, কয়েকদিনের পরে ম্যালেরিয়া জ্বরটি আরোগ্য হয়েছে এবং তার আগে যে একজিমা হয়েছিল তার পুনরায় আবির্ভাব হয়েছে।

যদি এই অবস্থায় ঔষধের ক্রিয়াতে কোনও প্রকার হস্তক্ষেপ না করেন, তা হলে দেখবেন যে, কিছুদিন ভোগ করার পর এই একজিমা সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়ে সেখানে সোরার আদি বিকাশ চুলকানির আবির্ভাব তথা অবলুপ্তি ঘটে রোগী আরোগ্য লাভ করেছেন।

এক্ষেত্রে সর্বশেষ লক্ষণ থেকে ক্রমে ক্রমে পশ্চাৎগতিতে চাপা দেওয়া রোগের আবির্ভাব ও অবলুপ্তি ঘটে ঔষধ ও শক্তি যে ঠিক নির্বাচিত হয়েছে, তা চিকিৎসককে অবগতি করায়।

Leave a Comment