জরায়ুর টিউমারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

ইউটেরিন ফাইব্রয়েড (Uterian Fibroid) বা জরায়ুর টিউমার এক ধরণের নির্দোষ টিউমার যা কিনা প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি হয় না। সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তান গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদের জরায়ুতে এ ধরণের টিউমার এর সৃষ্টি বা বিকাশ হয়ে থাকে।

জরায়ুর টিউমার একটি হতে পারে বা একাধিকও হতে পারে। আকারগত দিক দিয়ে একটি মটরদানা থেকেও ছোট হতে পারে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি পেয়ে সম্পূর্ণ জরায়ুর কাঠামোর চাইতেও বড় হয়ে পাঁজরের খাঁচা পর্যন্ত পৌছে যায়।

জরায়ুর টিউমার বা (Uterian Fibroid Tumor) কেন হয়?

অনেক সময় দেখা যায় মহিলাদের ঋতু সংশ্লিষ্ট সমস্যা থাকলে অর্থাৎ সঠিক সময়ে ঋতুস্রাব না হলে বা সময়ের পূর্বে বা পরে হলে অথবা অতিরিক্ত বা কম ঋতু রক্তস্রাব প্রবাহিত হলে তাদের জরায়ুতে টিউমার হতে পারে। এছাড়া জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের কোন জটিল অসুস্থতা থাকলেও জরায়ুতে টিউমার হতে পারে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা জরায়ুতে টিউমার হবার পর হতে অনেকদিন পর্যন্ত কিছুই বুঝতে সক্ষম হন না। কারণ বাহ্যিক বা আভ্যন্তরিকভাবে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সমস্যাটি তখনই ধরা পড়ে যখন একজন মহিলা মাসিক ঋতুস্রাবের সমস্যার চিকিৎসা করার জন্য বা সন্তান গর্ভে আসলে সাধারণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য একজন গাইনী চিকিৎসক এর সরণাপন্ন হন।

Uterine Fibroid Tumor বা জরায়ুর টিউমার হবার লক্ষণসমূহ

  • অতিরিক্ত মাসিক রক্তপাত।
  • ঋতুস্রাব ১ সপ্তাহ বা তার চাইতেও বেশি সময় পর্যন্ত প্রবাহিত হওয়া।
  • তলপেটে চাপ চাপ বা প্রচন্ড ব্যথা হওয়া।
  • মাসিকের আগে, সময়ে অথবা পরে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া।
  • ঘন ঘন মূত্রত্যাগের ইচ্ছা হওয়া।
  • মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি হয় না, মনে হয় আরও একটু প্রস্রাব হবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
  • পিঠের নিচের অংশ, কোমড় বা পা ব্যথা করা।
  • হঠাৎ করে তলপেটে প্রচুর ব্যথাসহ রক্তস্রাব হওয়া।

জরায়ু টিউমারের শ্রেণীবিভাগ

Fibroids বা জরায়ুর টিউমারকে সাধারণত তাদের অবস্থান দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।

Intramural Fibroids – জরায়ুর পেশীর ভেতর দিকে বৃদ্ধি পায়।

Submucosal Fibroids – জরায়ুর ভেতরে দিকে তৈরি হয়ে জরায়ু গহ্বরের দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

Subserosal Fibroids – জরায়ুর পেশীর বাইরের অংশে প্রাচীরের ভেতর বৃদ্ধি পায় এবং বৃহদাকার আকৃতি ধারণ করে জরায়ু প্রাচীরের বাইরের দিকটায় বৃদ্ধি পেতে থাকে।

জরায়ুতে বা জরায়ু মুখের টিউমার চিকিৎসার জন্য কখন চিকিৎসক এর সাহায্য নেবেন

আপনি যদি উপরে বর্ণিত জরায়ু টিউমার এর লক্ষণসমূহের কোন একটি আপনার মধ্যে অনুভব করেন তবে দেরী না করে আজই উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

হোমিওপ্যাথি মতে জরায়ুর টিউমারের সেরা হোমিও ঔষধ (Best uterine fibroid medicines)

ক্যালক্যারিয়া আয়োড

মোটা, থলথলে মাংসপেশী ও অতিরিক্ত মেদ যুক্ত মহিলাদের চিকিৎসায় ভালো কাজ করে।

সাধারণত এই ধরনের রোগীদের শরীরে প্রায়ই বিভিন্ন জাতীয় টিউমারের উপস্থিতি, টনসিল আক্রান্ত হওয়া বা টনসিলের প্রদাহ হওয়া (টনসিলাইটিস), শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, প্রভৃতি লক্ষণ লক্ষ্য করা যায়।

এছাড়া তাদের প্রায়ই থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। ক‌্যালকেরিয়া আয়োড থাইরয়েড গ্রন্থির অসুস্থতা চিকিৎসায়ও সাফল্যের সাথে ব্যবহার হচ্ছে।

ক্যালকেরিয়া কার্ব

ক্যালকেরিয়া ধাতু প্রকৃতিযুক্ত রোগীদের চিকিৎসায় একটি সেরা ঔষধ। অন্য সবার কথা জানিনা। আমি নিজে এই ঔষধটি প্রয়োগ করে কখনো ব্যর্থ হয়নি। তবে যথেষ্ঠ সতর্কতার সাথে সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় বিপদ ঘটার সম্ভাবনা আছে।

বিশেষ করে ক্যালকেরিয়ার ওভারডোজ হলে জরায়ু বা ফুসফুস থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, হঠাৎ সংজ্ঞাহীন হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, হাড়ের ভেতর রিউমাটিক ব্যথা প্রভৃতি সমস্যা সৃষ্টি করে।

এছাড়া জরায়ুর টিউমার বা জরায়ু মুখের টিউমার চিকিৎসা ক্ষেত্রে ফ্র্যাক্সিনাস অ্যামেরিকানা, পালসেটিলা, সিপিয়া, লিলিয়াম টিগ, বোরাক্স, ট্রিলিয়াম, নেট্রাম মিউর, ইগ্নেসিয়া, ল্যাকেসিস, সাইলিসিয়া প্রভৃতি ঔষধগুলোও লক্ষণ অনুযায়ী ভালো কাজ করে।

জরায়ুর ক্যান্সার হলে করণীয় কি?

জরায়ুতে দূষিত টিউমার বা ক্যান্সার হলে অবশ্যই সবার আগে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করবেন। যদি বিশেষ কোনো কারনে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি মতে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব না হয় অথবা অন্যান্য মতে চিকিৎসায় ভালো ফলাফল না পাওয়া যায় শুধুমাত্র সেই পরিস্থিতিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করা যাচ্ছে।

জরায়ুর দূষিত টিউমার বা জরায়ুর ক্যান্সার রোগীদের সাহায্যার্থে নিচে কিছু ঔষধের লক্ষণ নির্দেশিকা দেয়া হলো।

জরায়ুতে দূষিত টিউমার বা ক্যান্সার হয়েছে সন্দেহ হলে থুজা অক্সিডেন্টালিস প্রয়োগ করা যায়। এতে অনেক ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।

তবে পরীক্ষা করে ক্যান্সার নিশ্চিত হয়েছে বলে প্রমাণ হলে হাইড্র্যাষ্টিস Q বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা ও অরাম মিউর ন্যাট 3X সঠিক নিয়মে খেলে অনেক সময় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

স্বনামধন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডাঃ বোরিক এর মতে জরায়ু টিউমার বা ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ সমূহের মধ্যে অরাম মিউর ন্যাট শ্রেষ্ঠ।

বংশগত বা বংশের অন্যান্য আত্নীয় স্বজনদের মধ্যে ক্যান্সার হবার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলে কার্সিনোমা উচ্চ শক্তিতে দীর্ঘদিন পর পর ব্যবহার করতে হবে।

প্রচুর কালচে রক্তক্ষরণ হলে হ্যামোমেলিস Q উপকারী।

জরায়ুতে দূষিত টিউমার বা জরায়ুর ক্যানসার এর প্রথম অবস্থায় আর্সেনিক আয়োড প্রয়োজন হবে।

দূষিত অর্বুদ বা টিউমার আঙ্গুরের মতো আকৃতি ধারণ করলে এবং আর্স আয়োডে কাজ না হলে থুজা প্রয়োগ করতে হবে। জরায়ুর টিউমারের এইরূপ গঠনগত অবস্থায় থুজা অন্য সব ঔষধের তুলনায় অধিক কার্যকরী।

এছাড়া জরায়ুর ক্যান্সার চিকিৎসায় অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধসমুহ হচ্ছে- আর্সেনিক এলবাম, ক্রিয়োজোট, ল্যাপিস এলবাম, প্রভৃতি।

হোমিওপ্যাথি মতে জরায়ু টিউমার বা জরায়ুর ক্যান্সার চিকিৎসা সম্বন্ধে আরও জানতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা নিচের কমেন্ট বক্স ব্যবহার করে আপনার মন্তব্য আমাদেরকে জানাতে পারেন।

জরায়ু টিউমারের সঠিক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার (uterine fibroid treatment) জন্য যোগাযোগ করুন

মোঃ সাজু আহমেদ

ডিএইচএমএস (বিএইচবি), ঢাকা, বাংলাদেশ।

স্ত্রীরোগ বিষয়ক অন্যান্য প্রকাশনাসমূহ –

Leave a Comment