বিভিন্ন প্রকার টিউমারের হোমিও চিকিৎসা

বিভিন্ন কারণে চর্মের উপরে অথবা নিচে বিশেষ প্রকারের টিস্যুসমূহ জন্ম নিলে যে সকল পীড়ার সৃষ্টি করে তাকে Neoplasmata বা New formation (নতুন উৎপত্তিজাত পীড়া) বলে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও হোমিওপ্যাথি মতে টিউমার বলতে আমরা সাধারণত চামড়ার মধ্যে, উপরে বা নীচে এইরূপ নতুন উৎপত্তিজাত পীড়াকেই বুঝে থাকি।

এদের অনেকগুলি প্রকারভেদ আছে। আবার যে সকল টিস্যুসমূহ আগে থেকেই বর্তমান ছিল তাদের অতিবৃদ্ধি (hypertrophy) অথবা অতিক্ষয় (atrophy) হতেও অনেকগুলো পীড়ার সৃষ্টি হয়। এই দুই শ্রেণীর পীড়া এক নয়। কখনও কখনও কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও অতিবৃদ্ধিজনিত পীড়াগুলি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে আলোচনার যোগ্য।

অতিবৃদ্ধিজাত পীড়াসমূহ প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

১. বিনাইন বা নির্দোষ টিউমার।

২. ম্যালিগন্যান্ট বা দূষিত টিউমার।

বিনাইন বা নির্দোষ টিউমার (Benign Tumor) এর হোমিও চিকিৎসা

একটি বিনাইন টিউমার মারাত্মক হয় না, যা ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার জাতীয় টিউমার হয়ে থাকে। এটি নিকটবর্তী টিস্যু আক্রমণ করে না বা শরীরের অন্যান্য অংশে ক্যান্সারের জটিলতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনাইন টিউমার আকৃতিগত দিক দিয়ে ছোট হয়। কিন্তু রক্তনালী অর্থাৎ ধমনী, শিরা-উপশিরা বা স্নায়ুর মতো অত্যাবশ্যক কাঠামোর উপর চাপ দিলে বিনাইন টিউমার গুরুতর হতে পারে।

আজ আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হচ্ছে- শরীরের উপর মাংস বা টিস্যুসমূহে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোমল বা নরম বিনাইন বা নির্দোষ অর্বুদ বা টিউমার (Benign Tumor) এর হোমিওপ্যাথিক মতে ঘরোয়া চিকিৎসা।

মানবদেহে সাধারণত যে কয়েক ধরণের বিনাইন টিউমার দেখা যায় তাদের লক্ষণসমূহ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে বর্ণিত হল-

সৌত্রিক অর্বুদ বা টিউমারের হোমিও চিকিৎসা (Fibroma treatment)

এই জাতীয় পীড়াটি নূতন সংযোজক তন্তুর সৃষ্টি হয়ে উৎপন্ন হয়। এদের কতগুলি কঠিন ও কতগুলি কোমল হয়। সংযোজক তন্তুর প্রকৃতি অনুসারেই এরুপ হয়।

এই অর্বুদগুলি মসৃণ এবং ডিম্বাকৃতি বা গোলাকার হয়ে থাকে। আকারে এরা মটরের মত হতে পারে আবার তা অপেক্ষা অনেক বড় ডিমের মতও হতে পারে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্বুদগুলিতে চামড়ার নিচে গুটিকার মত অনুভব করা যায়।

এইগুলি দেহের যে কোন অংশে উৎপন্ন হতে পারে। কিন্তু চোখের পাতা, মুখমন্ডল এবং মস্তকেই এই জাতীয় অর্বুদ বা টিউমার বিশেষভাবে দেখা যায়। কারণতত্ত্ব সঠিক না জানা গেলেও এরা কখনই সাংঘাতিক হয় না।

সৌত্রিক অর্বুদ বা টিউমার চিকিৎসায় ব্যবহার্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ

ক্যালক্যারিয়া আর্স, কোনিয়াম, আইয়ড, কেলি ব্রোম, লাইকো, সিকেলি, থুজা (বোরিক সমর্থিত)।

মেদার্বুদ বা ফ্যাটি টিউমার এর হোমিও ওষুধ (Lipoma treatment in homeopathy)

টিউমারের হোমিও চিকিৎসা
মেদযুক্ত বা ফ্যাটি টিউমারের হোমিও চিকিৎসা

মেদার্বুদ বা fatty tumor দুই প্রকৃতির হয়ে থাকে। কতগুলিকে দেহের উপর ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবার কতগুলো দেহের একটি সীমাবদ্ধ স্থান জুড়ে থাকে। পূর্বোক্ত প্রকারের টিউমারগুলো চেপ্টা হয়।

এই জাতীয় টিউমার বা অর্বুদগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং একটি বিশেষ আকারে উপস্থিত হয়ে সেভাবেই থেকে যায়। ঐগুলি কোমল এবং টিপলে মনে হয় যেন এদের মধ্যে কোন তরল বস্তু ভরা আছে। এইরুপ টিউমারে কোন প্রকার ব্যথা-বেদনা থাকে না। এইগুলো দ্বারা জীবনপ্রণালীর কোন অনিষ্টও হয় না।

এইগুলো অস্ত্রোপচার দ্বারা দূর করা যায়। কিন্তু একটিকে কেঁটে ফেললে পুনরায় ঐ স্থানেই নতুন টিউমার জন্মানোর প্রবণতা দেখা যায়।

হোমিওপ্যাথিক মতে মেদার্বুদ (Lipoma treatment in homeopathy) বা ফ্যাটি টিউমার (Lipoma removal) চিকিৎসায় ব্যবহার্য ঔষধসমূহ

ব্যারাইটা কার্ব, এসিড বেঞ্জ, ব্রোমিন, ক্যালক্যারিয়া সিলিক্যাটা, কোনিয়াম, গ্রাফাইটিস, হিপার সালফ, কেলি ব্রোম, কেলি আয়োড, নাইট্রিক এসিড, ফাইটোলক্কা, থুজা (বোরিক সমর্থিত)।

জন্মগত অর্বুদ বা টিউমার চিকিৎসা (Angioma treatment)

এই জাতীয় অর্বুদগুলো রক্তাধার ও লসিকাবহ দ্বারা গঠিত। এইগুলো শিশুর জন্মের সাথে সাথেই অথবা জন্মের অল্পকাল পরেই দেখা দেয়। এদের আকৃতি গোল, অসম বা চেপ্টা। চামড়ার উপর এগুলো উঁচু হয়ে থাকে।

এদের বর্ণ উজ্জ্বল লাল বা নীলাভ হয়। এরা কোন সময়ে একটি আবার কোন কোন সময়ে একসঙ্গে অনেকগুলো প্রকাশ পায়। এদের দ্বারা রোগীর কোন কষ্টের সৃষ্টি হয় না অথবা এই টিউমারগুলো কোন অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি করে না।

শিশুদের মাথায় অনেক সময়েই এই টিউমার দেখতে পাওয়া যায় এবং সাধারণত এদের রক্তের ন্যায় বিশেষ বর্ণের জন্য এই টিইমারগুলোকে ব্লাড টিউমার (Blood Tumour) বলে।

এই রোগের প্রধান ঔষধ ক্যালক্যরিয়া ফ্লোর। কিন্তু এই টিউমারগুলি বংশগত সাইকোসিস দোষজাত বলে অন্যান্য এন্টিসাইকোটিক ঔষধসমূহের প্রয়োজন হতে পারে।

আরও পড়ুন-

Leave a Comment