কোমর ব্যথার চিকিৎসায় কার্যকর হোমিও ঔষধসমূহ

প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি মাত্রই কোমরের ব্যথার সাথে কম-বেশি সবাই পরিচিত। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাধারন সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কোমর ব্যথার উপশম করা হয়। আজকের লেখাটি সেই সমস্ত রোগীদের সাহায্যার্থে যারা বার বার বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা নেয়ার পরও কোমর ব্যথার হাত থেকে পুরোপুরি নিষ্কৃতি পাচ্ছেন না। এখানে কোমর ব্যথায় হোমিও চিকিৎসায় সর্বাধিক ব্যবহৃত ও দ্রুত কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ও তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

কোমর ব্যথার লক্ষণ সমূহ

কোমরে নানা ধরনের ব্যথা (যেগুলো প্রধানত পেটের অসুখ থেকে সৃষ্ট), মেরুদন্ডে ব্যথা, সেক্রোইলিয়াক হাড়ের ব্যথা যখন শুরু হয়, ব্যথা মেরুদন্ডের হাড়ের ভেতর দিয়ে মাথা পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে এবং নাকের ডগায় চলে আসে।

মাঝে মাঝে ব্যথা পেটের অঙ্গ সমূহে ছড়িয়ে পরে। নড়াচড়ার সময় ব্যথা বাড়ে। কিন্তু বিশ্রামের সময় অথবা রাতে ব্যথা আরো তীব্রতর হতে পারে।

সাদা স্রাব চিকিৎসা পরবর্তী ব্যথা- বিষাক্ত পদার্থের দ্বারা চিকিৎসার ফলে মহিলাদের পুনরায় শ্বেতপ্রদর বা সাদা স্রাব দেখা দেয়ায় (সাদা স্রাবের চিকিৎসা করা হয় ক্ষার জাতীয় পদার্থ / কষ্টিক দ্বারা এবং অন্যান্য পদ্ধতিতে) কোমরের হাড়ে প্রায়ই ব্যথার সৃষ্টি হয়।

কোমর ব্যথার হোমিও চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান ওষুধসমূহের লক্ষণ নির্দেশিকা

রাস টক্স

কোমর ব্যথার চিকিৎসায় যে ওষুধটি সবার আগে মনে আসে সে ওষুধটি হচ্ছে রাস টক্সিডেন্ড্রন। বলা বাহুল্য, কোমর ব্যথার অন্যতম প্রধান হোমিও ওষুধ হচ্ছে এই রাস টক্স নামের ওষুধটি।

রাস টক্স এর প্রয়োগ নির্দেশক লক্ষণ হচ্ছে-

এর কোমরের ব্যথা যে কোন ধরনের প্রথম নড়াচড়ায় বৃদ্ধি পায় কিন্তু ক্রমিক নড়াচড়ায় উপশম প্রাপ্ত হয়। এর অর্থ হচ্ছে, রোগী বসা থেকে উঠতে গেলে বা ধীরস্থির অবস্থা থেকে একটু নড়াচড়া শুরু করলে কোমরের ব্যথার বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু একটু সঞ্চালন বা হাঁটাহাঁটি করলে ব্যথা কমে আসে। তবে অনেকটা পথ হাঁটলে আবার বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

শরীরের প্রতিটি অস্থিসন্ধিতে রাস টক্স এর ব্যথা অনুভব করা যায়। কোমরের ব্যথা বা দিকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত নেমে আসে। এই ব্যথা যেকোনো প্রকারের বিশ্রামে বৃদ্ধি পায় ও চাপলে উপশম পাওয়া যায়।

রাস টক্স এর মতো লক্ষণ যুক্ত রোগীকে রাস টক্স প্রয়োগে উপশম হলেও যদি পুরোপুরি না কমে কিছুদিন পর পর আবার ব্যথা ফিরে আসে তবে ঐ ধরনের রোগীদের চিকিৎসায় ক্যালকেরিয়া ফ্লোর উপযোগী। বিশেষ করে মোটা থলথলে শরীরের মেদ যুক্ত রোগীদের চিকিৎসায় ক্যালকেরিয়া ফ্লোর ভাল কাজ করে।

এছাড়া রাস টক্সের মাধ্যমে চিকিৎসা করা রোগীদের কিডনি আক্রান্ত হলে বা মূত্রতন্ত্রের কোন অসুস্থতা থাকলে এবং সেই কারনে কোমর ব্যথার স্থায়ী উপশম না হলে বার্বারিস ভালগারিস কার্যকরভাবে কোমর ব্যথার উপশম করার পাশাপাশি কিডনি সমস্যার চিকিৎসাতেও সুফল পাওয়া যাবে।

ব্রায়োনিয়া এলবাম

ব্রায়োনিয়ার কোমর ব্যথার লক্ষণ রাস টক্স এর ঠিক বিপরীত। অর্থাৎ এতে ব্যথা বিশ্রামে উপশম প্রাপ্ত হয় এবং যেকোন সঞ্চালনে বা নড়াচড়ায় বৃদ্ধি পায়। ব্রায়োনিয়ার রোগীর কোমরের ব্যথার সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকে। এর ব্যথা সাধারণত মাংসপেশীতে বেশি অনুভব হয়।

এখানে উল্লেখ্য যে, রাস টক্স ও ব্রায়োনিয়া সন্ধিবাত বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid arthritis) এর অন্যতম প্রধান ওষুধও বটে।

কোমর ব্যথায় হোমিও চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্যান্য সেরা হোমিওপ্যাথিক ওষুধ

এস্কিউলাস হিপ

প্রচন্ড ব্যথা (অর্শ রোগের সাথে আনুষঙ্গিক লক্ষণ হিসেবে উৎপত্তি হয়), কোমর এলাকার হাড় থেকে ব্যথার উৎপত্তি হওয়া, এসব ক্ষেত্রে কার্যকরী।

কলোসিন্থিস

কোমর এলাকায় তীব্র ব্যথা। পা থেকে ব্যথার উৎপত্তি হওয়া, এসব ক্ষেত্রে কার্যকরী।

সিমিসিফিউগা

মহিলাদের উপর বিশেষ ভাবে কার্যকরী। ঋতুস্রাবের পূর্বে পুনঃ পুনঃ স্তনে ব্যথা হয়। পেটের অঙ্গ সমূহের সমস্যার কারনে সেক্রোইলিয়াক অঞ্চলের ব্যথা এবং এই ব্যথা কোমর ও মাথা এবং নাক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এইসব ক্ষেত্রে এই ঔষধটি বিশেষভাবে কার্যকরী।

তাছাড়া মাথার খুলি বা আঘাতের ফলে মস্তিষ্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর সম্ভাব্য ব্যথার ক্ষেত্রে এটি খুবই উপযোগী। মাংসপেশীর হাড়ের সাথে সংযুক্ত রগ ও পেশীতে ব্যথার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হিসেবে গণ্য।

নেট্রাম ক্লোরেট

কোমরে ব্যথা, সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য ও শরীরে কাঁপুনি, সকালে হাঁচি এবং অস্বস্তিবোধ প্রভৃতি সমস্যা চিকিৎসায় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

ফাইটোলাক্কা

কোমরের চতুর্দিকে ব্যথা (ব্যথা পা পর্যন্ত চলে আসে)। দাঁড়িয়ে থাকলে কোমরে দুর্বলতা বোধ করে। কোমরের ব্যথায় মনে হয় যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে, প্রভৃতি সমস্যায় ভালো কাজ করে।

স্ট্রনশিয়াম কার্ব

সব ধরণের বাত ও রিউমেটিক ব্যথার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিশেষ করে কোমরের গ্রন্থি সংযোজন করায়।

আরও পড়ুন-

পিঠের ও মেরুদণ্ডের ব্যথার হোমিও চিকিৎসা

Leave a Comment