লিউকোডার্মা (Leucoderma) বা ধবল রোগকে অনেকে শ্বেত-কুষ্ঠ, শ্বেতী বা Vitiligo ও বলে থাকেন। বস্তুত এটা কুষ্ঠ বা কোন প্রকার চর্মরোগ না। চর্মের স্বাভাবিক বর্ণের (Pigment) উপাদান-বিকৃতি বা অভাব হবার কারণে রোগীর চর্মের কিছু অংশ দুধের মতো সাদা দেখালে তাকে ধবল বা লিউকোডার্মা (Leucoderma) বলে। আজকের আলোচনায় লিউকোডার্মা বা শ্বেতী রোগের হোমিও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
লিউকোডার্মা (Leucoderma) বা শ্বেতী (Vitiligo) রোগের উৎপত্তিগত কারণ কি?
যদিও এ সম্পর্কে বিজ্ঞানিরা এখনও একমতে সম্মত হতে পারেন নি।
তবুও এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, শিশু হোক বা প্রাপ্ত বয়স্ক; আক্রান্ত রোগীদের সর্বাঙ্গীন বা স্নায়বিক দুর্বলতাই এর মূল কারণ।
সাধারণত আট বছরের কম বয়স্ক শিশুদের এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়।
লিউকোডার্মা বা শ্বেতী (Vitiligo) রোগের লক্ষণ সমূহ

মুখমণ্ডল, গ্রীবাদেশ, হাত বা বুকের উপর প্রথমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা দাগ প্রকাশ পায়।
ক্রমে এই দাগগুলো চাকা চাকা মত হয়। অবশেষে এই চাকা গুলো ধীরে ধীরে জুড়ে গিয়ে ফোস্কার মত দেখায়।
ধবল (Leucoderma) বা শ্বেতী রোগের হোমিও চিকিৎসা
শিশুর সর্বাঙ্গীন স্বাস্থ্য ও স্নায়ু মণ্ডলের উপর যে সমস্ত ঔষধ কাজ করে, সেই সকল ঔষধ এই রোগে ফলপ্রদ। সাধারণত চর্মরোগের ওষুধ প্রয়োগে কোন ফল হয় না।
নিচে লিউকোডার্মা রোগে ব্যবহারযোগ্য কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধের লক্ষণ নির্দেশিকা দেয়া হলো।
আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০ বা আর্সেনিক আয়োড ৬x বিচূর্ণ লক্ষণ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট নিয়মে কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করলে রোগ ক্রমশ নিরাময় হয়ে থাকে।
তবে আর্স-সালফ-ফ্লেভাম ৬x প্রয়োগে অধিকতর ভালো ফলাফল পাওয়া যায় বলে অনেকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে।
দীর্ঘকাল আর্সেনিক প্রয়োগেও কোন ফল পাওয়া না গেলে বিশেষত বুক ধড়ফড় করা, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত প্রভৃতি অবসন্নতা জ্ঞাপক লক্ষণে ফসফরাস ৩০ প্রয়োগে অনেক ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়।
শুয়ে থাকলে আরাম বোধ, অনিদ্রা (বিশেষত রাত তিনটার পর), মানসিক অবসন্নতা, স্মৃতিলোপ প্রভৃতি লক্ষণে জিঙ্কাম ফস ৩x বিচূর্ণ।
হিস্টিরিয়াগ্রস্থা যুবতীদের ধবল রোগে ইগ্নিসিয়া ৩০ উপকারী।
সালফার ৩০, থুজা ৩০, ক্যালকেরিয়া কার্ব ৩০, ক্যালকেরিয়া ফস ৬x বিচূর্ণ, অ্যান্টিম টার্ট ৬, নাইট্রিক এসিড ৬, এক্সরে ৩০, জিঙ্কাম ৬ ও রাস টক্স ৩০ সময় সময় উপযোগী হয়।
উল্লেখিত ঔষধ দ্বারা রোগ সম্পূর্ণ রূপে নিরাময় হবার সম্ভাবনা সমধিক।
বাহ্যিকভাবে ওষুধ প্রয়োগে বিশেষ ফল পাওয়া যায় না। তবে রোগের বিস্তার অল্প জায়গাব্যাপি হলে অনেক ক্ষেত্রে অয়েল বুচি Q বাহ্যিকভাবে প্রয়োগ করে সফলতার নিদর্শন পাওয়া গেছে।
শ্বেতী রোগের হোমিও চিকিৎসা -এর প্রয়োজনে রোগীর পথ্য ও বিধি-নিষেধ
রোগীকে নিয়মিত দুধ, কড লিভার-অয়েল, ভালোভাবে পাকা পুষ্টিকর ফল ও অন্যান্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার যা কিনা স্নায়ুর পুষ্টি সাধন করতে পারে ও নতুন রক্ত কণিকা তৈরি করতে কার্যকর এই ধরনের খাবার খেতে দিতে হবে।
মিষ্টি, আচার ও যে সকল খাবার পরিপাক কাজে ব্যাঘাত ঘটায় সে সমস্ত খাবার বর্জন করতে হবে।