মাসিক ঋতুকালে প্রচুর পরিমাণে রজঃস্রাব নিঃসরণ (Uterine bleeding) হলে অথবা ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট কয়েকদিন অপেক্ষা অধিক সময় স্থায়ী হলে তাকে অতিরজঃ বা Menorrhagia বলে।
অতি রজঃস্রাব (Menorrhagia) হবার কারণ কি?
১। জরায়ু বা যোনির গায়ে টিউমার।
২। জরায়ু গ্রীবায় ক্যান্সার বা ঐ জাতীয় কঠিন রোগ।
৩। ডিম্বকোষ বা ডিম্বনালি প্রদাহ।
৪। জরায়ুর স্থানচ্যুতি।
৫। প্রথম রজঃস্রাবে বিলম্ব।
৬। হরমোনের গোলযোগ বা হরমোন ঠিকমতো নিঃসরণ না হওয়া।
৭। অতিরিক্ত সহবাস, ঋতুকালে সহবাস।
৮। রোগ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যের অবনতি।
৯। ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়া, অন্যান্য কঠিন প্রকৃতির জ্বর, অতিরিক্ত পরিশ্রম, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত আহার, অনিদ্রা, ইত্যাদি।
অতি রজঃস্রাব (Menorrhagia) বা মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত ভাঙ্গা (Uterine bleeding) সংশ্লিষ্ট লক্ষণ সমূহ
১। মাসিক স্রাব প্রায় সাতদিনের বেশী থাকে এবং প্রচুর স্রাবের জন্য দুর্বল হয়। আবার কোনো কোনো মহিলার ৩/৪ দিনই থাকে তবে অতিরিক্ত স্রাব হয়।
২। মাসিক ঋতুস্রাব স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়।
৩। কখনো কখনো ঋতু বন্ধ থাকে বেশ কিছু দিন, তারপর আবার বেশি পরিমাণে হতে থাকে।
৪। আলস্য, দুর্বলতা, হাই তোলা, মনমরা ভাব, গা ম্যাজ ম্যাজ করা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।
৫। পেটে, পিঠে, কোমরে, তলপেটে বেদনা হতে পারে।
৬। ক্ষুধাহীনতা, রুচির অভাব, খাদ্যে স্বাদ পায় না।
৭। পেটের গোলমাল, অম্ল, উদরাময়, কোষ্ঠকাঠিন্য।
৮। শীত শীত ভাব, হাত-পা ঠাণ্ডা, মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে, চোখ-মুখ বসে যায়, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, কানে ভোঁ-ভোঁ শব্দ, জীর্ণশীর্ণ দেহ, ভয়ানক দুর্বলতা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
Menorrhagia বা অতিরিক্ত রজঃস্রাবের (Bleeding very heavy period) চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য সেরা হোমিও ওষুধ

ফসফরাস
সর্বাঙ্গীন জ্বালাপোড়া। গায়ে উত্তাপ নেই, কিন্তু জ্বালাপোড়া আছে। কম্পন, অবশতা, পক্ষাঘাত।
ফসফরাসের চোখের চারপাশে স্ফীতিভাব দেখা যায়। সমগ্র মুখমণ্ডল যেন ফুলে যায়। অল্প কিছুক্ষণ ঘুমালেই স্বস্তি বোধ করে।
যৎসামান্য আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। বধিরতা, মানুষের কথা শুনতে পায় না।
নাক থেকে রক্তস্রাব হয়।
স্রাব বেশি দিন স্থায়ী হয়। মাসিকের পরিবর্তে অন্য দ্বার দিয়ে রক্তস্রাব। জরায়ুর ভিতরটা স্ফীত। ঠান্ডা খাবার খেতে পছন্দ করে।
স্যাবাইনা
রিস্ট জয়েন্টে সন্ধি বাত জনিত স্ফীতি। পায়ের আঙ্গুলের স্ফীতি ভাব। অতি রজঃস্রাব। রক্তের খন্ডগুলো কালো বর্ণের।
প্রচুর রক্তস্রাব, কিছুতেই বন্ধ হয় না। উজ্জ্বল বর্ণ। গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা হয়, কোমরে ব্যথা।
গর্ভস্রাব, প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তস্রাব।
খুব যন্ত্রণা হয়, যন্ত্রণা উরুদেশ পর্যন্ত নেমে আসে।
নাইট্রিক অ্যাসিড
উপদংশ দোষ, পারদ অপব্যবহার হেতু কুফলে উপযোগী।
আক্রান্ত স্থানে সূঁচ ফোটানো ব্যথা অনুভব হয়।
শরীরের সকল দ্বার থেকে রক্তস্রাব, সেই রক্ত উজ্জ্বল।
গুহ্যদ্বারে আঁচিল এবং উপমাংস।
জরায়ুর মুখে আলসার, সেইজন্য প্রচুর রক্তস্রাব। স্রাবের রক্ত কাদা জলের মতো, দুর্গন্ধ যুক্ত। প্রস্রাবে ঝাঁঝালো গন্ধ।
ক্রিয়োজোট
অতিরিক্ত স্রাব। বিশ্রাম বা শয়নে বৃদ্ধি। রোগী যদি চলাফেরা করে তবে স্রাব কম হয়।
কানে কম শোনে, কানের মধ্যে নানা ধরনের শব্দ অনুভব করে।
সহবাসের পর রক্তস্রাব। স্রাব হাজাকর ও জ্বালাকর। স্রাবে গন্ধ থাকে।
মাসিকের আগে ও পরে সাদা স্রাব হয়। যোনিপথে ক্ষতিকর চুলকানি।
সিকেলি কর
জরায়ুর সংকোচন শক্তি বৃদ্ধি করে, এইজন্য রক্তস্রাব নিবারণে এই ঔষধের যথেষ্ট ক্ষমতা।
ক্ষীন, দুর্বল, শীর্ণ, পেশীতন্তুর শিথিলতা, শরীরের সমস্ত দ্বার থেকে রক্তস্রাব।
জীর্ণ-বৃদ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী।
ঋতুশূল, তৎসহ শীতলতা অথচ উত্তাপ অসহ্য। জরায়ুতে জ্বালাকর বেদনা। বাদামি বর্ণের প্রদর স্রাব।
ঋতুস্রাব অনিয়মিত, প্রচুর, কালো, জলের মতো। রক্ত অবিরত চুঁইয়ে পড়ে – এই অবস্থা পরবর্তী ঋতুকাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
সিপিয়া
বস্তিপ্রদেশ থেকে সবকিছু বের হয়ে যাবে এমন অনুভব হয়। Breaking Down অনুভূতি।
এই জন্য রোগী উরুর উপর উরু রেখে চেপে বসতে চায়। জরায়ুতে বেদনা। প্রস্রাবে অম্লগন্ধ পাওয়া যায়।
নিয়মিত সময়ের বহু পূর্বে প্রচুর ঋতুস্রাব। দুর্গন্ধ যুক্ত প্রস্রাব। জরায়ুর স্থানচ্যুতি হতে দেখা যায়। মনে হয় যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ু বের হয়ে যাবে।
ঋতুস্রাব অতি বিলম্বিত হয়। ঋতুস্রাবের সময় চেপে ধরার মতো ব্যথা হয়।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ যা কিনা লক্ষণ অনুযায়ী অতিরজঃ (Bleeding very heavy period) চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়
ইপিকাক, ক্রোকাস স্যাটাইভা, চায়না, স্টিলিয়াম, প্লাটিনাম, ইরিজেরন, ক্যামোমিলা, সিমিসিফিউগা, অস্টিলেগো, মিলিফোলিয়াম, প্রভৃতি।
বায়োকেমিক মতে অতি রজঃস্রাবের (Uterine bleeding) সেরা ওষুধ
ফেরাম ফস – উজ্জ্বল লাল বর্ণের রক্তস্রাব হলে ব্যবহারযোগ্য।
নেট্রাম ফস – অম্ল রোগ বা এসিডিটি সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ভালো কাজ করে।
সাইলেসিয়া – রজঃস্রাবের সাথে পূঁজ বা পূঁজের মতো শ্লেষ্মা নির্গত হলে ব্যবহার যোগ্য।
আরও পড়ুন-