সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টস : ১২টি মজার মনস্তাত্ত্বিক কৌশল
বাস্তব জীবনে বুদ্ধিমান হতে চায় না কে?! সবাই চায় নিজেকে অন্যদের তুলনায় জ্ঞানী ও সচেতন হিসেবে প্রদর্শন করতে। কিন্তু এভাবে প্রদর্শন করার উপায় আদৌ আছে কি? হ্যাঁ, অবশ্যই আছে! আর সেই উপায়টা হলো মানুষের সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টস বা প্রাথমিক মনস্তাত্ত্বিক কৌশল সমূহ সম্পর্কে জানা।
মানুষের মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা হিউম্যান সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট সম্পর্কে যারা একদমই পরিচিত নন, তাদের উদ্দেশ্যে বলব, মনস্তাত্ত্বিক কৌশল হলো অনেকটা আপনার ব্যবহৃত কোনো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের ম্যানুয়াল পেপারের মতো। এটা জানতে ও বুঝতে পারলে আপনি মানুষের আচরণ ও ভাবগত কিছু কমন বৈশিষ্ট্য বুঝতে পারবেন, যা আপনাকে আশেপাশের মানুষ এবং নিজের সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা দেবে।
প্রকৃতপক্ষে, এখন প্রচুর সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট বা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক কৌশল জানা সম্ভব হয়েছে, যা এই একটি আর্টিকেলের ভেতর আটানো দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই এখানে শুধু মাত্র বিশেষ কয়েকটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বলে রাখা ভালো, এখানে উল্লেখিত সমস্ত কৌশল সবধরনের পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কেননা, এটা সংখ্যাগরিষ্ঠদের বৈশিষ্ট্য, সবার নয়।
১। যোগাযোগের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা হিউম্যান সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টস
সবার কাছে নিজেকে হাইলাইটেড হিসেবে উপস্থাপন করতে চান? তবে গল্পের সময় কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে হলে ডুড, দোস্ত বা বন্ধুদের জন্য নির্ধারিত ব্যাঙ্গ নামে না ডেকে সরাসরি তার নাম ধরে সম্বোধন করুন।
কেন? কারণ এই পৃথিবীতে সবার প্রিয় শব্দ হলো তার নামটা! এজন্য গল্পের মাঝে যখন কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলার প্রয়োজন হবে, তাদের নাম ধরে বললে সে কিছুটা পুলকিত হবে। এরপর আপনি যাই বলুন না কেন, সে সেটা যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে শুনতে বাধ্য।
- গল্প করার সময় অবশ্যই সঙ্গীর দিকে সামান্য ঝুঁকে বসুন। সেইসাথে আইকনটাক্ট দৃঢ় রেখে পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন। দেখবেন আলোচনায় আর কারো বিরক্তি আসছে না।
- কারো কাছে কোনকিছু আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে চাচ্ছেন, কিন্তু সে এড়িয়ে যাচ্ছে? তার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকুন। দেখবেন নিজে থেকেই আরো বলতে শুরু করেছে!
- গ্ৰুপ ডিসকাশনে অন্যদের পাড়াপাড়িতে নিজে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না? সুযোগ বুঝে সামান্য ভারী কিছু আলগোছে (যেমন: একটি কলম বা পেন্সিল) নিচে ফেলে দিন। তারপর কথা বলার পালা আপনার!
আরও পড়ুন-
সঙ্গীরা কি আপনার কথায় মনোযোগী?
অনেকে মিলে গল্প বা আলোচনা করার সময় আপনি কিছু সাইকোলজিক্যাল ট্রিক্স ব্যবহার করে বুঝে ফেলতে পারেন কে আপনার কথায় মনোযোগী আর কে ডুবে আছে অন্য খেয়ালে।
পায়ের দিকে তাকান। লক্ষ্য করে দেখুন কার পা আপনার পা বরাবর। যাদের পা আপনার পায়ের দিকে বাঁকানো আছে, তারাই আপনার আদর্শ শ্রোতা! আর বাকিরা অন্য ভাবনায় ডুবে আছেন।
আরো একটা ট্রিক ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আপনার বলা কোনো বাক্য সামান্য পরিবর্তন করে পুনরাবৃত্তি করে দেখুন। যদি আপনার বন্ধুটির মুখের ভাবে কোনো পরিবর্তন না আসে, যদি সে নির্বিকার থাকে কিংবা স্বাভাবিকভাবে মাথা ঝাঁকায়, বুঝে নিন তার মনোযোগ অন্য কোথাও।
২। বক্তৃতা বা তর্কে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা হিউম্যান সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টস
বক্তৃতা
শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাচ্ছেন? একটা গল্প দিয়ে বক্তৃতা শুরু করুন। দেখবেন ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
- মঞ্চে উঠে অনেক মানুষের সামনে কিছু বলতে ভয় লাগে? উত্তর হ্যাঁ হলে প্রথমেই তোঁতলানো না শুরু করে আপনার ভয়ের কথাটাই শ্রোতাদের জানিয়ে দিন। এতে আপনার মানসিক চাপ কমবে।
- প্রথমবার মঞ্চে ওঠার আগে একটা ছোট্ট কাজ করতে পারেন। এমন জায়গায় যান, যেখানে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই (যেমন ওয়াশরুম)। তারপর হাসিমুখে “Winning Position” এ কিছুক্ষণ স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে থাকুন। এতে আপনার ব্রেইন পরবর্তী বেশ কিছুক্ষণ শুধুই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা সরবরাহ করবে।
- মঞ্চে ওঠার সময় একবারো এটা ভাববেন না যে, “আমি মঞ্চে প্রথমবার উঠছি এবং কিছু ভুল বললেই সবাই হাসবে”। বরং নিজেকে একজন পেশাদার বক্তার কল্পনা করুন। ভাবুন, সবাই উদগ্রীব হয়ে আপনার বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
তর্ক
তর্ক-বিতর্কে নিজেকে শান্ত রাখা প্রয়োজন। উত্তেজিত না হয়ে শান্ত ও স্থির কন্ঠে তর্ক চালিয়ে যান। এতে প্রতিপক্ষের উপর দারুন প্রভাব পড়বে। তবে সবার সাথে এবং সকল জায়গায় তর্ক করা উচিৎ নয়।
৩। উপহারে প্রদানের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা হিউম্যান সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
বন্ধুর জন্য উপহার নির্বাচনে
বন্ধু বা কাজিনের জন্মদিন? কি উপহার দেবেন ভেবে পাচ্ছেন না? সেই বন্ধুর কাছ থেকেই জেনে নিন না তার কি চাই! আরে না না, এতে আপনার সাইপ্রাইজ একদম নষ্ট হবে না। কিভাবে?
তাকে আন্দাজ করতে বলুন আপনি তার জন্মদিনে কি দিতে চলেছেন। সে তখন এমন কোন কিছুর কথা জানাবে যা পেলে সে খুশি হবে। পরে বলে দেবেন তার ধারণা সঠিক হয়নি, আর পরে তাকে উপহার হিসেবে সেটাই দিন!
অথবা তাকে বলুন কাল-পরশু আপনার এক বন্ধুর জন্মদিন এবং উপহার কি দেওয়া যায় সে বিষয়ে তার কাছ থেকেই পরামর্শ নিন।
অথবা সরাসরি তাকে কোন শপে নিয়ে গিয়ে বলুন, আপনার বন্ধুর জন্মদিনের জন্য উপহার সিলেক্ট করে দিতে। তখন সে যেটা পছন্দ করবে সেটাই নিন। এমনকি রেপিং পেপারটাও যেন তার পছন্দের হয়! সে যখন নিজের জন্মদিনে নিজেরই সিলেক্ট করা উপহারটি পাবে, তখন তার জন্য সারপ্রাইজটিও হবে দ্বিগুণ!
- অনেকে কাকে কোন অনুষ্ঠানে কি সারপ্রাইজ দেবে, তা ভেবে পায় না। সাইপ্রাইজ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে যাকে সারপ্রাইজ দেবেন, ঘুরিয়ে পেচিয়ে তার মত নেয়ার চেষ্টা করবেন। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে উপহার হিসেবে দিতে পারেন মহামূল্যবান উপহার বই!! যেকোনো বিবেকবান মানুষের জন্য বইয়ের চেয়ে দামী উপহার আর হতেই পারে না। তবে এক্ষেত্রে কার লেখা ও কোন বিষয়ের বই পছন্দ করছেন, সেটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিশ্চয়ই আপনার কলিগের কাছ থেকে কিশোর উপন্যাস আশা করবেন না!
- পছন্দের মানুষের জন্য সবসময়ই দামী উপহার কেনা থেকে বিরত থাকুন। কোনো উপলক্ষ না থাকলে শুধুমাত্র দেখা করতে যাওয়ার সময় একটা ফুল সাথে নিয়ে যান।
নিজের জন্য সারপ্রাইজ!
কথাটা অদ্ভুত শোনাচ্ছে তাই না? আপনার শীতের সোয়েটার বা কোট তুলে রাখার আগে পকেটে কিছু টাকা রেখে দিন। পরের বছর আপনি পেতে চলেছেন নিজেরই তৈরি করা দারুন একটি সারপ্রাইজ!
অথবা দরকারি কোন ফাইল যেটা সচরাচর প্রয়োজন পড়ে না তাতে বন্ধুদের ছবি/তাদের কোন জিনিস রেখে দিন। হঠাৎ যখন ফাইলটা প্রয়োজন হবে তখন আপনি অনেকটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই স্মৃতির শহর থেকে ঘুরে আসবেন!
৪। ঘুমের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
সকালে ঘুম ভাঙ্গছে যে না?
রাতে ফোনে এলার্ম দিয়ে ফোনটা একটু দূরে রাখুন যেন সকালে আপনাকে উঠে গিয়ে এলার্ম বন্ধ করতে হয়।
এছাড়া এক কাজ করতে পারেন। ১০ থেকে ০ পর্যন্ত গুনুন। দেখবেন আপনি নিজে থেকেই বিছানা থেকে উঠে পড়তে চাইবেন। কারণ মস্তিষ্ক একটি কাজ শুরু করার পর হতাশাজনক আলসেমি পছন্দ করে না!
ভালো ঘুমের জন্য
রাতে ঘুমানোর সময় গান শোনার অভ্যাস কি আপনার আছে? না থাকলে করে ফেলুন। গবেষণায় জানা গেছে যারা রাতে ঘুমানোর সময় ক্লাসিক্যাল মিউজিক বা মৃদু স্বরের গান শোনেন তুলনামূলকভাবে তাদের ঘুম ভালো হয়!
ভালো ঘুম হয়নি?
রাতে ঘুম ভালো না হলে সারাদিন আমাদের তার খেসারত দিতে হয়। ক্লান্তি, জড়তা, অবসাদ যেন চারিদিক দিয়ে ঘীরে ধরে। কিন্তু এভাবে তো একটা দিন নষ্ট করা যায় না! এমন হলে সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের ব্রেইনকে বলুন, “আমি ভালো ঘুমিয়েছি।” এভাবে মস্তিষ্ককে বোকা বানিয়ে সারাদিনের ক্লান্তি কমিয়ে ফেলতে পারেন অনেকটাই!
৫। জীবনের লক্ষ্য অর্জনে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
জীবনের লক্ষ্যে স্পষ্টতা
আপনার স্বপ্নগুলো একটি কাগজে লিখুন। ৫ মিনিট স্বপ্নগুলো নিয়ে ভাবুন। এতে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে জীবনের কাছ থেকে আপনার আসলে কি চাই! এভাবে নির্ধারণ করে নিন আপনার জীবনের লক্ষ্যটি।
সময়ের অপচয়
ফোনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন? ফোনের লক স্ক্রীনের পাসওয়ার্ডে রাখুন নিজের জীবনের লক্ষ্যটি! এটি আপনাকে প্রতিবার মনে করিয়ে দেবে, লক্ষ্যে পৌঁছাতে ঠিক এই মুহূর্তে আপনার কি করা উচিত!
কার্যক্ষমতা বাড়াতে
কোন সৃজনশীল কাজের সময় ব্যাকগ্ৰাউন্ডে ক্লাসিক মিউজিক (লিরিক্স ছাড়া শুধুই মিউজিক) ছেড়ে রাখতে পারেন। তবে খুবই হালকা ভলিউমে। দেখবেন কাজের মনোযোগ বেড়ে যাবে। সেইসাথে বেড়ে যাবে আপনার কার্যক্ষমতাও!
চকলেট মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ক্রিয়েটিভ কাজগুলোতে সঙ্গী হিসেবে মিউজিকের সাথে রাখতে পারেন চকলেটও।
আত্মবিশ্বাস বাড়াতে
প্রতিদিন অন্তত একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেই হাসুন এবং বলুন,” আমি নিজেকে পছন্দ করি।” আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে কয়েকগুণ!
মনোযোগ বাড়াতে
কোন কাজ শুরু করার আগে নিজের মস্তিষ্ককে convince করে নিন। কাজে মনোযোগ আসবে।
ক্ষুধা কনসেনট্রেট করতে সাহায্য করে। এজন্য গভীর চিন্তা ভাবনাগুলো করতে পারেন খালি পেটে!
একটি কাগজে ছোট বিন্দু এঁকে তার দিকে একমনে বেশ খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকুন। আপনার মনোযোগ শক্তি বাড়াতে এটি একটি দারুন ব্যায়াম।
সিদ্ধান্ত গ্ৰহণে
দুটি সিদ্ধান্তের মধ্যে যেকোন একটি বেছে নিতে হলে তুলনামূলক কঠিনটি বেছে নিন। এতে পরে আর আপনাকে আফসোস করতে হবে না।
ক্লান্তি দূর করতে
পড়াশোনা বা কাজের মাঝে ক্লান্তি এসে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে এই ক্লান্তির কাছে তো আর হার মেনে নেওয়া যায় না! ক্লান্তি দূর করতে নিতে পারেন ৮ মিনিটের একটি ছোট্ট ন্যাপ! ৮ মিনিটের এই ঘুম আপনার এনার্জি কার্যকরভাবে ফিরিয়ে আনবে।
৬। বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির জন্য মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
কেউ তাকিয়েই আছে?
কেউ যদি আপনার দিকে দীর্ঘসময় ধরে তাকিয়ে থাকে তবে আপনার অস্বস্তি হবেই। একটি সাইকোলজিক্যাল ট্রিক ব্যবহার করে তাকে কোন কিছু না বলেও আপনি এই পরিস্থিতির সামাল দিতে পারেন। শুধু কিছুক্ষণ তার পায়ের জুতো বা চুলের দিকে তাকিয়ে থাকুন। ব্যাস, এতেই কাজ হবে। প্রচন্ড অস্বস্তিতে সে চোখ সরিয়ে নিতে বাধ্য।
কেউ কি আড় চোখে তাকাচ্ছে!
আপনার যদি মনে হয় কেউ আপনাকে আড় চোখে ফলো করছে তবে তা নিশ্চিত হতে হঠাৎ করেই হাই তুলুন। যদি ঐ ব্যক্তিটি আপনাকে ফলো করে থাকে তবে সেও হাই তুলবে।
কেউ অকারণে অপমান/গালাগালি করছে?
কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন? আর না পড়ে থাকলেও ভবিষ্যতে যে পড়বেন না তার কি নিশ্চয়তা! এই বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে ঐ ব্যাক্তিটিকে পুরোপুরি এড়িয়ে যান। সহজ কথায়, দেখেও না দেখার আর শুনেও না শোনার ভান করে যান। দেখবেন কিছুক্ষণ পর ঐ ব্যাক্তি নিজেই রেগে যাচ্ছে।
অথবা আপনি আরো একটি কাজ করতে পারেন। খুব মিষ্টি করে হেসে সামনে দিয়ে চলে যান। তখন আপনাকে রাগাতে না পারায় তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে এবং নিজেই চরম হীনমন্যতায় ভুগবে। এমতাবস্থায় সে উত্তেজনার মাথায় এমন কিছু করে ফেলতে পারে, যা তাকে সকলের চোখে অনেক নিচে নিয়ে যাবে।
কোন বিষয় নিয়ে বিরক্ত?
কারো দ্বারা অপমানিত হলে বা কারো কটু কথায় রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। আর এই রাগের কারণে নষ্ট হয়ে যায় প্রশান্তি। প্রতিবাদ করতে না পেরে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকেন অনেকেই। আপনার জীবনেও যদি এমন কোন বিরক্তিকর পরিস্থিতি আসে তবে ডায়রিতে লিখে রাখুন। রাগ, ক্ষোভ, অভিমান, অভিযোগ সব লিখে রাখুন নির্দিষ্ট একটি ডায়রিতে। দেখবেন ভালো অনুভব করছেন।
অথবা একটি কাগজে লিখে তা মুড়িয়ে ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন ডাস্টবিনে! এই ট্রিকও কিন্তু মন্দ নয়।
৭। কারো কাছে কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
যখন আপনার কারো কাছ থেকে কোন সাহায্যের প্রয়োজন হবে তখন “আপনি কি আমাকে সাহায্য করতে পারেন?” এভাবে না বলে সরাসরি বলুন, “আমার সাহায্য দরকার।” হ্যাঁ, জানি দুটো বাক্যের অর্থ একই দাঁড়ায়। তবে দ্বিতীয় বাক্যটি আপনার ব্যক্তিত্বের উপর ইতিবাচক ছাপ ফেলবে।
কারো কাছে টাকা ধার চাওয়ার কথা ভাবছেন? তবে প্রয়োজনের চেয়ে সামান্য বেশি চান। ধরুন আপনার ১০০০ টাকা প্রয়োজন। আপনি তার কাছে চাইবেন ১৫০০ টাকা। সে অজুহাত দেখালে বলবেন, ” আপাতত ১০০০ হলেই হবে।” এখন আপনার টাকাটা পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু আগের চেয়ে বেশি!
সকলের কাছে না চেয়ে কোন একজনের কাছে সাহায্য চান। ধরুন আপনার কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে আছেন। তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে সাহায্য চাইবেন না। কারণ তখন তারা আপনাকে সাহায্য না করে একে অপরের উপর দায়িত্ব দিতে চাইবে!
৮। নার্ভাস ফিল করা বন্ধের মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
চুইংগাম চিবাতে পারেন। এতে আপনার ব্রেইন ভাববে আপনি নার্ভাস নধেরধেরন! কারণ ইতোমধ্যেই আপনি একটি কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আর যখন ব্রেইন ভাববে আপনি নার্ভাস নন তখন আপনার বাইরের প্রতিক্রিয়াটাও হবে সে হিসেবেই।
ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন? অথবা কোন টিউশনিতে? প্রথম দিন সামান্য নার্ভাস তো ফিল হবেই। নার্ভাসনেস কাটাতে আপনার ব্রেইন কে বলুন, তারা যা চায়, তা আপনার কাছে আছে। দেখবেন সব অস্বস্তি উধাও!
কিছুক্ষণ পরই পরীক্ষা? খুব চিন্তা হচ্ছে? উদ্বেগগুলো একটি কাগজে লিখে ফেলুন। দুশ্চিন্তা অনেকটা কমে যাবে।
৯। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
যে বন্ধুটি আপনাকে ভীষণ পছন্দ করে!
একদল বন্ধুদের সাথে গল্প হচ্ছে কিন্তু হাসাহাসি হচ্ছে না এটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য রূপে বিবেচনা করা যেতে পারে! তবে গল্পের আড্ডার এই হাসির ঢেউ থেকে জেনে নিতে পারেন কোন বন্ধুটি আপনাকে ভীষণ পছন্দ করে! গল্পের কোন মজার ঘটনায় যখন সবাই হাসতে শুরু করবে তখন শুধু হাসিতে ব্যস্ত না হয়ে আশেপাশেও তাকিয়ে দেখুন। খেয়াল করুন কোন বন্ধুটি আপনার দিকে তাকিয়ে হাসছে। বাস্তবিক ভাবে সে বা তারাই অন্যদের চেয়ে আপনাকে বেশি পছন্দ করে। কারণ মানুষ হাসার সময় তার দিকেই তাকায় যাকে সে ভীষণ পছন্দ করে!
কোন নির্দিষ্ট ব্যাক্তি আপনাকে পছন্দ করে কি না তা জানতে তার কাছে কলম বা পেন্সিল ধার চেয়ে দেখুন। যদি সে দিতে না চায় তবে বুঝে নিন আপনি তার অপছন্দের তালিকায় পড়ে আছেন।
কারো বিশেষ পছন্দের বা বন্ধু হতে চান?
ব্যক্তিত্ব দৃঢ় রাখুন। কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি, আই কন্টাক্ট, বাহ্যিক পারিপাট্য সবকিছুই হওয়া চাই দুর্দান্ত।
সেইসাথে তার কাছে ছোটখাটো সাহায্য চাইতে পারেন। যেমন: কোন বই বা কলম ধার চাইতে পারেন। অথবা তাকে খোটখাটো কোন উপহার দিতে পারেন। এতে আপনাদের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ ভালো হবে।
১০। ব্যক্তিত্ব উন্নয়নে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
আপনার প্রতি অন্যদের আগ্ৰহ বাড়াতে চান? নিজেকে কখনো সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করবেন না। কিছু তথ্য গোপন রাখুন। আপনার সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে চাইলে যে সকল তথ্য না জানালেই নয় তা বাদে আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। তাহলে অন্যরা আপনার মধ্যে রহস্য খুঁজে পাবে যা আপনাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলবে।
যারা দুটো ভাষায় কথা বলেন তারা যখন এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় স্যুইচ করেন তখন খুব সতর্কভাবে ভাষার সাথে সাথে তাদের ব্যক্তিত্বও পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই চেষ্টা করুন একের অধিক ভাষা আয়ত্ত করার।
লাল কলম
বিশেষ বিশেষ দিনে বা বিশেষ জায়গায় যাওয়ার সময় (যেমন: টিউশনির প্রথম দিন) সাথে একটি লাল কলম রাখুন। এটি আপনার ব্যাক্তিত্বে প্রভাব ফেলবে।
মানুষ চেনার ক্ষেত্রে
বলা হয় লেনদেন না হলে মানুষ চেনা যায় না। কাউকে টাকা ধার দিয়ে নির্ধারিত দিনে টাকা চেয়ে দেখুন। তার দায়িত্ববোধ ও ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে জেনে যাবেন।
১১। মিথ্যা ধরার ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
কারো কাছ থেকে কিছু জানার হলে কপালের মাঝবরাবর তাকিয়ে প্রশ্ন করুন। প্রচন্ড অস্বস্তিতে সে চাইলেও মিথ্যে বলতে পারবে না!
দুজন ব্যাক্তির মধ্যে কে মিথ্যে বলছে বোঝার জন্য তাদের চোখের দিকে তাকান। যার চোখ অন্যদের কাছে তার কথার জন্য বৈধতা চাইবে মিথ্যা সেই বলছে। তাছাড়া সে বারবার চোখ নিচে নামিয়ে ফেলবে। কারণ মিথ্যা বলে চোখে চোখ রাখা দায়।
মেয়েরা তুলনামূলকভাবে বেশি মিথ্যা বলে। এমনকি তারা মিথ্যা বলে বেশ গুছিয়ে, বিশ্বাসযোগ্যভাবে। সেইসাথে তারা কোন মিথ্যা সহজে ধরেও ফেলতে পারে। তাই আপনার বান্ধবী বা প্রেমিকা যদি আপনাকে কোন প্রশ্ন করেন, তার ঠিকঠাক উত্তর দিয়ে দেওয়াই ভালো। কে বলতে পারে, উত্তরটি হয়তো আগে থেকেই তার জানা!
১২। আরো কিছু মনস্তাত্ত্বিক কৌশল বা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট
মুদি দোকান
খালি পেটে মুদি দোকানে যাবেন না। কারণ তখন আপনি দোকান থেকে এমন অনেক জিনিস কিনে ফেলবেন যা আপনার প্রয়োজন নেই।
গান
কোন গান মাথায় একদম গেঁথে গেছে? বারবার মনে পড়ছে? তাহলে গানের শেষ দুই লাইন গেয়ে নিন। এতে মস্তিষ্ক ভাববে কাজটা শেষ হয়েছে। আর শেষ হয়ে যাওয়া কাজ মস্তিষ্ক দ্বিতীয়বার করতে চায় না!
দর কষাকষি
দর কষাকষির সময় কিছু সময় নীরব থাকুন। দেখবেন অপরপক্ষ নিরবতা ভাঙ্গতে তুলনামূলকভাবে সহজ ছার দিয়ে দেবে।
শান্ত থাকতে
ঘরে একটি নীল বা সবুজ আলোর লাইটের ব্যবস্থা রাখুন। এটি আপনাকে শান্ত ও স্থির থাকতে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করবে।
জায়গা সম্পর্কে জানতে
কোন নতুন জায়গা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে সে এলাকার কোন চায়ের দোকানে চলে যান। দোকানদারের সাথে গল্প করতে করতে জায়গা সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে যাবেন।
ভীড়ের মধ্যে দ্রুত এগোতে
ভীড়ের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে যেতে চাইলে আশেপাশে না তাকিয়ে সোজা সামনে তাকিয়ে হাঁটুন। দ্রুত এগোতে পারবেন।
কাউকে কোন কথা বলতে দ্বিধাবোধ করছেন?
তাকে লিখে জানাতে পারেন। কারণ বলার চেয়ে লিখে জানাতে মানুষ বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আপনার এ কাজটি সহজ করতে এসএমএস, ই-মেইল অথবা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্ৰামের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো তো আছেই।
তবে আজ থেকেই শুরু করুন মজাদার এই সাইকোলজিক্যাল ফেক্ট গুলোর ব্যবহার আর জীবনে নিয়ে আসুন রোমাঞ্চকর অনুভূতি!
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-