শিশুদের সর্দি কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

শিশুরা প্রায়ই বৃষ্টিতে ভিজা, অত্যধিক গরম আবহাওয়া থেকে এসে ঘর্মাক্ত দেহে আইসক্রিম, ঠান্ডা খাবার, ঠান্ডা পানি, সরবত, তরল পানীয় পান বা ঠান্ডা পানিতে গোসল করা, ঘাম শরীরে শুকিয়ে গিয়ে ঠান্ডা লাগা প্রভৃতি কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই ধরণের পরিস্থিতিতে শিশুরা সহজেই সর্দি কাশি প্রভৃতিতে আক্রান্ত হয়। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সহজেই শিশুদের এই ধরনের তরুন বা হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া সর্দি কাশির চিকিৎসা সম্ভব।

আমার আজকের লেখাটি এই ধরনের হঠাৎ ঠান্ডা লেগে সর্দি ও কাশির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পর্কিত।

শিশুদের সর্দি কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সেরা হোমিও ওষুধ

শিশুদের সর্দি কাশির সেরা হোমিও ওষুধ
শিশুদের সর্দি কাশির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

কখনও বা কাশি ও জ্বরসহ নাক বন্ধ হয়ে যায়। শিশু হাঁপিয়ে উঠে, স্তন টানতে অক্ষম হয়। বুকে সর্দি বসে গেলে ক্ষতিকর লক্ষণাদির সৃষ্টি হয়। ঠান্ডা লাগার জন্য সর্দি-কাশি ও সেই সঙ্গে শারীরিক অস্থিরতা যুক্ত জ্বর হলে অ্যাকোনাইট ৩X এক বা দুই ঘন্টা পর পর খাওয়ালে তাৎক্ষণিক উপশম পাওয়া যাবে। ধীরে ধীরে জ্বর কমে আসবে ও শিশু সুস্থতার দিকে এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জ্বর কমা শুরু হলে ঔষধ প্রয়োগ বন্ধ করে দিতে হবে।

শিশুদের সর্দি কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ব্রায়োনিয়ার ব্যবহার
শিশুদের সর্দি কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ব্রায়োনিয়ার ব্যবহার

শুকনো কাশি, কাশির প্রভাবে বুকে ব্যথা অনুভব হলে, অনেকক্ষণ কাশলে অল্প একটু হলদে কফ বা রক্তের ছিটাযুক্ত শ্লেষ্মা নিঃসরণ হলে ব্রাইয়োনিয়া 3x বা 6 দিতে হবে। ব্রাইয়োনিয়ার শিশু রোগীরা কোষ্ঠবদ্ধতায় প্রচুর কষ্ট পায়। সামান্য নড়াচড়ায় মাথাব্যথা, শরীর বুকে-পিঠে ব্যথা প্রভৃতি অনুভব হয়। এছাড়া শিশু অস্থিরতার পরিবর্তে খুব একটা নড়াচড়া না করে চুপ করে শুয়ে থাকতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করে।

অত্যধিক দুর্বলতা, বমি ও শ্লেষ্মাযুক্ত ঘড়ঘড়ে কাশি লক্ষণে- অ্যান্টিম টার্ট 6 শ্রেষ্ঠ ঔষধ। এতে মনে হয় বুকে প্রচুর কফ রয়েছে। অথচ কাশলে কিছুই উঠে আসেনা। কফ বা শ্লেষ্মার আধিক্যের কারণে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অ্যান্টিম টার্ট 6 প্রয়োগে কাশি সরল হয়ে একটু বৃদ্ধি ঘটলে 30 শক্তির ঔষধের দু-এক মাত্রাতে কাশি সম্পূর্ণ ভালো হয়।

পাকা হলদে সর্দি অনবরত ঝড়তে থাকলে পালসেটিলা ৬। পালসেটিলার সর্দি ও কফ অনুত্তেজক এবং এই সর্দি প্রাথমিকভাবে ক্ষতকারক হয় না। শিশু পানি খাওয়ার প্রতি অনিহা প্রকাশ করে অর্থাৎ পানি খেতে চায়না। সাধারণত পানির স্বাদটা ভালো লাগেনা।

সকালের দিকে সর্দি গাঢ় থাকে। যতই দিন গড়ায় ততই সর্দি তরল হতে থাকে। পরবর্তীতে সন্ধ্যার পরে আবার গাঢ় সর্দি বের হতে দেখা যায়। শিশু গরম আবদ্ধ ঘরে কষ্ট পায়, কান্নাকাটি করে ও খোলা হাওয়ায় তুলনামূলকভাবে ভালো বা সুস্থ বোধ করে।

শিশুদের সর্দি ক্ষতকারক হয়ে পরলে উক্ত সর্দি ঝরে নাক ও ঠোঁটে ঘা হলে আর্সেনিক ৬ প্রয়োজন হবে। আর্সেনিক সাধারণত রোগের পুরাতন অবস্থায় যখন রোগী অসুস্থতার কারণে খুব দুর্বলতা অনুভব করে – তখনই প্রয়োজন হয়।

নাকের সর্দি বসে গিয়ে শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কি?

সর্দি বসে গিয়ে আক্ষেপযুক্ত কাশি ও সেই সঙ্গে প্রচুর শ্লেষ্মা বের হলে, বমি বা গা বমি-বমি ভাব হলে ইপিকাক ৩X বা ৬ কাশির তীব্রতা কমে না আসা পর্যন্ত প্রতি ৩ ঘন্টায় ১ বার করে খাওয়াতে হবে।

ইপিকাকের কাশির চিত্রটা একটু তীব্র হয়। মনে হয় কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যাবে। বুকে ও গলায় সাই সাই শব্দ হয়। কিছুটা শ্বাসকষ্ট হয়। শিশুর বুকে বা শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মা জমে গলা সাঁই সাঁই করলে, কখনও বা বমি হয়ে শ্লেষ্মা বের হলে ইপিকাক সুন্দর কাজ করে।

সর্দি কিছুটা গাঢ় আঠাল হয়ে আসলে যখন দেখা যায় সর্দি বা শ্লেষ্মা লম্বা দড়ির মত হয়ে নাক দিয়ে বা মুখ দিয়ে ঝুলে পড়েছে তখন ক্যালি বাইক্রম ৬ সর্বাধিক কার্যকরি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।

সর্দি বসে গিয়ে গলায় আঠাল শ্লেষ্মার সৃষ্টি করলে, উক্ত শ্লেষ্মা সহজে বের হয়ে না আসলে ক্যালি বাইক্রম কণ্ঠনালীর উত্তজিত টিস্যুগুলোকে শান্ত করবে। শ্লেষ্মা সরল করে বের করবে। শ্বাসকস্ট হলে তা থেকে উপশম দিয়ে রোগীকে আরোগ্য করবে।

দুগ্ধপোষ্য শিশুর নাক বন্ধ হলে করণীয়

নাক বন্ধ হয়ে শিশু স্তন টানতে না পারলে নাক্স ভমিকা ৬ ভালো কাজ করবে। নাক্স ব্যর্থ হলে স্যাম্বুকাস ১X, ৩X প্রয়োগে উপকার হবে। ঠান্ডা লেগে সর্দি কিছুতেই না সারলে মার্কিউরাস ৬ খেতে দিতে হবে।

সর্দি শুকিয়ে গিয়ে কখনও কখনও শিশুর নাকের ফুটো বন্ধ হয়ে যায়। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, স্তন টানা ও ঘুমের ব্যাঘাত হয়।

এমতাবস্থায় বুকে বা গলার নিম্নাংশে সাঁই সাঁই শব্দ হলে, শ্লেষ্মাস্রাব বা নাক শুকনো বোধ হলে প্রভৃতি লক্ষণে ডালকামারা ৬, স্যাম্বুকাস ৩X বা নাক্স ভম ৬ লক্ষণানুযায়ী খাওয়ালে সর্দিতে শিশুর নাক বন্ধ হবার সমস্যা থেকে নিস্কৃতি পাওয়া যাবে।

নাক বুঁজে বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হলে- এন্টিম টার্ট ৬, তরল সর্দিস্রাবের জন্য নাক বন্ধ হয়ে গেলে- ক্যামোমিলা ৬ বা ১২ প্রয়োজন হবে। সর্দি নিতান্ত শুকিয়ে গেলে বুকে গরম সরষের তেল প্রয়োগ করলে শ্লেষ্মা তরল হতে পারে। তুলি দিয়ে ধীরে ধীরে মামড়ি বের করে দিলে কষ্ট কমে আসবে।

শিশুদের সর্দিজনিত হাঁচির সেরা হোমিও ঔষধ

অনবরত সর্দি ঝড়ে নাকের পলিপাস বড় হয়ে গেলে, তার ফলাফল স্বরূপ প্রায়ই সকাল দিকে বা একটু ঠান্ডা আবহাওয়া বা ঠান্ডা বাতাস লাগলে নাক দিয়ে অনবরত সর্দি ঝড়ার পাশাপাশি হাঁচি হলে এলিয়াম সেপা ৬ বা ৩০ কার্যকরি।

এলিয়াম সেপাতে নাক ও চোখ দিয়ে প্রচুর সর্দি ঝড়ে। তবে এর নাকের সর্দি ক্ষতকারি হয়। ফলে উক্ত সর্দি ঝড়ে নাকের ভেতরে বা গোঁড়ার দিকে ক্ষত দেখা যায়।

শিশুদের সর্দি কাশি, সর্দিজ্বর ও হাঁচির আর একটি খুব ভালো ঔষধ জাস্টিসিয়া এডাটোডা (Justicia Adhatoda Q) বা বাসক। এটা আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের ঔষধ।

শিশুদের সর্দি কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় জাস্টিসিয়ার ব্যবহার
শিশুদের সর্দি কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় জাস্টিসিয়ার ব্যবহার

জাস্টিসিয়া মূল মাদার টিংচার এর কার্যকারিতা ও ব্যবহারবিধি

  • শুকনা ও যন্ত্রনাদায়ক কফ থেকে দ্রুত উপশম দেয়।
  • শ্বাসনালীর উত্তেজিত মিউকাস আবরণকে শান্ত করে।
  • প্রদাহজনিত কাশি নিবারণ করে ও তদজনিত লক্ষণে কার্যকর।
  • অস্বস্থিকর কাশি ও তৎসহ বমিভাব নিয়ন্ত্রণ করে।
  • সর্দি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানী ও ব্রংকাইটিস এর কবল থেকে মুক্ত করে।
  • শিশুদের কাশি ও বুকে ব্যথায় চমৎকা ফল দেয়।

নবজাতক অথবা শিশুদের শিশুদের সর্দি কাশির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় জাস্টিসিয়ার ব্যবহার

নবজাতক শিশুদের ২ থেকে ৩ ফোঁটা, ১ বৎসরের অধিক বয়সের শিশুদের ৫ থেকে ৭ ফোঁটা করে ১ চা-চামচ কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে ৩ থেকে ৪ বার খাওয়াবেন। প্রতাশিত ফলাফল পেতে অন্তত ৩ থেকে ৫ দিন খাওয়বেন। আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন।

আরও পড়ুন-

এলার্জি সর্দির সেরা হোমিও ওষুধ

Leave a Comment