রূপচর্চায় গ্রিন টি ‌: চুল, চোখ, নখ ও ত্বকের যত্নে গ্ৰিন টি এর ব্যবহার

গ্ৰিন টি শুধু স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যই নয় বরং রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যাপক ভাবে। ত্বক বা চুলের যত্নে গ্ৰিন টি যে ঠিক কতটা উপকারী তা অনেকের মতো আপনারও হয়তো অজানা। আজ তবে জেনে নিন রূপচর্চায় গ্রিন টি এর অসাধারণ ও চট জলদি কিছু ব্যবহার।

ত্বকের যত্নে গ্ৰিন টি এর ব্যবহার

গ্ৰিন টি তে থাকা কিছু উপকারী উপাদান ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ভেষজ হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা পলিফেনল, ফ্লোরাইড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি এজিং এবং অ্যান্টি-ইনফ্লাম্যাটরি উপাদান ত্বক সজীব ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এর মধ্যে থাকা ট্যানিন মুখের ফোলা ভাবও কমিয়ে আনে। রূপচর্চায় গ্রিন টি লিকার বা পাতা বেশ কয়েক ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক্লিঞ্জার হিসেবে | ত্বকের যত্নে গ্রিন টি

আপনার ব্যবহার করা ক্লিঞ্জারের সঙ্গে পরিমাণ মতো গ্ৰিন টি লিকার মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের গভীরে থাকা ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে ত্বক হয়ে উঠবে একদম ফ্রেশ।

স্ক্র্যাবার, ফেসমাস্ক, ফেসপ্যাক হিসেবে | রূপচর্চায় গ্রিন টি এর ব্যবহার

প্রাকৃতিক স্ক্র্যাবার ব্যবহারে সব রকম ক্ষতি এড়িয়ে ত্বকের কোমলতা ধরে রাখা যায়। এছাড়া ত্বকের মৃতকোষ এবং দাগছোপ দূর করতে নিয়মিত স্ক্র্যাব করা জরুরি। রূপচর্চায় গ্রিন টি এসব স্ক্র্যাবার তৈরিতেও কাজে লাগে। গ্ৰিন টি দিয়েই আপনি বেশ কিছু প্রাকৃতিক স্ক্র্যাবার, ফেসমাস্ক ও ফেসপ্যাক বানিয়ে ফেলতে পারেন।

  • ১ টেবিল চামচ চিনি, ১ টেবিল চামচ আটা, ১ চা চামচ আমন্ড গুঁড়ো এবং পরিমাণ মতো গ্ৰিন টি একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। স্ক্র্যাবারটি সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের মৃতকোষ দূর হবে।
  • ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে ১ চা চামচ গ্ৰিন টি পাউডার, ২ টেবিল চামচ মিল্ক ক্রিম এবং ১ চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • রোদে পোড়া দাগ দূর করতে, গরম পানিতে ৩০ মিনিট ধরে গ্ৰিন টি ভিজিয়ে রাখুন। লিকারটি ঠাণ্ডা হয়ে এলে তাতে সামান্য লেবুর রস ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • ত্বকের ক্লান্তি ভাব দূর করতে গ্ৰিন টি ব্যাগ গরম পানিতে ভিজিয়ে, ৫ মিনিট পর পানি থেকে তুলে ঠান্ডা করে নিন। টি ব্যাগটি মুখ ও গলায় ১০-১৫ মিনিট ধরে ঘষুন । এতে ত্বকের ক্লান্তিভাব খুব দ্রুত কেটে যাবে।
  • ত্বকের মৃতকোষ দূর করতে ১ চা চামচ গ্ৰিন টি গঁড়ো এবং ১ টেবিল চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ও ত্বক ধুয়ে ফেলুন।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে গ্ৰিন টি যুক্ত গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভাপ নিন। এরপর চা দানা গুলো ছেঁকে ত্বকে ম্যাসাজ করুন এবং কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • ফেস মাস্ক তৈরি করতে ১ টি পাকা কলা, ১ চা চামচ গ্ৰিন টি, ১ চা চামচ মধু এবং ১ চা চামচ টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব ভালো ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক হিসেবে কাজ করে।
  • গ্ৰিন টি ব্যাগ ছিড়ে ভেতর থেকে চা পাতা বের করে এর সাথে বেকিং সোডা ও পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। মিশ্রণটি বেশি ঘন মনে হলে তাতে সামান্য পানি যোগ করতে পারেন। এবার মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের লালচে ভাব ও অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে।
  • ১ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি, ১/২ টেবিল চামচ কমলার খোসা বাটা বা গুঁড়ো এবং ১/২ চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে মুখে স্ক্রাব করুন। ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এটি ব্রণের দাগে ম্লান হয়ে যাওয়া ত্বকে উজ্জ্বলতা ফেরাতে এবং ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।
  • ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর রস একসঙ্গে খুব ভালো করে মেশান। মিশ্রণটি স্মুদ হয়ে আসলে মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকের তেল অপসারণে খুব ভালো কাজ করে।
  • ১ চা চামচ দই, ১ চা চামচ গ্ৰিন টি এবং ১ চা চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটি একটি আদর্শ ফেসপ্যাক। এটি ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে এবং সেইসাথে ত্বকের মলিনতা ও বিবর্ণতা দূর করে। এছাড়া ব্রণ প্রতিরোধ ও রোদে পোড়া ভাব দূর করতেও সাহায্য করে।
  • আপনি চাইলে ফেসওয়াশের সঙ্গে গ্ৰিন টি মিশিয়েও ফেস মাস্ক তৈরি করতে পারেন। তবে তার কিছুক্ষণ পর অবশ্যই ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ত্বকের বলিরেখা দূর করতে ৩ টেবিল চামচ টকদই, ১ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি এবং এক চিমটি হলুদ বাটা/গুঁড়ো মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে প্যাকটিতে কয়েক ফোঁটা পানিও যোগ করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল মিশিয়ে নিন।
  • ব্রণ দূর করতে আধ কাপ পানিতে ১ চামচ গ্ৰিন টি ফুটিয়ে লিকার তৈরি করুন। তুলোর সাহায্যে লিকারটি ব্রণের ওপর লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন দুবার ব্যবহারে সহজেই ব্রণের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরাতে, গ্ৰিন টি তৈরির পর টি ব্যাগ ফেলে না দিয়ে তা থেকে পাতা বের করে নিন। এবার তাতে সামান্য পানি ও চিনি যোগ করে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • ফেসপ্যাক তৈরি করতে ১ চামচ মুলতানি মাটি, ১ চামচ গ্ৰিন টি, ১ চামচ বেসন, ১ চামচ মধু ও ১ চামচ কাঁচা দুধ খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ভালো ফল পাবেন।

মনে রাখবেন: স্ক্রাব বা ফেসপ্যাক সপ্তাহে ১/২ বার অথবা সর্বোচ্চ ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত স্ক্রাবিং ত্বকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

স্ক্রাবিং করার পর মুখে অবশ্যই বরফ বা ঠান্ডা গোলাপজল লাগিয়ে নিন । স্ক্রাবিং এর পর ত্বকের লোমকূপ খুলে যায়। বরফ ও গোলাপজল লোমকূপ বন্ধ করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে আপনি গ্ৰিন টি দিয়ে আইসকিউব বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। লোমকূপ বন্ধ করার পাশাপাশি এটি রোদে পোড়া ভাবও দূর করবে।

টোনার হিসেবে | ত্বকের যত্নে গ্রিন টি

টোনার লোমকূপের গভীরে থাকা ময়লা ও অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে। ফলে ত্বক থাকে ব্রণমুক্ত, উজ্জ্বল ও টানটান। রূপচর্চায় গ্রিন টি এর একটি দারুন ব্যবহার হলো গ্ৰিন টি টোনার। গ্ৰিন টি দিয়ে আপনি সহজেই বেশ কয়েকভাবে টোনার বানিয়ে ফেলতে পারেন।

  • ২ কাপ পানিতে ৩ চামচ গ্ৰিন টি ফুটিয়ে নিন। লিকারের রং হলুদ হয়ে এলে চুলা নিভিয়ে ফেলুন। কিছুক্ষণ পর লিকারটি ঠান্ডা হলে তা ছেঁকে স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। প্রয়োজন মতো ফ্রিজ থেকে বের করে ব্যবহার করুন।
  • চুলায় ২ কাপ পানিতে ৩ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি নিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। এরপর চুলার জ্বাল কমিয়ে লিকারটি ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। এবার লিকারটি চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে তাতে ১ চা চামচ লেবুর রস ও ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে নিন। ফ্রিজে সংরক্ষণ করে এটি ৫-৬ দিন ব্যবহার করা যাবে।
  • ১ কাপ পানিতে ৫ চা চামচ গ্ৰিন টি এবং ১ চা চামচ পুদিনা পাতা ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর ঠাণ্ডা করে ছেঁকে স্প্রে বোতলে ভরুন। ফ্রিজে সংরক্ষণ করে এটি ৬-৭ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
  • গরম পানিতে পরিমাণ মতো গ্ৰিন টি নিয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে লিকারটি ছেঁকে নিন। এবার এতে সামান্য গ্লিসারিন, অ্যালোভেরা জেল ও গোলাপজল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে রাখুন। ফ্রিজে সংরক্ষণ করে টোনারটি ৬-৭ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।
  • ২ কাপ পানিতে ২ চামচ গ্ৰিন টি ফুটিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা পছন্দের এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। প্রয়োজন মতো ফ্রিজ থেকে বের করে তুলোর সাহায্যে বা সরাসরি ব্যবহার করুন।

এই টোনারগুলো রাতে ঘুমানোর আগে, সানস্ত্রিম বা মেকআপ ব্যবহারের আগে এবং প্রতিবার মুখ ক্লিঞ্জিং এর পর ব্যবহার করতে পারেন।

ময়েশ্চরাইজার হিসেবে | ত্বকের যত্নে গ্রিন টি

সমপরিমাণ কোকোনাট অয়েল, আমন্ড অয়েল ও গ্ৰিন টি নিয়ে তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করে ব্লেন্ড করে নিন।সুগন্ধের জন্য সুগন্ধি এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ব্লেন্ডারে খুব ভালো করে ব্লেন্ড করে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি মুখ ও ত্বকের জন্য খুবই ভালো মানের ময়েশ্চরাইজার।

চুলের যত্নে গ্ৰিন টি | রূপচর্চায় গ্রিন টি

রূপচর্চায় গ্রিন টি এর ব্যবহার
Image by Yung-pin Pao from Pixabay

রূপচর্চায় গ্রিন টি এর আরেকটি দারুন ব্যবহার হলো চুলের যত্নে। চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এবং সেইসাথে চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে বেশ কয়েক ভাবেই গ্ৰিন টি ব্যবহার করতে পারেন।

হেয়ার প্যাক হিসেবে | চুলের যত্নে গ্ৰিন টি

  1. খুশকির সমস্যা সমাধানে ১ কাপ গরম পানিতে দুটি টি ব্যাগ ভিজিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। এবার তাতে একটি ডিম খুব ভালো করে মেশান। মিশ্রণটি আরো ঘন করতে চাইলে তাতে ১ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি পাউডার যোগ করতে পারেন। এবার মিশ্রণটি সম্পূর্ণ চুলে লাগিয়ে নিন। ২৫-৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  2. চুল পড়া রোধ এবং চুল দ্রুত লম্বা করতে ৩ কাপ পানিতে ৪ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি ফুটিয়ে লিকার তৈরি করুন‌। লিকারটি ছেঁকে এবং মুঠো ভর্তি মেথি নিয়ে একসঙ্গে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করে নিন। পেস্টটি চুলের আগা থেকে গোড়া সম্পূর্ণ চুল ও স্কার্ল্ফে লাগান। ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
  3. চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে ২ কাপ গরম পানিতে ৩ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ঠান্ডা হলে লিকারটি ছেঁকে নিন। আপনি চাইলে তাতে কয়েক ফোঁটা পেপারমিন্ট অয়েলও যোগ করতে পারেন। শ্যাম্পু করার পর চুল খুব ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর লিকারটি দিয়ে চুল আবারো ধুয়ে নিন। চুল শুকিয়ে নিন প্রাকৃতিক বাতাসে। এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে।
  4. চুল পড়া সমস্যা সমাধানে একটা ডিম থেকে ভেতরের কুসুম বের করে ফেনিয়ে নিন। এবার তাতে ২ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি লিকার মিশিয়ে চুলে লাগান। ২৫-৩০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলুন। প্যাকটি সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে পারেন।
  5. পাতলা চুল ঘন করতে ১ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি গুঁড়োর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও একটি ডিম মিশিয়ে একটি স্মুদ মিশ্রণ তৈরি করুন। সম্পূর্ণ চুল ও স্কার্ল্ফে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন । ৩০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলুন। হেয়ার প্যাকটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।
  6. চুলের যত্নে ১টি পাকা কলা, ১ চামচ গ্ৰিন টি, ১ চামচ মধু, ১ চামচ টকদই ভালো করে মিশিয়ে সম্পূর্ণ চুলে লাগান। ২৫-৩০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
  7. চুল ঝলমলে, এক্সট্রা সফট ও সিল্কি করতে ২ কাপ গরম পানিতে ২ টি গ্ৰিন টি ব্যাগ ভিজিয়ে লিকার বানিয়ে নিন। এবার তাতে ১ টেবিল চামচ মধু ও ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল মিশিয়ে চুল ও স্কার্ল্ফে ম্যাসাজ করুন। ২০-৩০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন।

কন্ডিশনার হিসেবে | চুলের যত্নে গ্ৰিন টি

৩ টেবিল চামচ গ্ৰিন টি ২ কাপ পানিতে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নিন। এবার এতে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মেশান। শ্যাম্পু করার পর ভালো করে ধুয়ে লিকারটি দিয়ে চুল আবারো ধুয়ে নিন। এরপর আর পানি দিয়ে চুল ধোয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে।

হেয়ার টোনার হিসেবে | চুলের যত্নে গ্ৰিন টি এর ব্যবহার

১ লিটার পানিতে ৩/৪ টি গ্ৰিন টি ব্যাগ এক ঘন্টা ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং এর পর লিকারটি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া কমায়। এছাড়া হেয়ার ফলিকল (যে গ্ৰন্থি থেকে চুল গজায়) এক্টিভ করে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।

চোখের যত্নে গ্রিন টি | রূপচর্চায় গ্রিন টি বা সবুজ চা এর ব্যবহার

ত্বক ও চুলের মতো গ্ৰিন টি চোখের যত্নের জন্যেও বেশ ভালো একটি উপাদান। সারাদিনের কাজের চাপে চোখও খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। গ্ৰিন টি পানের পর টি ব্যাগ ফেলে না দিয়ে তা ফ্রিজে রেখে দিন। কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা টি ব্যাগটি বের করে ১৫ মিনিট চোখের উপর দিয়ে রাখুন। এটি ব্যবহারে ক্লান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি ডার্ক সার্কেলও দূর হবে এবং সেইসাথে চোখের নিচের বলিরেখাও কমবে।

এটি চোখ চুলকানো, জ্বালাপোড়া ভাব, লাল হয়ে যাওয়া এমনকি পানি পড়া সমস্যা সমাধানেও অনেক কার্যকরী। এক সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহারে চোখের ফোলাভাব ও চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার পরিমাণও অনেক কমে আসবে।

নখের যত্নে | রূপচর্চায় গ্রিন টি

নখ অতিরিক্ত নরম হওয়ার কারণে অনেকের নখ ঘন ঘন ভেঙ্গে যেতে দেখা যায়। অনেকে আবার ফ্যাকাশে নখ নিয়ে হয়ে আছেন প্রচুর বিরক্ত। নখ মজবুত করতে সদ্য ফোটানো গ্ৰিন টি একটি বাটিতে রেখে তাতে নখ ডুবিয়ে রাখুন। এতে নখের ফ্যাকাশে ভাবও দূর হবে।

এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করাই যথেষ্ট। কয়েক সপ্তাহ পরেই আপনি ফলাফল দেখতে পাবেন। এতে শুধু আপনার নখ মজবুত ও নখের ফ্যাকাশে ভাব দূরই হবে না সেইসাথে নখের হলদে ভাব দূর হয়ে চকচকে ভাবও ফিরে আসবে। এছাড়া নখে গ্ৰিন টি এসেনশিয়াল অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতি নখে এক ফোঁটা করে এসেনশিয়াল অয়েল লাগিয়ে নিন।

আপনার সুবিধামতো রূপচর্চায় গ্রিন টি এর যেকোন প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। সেইসঙ্গে ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের যত্নে নিয়মিত গ্ৰিন টি পান করতে ভুলবেন না। নিয়মিত গ্ৰিন টি পান আপনার ত্বক ও চুলসহ সম্পূর্ণ দেহকেই রাখবে ভেতর থেকে সুন্দর, সজীব ও প্রাণবন্ত।

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিন-