মূত্রথলির প্রদাহ (Cystitis) ও প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ার ৫টি সেরা হোমিও ওষুধ

নানা কারণে মূত্রথলি, মূত্রনালীর সংক্রমণ ও প্রদাহ হয় এবং প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসে। সাধারণত B. Coli, Staphylococcus, Streptococcus প্রভৃতি বীজাণু সংক্রমণের জন্য এটি হতে পারে। মূত্রথলিতে বা মূত্রনালীতে আঘাত প্রাপ্তির জন্যও মূত্রথলির প্রদাহ বা Cystitis হতে পারে। এছাড়া যৌনরোগ বা গণোরিয়া, সিফিলিস, সফট শ্যাঙ্কার প্রভৃতি কারণেও অনেক সময় সিস্টাইটিস, প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়া প্রভৃতি সমস্যা হতে দেখা যায়। আজকের আলোচনায় মূত্রথলি ও মূত্রনালীর প্রদাহ, সংক্রমণ বা Cystitis, প্রস্রাব করার সময় জ্বালা-পোড়া প্রভৃতি সমস্যার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

মূত্রথলির প্রদাহ (Cystitis) বা মূত্রনালীর সংক্রমণ এর লক্ষণ

প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ার ৫টি সেরা হোমিও ওষুধ
মূত্রথলী, মূত্রনালীর সংক্রমন ও প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়ার হোমিও চিকিৎসা

১। মূত্রথলিটি পেটের যে অংশে থাকে, সেখানে বা Pelvic অঞ্চলে (তলপেটের সামনের দিক) ব্যথা, টাটানি প্রভৃতি দেখা যায়।
২। মূত্রথলিতে ভার বোধ হয়।
৩। সর্বাঙ্গে ভার বোধ ও অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
৪। প্রস্রাবের স্বল্পতা হতে পারে।
৫। শীতবোধ, কাঁপুনি, জ্বর প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।
৬। মাঝে মাঝে প্রস্রাবের বেগ আসে, কিন্তু প্রস্রাব ঠিক মতো হয় না। দুই চার ফোঁটা প্রস্রাব হয়।
৭। গণোরিয়া থাকলে প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া বোধ হয় এবং তার সঙ্গে প্রস্রাবে পূঁজ পড়ে।
৮। প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসে।

Cystitis, মূত্রনালীর সংক্রমণ, প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়া ও প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ৫টি শ্রেষ্ঠ ঔষধ

ক্যান্থারিস

কিডনি এলাকায় চাপা ব্যথা, মূত্রথলির প্রদাহ, মূত্র বা প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হয়। ফোঁটা ফোঁটা এবং লালচে অল্প প্রস্রাব হয়। প্রস্রাব ঘোলাটে, রক্ত মিশ্রিত হয়। মূত্র পাথরী চিকিৎসায়ও লক্ষণ অনুযায়ী সাফল্যের সাথে ব্যবহার করা যায়।

ইকুইজিটাম হাইমেল

কিডনি ও মূত্রথলির যে সকল লক্ষণ দেখা দিলে ক্যান্থারিস ব্যবহার করা হয়, এই ঔষধটিও ঠিক একই ধরনের লক্ষণ সৃষ্টি করে। তবে পার্থক্য এই যে, ক্যান্থারিস এ ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হয় অথচ ফোঁটায় ফোঁটায় অল্প একটু প্রস্রাব হয়।

অপরদিকে ইকুইজিটাম হাইমেল এর লক্ষণ হচ্ছে- প্রস্রাবের বেগও বেশি হয় আবার স্বাভাবিক পরিমাণে বা প্রচুর প্রস্রাব হতে দেখা যায়। এছাড়াও মূত্রথলি খালি থাকা সত্বেও বার বার প্রস্রাবের বেগ অনুভব হয়। প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না। মূত্রথলিতে জ্বালা-পোড়া (বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে), প্রস্রাবে রক্ত ও এলবুমিন থাকে। ইউরিক এসিড (যা প্রস্রাব ত্যাগের সময় ব্যথা তৈরি করে) দূর করতেও সহায়তা করে।

ইউপেটরিয়াম পার্প

মূত্রথলিতে অস্বস্তিবোধ, ব্যথা যুক্ত এবং বার বার প্রস্রাবের বেগ অনুভব হয়। প্রস্রাব অল্প বা অধিক হতে পারে। রঙিন বা ডিমের সাদা অংশের মতো প্রস্রাব হয় – এসব সমস্যার সমাধানে ওষুধটি অন্যান্য লক্ষণ বিচার করে ব্যবহার করা যায়।

ডালকামারা

আদ্র আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়লে ডালকামারা প্রথম সারির ওষুধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়া এর অন্যান্য লক্ষণ সমূহ হচ্ছে- মূত্রথলিতে অস্বস্তিবোধ, ব্যথাযুক্ত এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভব হয়। প্রস্রাবের সময় অল্প বা অধিক প্রস্রাব হয়। এই ঔষধটিতেও রঙিন বা ডিমের সাদা অংশের মতো প্রস্রাব হয়। প্রস্রাবে মূত্রথলির ঝিলনীর অংশ পাওয়া গেলে এবং অতিরিক্ত দুর্গন্ধ যুক্ত প্রস্রাবের চিকিৎসায় বিশেষভাবে কার্যকর।

চিমাফিলা

মূত্রথলির প্রদাহ ও মূত্রনালীর সংক্রমণের পুরাতন অবস্থায় চিমাফিলা ভালো কাজ করে। এর প্রধান লক্ষণ হচ্ছে- এর রোগী দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করলে এবং পা দুইটি খুব ফাঁক করে সম্মুখদিকে ঝুঁকে প্রস্রাব না করলে প্রস্রাব হয় না। এছাড়া প্রস্রাবের মধ্যে অনেকটা পরিমাণে দড়ির মতো শ্লেষ্মা বিদ্যমান থাকে।

মূত্রথলি, মূত্রনালী ও প্রস্রাবের সংক্রমণের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমুহ

অ্যাকোনাইট

তরুণ রোগ চিকিৎসায় কার্যকরী। বিশেষ করে ঠান্ডা বাতাস লেগে অসুস্থ হয়ে পড়লে, রোগীর মধ্যে অত্যন্ত অস্থিরতা, মৃত্যু ভয়, ইত্যাদি দেখা গেলে ব্যবহার করা যায়।

প্যারেইরা ব্রেভা

পাথরী বা কিডনি আক্রান্ত হলে, প্রচুর শ্লেষ্মা নিঃসরণ হলে ব্যবহার করা যায়।

ক্যালকেরিয়া সালফ

প্রস্রাবের সাথে পূঁজ নিঃসরণ হলে কার্যকরী।

এছাড়া লক্ষণ অনুযায়ী বেলেডোনা, পালসেটিলা, সাইলেসিয়া, ক্রিয়োজোট, নাইট্রিক এসিড, ক্যানাবিস স্যাটাইভা, কেলি আয়োড, এপিস মেল, স্যাবাল সেরুলেটা, প্লাম্বাম মেট প্রভৃতি সহ অন্য যে কোন ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রাসঙ্গিক লেখা-

প্রস্টেট গ্রন্থি প্রদাহের হোমিও চিকিৎসা

Leave a Comment