মুখের কালো দাগ দূর করার উপায় এবং সতর্কতা

মুখের কালো দাগ, ব্রণ, ব্ল্যাক হেডস কিংবা ডার্ক স্পটসহ সমস্ত বাড়তি ঝামেলার মূলেই রয়েছে অপরিষ্কার জীবাণুযুক্ত মুখ। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। আর বাইরের ধুলাবালি ত্বকে জমে মুখে নানারকম জীবাণুর সংক্রমণ ঘটায়।

ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আমাদের ত্বকে তৈলগ্রন্থির আকৃতি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং একসময় তা ব্রণে রূপ নেয়। এই ব্রণ পরে সেরে গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কালো দাগ রেখে যায়, যা মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে।

এই সমস্যা থেকে মুক্তির সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় হলো ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানের সহায়তা নেওয়া। কেননা, এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে না, খরচ কম এবং ভালো ফল পাওয়া যায়।

এই আর্টিকেলে শুধুমাত্র মুখের ব্রণের কালো দাগ দূর করার উপায়ই নয়, বরং মুখে নখের দাগ দূর করার উপায়, মুখের দাগ দূর করার মেডিসিন ও দোআ ইত্যাদি সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হয়েছে।

সূচীপত্র

লেবুর রস দিয়ে মুখে নখের দাগ দূর করার উপায়

মুখের কালো দাগ দূর করার জনপ্রিয় একটি উপায় হলো লেবুর রস মিশ্রিত ফেসপ্যাকের ব্যবহার। অনেকে ভুল করে অথবা না জেনে নখ ব্রণে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদি দাগ বানিয়ে ফেলে। লেবু এসব ক্ষেত্রেও ভালো ভূমিকা রাখে।

ত্বকের যত্নে লেবুর রস হচ্ছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং। এতে বিদ্যমান অ্যাসকরবিক এসিড ত্বকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

মুখের যেকোনো কালো দাগ দূর করার জন্য লেবুর রসের সঙ্গে গোলাপজল বা ভিটামিন 'ই' যোগ করে তুলার বল দিয়ে ৩-৪ মিনিট দাগযুক্ত স্থানে ম্যাসাজ করতে হয়। এতে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

মুখের কালো দাগ দূর করার আরো একটি কার্যকরী উপায় হলো লেবুর রসকমলার রসের ফেসপ্যাক।

লেবুর রসকমলার রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্রণ দূর করার পাশাপাশি মুখের উজ্জলতাও ফিরিয়ে আনবে।

এছাড়াও সমপরিমাণ লেবুর রসদুধ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি মুখের ব্রণ ও কলচে দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের আর্দ্রতাও ধরে রাখে।

সতর্কতা: মুখের কালো দাগ দূর করার উপায় হিসেবে লেবুর রস নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি উপাদান। কিন্তু, ত্বকে সরাসরি লেবুর রস ব্যবহার করবেন না। অবশ্যই উপরোক্ত উপাদানগুলোর সঙ্গে মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করবেন।

কারণ, এসিডধর্মী হওয়ায় লেবু সরাসরি ত্বকে ব্যবহারে আপনার ত্বক পুড়েও যেতে পারে। এছাড়া হালকা হতে মাঝারী জ্বালাপোড়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে ফোস্কা পড়ার সম্ভাবনাও প্রবল।

মধু দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়

আমাদের ত্বকের কালো দাগ দূর করার জন্য মধুর ব্যবহার খুবই ইফেক্টিভ হতে পারে। এটি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা যায়।

কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মুখের কালো দাগ দূর করতে চাইলে, রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে মধু ম্যাসাজ করুন। সারারাত রেখে সকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যস, এতেই কাজ হবে।

মধুর সাথে দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করেও ত্বকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ত্বকেে লাগানোর ১ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে।

এছাড়াও, দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে স্ক্রাবার তৈরি করে নিতে পারেন। এটি ব্যবহারে ত্বকের মৃতকোষ ঝরে যাওয়ার পাশাপাশি দূর হবে ব্ল্যাক হেডস।

অথবা দুধ ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে কালো দাগের উপর প্রয়োগ করতে পারেন। ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টানা কয়েকদিনের ব্যবহারে মুখের কালো দাগ উধাও হয়ে যাবে।

আপেল ও মধুর মিশ্রণ ব্রণের কালো দাগ দূর করার একটি জনপ্রিয় উপায়। প্রথমে আপেলের পেস্ট তৈরি করে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি ব্যবহারের কিছুক্ষণ পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৫-৬ বার প্যাকটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

সতর্কতা: অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে মধু ব্যবহার করবেন না। মধু ব্যবহারের পর ত্বক খুব ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। নাহলে জমে থাকা মধু লোমকূপে আটকে ‘ব্রেইক আউট’ বা ব্রণের সৃষ্টি করবে।

এ্যালোভেরা দিয়ে মুখে নখের দাগ দূর করার উপায়

শুধুই মুখের কালো দাগ নয়, ত্বকের বার্ধক্যের রেখা ও লালচে ভাব দূর করার ক্ষেত্রে এ্যালোভেরা খুবই উপকারী একটি উপাদান।

মুখের কালো দাগ দূর করতে, অ্যালোভেরার পাতা মাঝ বরাবর কেটে ভেতরের জেল ছেঁচে নিন। এই জেল ত্বকে লাগিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

প্রতিদিন দুইবার করে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। এতে শুধু মুখের কালো দাগই দূর হবে না, সেইসাথে ত্বক হবে সতেজ ও উজ্জ্বল।

এছাড়া অ্যালোভেরা জেল, চিনি ও লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করেও ব্যবহার করতে পারেন।অ্যালোভেরা, মধু, শশা একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে ত্বকে ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যাবে।      

আরও পড়ুন –

সতর্কতা: অ্যালোভেরা জেল হাত দিয়ে ত্বকে লাগানো হলে অ্যলার্জি হতে পারে। এজন্য তুলা বা সুতি কাপড় ব্যবহার করুন।

জেল/ অ্যালোভেরা রস লাগিয়ে সূর্যের আলো বা আগুনের তাপে যাবেন না। অপরিষ্কার ত্বকে এটি ব্যবহার করবেন না এবং সেই সঙ্গে ব্যবহারের সময় সকল প্রকার ক্যামিকাল জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

শসা দিয়ে মুখের ব্রণের কালো দাগ দূর করার উপায়

ত্বকের দাগছোপ থেকে মুক্তি পেতে শসা একটি কর্যকরী উপাদান। শসা আমাদের ত্বকের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ করে স্কিনটোন হালকা করে।

মুখের কালো দাগ দূর করার জন্য, শসার খোসা ছাড়িয়ে ব্লেন্ড করে রস বের করে নিন। এরপর সেই রস প্রতিরাতে মুখে ম্যাসাজ করে সারারাত রেখে দিবেন। সকালে হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলবেন।

এক রাতের মধ্যেই আপনি পার্থক্য খুঁজে পাবেন। এছাড়া ফ্রিজে বরফ বানানোর ছাঁচে শসার রস রেখে কিউব তৈরি করে রাখা যায়। প্রতিদিন সেই কিউব ব্যবহার করতে পারেন। মুখের কালো দাগ দূর করার এটিও একটি কার্যকরী উপায়।

টমেটো দিয়ে কালো দাগ দূর করার উপায়

টমেটোর রস মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রোদে পোড়া, মুখের কালো দাগ দূর করতে একটা টমেটো থেঁতো করে তাতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

আবার, টমেটোর রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

সপ্তাহে ৩ বার এই প্যাকটি লাগান। এটি ব্রণের দাগ দূর করার পাশাপাশি রোদে পোড়া দাগ দূর করে ত্বকে উজ্জলতা ফিরিয়ে আনবে।

এছাড়াও টমেটোর রস ও মসুর ডাল বাটার সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিতে পারেন। স্ক্রাবটি সপ্তাহে এক বার ব্যবহার করুন।         

পাকা পেঁপে দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়

মুখের কালো দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বক পরিষ্কার করতে পেঁপের প্যাপেইন এনজাইম অধিক কার্যকরী।

এটি ব্যবহারের জন্য, কয়েক টুকরো পাকা পেঁপে নিয়ে পেস্ট করে জুস তৈরি করুন। এবার কটন বলের সাহায্যে ব্রণ বা দাগের অংশে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর উষ্ম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

প্রতিদিন একবার এই পদ্ধতি ত্বকে প্রয়োগ করা হলে, ব্রণ বা মুখের কালো দাগ কোনটাই আর অবশিষ্ট থাকবে না।

জুস করা ঝামেলা মনে হলে এক টুকরো পাকা পেঁপে নিয়ে দাগে ঘষুন। ১০ মিনিট পর উষ্ম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এছাড়াও পেঁপের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।         

আলু দিয়ে মুখের দাগ দূর করার উপায়

সাধারণত সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, ত্বকের যত্নেও আলু বেশ কার্যকরী। মুখের কালো দাগ সারাতে আলুর রস ভালো কাজ করে।

মুখের কালো দাগ দূর করতে, আলু ব্লেন্ড করে তা থেকে রস বের করে নিয়ে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। রস শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

১ চা চামচ গ্ৰেট করা আলুর সাথে ১/২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

অথবা , ১ চা চামচ গ্ৰেট করা আলু, ১ চা চামচ টমেটো পেস্ট ও ১/২ চা চামচ দুধের সর একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান ‌‌। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ‌।

দুধের সরের পরিবর্তে ১ চা চামচ টকদই ব্যবহার করতে পারেন ‌। এছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে পুড়ে যাওয়া ত্বকে আলুর স্লাইস দারুন কাজ করে।           

কাঁচা হলুদ দিয়ে কপালের কালো দাগ দূর করার উপায়

কাঁচা হলুদে রয়েছে এন্টিসেপ্টিক ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ব্রণ সারাতে সাহায্য করে।

মুখের কালো দাগ দূর করতে, কাঁচা হলুদ বাটা, আঙ্গুরের রসগোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে ব্রণে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।

কাঁচা হলুদ বাটার সঙ্গে নিমপাতার রস মিশিয়ে ব্যবহারে ব্রণের দ্রুত উপশম হয়।

এছাড়া ব্রণ বা মুখের কালো দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদ, টমেটোর রস ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন।         

সতর্কতা: ত্বকে হলুদের কোন প্যাক ব্যবহার করলে ২০ মিনিটের মধ্যেই ধুয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত সময় ধরে রেখে দিলে তা ত্বকের ক্ষতির কারণ হবে। 

ব্যবহারের পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে খুব ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নিন। তবে ভুলেও ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে যাবেন না। এতে হলুদের কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে যাবে।

বরফ দিয়ে কপালের কালো দাগ দূর করার উপায়

মুখের রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করতে বরফ ব্যবহার বেশ প্রচলিত একটি উপায়।

মুখের কালো দাগ দূর করতে, রোদ থেকে ঘরে ফিরে ত্বকে আলতো করে বরফ ঘষুন। এতে রোদে পোড়া দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি জ্বালাপোড়া ভাবও কমবে।

আধা কাপ অ্যালোভেরা জেল আইস ট্রেতে করে ফ্রিজে রেখে দিন। ২ ঘন্টা পর বের করে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ইনফ্লামেটরী উপাদান রোদে পোড়া দাগ এবং জ্বালাপোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

এছাড়া দুই টেবিল চামচ নিমপাতার সঙ্গে সামান্য হলুদ মিক্সড করে আধ কাপ পানিতে মিশিয়ে তৈরি বরফ ব্যবহারে ব্রণের দাগ দূর করা সম্ভব।

সতর্কতা: সরাসরি ত্বকে বরফ ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বকের নিচের শিরা-উপশিরাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ত্বকে বরফ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বরফ প্যাচিয়ে নিন।

তুলসী দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়

ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে তুলসী ভালো কাজ করে। তুলসী দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করতে, প্রথমে একটি পাত্রে পানি গরম করে নিয়ে তাতে ৬-৭ টি বড় তুলসীপাতা ছেড়ে দিন।

এবার ১০ মিনিট এই পানির ভাপ মুখে ধরে রাখুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

মুখের কালো দাগ দূর করতে তুলসী পাতা এবং বেসন একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি ব্যবহারের কিছুক্ষণ পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।    

টক দই দিয়ে মুখের দাগ দূর করার উপায়

মুখের কালো দাগের উপর টকদই লাগান। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে রাতে টকদই ব্যবহার করে সারারাত রেখে দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে সমপরিমাণ টকদইটমেটোর রস মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত ব্যবহার করুন। সেইসাথে প্যাকটিতে অ্যালোভেরা জেলও যোগ করতে পারেন।

সতর্কতা: কাঁচা দুধ বা টকদই দিয়ে তৈরি যেকোনো ফেসপ্যাক ব্যবহারের পর ধুয়ে ফেলার সময় অবশ্যই কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।।

নিমপাতা দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়

ব্রণ বা মুখের কালো দাগ দূর করতে, ১০ টি নিমপাতা ও একটি ছোট কমলা খোসা ছাড়িয়ে পানিতে সিদ্ধ করে পেস্ট করে নিন।

তাতে অল্প পরিমাণ দুধমধু যোগ করুন । ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়া মুখের কালো দাগ দূর করার জন্য, নিমপাতার পেস্ট করে তাতে মধু ও গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করুন। ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।

সপ্তাহে দুই দিন প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্রণের জন্যও বেশ কার্যকরী।

আবার, কয়েকটি নিমপাতার সাথে হলুদ গুঁড়ো ও দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।   

মুখের কালো দাগ দূর করার মেডিসিন

মুখের কালো দাগ কতটা প্রকট ও দাগের কারণ বিবেচনায় রেখে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা একেকজনকে একেক রকম মেডিসিন সাজেস্ট করেন। তাই আপনার উচিৎ হবে ভালো কোনো চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞের নিকট গিয়ে সমস্যার কথা খুলে বলা।

তবে, এখানে আমি আমার অভিজ্ঞতার কথা এবং আমার ব্যবহার করার সেরা মুখের দাগ দূর করার মেডিসিন এর নাম শেয়ার করব।

আমি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্রণের কারণে সৃষ্ট মুখের দাগ দূর করার মেডিসিন হিসেবে TeenDerm Gel এবং Clinex Lotion ব্যবহার করি এবং সুফল পেয়েছি।

উল্লেখ্য, এই দুটি মেডিসিন ব্যবহারের আগেও বিভিন্ন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের মুখের ব্রণের দাগ দূর করার মেডিসিন আমি মুখে প্রয়োগ করেছি, এমনকি হোমিওপ্যাথির স্মরণাপন্নও হয়েছিলাম। যদিও ভালো ফল পাইনি।

কিন্তু এই দুইটি মেডিসিন ব্যবহার করে আমি যথেষ্ট স্যাটিসফাইড।

বলে রাখা ভালো, আমার ত্বক হালকা তৈলাক্ত এবং মুখের সমস্ত দাগই ছিল ব্রণের।

মুখের দাগ দূর করার মেডিসিন TeenDerm Gel মূলত এক ধরণের ফেসওয়াশ। এটি আমাদের মুখের ময়লা জীবাণূ সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে। এর বাজার মূল্য ৯০০৳।

মুখে ব্রণের কালো দাগ দূর করার আরেকটি মেডিসিন Clinex Lotion একধরণের অর্ধতরল পদার্থ বা লোশন। এটি দাগ দূর করার জন্য সরাসরি কাজ করে। এর বাজার মূল্য প্রায় ১২০৳।

আপনার কাছে যদি TeenDerm ফেসওয়াশ কেনার সামর্থ না থাকে, তবে শুধুই Clinex Lotion টি কিনুন। প্রতিবার Clinex Lotion মুখের প্রয়োগ করার আগে অন্য কোনো ফেসওয়াশ বা পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার নিবেন।

ব্রণের কালো দাগ প্রতিরোধ করার উপায়

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। এজন্য এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হওয়ার আগেই প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। মুখে ব্রণ বা ব্ল্যাক হেডস প্রতিরোধে প্রতিদিন কিছু নিয়ম মেনে চলুন-

  • প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ গ্লাস পানি পান করুন।
  • রাতের খাবারের পর যেকোনো মৌসুমী ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • অথবা রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস লেবু পানি পান করুন।
  • বাইরে কোথাও যাওয়ার পূর্বে সানস্কিন ক্রিম ব্যবহার করুন।
  • সম্ভব হলে ওরনা, মাস্ক বা স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢেকে নিন।
  • অতিরিক্ত তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
  • সবসময়ই মুখ পরিষ্কার রাখুন। দিনে দুবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
  • বাইরে থেকে আসার পরপরই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
  • এছাড়া হালকা গরম পানির স্টীম ও নিতে পারেন।
  • বারবার মুখে হাত লাগানো থেকে বিরত থাকুন।
  • যেকোন প্রোডাক্ট ব্যবহারের পূর্বে সতর্ক হোন।
  • সর্বোপরি নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিন।

মুখের কালো দাগ দূর করার দোয়া বা আমল

আমরা বাঙ্গালীরা আমাদের নিজেদের ধর্মের প্রতি অত্যন্ত অনুগত এবং শ্রদ্ধাশীল। আমাদের জিবনের প্রতিটি সমস্যাই আমরা নিজেদের ধর্ম ও নৈতিক অবস্থান থেকে বিচার করতে পছন্দ করি।

মুখের কালো দাগও এক ধরণের বড় সমস্যা। অনেকের ক্ষেত্রে এই কালো দাগ দুঃচিন্তা ও হীমম্মন্যতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই স্বভাবগত ভাবেই আমরা কোনো আমলের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা বা দোয়া করি।

আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন, প্রতি মাসে বাংলাদেশের প্রায় হাজারখানেক মানুষ “মুখের দাগ দূর করার দোয়া” এবং “মুখের কালো দাগ দূর করার আমল” লিখে গুগলে সার্চ করে। তাই এই টপিকটি আর্টিকেলে সংযুক্ত করার লোভ সামলাতে পারলাম না।

অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ থেকে বেঁচে থাকতে এই দোয়া পড়ুন-


مُسَلَّمَةٌ لَّا شِيَةَ فِيْهَا

সুরা বাকারা : আয়াত ৭২

এর উচ্চারণ :মুসাল্লামাতুল লা শিয়াতা ফিহি

অর্থ : (সে রকম) সুস্থ, যাতে কোনো খুঁত বা দোষ নেই। (সুরা বাকারা : আয়াত ৭২)

আমল: কোনো ব্যক্তির শরীরে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো দাগ অথবা যন্ত্রণাদায়ক স্পট পড়ে, তবে সে যেন প্রতিদিন অন্তত ৪১ বার এই আয়াতাংশটি পড়ে।

নিয়মিত এ আমলের ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে শারীরিক যে কোনো স্পট বা দাগ কিংবা দাগের যন্ত্রণা ও ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখবেন।

মুখের কালো দাগ সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর


মুখের কালো দাগ দূর করতে টুথপেস্ট এর ব্যবহার কতটা নিরাপদ?

একদমই অনিরাপদ। এটি বানানো হয়েছে আমাদের দাঁতের জিবাণু পরিষ্কারের জন্য। এটি ত্বকে বিশেষ করে ব্রণের দাগের উপর লাগালে ঐ স্থানের দাগ আরো গভীর হতে পারে।

আমি যখন প্রথম বার আমার মুখের ব্রণের দাগের উপর টুথপেস্ট ব্যবহার করেছিলাম, আমার ত্বকের ঐ স্থানটুকুতে কালসিটে বা চামড়া পুড়ে গেলে যেমন কালো হয়ে যায়, তেমন হয়ে গেছিলো।

ব্রণের দাগ দূর করা কি আসলেই সম্ভব?

যদি দাগের বয়স বেশি দিন না হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই সম্ভব।

কিভাবে মুখের কালো দাগ দূর করব?

উপরোক্ত বর্ণনা ভালোভাবে পড়ুন। ফেসপ্যাকগুলো মুখে প্রয়োগ করুন। প্রয়োজনে মেডিসিন ব্যবহার করতে পারেন।

মুখের কালো দাগ দূর করার মেডিসিন হিসেবে কোনটি বেশি ভালো?

Clinex Lotion কে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই পছন্দ করি। পাশাপাশি, TeenDerm ফেসওয়াশও ব্যবহার করি।

মুখের কালো দাগ দূর করার দোআ/দোয়া/ আমল কি?

مُسَلَّمَةٌ لَّا شِيَةَ فِيْهَا

উচ্চারণঃ ‘মুসাল্লামাতুল লা শিয়াতা ফিহি’
অর্থঃ (সে রকম) সুস্থ, যাতে কোনো খুঁত বা দোষ নেই। (সুরা বাকারা : আয়াত ৭২)


শেষকথা

এখানে মুখের অবাঞ্চিত কালো দাগ দূর করার বেশ কিছু কার্যকরী উপায় সরবরাহ করা হয়েছে। আপনি আপনার সুবিধামত উপরের যেকোনো পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

সকলের ত্বকের ধরণ যেহেতু এক নয় , সেহেতু সব ধরণের প্যাক সবার জন্য সমানভাবে কার্যকরী নাও হতে পারে। আপনার ত্বকের ধরণ ও সংবেদনশীলতার দিকে লক্ষ্য রেখে যেকোনো এক বা একাধিকটি ফেসপ্যাক বাছাই করুন।

সঠিক পদ্ধতিতে এসব মুখের কালো দাগ দূর করার উপায় গুলো ব্যবহার করলে খুব দ্রুতই এ জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন –

7 thoughts on “মুখের কালো দাগ দূর করার উপায় এবং সতর্কতা”

  1. Apu, onek upokar holo. Kintu lebu to ami directly use kori. Kono prblm hoyna… Abar upokar O hoy na.

  2. Egula to cheleder jonno applicable? Amar mukhe bron er karne gorto gorto dag ache. Skin suman korbo kmne? (Ami akjon chele)

    • এগুলো ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই কার্যকরী।
      ব্রণের গর্ত সারাতে অ্যালোভেরা জেল অনেক ভালো কাজ করে। আপনি চাইলে বাজার থেকে অ্যালোভেরা কিনে এনে তা থেকে জেল বের করেও ব্যবহার করতে পারেন।
      এছাড়া ব্যবহার করতে পারেন অলিভ অয়েল। এটিও গর্ত সারাতে সাহায্য করে।

Comments are closed.