অনেক সময় নারীদের যৌনাঙ্গ তথা যোনি লালবর্ণ, উষ্ণ, স্ফীত ও বেদনা যুক্ত হয়ে পুঁজ নিঃসরণ হয়। সেই সঙ্গে যদি প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা যন্ত্রণা থাকে ও যোনিতে চুলকানি দেখা যায় তবে তাকে যোনি প্রদাহ (Vaginitis) বলে।
যোনি প্রদাহ (Vaginitis) হবার কারণ কি?
প্রমেহ রোগের পুঁজ শরীরে লাগলে, অতিরিক্ত যৌন সঙ্গম, ধর্ষণের শিকার হলে, গর্ভাবস্থায় বা সন্তান জন্মদানের সময় আঘাত পেলে, রক্তদুষ্টি জনিত কারণে, যোনি মধ্যে ক্রিমি সংক্রমণের জন্য, ঠান্ডা লাগা, প্রভৃতি কারণে যোনি প্রদাহ বা ভ্যাজাইনিটিস (Vaginitis) হয়ে থাকে।
এই রোগে প্রায়ই রজোরোধ হয় না।
যোনি প্রদাহ বা Vaginitis দুই প্রকার-
১। তরুণ যোনি প্রদাহ
২। পুরাতন যোনি প্রদাহ
তরুণ যোনি প্রদাহের লক্ষণ-
এই রোগে শীতসহ জ্বর, কটি, উরু ও কোমরে ভারবোধ ও বেদনা হয়। যোনি হতে শ্লেষ্মা (সর্দি) নিঃসরণ হয়। মূত্রকৃচ্ছতা বা প্রস্রাবের নানা প্রকার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তরুণ যোনি প্রদাহের (Acute Vaginitis) চিকিৎসা
ঠান্ডা লেগে প্রদাহ হলে প্রথমে অ্যাকোনাইট ৩X উপযোগী। এরপর প্রয়োজন ও লক্ষণ অনুযায়ী মার্কিউরিয়াস সল ৬ প্রায়ই প্রয়োজন হয়।
প্রমেহ জনিত কারণে হলে সিপিয়া ৩০ ভালো কাজ করে।
আঘাতজনিত কারণে হলে আর্ণিকা ৬।
প্রস্রাব করার সময় প্রচুর যন্ত্রণা ও জ্বালা থাকলে ক্যান্থারিস ৩x – ৬ প্রয়োজন হবে।
রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেয়া প্রয়োজন।
পুরাতন যোনি প্রদাহের (Chronic Vaginitis) লক্ষণ-
পুরাতন যোনি প্রদাহের কারণে যোনি মধ্যস্থ শ্লেষ্মা নিঃসারক ঝিল্লিতে নীলাভ লালবর্ণ চুলকানির সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
যোনির শৈথিল্য ও যোনি থেকে প্রচুর পরিমাণে সাদা, হলদে প্রভৃতি নানা বর্ণের পুঁজ নিঃসরণ পুরাতন যোনি প্রদাহের প্রধান লক্ষণ সমূহের মধ্যে পরে।
পুরাতন যোনি প্রদাহের (Chronic Vaginitis) হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
মার্কিউরিয়াস ৩, সিপিয়া ৬ – ডাঃ জুসোঁর মতে এই দুইটি পুরাতন যোনি প্রদাহের ও এ কারণে সৃষ্ট প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া ও চুলকানির প্রধান ওষুধ।
বোরাক্স ৩x বিচুর্ণ– প্রচুর পরিমাণে পুঁজ নিঃসরণ লক্ষণে কার্যকরী।
নাইট্রিক এসিড ৬– পুঁজ, জ্বালা ও ক্ষত বা ফুস্কুড়ি লক্ষণ থাকলে অথবা চিকিৎসার্থে পারদ ব্যবহারের ইতিহাস থাকলে ভালো কাজ করে।
ক্যালকেরিয়া ৬, পালসেটিলা ৬, ক্রিয়োজট ৬, ইগ্নিসিয়া ৩ (প্রদাহসহ হিস্টিরিয়া লক্ষণ থাকলে প্রযোজ্য) ও সালফার ৩০ লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়।
যোনির চুলকানির (Pruritus vulvae) সেরা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ও তাদের লক্ষণ নির্দেশিকা
সালফার
জ্বালাকর অসহ্য চুলকানি হয় ও সেই সঙ্গে আক্রান্ত অংশে ফুস্কুড়ি সৃষ্টি করে, গরম বোধ হয়। অর্শ রোগগ্রস্থ রোগিনীদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
ডলিকস
ফোলা বা ফুস্কুড়ি নেই অথচ অসহ্য চুলকানি হয়। বিশেষত রাতে চুলকানি বৃদ্ধি পায়।
আর্সেনিক
জলপূর্ণ ফুস্কুড়ি ও পচনাক্রান্ত লক্ষণে ব্যবহার করা যায়।
ক্যালাডিয়াম
কৃমি জনিত যোনির চুলকানির শ্রেষ্ঠ ঔষধ। যোনি ওষ্ঠের স্ফীতি ও চুলকানির সাথে একপ্রকার কষ প্রচুর পরিমাণে নির্গত হয়।
এছাড়া অন্যান্য যে সকল ঔষধ লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবহার করা যায় তাদের মধ্যে মার্কিউরাস, নাইট্রিক এসিড, লাইকোপোডিয়াম, কার্বোভেজ, নেট্রাম মিউর, সিপিয়া, পেট্রোলিয়াম, বোরাক্স অন্যতম।
যোনি প্রদাহ ও চুলকানির চিকিৎসায় বাহ্যিকভাবে ব্যবহারযোগ্য ওষুধ
ক্যালেণ্ডুলা Q একভাগ দশভাগ জলের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার আক্রান্ত অংশ ধুঁয়ে দিলে ও ক্যালেণ্ডুলা Q বিশুদ্ধ অলিভ অয়েল এর সাথে মিশিয়ে বাহ্যিকভাবে প্রলেপ দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-
বন্ধ্যাত্ব (Infertility) কি? বন্ধ্যাত্বের কারণ ও এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা