কোন ড্রেসের সঙ্গে কোন লিপস্টিকটা মানাবে? আইশ্যাডোর রং-ই বা কোনটা বাছাই করা উচিত? লাল পোশাকের সাথে কোন টিপটা ভালো হবে? প্রতিবার সাঁজসজ্জার সময় এই প্রশ্নগুলো যদি প্রায়ই আপনাকে চিন্তায় ফেলে, এসব ভেবে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়ার পরও যদি সঠিকভাবে কালার ম্যাচিং করতে না পারেন, তবে আপনি একা নন! বেশিরভাগ মেয়েকেই সাঁজগোজের ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং নিয়ে গভীর দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয়। এ বিষয়ে যদি আপনার মনেও প্রশ্নের পাহাড় জমে থাকে, তবে দ্রুত পড়ে ফেলুন পুরো লেখাটি এবং জেনে নিন সাঁজগোজের ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং এর সঠিক নিয়ম।
সাঁজগোজের ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং
সুন্দর করে সাজসজ্জ্বা বা সাঁজগোজের ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং এর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক কয়েকটি ধাপ অনুসরন করা প্রয়োজন। নয়তো বেঁধে যাবে বিরাট গোলযোগ। এই গোলযোগ থেকে নিস্তার পেতে সবসময় নিম্নলিখিত কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক।
- স্কিনটোন অনুযায়ী ড্রেস
- ড্রেস অনুযায়ী লিপস্টিক
- লিপস্টিক অনুযায়ী আইশ্যাডো
- লিপস্টিক ও মুখের আদল অনুযায়ী টিপ
ধাপ-১: স্কিনটোন অনুযায়ী ড্রেস
স্কিনটোন বা ত্বকের রং অনুযায়ী ড্রেস সিলেকশন করার চেষ্টা করা উচিৎ। এতে আপনার সাঁজ আপনার সঙ্গে মানিয়ে যাবে এবং কাঙ্ক্ষিত সৌন্দর্য পেতে সাহায্য করবে। এখনই আয়নার সামনে দাড়ান এবং স্কিনটোন যাচাই করে জেনে নিন আপনার সাথে মানানসই রঙ কোনগুলো!
হোয়াইট স্কিনটোন
ফর্সা বর্ণের জন্য উষ্ণ রংগুলো বেশ মানানসই। আপনি যদি ফর্সা হয়ে থাকেন, তবে লাল, কমলা, ধূসর, গোলাপী, ফুসিয়া রং ছাড়াও কালো, নীল, সবুজ, ম্যাজেন্ডাসহ সকল প্রকার রং-ই আপনার জন্য উপযুক্ত।
শীতল রঙগুলিও আপনার জন্য খারাপ ফল বয়ে আনবে না। সাধারণ ছিমছাপ দেখাবে। মোটকথা, হোয়াইট স্কিনটোনের অধিকারী হলে আপনাকে কালার ম্যাচিং নিয়ে তেমন ভাবতে হবে না।
ফর্সা বর্ণের আবার ৩ টি ধরণ আছে। সাদা ফর্সা, গোলাপী ফর্সা ও হলুদ ফর্সা। সাদা ও হলুদ ফর্সা ত্বকের অধিকারী হলে আপনাকে যেকোনো গাঢ় কিংবা হালকা রঙের সাথেই মানাবে। গোলাপী ফর্সা হলে আপনার জন্য হালকা শেডের পোশাকই একদম পারফেক্ট।
ডার্ক স্কিনটোন
আপনি যদি শ্যামলা বর্ণের স্কিনটোনের অধিকারী হয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্য হালকা বা শীতল রং যেমন সবুজ, রোজ পিংক, বাসন্তী, হালকা কমলা, মেরুন, স্কাই ব্লু এ ধরনের রংগুলো উপযুক্ত। গাঢ় বেগুনি, গাঢ় সবুজ , নীল এই রংগুলো তে গায়ের রং আরো কালো মনে হতে পারে। কিন্তু কালচে নেভি ব্লু-তে বেশ ভালো মানাবে।
যাদের ত্বকের রং আরেকটু ডিপ, তারা মনে করতে পারেন, কোন রঙেই তাদের মানাবে না। কিন্তু তেমনটা নয়। কিছু রং (যেমন: লাল, হলুদ, কমলা, কালো, ব্রাউন) ছাড়া আপনি যেকোন রং সিলেক্ট করতে পারেন। এছাড়া এমন কোন রং সিলেক্ট করবেন না যেগুলো আপনার স্কিনটোনের খুব কাছাকাছি চলে যায়।
সব রঙেরই রয়েছে আলাদা আলাদা শেড। রঙের সকল শেড সবার জন্য উপযুক্ত নয়। রঙের একেক শেডের রয়েছে একেক বৈচিত্র্য। আর এই বৈচিত্র্য আপনার সৌন্দর্য্যের উপরও দারুন প্রভাব ফেলে। যেমন: আপনি ডার্ক স্কিনটোনের অধিকারী হলেও লাল বা কমলা রং নির্বাচন করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কালচে কমলা/ লালে আপনাকে বেশি মানাবে। আবার উজ্জ্বল কমলায় ম্লান দেখতে লাগতে পারে। সেজন্য আগে যাচাই করে নিন কোন শেডটা আপনার জন্য পারফেক্ট।
আবার লাল, সাদা, কালো এ রংগুলো সব ধরণের স্কিনটোনের সাথেই মানিয়ে যাবে। তবে অবশ্যই শেডের বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া যেকোন স্কিনটোনে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আগে নিশ্চিত হয়ে নিন কোন রঙ টা আপনাকে ভালো মানাচ্ছে।
ধাপ-২: ড্রেস অনুযায়ী লিপস্টিক এর কালার
সব রঙের ড্রেসের সঙ্গে সব ধরণের লিপস্টিক ম্যাচ করে না। বর্তমানে লাল, গোলাপী, কমলা এবং ব্রাউন রঙের লিপস্টিক বেশি জনপ্রিয়। চলুন জেনে নিই কোন রঙের পোশাকের জন্য কোন রঙের লিপস্টিক ব্যবহার সঠিকভাবে আপনার সাঁজগোজের ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং আনবে।
লাল লিপস্টিক
লাল লিপস্টিক কালার ম্যাচিং এর ক্ষেত্রে প্রায় সবধরণের হালকা রঙের পোশাকের সঙ্গেই মানানসই। এছাড়া বেশ কয়েকটি রঙের সঙ্গে লাল লিপস্টিকের মিলটা বেশ জোড়ালো;
- গাঢ় বা হালকা লাল
- কালো, অ্যাশ ও সিলভার বা মেটালিক
- সাদা, বাদামী, ঘিয়া, বাসন্তী, চাপা
- সোনালী
- সবুজ
এই রংগুলোর সঙ্গে লাল লিপস্টিকের ব্যবহার আপনার লুককে করে তুলবে অনন্য। তবে ভারী সাজ হলে টকটকে লাল এড়িয়ে চলুন। এক্ষেত্রে হালকা সেডের লাল রং বেছে নিতে হবে।
গোলাপী লিপস্টিক
জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে লাল লিপস্টিকের পরেই আসে গোলাপী লিপস্টিক। যে সকল রঙের সাথে সাঁজগোজের ক্ষেত্রে লিপস্টিকের কালার ম্যাচিং ঠিকঠাক মানাবে-
- হলুদ
- সবুজ
- সাদা বা বাদামি
- হালকা বা গাঢ় নীল
নীল রঙের সঙ্গে মানানসই লিপস্টিক খুঁজে পান না অনেকেই। এক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিন্তে গোলাপী লিপস্টিকটাই ব্যবহার করতে পারেন।
কমলা লিপস্টিক
হালকা সাজে এই রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু তা অবশ্যই পোশাকের রঙের সঙ্গে মানানসই হতে হবে। এজন্য কমলা রঙের লিপস্টিক দিয়ে সাঁজগোজের ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং এর বিষয়টি মাথায় রাখুন। যে সকল পোশাকের জন্য কমলা লিপস্টিক ভালো ম্যাচ করবে-
- লাল
- হলুদ
- অ্যাশ
- সাদা
- গোলাপী
বাদামি লিপস্টিক
আজকাল বাদামি লিপস্টিক অনেকেরই পছন্দের তালিকায় পৌঁছে গেছে। সুবিধাজনক রংগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাদামি। প্রায় সব ধরনের ড্রেসের সঙ্গেই বাদামি লিপস্টিক দিয়ে সাঁজগোজের ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং সহজে মানিয়ে যায়। বিশেষ করে-
- কালো
- গাড় নীল
- কালচে কমলা
- অ্যাশ
- বেগুনী/মেজেন্ডা
- গোলাপী
মনে রাখবেন, যদি আপনার পোশাকে অনেক রঙের মিশ্রণ থাকে তবে খেয়াল করতে হবে, কোন রং টা কম অংশ জুড়ে আছে। সেই রঙের সঙ্গে মিল রেখে লিপস্টিক বাছাই করতে পারেন।
এই সাজেশনগুলোর বাইরেও কিন্তু আপনি আপনার পছন্দ মতো লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন তা যেন পোশাকের সঙ্গে বেমানান না হয়।
সেইসঙ্গে লিপস্টিকের রং যদি স্কিনটোনের সাথে ম্যাচ না করে তবে অন্য কোন শেড বাছাই করতে হবে।
ধাপ-৩: লিপস্টিক অনুযায়ী আইশ্যাডো
সাজগোজে সামঞ্জস্য আনতে লিপস্টিকের সঙ্গে আইশ্যাডোর কালার ম্যাচিং খুব ভালো হওয়া চাই। এখন তবে জেনে নেওয়া যাক কোন রঙের লিপস্টিকের সঙ্গে কোন আইশ্যাডোর কালার ম্যাচিং পারফেক্ট হবে।
লাল লিপস্টিক
লাল লিপস্টিকের সঙ্গে প্রায় সব রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। তবে এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি শেডে কালার ম্যাচিং এ একদম জমে যাবে। বিশেষ করে;
- কপার
- সোনালী
- বাদামী
- রূপালী
- কালো
- নীল
- সবুজ
- ব্রোঞ্জ
এই রংগুলো লাল লিপস্টিকের সঙ্গে সাজের সামঞ্জস্যতা আনে। একটা কথা না বললেই নয়, লাল লিপস্টিকের সঙ্গে কখনোই গোলাপী আইশ্যাডো ব্যবহার করতে যাবেন না। এতে পুরো সাজটাই উটকট মনে হতে পারে।
গোলাপী লিপস্টিক
এখন প্রায় সকলেই কাছেই অন্তত একটি গোলাপী লিপস্টিক খুঁজে পাওয়া যাবে। বোঝাই যাচ্ছে এ রঙটা সকলের কতটা প্রিয় হয়ে উঠেছে। এজন্য সাঁজগোজের ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং আনতে গোলাপী লিপস্টিকের সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে যাওয়া যেকোন একটি আইশ্যাডো বেছে নিন। বিশেষ করে যে রংগুলো পারফেক্ট হবে-
- অ্যাশ
- গোলাপীর অন্য কোনো শেড
- সোনালী
- হালকা নীল
- সাদা বা রূপালী
- ব্রাউন
- ব্রোঞ্জ
কমলা লিপস্টিক
কমলা লিপস্টিকের সঙ্গে হালকা শেডের আইশ্যাডো ভালো মানাবে। অপরদিকে গাঢ় রং সাঁজে সামঞ্জস্যতা নষ্ট করবে। কমলা লিপস্টিকের সঙ্গে মানানসই আইশ্যাডো-
- কপার
- কমলার অন্যান্য শেড
- বাদামী
- অ্যাশ
- ব্রোঞ্জ
কমলা রঙের লিপস্টিকের সঙ্গে এসকল রঙের আইশ্যাডো সবচেয়ে ভালো মানাবে।
বাদামি লিপস্টিক
বাদামি লিপস্টিকের ক্ষেত্রে ডার্ক কালার গুলো বাছাই করতে পারেন। ডার্ক কালার গুলোই এই রঙের সঙ্গে বেশি মানানসই। যেমন;
- কালো
- অ্যাশ
- কপার
- কালচে মেজেন্ডা
- ব্রোঞ্জ
- কালচে সোনালী
- কালচে বাদামী
বাদামি লিপস্টিকের সঙ্গে কখনোই খুব বেশি রঙিন আইশ্যাডো ব্যবহার করতে যাবেন না। নইলে কালার ম্যাচিং ঠিক কিছুতেই ঠিক থাকবে না।
এছাড়া আপনি চাইলে আপনার পছন্দ অনুযায়ী আইশ্যাডো নির্বাচন করতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার সাজের সঙ্গে কালার ম্যাচিংটা যেন ঠিকঠাকভাবে হয়।
ধাপ-৪: লিপস্টিক ও মুখের আদল অনুযায়ী টিপ পরা
অনেকের কাছেই টিপ ছাড়া সাজ অপূর্ণ মনে হয়। এই ছোট্ট টিপ নিয়েও অনেকের সমস্যার শেষ নেই। কখন কি ধরণের বা কোন রঙের টিপ ব্যবহার করবেন সেটা নিয়ে যদি আপনার মধ্যেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়ে থাকে তবে আর চিন্তিত হবার কিছু নেই। নিচের লেখাটি পড়ে জেনে নিন এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন।
পড়ুন- ঘরে বসে মেকআপ করার সকল উপায় জেনে নিন এক নিমিষে
টিপের রং
যে রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করেছেন তার সাথে মিল রেখে টিপ নির্বাচন করুন। লাল লিপস্টিক হলে লাল টিপ আর নীল লিপস্টিক হলে টিপটাও পড়ুন নীল রঙের। তাছাড়া কালো টিপ সকল সাজ বা লিপস্টিকের সঙ্গেই মানানসই।
টিপের ধরণ
মুখের আদল অনুযায়ী টিপ ব্যবহার করা উচিত। নইলে একটি ছোট্ট টিপ আপনার সাজের খবর করে ছাড়তে পারে।
গোলাকার মুখ
আপনার মুখ যদি একদম গোল হয় তবে লম্বাটে টিপ ব্যবহার করুন। খুব বড় মাপের টিপ ব্যবহার করবেন না। গোল টিপ ব্যবহার করলেও খেয়াল রাখবেন তা যেন খুব ছোট আকারের হয়। এছাড়া কোন বিশেষ অনুষ্ঠানে কুমকুম দিয়ে লম্বা টিপ এঁকে নিতে পারেন।
হার্ট শেপ মুখ
আপনার মুখ যদি হয় হার্ট শেপ তবে আপনি যেকোন ডিজাইনের টিপ ব্যবহার করতে পারেন। তবে ছোট গোল টিপে আপনাকে ভালো মানাবে। এছাড়া আপনার বড় টিপ ব্যবহার না করাই ভালো।
চৌকো মুখ
এক্ষেত্রে আপনি ছোট চারকোণা টিপ ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া হাফ চাঁদ টিপগুলোও আপনার মুখের আদলের ভারসাম্য রাখবে।
লম্বাটে মুখ
যদি আপনার মুখ ওভাল বা লম্বাটে ধরণের হয় তবে আপনার জন্য গোল টিপ উপযুক্ত। আপনি চাইলে যেকোন ডিজাইনের টিপ ব্যবহার করতে পারেন। তবে ভুলেও লম্বাটে টিপ ব্যবহার করবেন না।
এছাড়া আপনার কপালের আকৃতি যদি বড় হয় তবে খুব বেশি ছোট বা খুব বেশি বড় টিপ ব্যবহার না করে মাঝারি ধরণের টিপ ব্যবহার করুন। কপালের আকৃতি ছোট হলে আপনাকে ছোট টিপেই সবচেয়ে ভালো মানাবে।
সাজগোজের ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং কিভাবে করবেন তা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবুও কিছু বিষয় রয়েছে যা না মানলেই নয়। অনেককেই বলতে শুনেছি নিজের পছন্দ মতো রঙের পোশাক বেছে নিতে , যেটা ইচ্ছে করে সে রং-টাই ট্রাই করে দেখতে। তবে এতে মনের ইচ্ছে পূরণ হলেও পোশাকের সঙ্গে স্কিনটোনের সামঞ্জস্য রাখা আর হয়ে উঠবে না। ফলে সাজগোজের শুরুতেই আপনাকে লাগবে বিদঘুটে।
কালার ম্যাচিং নিয়ে আপনার বিভ্রান্তিগুলো এতক্ষণে নিশ্চই দূর হয়ে গেছে! এখন তবে আর ভেবে ভেবে সময় নষ্ট করতে হবে না। যেকোন সাজগোজের ক্ষেত্রে উপরের বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। কেননা পারফেক্ট কালার ম্যাচিং আপনার সাজকে করে তুলতে পারে আরো কিছুটা আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন!
প্রাসঙ্গিক লেখা-
এক কথায় অসাধারন ! Proud of you setu, take cordial love and bless.
You have done enough good as a rising author❤