টনসিল চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর ও স্থায়ী সমাধান দিতে সক্ষম। নিচে টনসিল প্রদাহ বা টনসিলাইটিস রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
টনসিলের প্রদাহ বা টনসিলাইটিস (Tonsillitis) কি?
আলজিভের উভয় পাশের গ্রন্থিকে টনসিল বলে। এই গ্রন্থিগুলো ফুলে লাল বর্ণ হয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করলে তাকে টনসিল এর প্রদাহ, টনসিলাইটিস বা তালুমূল প্রদাহ বলে।
টনসিল প্রদাহ বা টনসিলাইটিস (Tonsillitis) কেন হয়?
ঠান্ডা লাগানোর ফলেই সাধারণত টনসিলের প্রদাহ হয়।
এছাড়া ঠান্ডা বা আর্দ্র বাতাস লাগা, রাতে সজোরে বৈদ্যুতিক পাখার অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস লাগা, পা ভিজান, ঋতু পরিবর্তনের সময়, স্ক্রফুলা ধাতুগ্রস্থ লোকদের ঘাম হবার পর হঠাৎ ঠান্ডা লেগে ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।
আবার অস্বাস্থ্যকর স্থানে বসবাস, স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে বাস, হাম, ডিপথেরিয়া, বাতজ্বর প্রভৃতি পীড়ার পরিণতি হিসেবেও এই সমস্যা হতে দেখা যায়।
টনসিলাইটিস বা তালুমূল প্রদাহের লক্ষণ সমূহ
তরুণ টনসিলাইটিসের লক্ষণঃ
প্রথম অবস্থায় জ্বর ও গলাব্যথা দেখা যায়। দুই পাশের টনসিল ফুলে লাল হয়ে যায়।
অনেক সময় গলার গ্রন্থি সমূহ বৃদ্ধি পেয়ে গলনালী বন্ধ হয়ে যায়।
ঢোক গিলতে সমস্যা হয়। খাদ্যদ্রব্য খেতে খুব কষ্ট হয়। মুখ দিয়ে লালা পড়ে।
প্রবল কাঁপুনি সহ জ্বর আসতে পারে। ক্রমে টনসিল পাকে ও ফেটে যায়।
পুরাতন টনসিলাইটিস এর লক্ষণ সমূহঃ
বার বার টনসিল প্রদাহ রোগের আক্রমণের শিকার হলে পীড়া পুরাতন আকার ধারণ করে।
এতে টনসিলের গঠনের স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটে।
পুরাতন পীড়ায় রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। নাক বন্ধ করে রোগীকে শ্বাস গ্রহণ করতে হয়।
অনেক ক্ষেত্রে টনসিল দেখতে একটা বড় সুপারির মতো মনে হয়।
মানসিক বৃত্তির পরিবর্তন, শ্রবণশক্তি হ্রাস, কানে তালা লাগা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
টনসিলাইটিসের ৫টি সেরা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এর লক্ষণ সমূহ
বেলেডোনা
আক্রমণের প্রথম অবস্থায় ব্যবহারযোগ্য। পুঁজ জমার আগে এটা ব্যবহার হয়।
টনসিল ফুলে টকটকে লাল দেখায়। দপদপানি ব্যথা থাকে। জ্বর থাকে। তরল খাবার গিলতে কষ্ট হয়।
এপিস মেল
ডান টনসিলের প্রদাহ সহ সমগ্র কণ্ঠঝিল্লীর শোথ বা স্ফীতি দেখা যায়। টনসিল বা গলনালী উজ্জ্বল লাল বা গোলাপী বর্ণের হয়।
সেখানে হূল ফোটানো ব্যথা অনুভূত হয়। উষ্ণ বা গরম পানির সংস্পর্শে যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়। অবসন্নতা ও নিদ্রালুতা বর্তমান থাকে।
হিপার সালফ
পুরাতন প্রদাহে এবং পুঁজ হবার উপক্রমে এটা ব্যবহার করা যায়। টনসিল খুব ফোলে এবং গলায় কাঁটা বেঁধার মতো ব্যথা অনুভব হয়।
রোগী শীতকাতর ও তার প্রায়ই ঠান্ডা লাগার অভ্যাস থাকে।
ফাইটোলক্কা
তরুণ ও পুরাতন উভয় প্রকার পীড়ায় এটি উপকারী। রোগী অবসন্ন ও দুর্বল। মুখে ঘা। মুখ থেকে লালা পড়ে।
টনসিল অত্যন্ত লাল ও এতে জিহ্বার ধারে ফোস্কা হবার লক্ষন দেখা যায়।
মার্কিউরিয়াস সল
রোগীর মুখে প্রচুর দুর্গন্ধ, জিহ্বায় সাদা ও ময়লা লেপ। মুখ থেকে লালা নিঃসরণ হয়।
টনসিল ফোলে তবে ব্যথা তেমন একটা থাকে না।
এছাড়া লক্ষণ অনুসারে একোনাইট, মার্ক আয়োড, লাইকোপোডিয়াম, ব্যারাইটা কার্ব ও ব্যারাইটা আয়োড, ল্যাকেসিস, সাইলিসিয়া, ব্রোমিয়াম প্রভৃতি ওষুধ ব্যবহার করা যায়।
আরও পড়ুন-