ছাত্র জীবনে অনলাইনে আয় করার উপায়

পড়াশোনার টাকা বাবা মা দিয়ে থাকলেও এক্সট্রা যে হাত খরচ আছে সেটা আর চাওয়া যায় না তাদের কাছ থেকে। যে কারণে, কিভাবে নিজে উপার্জন করা যায় সে পথ খুঁজতে থাকে অনেকেই। বিশেষ করে কলেজ ভার্সিটিতে উঠে আমরা আর বাবা মায়ের উপর নির্ভর থাকতে চাই না। নিজে নিজে কোনো কাজ-টাজ করে অথবা ছাত্র জীবনে অনলাইনে আয় করে যদি পড়াশোনার টাকাটা উঠানো যায় তাহলে কতো ভালোই না হয়!

ছাত্র জীবনে অনলাইনে আয় করার উপায় নিয়ে এইটা সেইটা গুগল আর ইউটিউবে সার্চ দিতে দিতে ফেড আপ হয়ে গেছে অনেকেই। সাইটগুলোতে অনেক রকমের আইডিয়া দেওয়া হয়। তবে আমরা সেগুলো নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করি না। এবং, ধরে নেই; অনলাইনে আয় করা ভুজুংভাজুং।

অনলাইনে আয় করার কথা উঠলেই সবার আগে চলে আসে ফ্রিল্যান্সিং এর কথা। ফ্রিল্যান্সিং শিখতে অনেক সময় লাগে। আবার ভালো প্রোফাইল গ্রো করতেও সময় লাগে।

এসব প্রচুর ধৈর্য্যের ব্যাপার। যে কোনো সময় কাজ আসতে পারে। সাথে সাথে রিপ্লাই দিতে না পারলে কাজ ক্যানসেল করে অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন-

ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা তো লাগেই। ফ্রিল্যান্সিং ছাড়াও অনেক উপায় আছে, যেগুলো অবলম্বন করতে পারলে অনলাইন থেকে আয় করা যায়। আজকে তেমনি কিছু সহজ কাজের কথা বলবো –

ছাত্র জীবনে অনলাইনে আয় করার সহজ ৫টি উপায়


১। ইউটিউবের মাধ্যমে আয় (Make Money Online Through YouTube Videos)

টিভির বিকল্প বলতে এখন সবাই ইউটিউবকেই বুঝি। প্রতিমাসে ২ বিলিয়ন মানুষ ইউটিউবে লগইন করে। যদি আপনার এডিটিং স্কিল, চমৎকার সব ভিডিও মেকিং আইডিয়া, ভিডিও মার্কেটিং এ দক্ষতা ইত্যাদি গুনাবলি থেকে থাকে তাহলে বেশ ভালো অংকের টাকা কামানোর প্লাটফর্ম ইউটিউব।

প্রথম প্রথম মোবাইল দিয়ে ভিডিও করে মনিটাইজেশন মেথড ব্যবহার করে আয় করতে পারবেন। ইউটিউবার হতে প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন।

ধৈর্য সকল কাজেই প্রয়োজন, তবে ইউটিউবের ক্ষেত্রে একটু বেশি। কারন এখানে প্রতিযোগীতাও অনেক বেশি। এক ভিডিও পছন্দ না হলে স্কিপ করে অন্যটায় যাওয়া সেকেন্ডের ব্যাপার।

তাই পরিশ্রমটা করতে হবে সেরকমই। পরিশ্রম বলতে কন্সেপ্ট ঠিক রেখে ভালোভাবে এডিট করে নিয়মিত ভিডিও আপলোড দেওয়া, এটুকুই।

প্রথম দিকে আয়ের চিন্তা মাথায় আনা যাবে না। কয়েক মাস লেগে থেকে সুন্দর সুন্দর ভিডিও বানিয়ে সাবস্ক্রাইব সংখ্যা ১০০০ বানালে তার পরই আয় শুরু হবে। ভিউয়ারও লাগবে পর্যাপ্ত। ইউটিউবিং সহজ, সে জন্য অনেকেই ইউটিউবিং করতে নামে। কিন্তু কিছুদিন পর হাল ছেড়ে দেয়।

মূলত ইউটিউবিং করার ইচ্ছা থাকলে প্রথম প্রথম চমৎকার চমৎকার ভিডিও উপহার দিতে হবে দর্শকদের। প্রথমেই আয়ের চিন্তা মাথায় আনবেন না। প্রথমেই যদি আয়ের চিন্তা নিয়ে আসেন, তাহলে ইউটিউব আপনার জন্য না।

২। আর্টিকেল রাইটিং (Article or Content Writing)

ছাত্র জীবনে মন থাকে উড়ো উড়ো। এ সময়ে ধঁরাবাঁধা কাজ করতে কারোরই ভালো লাগে না। আর সেজন্যই বেছে নিতে পারেন আর্টিকেল রাইটিংকে। যখন ইচ্ছে তখন লিখবেন, সময়মতো টাকা পেয়ে যাবেন। একদম ঝামেলা মুক্ত কাজ।

বর্তমান সবকিছু প্রযুক্তি নির্ভর। নিউজপেপার থেকে শুরু করে হোক সেটা বিনোদন বা কোনো কিছু জানতে চাওয়া। আর সেজন্যই দিন দিন ব্লগ সাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কাজের।

অনেক সাইট, কোম্পানি ক্রিয়েটিভ রাইটার খুঁজছেন। আপনি যদি সৃজনশীল মানুষ হয়ে থাকেন অর্থাৎ যে কোনো কিছুর কিওয়ার্ড ব্যবহার করে অনলাইন থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বের করে আনতে পারেন এবং ধারনা নিয়েই সে বিষয় সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারেন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ।

বর্তমান সময়ে ব্লগ পোস্ট, প্রোডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি লিখে কোনো কোম্পানি বা অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ ভালো টাকা আয় করতে পারেন৷

দ্রততম সময়ে ছাত্র জীবনে অনলাইন আয় করার উপায় হচ্ছে- আর্টিকেল, কন্টেন্ট, ব্লগ পোস্ট, প্রোডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি লিখা। সুন্দর, আকর্ষণীয় মানের লিখা দিতে পারলে সাইট বা কোম্পানিগুলো আপনাকে পারমানেন্টলিও রেখে দিতে পারে।

টাকা নিয়ে কোনো ঝামেলা হবে না, লিখা জমা দেওয়ার পরপরই টাকা পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশে প্রচুর সাইট রয়েছে একটু ঘাঁটলেই পেয়ে যাবেন। সেগুলোতে নিয়মিত লিখে বেশ মোটা অংকের টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়াও নিউজপোর্টাল বা অনলাইন ম্যাগাজিনে লিখে আয় করতে পারেন।

৩। অনলাইন টিউশন (Online Tuition)

ছাত্র জীবনে টিউশনি করে আয় করা অধিক জনপ্রিয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অলিতে গলিতে যে পরিমাণ টিউটর রয়েছে, এতো প্রতিযোগিতার মধ্যে কিছু টিউশনি খুঁজে পাওয়া আসলেই কঠিন।

কিন্তু আপনাকে যদি বলি, কষ্ট করে টিউশনি খুঁজতে হবে না, টাকা বা এনার্জি লস করে টিউশনির জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না, তাহলে কেমন হয় বলুনতো?

নিশ্চয়ই খুব ভালো! নিজের আরামদায়ক কক্ষটিতে বসে ছাত্র পড়িয়ে আয় করতে পারেন যতোখুশি। কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে নিয়েই অনলাইন টিউশনির যাত্রা শুরু।

অনলাইনে টিউশনির জন্য কম্পিউটার, ল্যাপটপের দরকার হবে না। আপনার সাধারণ মোবাইলটিতে ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই যথেষ্ট।

বাংলাদেশে অনলাইন টিউশনের চাহিদা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিউশনের জন্য- deshtutor.com, bdtutors.com, tutorsheba.com, bdhometutor.com ইত্যাদি সাইটগুলোতে ভিজিট করুন।

তাহলে আর দেরি কিসের? বসে না থেকে, কাঙ্ক্ষিত টাকার টিউশনি খুঁজে নিন।

৪। ফটোগ্রাফি বা ছবি বিক্রি করে আয় (Earn Money Online Through Selling Photos)

ছবি তো আমরা কমবেশি সবাই তুলে থাকি। আবার অনেকে আছি ভিন্ন ধরনের ছবি তুলতে পছন্দ করে। প্রাকৃতিক ছবি তুলতে ভালোবাসে। ছবিতে ইউনিক ভাব থাকে। তাদের জন্য রয়েছে ছবি বিক্রি করে আয় করার সুযোগ।

ফটোগ্রাফি করে বা ছবি বিক্রি করে আয় করার জন্য প্রেফেশনাল ফটোগ্রাফার বা ডিএসএলআর এর প্রয়োজন পরে না। আপনি যদি ছবি তুলতে পছন্দ করেন, এবং সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে পারেন তাহলে ফটোগ্রাফি বিক্রি করেও বেশ ভালো টাকা ইনকাম করতে পারেন।

আর ছাত্র অবস্থায় নানা স্থানে ভ্রমন, ঘুরাঘুরিতেই তো সময় চলে যায়। ছবি তোলার প্যাশন থাকলে এই সময়টা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেন এবং একটু পরিশ্রমের মাধ্যমে আয় করতে পারেন।

আপনার ছবিগুলো বিক্রি করতে পারেন – Clashot, EyeEm, Dreamstime, Foap, Snapwire, AGORA images ইত্যাদি ওয়েবসাইটগুলোতে।

৫। ই-কমার্স এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (E-Commerce and Affiliate Marketing)

ই-কমার্স এর পুরো নাম ইলেকট্রনিক কমার্স। বর্তমানে সব কিছু ডিজিটালাইজেশন এর আওতাভুক্ত হচ্ছে। কেনা, বেচা, গাড়ি ভাড়া করা; সব। ইন্টারনেট প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে অনলাইন ব্যবসা করলে এখন কোন কিছু বিক্রি করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দোকানে বসে থাকতে হয় না।

ঘরে বসে পণ্য বিষয়ক যাবতীয় তথ্যাদি অনলাইনে দিয়ে বিক্রি করতে পারবেন পণ্য। আর এটার নামই হলো ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক বানিজ্য।

বর্তমান সময়ে কেউই ভোগান্তি চায় না। অনলাইনে সব কাজ করে ফেলতে অধিক স্বাচ্ছন্দবোধ করে। তাই দিন দিনই ই-কমার্সের চাহিদা বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে বাড়ছে ই-কমার্স ব্যবসার পরিধিও।

ই-কমার্স এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য

ই-কমার্স আর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে তেমন বিস্তর কোনো পার্থক্য নেই। ধরে নিন, আপনি নিজের ব্যবসা পরিচালনা করবেন। পণ্য বিক্রি করবেন।

এক্ষেত্রে নিজের ব্যবসা পরিচালনা সংশ্লিষ্ট সবকিছু নিজেই করে নিতে পারেন অথবা মানুষ নিয়োগ দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন। আপনার ব্যবসার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে আপনার হাতে। এই ব্যবসাটি অনলাইনে করা হলে সেটা ই-কমার্স ব্যবসা বলা হবে।

অপরদিকে, যারা আপনার অধীনে বেতনভুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করে আপনার পণ্য বিক্রি করবে এবং বিক্রী বাবদ কিছু টাকা কমিশন গ্রহণ করার মাধ্যমে আয় করবে, সেটাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।

ইকমার্স ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানদের অনেকে তরুণ, তরুণী খুঁজছে। তরুণ তরুণীরাই সোশাল সাইটগুলোতে বেশি থাকে এবং তাদেরই ফ্যান-ফলোয়ার থাকে অধিক।

অনলাইন ব্যবসায়ীরা এই বিষয়টির সুবিধা নেয়ার জন্য অনলাইনে ই-কমার্স ব্যবসা করার জন্য উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের কাজে লাগাতে চান। একটু নামি-দামি মার্কেটে খোঁজ করলেই ইকমার্সের কাজ পেয়ে যাবেন।

অথবা, অনলাইন সাইটগুলোতে যেমনঃ Daraz, Amazon, Ebay, BD shop ইত্যাদি সাইটে একাউন্ট খুলে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পণ্য সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি নিবেন। এরপর সুন্দর করে পণ্যটির ছবি তুলবেন।

অনলাইন সাইটগুলোতে আগে থেকেই পণ্যের ছবি দেয়া থাকে। এক্ষেত্রে শুধু পণ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরবেন নিজের ওয়েবসাইট বা সোস্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে সফলভাবে ই-কমার্স ব্যবসা করার সাইট হলো ফেইসবুক। ফেইসবুকে পেইজ খুলে লাইক, ফলোয়ার বাড়িয়ে শুরু করে দিতে পারেন ই-কমার্স ব্যবসা।

অথবা, নিজের ফেইসবুক প্রোফাইলে অধিক সংখ্যক বন্ধু যুক্ত করে, প্রচার করতে পারেন পণ্য, এবং বিক্রির ব্যবস্থা করে তথা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কমিশন গ্রহণ করে আয় করতে পারেন মোটা অংকের টাকা। পণ্য বিক্রিতে টাকা তো পাবেনই, সাথে টার্গেট পূরণ করতে পারলে অতিরিক্ত কমিশনের ব্যবস্থাও আছে।

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-